যৌনক্ষমতা বর্ধক ঔষধ তৈরিতে কাছিমের ডিমের একটা কদর আছে। এই ডিমে "আফ্রোদিসিয়াক" নামক একটা উপাদান থাকে যা ক্ষমতা বর্ধনে ভীষণ কার্যকরী। কাম ও প্রেমের গ্রীক দেবী 'আফ্রোদিতি'র নামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই উপাদানটির নামকরণ হয়েছে। প্রতিবছর ব্যাপকহারে ল্যাটিন আমেরিকা, সাউথ-ইস্ট ও ওয়েস্ট এশিয়ায় সামুদ্রিক কাছিম ও কাছিমের ডিম চোরাচালান/পাচার হয়ে থাকে। সমুদ্র সৈকতের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় সামুদ্রিক প্রাণী কাছিম সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরী। আর তাই বিপর্যয় ঠেকাতে গত পরশুদিন ট্রাফিক ও ডাব্লিউ ডাব্লিউ এফ মালয়শিয়া সামুদ্রিক কাছিম নিধন ও পাচারের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐকবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। (উৎস : ডেইলি এক্সপ্রেস মালয়শিয়া, ৬/৬/২০১৩)
বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) অনুযায়ী ১৯৯৯ সালেই সেন্ট মার্টিনকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ঘোষণা দিয়েই দায় সেরেছে সরকার। এ ঘোষণায় যেসব নিষেধাজ্ঞার কথা বলা আছে তার ঠিক উল্টো চিত্র দেখা গেছে সেখানে। দ্বীপটিকে বাঁচাতে তেমন আশার কথাও শোনাতে পারেননি পরিবেশ অধিদপ্তরের সেন্ট মার্টিন বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তারা।
বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সেন্ট মার্টিন কনজারভেশন প্রকল্পে মার্কিন কোরাল বায়োলজিস্ট টমাস টমাসিকের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সেন্ট মার্টিনে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৮৫০ জন পর্যটক পরিদর্শন করলে দ্বীপটির ক্ষতি হবে না। তবে আনুষঙ্গিক শর্ত হলো- পর্যটকরা রাতে দ্বীপে অবস্থান করতে পারবে না এবং পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করতে পারবে না। অথচ শীত মৌসুমে দিনে তিন থেকে চার হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন যাচ্ছে, রাতে থাকছে। একইসঙ্গে তারা চালিয়ে যাচ্ছে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্যকলাপ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাতে সৈকতসংলগ্ন হোটেল, মোটেল ও দোকানের আলো এবং পর্যটকের জ্বালানো আগুনের কারণে সামুদ্রিক কাছিম ডিম পাড়ার জন্য সৈকতে আসে না। কাছিম ও পরিযায়ী পাখির আবাসস্থলগুলোতে পর্যটকদের অবাধ চলাচল।
স্থানীয়রা জানান, এ দ্বীপে কাছিমের সবচেয়ে বড় শত্রু জেলে ও কুকুর। জেলের জালে আটকা পড়ে কিছু কাছিম শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মরে যায়। জেলেরা ইচ্ছাকৃতভাবেও অনেক কাছিম মেরে ফেলে। দ্বীপে কাছিমের আরেক বড় ঘাতক বেওয়ারিশ কুকুর। কারণ সৈকতে মৃত্যুদূতের মতো ঘুরে বেড়ায় শত শত কুকুর। সৈকতের বালুকাবেলায় ডিম পাড়তে উঠলেই কুকুরগুলো কাছিমের ওপর হামলে পড়ে। কাছিমের বাচ্চা এমনকি ডিমও খেয়ে ফেলে। ডেলপাড়া, কোনাপাড়া, গলাচিপাসহ সেন্ট মার্টিনের বিভিন্ন স্থান ঘুরে একের পর এক কাছিম সৈকতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
(উৎস : কালের কন্ঠ ৬/৬/২০১৩)
বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর বিভিন্ন সময় বলছে তারা এটা করছে, ওটা করছে। কিন্তু কোনো কিছুই সেন্ট মার্টিনকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে পারছেনা। স্থানীয় চেয়ারম্যান, প্রশাসন তাদের সীমাবদ্ধতা ও লোকবলের অভাব, লজেস্টিক সাপোর্টের অভাবের কথা জানিয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর এ ব্যাপারে কিছুই করছেনা।
গত সপ্তাহে কোস্টারিকায় সামুদ্রিক কাছিমকে চোরাচালানিরদের হাতে থেকে বাঁচাতে গিয়ে মারা গেলেন ২৬ বছর বয়সী তরুণ জাইরো মোরা স্যান্ডোভাল। পরিবেশবাদী এই তরুণের মৃত্যু নাড়া দিয়েছে বিশ্ব বিবেককে এবং তার সম্মানার্থেই সংশোধন আনা হচ্ছে কোস্টারিকার পরিবেশ নীতিতে!
বিবেকহীনতা, লোভ ও অশিক্ষা যেখানে আমাদের মূল্যবোধকে গ্রাস করছে সেখানে কাছিমের নিরাপদ প্রজনন কেন্দ্র তো অনেকদূরের বিষয়। মানুষের কাছে মানুষইতো নিরাপদ নয়!!