মিসৌরির হানিবল শহরে পা দিয়ে মনে হলো, ছোটবেলায় পড়া টম সয়্যারের শহরে চলে এসেছি। মিসিসিপি নদীর পাড় থেকে এখুনি ছুটে আসবে টম সয়্যার আর হাকলবেরি ফিন, বেকি থ্যাচারকে দেখব গুটি গুটি পায়ে চলছে স্কুলের দিকে। নিজের মনকে চোখ রাঙালাম, দেখ বাপু, ওরা বইএর পাতার চরিত্র, ওরা এখানে থাকবে কেন? এই শহরে রক্তমাংসের যে মানুষটি এক সময় দাপিয়ে বেড়িয়েছিলেন, তার নাম ছিলো স্যামুয়েল ল্যাঙহর্ন ক্লেমেনস(Samuel Langhorne Clemens), ওরফে মার্ক টোয়েন(Mark Twain)। টম সয়্যার চরিত্রটির স্রষ্টা মার্ক টোয়েন। তার ছেলেবেলার একটি বড় অংশ কেটেছে মিসিসিপি নদীর ধারে হানিবল শহরে, যে শহরের বর্ণনা তিনি দিয়েছিলেন 'দি আ্যডভেন্চার অব টম সয়্যার' বইটির পটভুমি, সেইন্ট পিটাসবার্গ শহরের ছবি আঁকতে।
ছবি ক্রেডিট: Amy Meredith
ছেলেবেলায় সেবা অনুবাদের বই পড়েই টম সয়্যারের(Tom Sawyer) সাথে পরিচয়। তখন জানতামনা টম সয়্যারের বহু গল্প আসলে মার্ক টোয়েনের নিজের জীবনের ঘটনা। জানলাম মার্ক টোয়েনের ছেলেবেলার বাড়ি দেখতে যেয়ে। চলুন, দেখে আসা যাক টম সয়্যারের রচয়িতার বাড়ি।
১। এই বাড়িতে কেটেছিলো মার্ক টোয়েনের ছোটবেলা।
ছবি ক্রেডিট: Ron Cogswell
বাড়িটি তৈরী হয়েছিলো আনুমানিক ১৮৪৩ থেকে ১৮৪৪ সালের দিকে। ক্লেমেনস পরিবার এই বাড়িতে ১৮৫৩ সাল পর্যন্ত থেকেছিলো। ১৯১১ সাল নাগাদ বাড়িটি ভেঙ্গে ফেলার উদ্যোগ নেয়া হলে মিস্টার মাহান নামে এক ব্যাক্তি এটি কিনে হানিবল শহরকে দান করেন। ১৯১২ সাল থেকে বাড়িটি সাধারণের দেখার জন্য খুলে দেওয়া হয়।
২। মার্ক টোয়েনের ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখলাম, ভিতরে স্বয়ং লেখক দাঁড়িয়ে আছেন।
হানিবল শহরে কাটানো ছেলেবেলার স্মৃতিই লেখক ধরে রেখেছেন তার লেখা 'দি আ্যডভেন্চার অব টম সয়্যার' এবং 'দি আ্যডভেন্চার অব হাকলবেরি ফিনস' উপন্যাসে।
ছবি ক্রেডিট: Ched
৩।লেখক স্মৃতিচারণ করছেন। পিছনে কে দাঁড়িয়ে? বালক মার্ক টোয়েন, না টম সয়্যার?
ছবি ক্রেডিট: Taylor Studios, Inc.
৪। টম সয়্যার বেড়া
স্কুল পালানোর শাস্তি। আন্ট পলি আজ শনিবারের মধ্যেই বেড়াটা রঙ করতে বলেছেন। এদিকে টমের মন পরে আছে খেলায়। এখন কি হবে?
