somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে মানসিক যত্ন

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাত-সকালে চায়ের কাপে কিংবা অফিসে লাঞ্চের ব্রেকে সরগরম আড্ডায় আলোচনার অন্যতম বিষয়বস্তু একটিই। রোজ দৈনিকের শিরোনাম আর টিভি চ্যানেলের স্ক্রলেও চলে আসছে চলমান জঙ্গি হামলার সংবাদ। শুধু বাংলাদেশ নয়, সাম্প্রতিক কালে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স কিংবা জার্মানির মতো উন্নত বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোতেও ধারাবাহিক ভাবে ঘটছে একের পর এক জঙ্গি হামলার ঘটনা। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক গুলশান ট্রাজেডি আর কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় পুলিশি অভিযানের পর বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা, বিশ্লেষণের পাশাপাশি অধিকাংশের মনেই এক ধরনের ভয় ও শঙ্কা প্রকাশ পাচ্ছে। অনেকের মনেই প্রশ্ন; এর পর কি ঘটবে?

সাধারনত যেকোন ট্রমাটিক ঘটনার পরে সমাজে ও আমাদের মনে নানারকম প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। আর তা যদি জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্যে হয় তবে তার প্রভাব সমাজের সব শ্রেণির মানুষের উপরেই পড়ে। গুলশানের “হলি আর্টিজান বেকারির” ঘটনাই ধরা যাক। ওই রাতে যারা ওই ঘটনার শিকার হয়েছেন তাদের স্বজন কিংবা জীবিত ফিরে আসা মানুষের মনে রয়ে গেছে সেই ঘটনার ছাপ। যেসব মানুষ ঐ বেকারির চারপাশে বসবাস করেন এবং নানা ভাবে ঐ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী (যেমন: নানা সূত্রে ওই ঘটনার ধারাবর্ণনা শুনে, ছবি কিংবা ভিডিও দেখে) তারা প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত না হয়েও মানসিকভাবে প্রভাবিত হতে পারেন। এমনকি চাকরি ও ব্যবসাসহ আরও নানা সূত্রে যাদের ঐ এলাকায় যাতায়াত ছিল তাদের মধ্যেও একধরনের ভীতি সঞ্চারিত হয়েছে।

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার পেশাগত অভিজ্ঞতা থেকেও অনেকের সাথে কথোপকথনে উঠে এসেছে এধরনের নানা অনুভূতি ও শঙ্কার কথা। অনেকে শুধু নিজের ক্ষেত্রেই নয়, ক্ষতির আশঙ্কা করছেন প্রিয়জনদেরও। অল্পতেই ভয় পেয়ে যাচ্ছেন কেউ কেউ এবং অতিরিক্ত সতর্ক থাকছেন । তৈরি হচ্ছে বিশ্বাসহীনতা। যেমন অনেকেই বলছেন জঙ্গি কার্যক্রমের সাথে সন্তানরা জড়িয়ে পরার আশঙ্কায় পিতামাতারা তাদের আটকে রাখতে চাচ্ছেন। এমনকী ভয় পাচ্ছেন বাসা থেকে কর্মস্থলে যেতে। এসব কিছু ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে পেশাগত ও ব্যক্তিগত দৈনন্দিন জীবনযাপনেও। অনেকে ভুগছেন ঘুমের সমস্যায়, দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙছে কারও কারও। অনেকেরই আবার শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা শুরু হয়েছে। এসবই ট্রমাটিক কোন ঘটনার পরবর্তী লক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত যা শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক ভাবে বিভিন্ন প্রভাব ফেলছে।

এ বিষয়গুলো একজনের উপর নেতিবাচক প্রভাব পরতে পারে তাই এসব ঘটনার মানসিক দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ঠেকাতে সচেতন হওয়া দরকার। তাই আপনার যদি মনে হয় উপরোক্ত লক্ষণগুলোর কোনটি আপনার দৈনন্দিন জীবনেও ঘটছে এবং স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করছে তবে তা নিজের মাঝে না রেখে বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করা প্রয়োজন। এজন্য প্রথমেই অনুভূতিগুলোকে শনাক্ত করুন। “কেন আমারই শুধু এমন হচ্ছে” এমনটা ভেবে নিজেকে আলাদা ভাববেন না।এ ধরনের পরিস্থিতে এমন অনুভূতি আসতে পারে, সেটাকে গ্রহন করুন এবং নিজেকে সময় দিন। আপনার নিজের ভাবনাগুলো এমন কারো সাথে ভাগাভাগি করুন যিনি সমালোচনা ছাড়াই আপনার কথা মন দিয়ে শুনবেন। মনে করুন আগে কখনও এমন সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে আপনার এই ধরনের অনুভূতিগুলো বা এমন লক্ষণ গুলো হয়েছিল কিনা। কিভাবে বের হয়ে এসেছিলেন সেই পরিস্থিতি থেকে? -খুঁজে বের করুন আপনার সেই দক্ষতা এবং নিজের ভেতরের সেই শক্তিকে কাজে লাগান।

এর সাথে সাথে প্রাত্যহিক কাজগুলো বজায় রাখুন। আর সেক্ষেত্রেও প্রাধান্য দিন নিজের পছন্দগুলোকেই। যা আপনার পক্ষে করা কিংবা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়- সেসব নিয়ে চিন্তিত হওয়া থেকে বিরত থাকুন। এতে কেবল নেতিবাচক অনুভূতিই বাড়বে যা ক্ষতিকর। বরং ইতিবাচকভাবে ভাবতে শুরু করুন যা আপনাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যা দেখে ও শুনে আপনার খারাপ লাগছে এবং কষ্টকর অনুভূতিগুলো বারে বারে ফিরে আসছে তবে তা থেকে দূরে থাকুন। যেমন: যদি জঙ্গি হামলা সংক্রান্ত কোন খবর এবং ভিডিও বা স্থিরচিত্র দেখে যদি আপনি এমনটা অনুভব করেন তবে তা পরিহার করুন। এছাড়াও এসংক্রান্ত গুজব অনেক সময় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সেসবে আতঙ্কিত না হয়ে নিজস্ব যুক্তি এবং বিচার-বিবেচনাবোধ কে কাজে লাগিয়ে সিদ্ধান্ত নিন।

পাশাপাশি দুশ্চিন্তার ভার লাঘব করতে শিথিলায়ন(রিল্যাক্সেশন)প্রক্রিয়াও চর্চা করতে পারেন। শুনতে পারেন এমন কিছু মিউজিক যা আপনার শারীরিক ও মানসিক অবসাদগ্রস্থতা কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করতে পারেন যা আপনার মনোযোগকে সক্রিয় রাখতেও সাহায্য করবে। এরপরেও যদি আপনি অনূভব করেন যে, ট্রমা থেকে বের হতে পারছেননা এবং অনুভূতিগুলো অনেক দিন ধরে আপনার স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে সেক্ষেত্রে দেরি না করে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ কারও পরামর্শ নেয়া জরুরি যেমন হতে পারে কাউন্সেলিং সেবা গ্রহণ। যা আপনার বর্তমান এই অবস্থাকে কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আসতে সাহায্য করবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৫০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×