ছবি ক্রেডিট: Laura Supalla Gilchrist
৫। টম সয়্যার বেড়া। টমের ব্ন্ধুরাই রঙ করে দিলো।
ছবি ক্রেডিট: Laura Supalla Gilchrist
এমনি এমনি নয়। রঙ করার সুযোগের বদলে তারা টমকে কত রকম খেলনা উপহার দিল। আর টম, তাদেরকে কিছুক্ষন ব্রাশ ধরতে দিয়ে কৃতার্থ করল।
৬। হাকলবেরি ফিনের বাড়ি
টম ব্লান্কেনশিপ (Tom Blankenship) নামে মার্ক টোয়েনের এক প্রতিবেশী ছিল। মার্ক টোয়েনের বইয়ে এই ছেলেটিকেই আমরা দেখি হাকলবেরি ফিন(Huckleberry Finn) রুপে। ব্লান্কেনশিপ পরিবারের বাড়িটি ১৯১১ সালে ভেঙ্গে ফেলা হয় এবং ২০০৬ সালে পুননির্মান করা হয়। এই বাড়িটি মার্ক টোয়েনের বাড়ির তুলনায় খুবই ছোট।
ছবি ক্রেডিট: Erin
হাক, এক ভ্যাগাবন্ড মাতাল বাপের ভ্যাগাবন্ড ছেলে, রাজ্যের অপকর্ম করে বেড়ায়। লেখাপড়া জানেনা, নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা করেনা, শাস্তির ভয় নেই, এমন ছেলের কাছ থেকে শহরের অন্য মায়েরা তাদের ছেলেদের আগলে রাখে, পাছে নিজের ভালো ছেলেটি এই ছন্নছাড়ার সাথে থেকে উচ্ছন্নে যায়। ভালো ছেলেগুলো অবশ্য তাদের মায়েদের সাথে একমত না।
নিয়ম ছাড়া স্বভাবের মধ্যেই উকি দেয় তার মহৎ মন। 'দি আ্যডভেন্চার অব হাকলবেরি ফিন' বইটিতে দেখি হাক জিম নামে একজন ক্রীতদাসকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে, যদিও তার ভালো করেই জানা আছে এই কাজের শাস্তি নরকগমন।
৭। টম এবং হাক
Frederick Hibbard এর তৈরি এই স্টাচুটি দাঁড়িয়ে আছে হানিবল শহরের রাস্তার মোড়ে।
ছবি ক্রেডিট: Ron Cogswell
টম, দুচোখে তার বিশ্বজয়ের সপ্ন। দৃষ্টি সুদূরপ্রয়াসী। হাক যেখানে আছে সেখানেই থাকতে চায়, কিন্তু বন্ধুর সঙ্গ ছাড়েনা।
৮।টম এবং হাকের চোখে আজকের হানিবল
ছবি ক্রেডিট: Coalfather
৯। বেকি থ্যাচারের বাড়ি
ক্লেমেনস বাড়ির উল্টো দিকের বাড়িতে থাকতো এলিজ হকিন্সদের( Elijah Hawkins) পরিবার। এই বাড়ির মেয়ে লরা(Laura)। লরার আদলেই গড়ে উঠেছিলো বেকি থ্যাচার(Becky Thatcher)।
ছবি ক্রেডিট: David Luebbert
টম সয়্যারের কথা বলব, অথচ বেকি থ্যাচার থাকবেনা, তা কি হয়? ছেলেবয়সের প্রেম, অ্যাডভেন্চার, ব্রেকআপ, সব মিলিয়ে একজন বালিকা থেকে নারী হয়ে উঠার গল্প পাওয়া যায় বেকির মাঝে।
১০।লাইট হাউস এবং মিসিসিপি নদী
মার্ক টোয়েনের স্মৃতিতে Cardiff Hill এর চুড়ায় তৈরী হওয়া লাইট হাউস থেকে দেখা মিসিসিপি নদী।
ছবি ক্রেডিট: Jens bludau
টম, হাক, এবং তাদের দলবলের অন্যতম খেলার জায়গা ছিল এই টিলা।
১১।মার্ক টোয়েন গুহা
মার্ক টোয়েনের সময়ে এটি McDowell’s Cave নামে পরিচিত ছিল।
ছবি ক্রেডিট: Xnatedawgx
টম এবং বেকি হারিয়ে গিয়েছিলো ম্যাকডোগাল গুহায়। সেখানে ছিল আরেক বিপদ, Injun Joe নামে এক দস্যু।
তথ্যসূত্র:
marktwainmuseum-history
marktwainmuseum
hannibalparks
marktwaincave
'The Adventures of Tom Sawyer' by Mark Twain
'Adventures of Huckleberry Finn' by Mark Twain
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১০:১৮