somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রীষ্মের ছুটিতে পঠিত ও পঠিতব্য বই পুস্তকের লিস্ট

১২ ই জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই সেমিস্টারটা খুবই ক্লান্তিকর ছিলো। যত সিনিয়র হচ্ছি, কঠিন কঠিন দাতভাংগা সব জিনিস পত্র সিলেবাস এ আসছে। যাই হোক, অবশেষে গরমের ছুটি পেলাম। নামে গরমের ছুটি হলেও জৈষ্ঠ্য মাস মনে হয় মেলা আগেই শেষ হয়েছে। তবে ছুটি যে সময়কারই হোক, মাথাটা ঠান্ডা করে নেয়াই এবারের ছূটির প্রধান বিবেচ্য। তো এই ছুটিতে কি কি পড়ছি তা সবার সাথে শেয়ার করা গেলো। এই পোস্ট এর কোন উদ্দেশ্য নাই। বলা যায় “নাই কাজ খই ভাজ” পোস্ট।

সঞ্চয়িতা- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


ভার্সিটি ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হওয়ার পর ভাবলাম, অনেক কিছুইতো পড়া হলো, এবার ভাব ধরার জন্য হলেও কিছু কবিতা পড়া দরকার। আর শুরু করার জন্য মনে হলো রবীন্দ্রনাথের কবিতার উপর কিছু থাকতে পারেনা। ভাবা মতো একদিন কাটাবন থেকে নিয়েও এলাম সঞ্চয়িতা। দুঃখের বিষয় আজকে দেড় বছর পেরিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমার আর কবিতা পড়া হলোনা। একটা কবিতা যে পরিমাণ মনোযোগ দাবি করে তা মনে হয় আমার আর কখনো হবেনা। তবে আশা করছি এই ছুটিতে কিছুটা হলেও পড়ব।

ওরা এসেছিলো- মাহবুব আলম


২০১১ সালের বইমেলায় ঠিক করেছিলাম সাধারণত পড়িনা বা অপরিচিত এমন লেখকদের বইও কিনবো। প্রতি বছর বইমেলাতেই দেখা যায় কিনবো না কিনবো না করেও অনেক গুলো বইই কিনে ফেলি, এবং তার বেশিরভাগ ই আমার পছন্দের কিছু লেখক আর প্রকাশনীর বই এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। একটু বোরিং ও হয়ে যায় অনেক সময়। দুঃখের বিষয় আমার জন্য নতুন এমন কারো বই এবারো কিনবো কিনবো করে আর কিনতে পারলামনা। শেষমেষ বইমেলার একেবারে শেষ দিকে এসে এই বইটি গিফট পেলাম এক বন্ধুর কাছ থেকে।স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম, যাক অন্তত প্রতিজ্ঞাতো রক্ষা হলো, তা সে যে ভাবেই হোক।
বইয়ের লেখক আমার বন্ধুর বাবা। এই ধরণের আত্মীয় স্বজনের বই গিফট পাওয়ার অভিজ্ঞতা আগেও বেশ কয়েকবার হয়েছে। আর অভিজ্ঞতা থেকেই জানি এই বইগুলো বেশিরভাগ সময়েই অখাদ্য হয়ে থাকে। কিন্তু এই বইটা পড়ে বেশ ভালো লাগলো। লেখক নিজে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের বর্ণনা তিনি যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তাতে মনে হলো আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি তাদের জন্য বইটি সুখপাঠ্যই হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় , যখন আমাদের দেশের মানুষরা ইন্ডিয়ার বর্ডারে গিয়ে আশ্রয় নিলো তখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছিল সম্ভবত ইন্ডিয়ার নকশালিস্টদের। ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর তাড়া খেয়ে তারা চলে আসতো তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্ত পার হয়ে এপারে। পাকিস্তান সরকার এরও অকুন্ঠ সমর্থন ছিলো তাদের প্রতি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়াতে এ সুযোগ আর থাকলোনা।
আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন লক্ষ্য ছিলো দেশমাতৃকার মুক্তি, ওদেরো তেমনি লক্ষ্য ছিলো গণমানুষের মুক্তি।আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা সফল হলেও তাদের আন্দোলনকে দমন করা হয়েছিলো কঠোরভাবে।
এপার ওপার দুই বাংলার তখনকার প্রজন্মের বিপরীত মেরুর অবস্থান নিয়ে যে সংগ্রাম ঝঞ্চামুখর দিন আর রাত কেটেছে তারই ছবি আঁকা হয়েছে এ বইতে।
যেহেতু আমি মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা বই খুব বেশী পড়িনি, এই বইয়ের কনসেপ্টটা আমার কাছে একেবারেই নতুন ছিলো। সবমিলিয়ে, খুবই উপভোগ্য।বইটি প্রকাশ করেছে সাহিত্য প্রকাশ, প্রচ্ছদ শিল্পী আশোক কর্মকার।

প্রথম আলো কিশোর সংখ্যা


কিশোর সময়টা মনে হয় পার করে এসেছি। কিন্তু তারপরেও ছোটদের জন্য লেখা যে কোন কিছু পড়তে বেশ ভালোই লাগে। এই সংখ্যাটা কিনেছিলাম আমার ছোট বোনকে উপহার দেয়ার জন্য। নিজের পড়া হয়ে উঠেনি বলে এখন দেয়া হয়নি।

দ্যা ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্যা সী- আর্নস্ট হেমিংওয়ে




একটা বন্ধ কাটানোর জন্য সেবা প্রকাশনী একাই যথেষ্ট। আর সেবার অনুবাদ হলে তো কথাই নেই! দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সী প্রথম কিনেছিলাম ২০১১ এর বইমেলায়। কিন্তু এর কিছুদিন পর হল দখল জনিত ক্যাঁচালে আমার রূম এর সাথে আমার অনেক বইও দখল হয়ে যায়। বা সোজা বাংলায় অনেক বই চুরি হয়ে যায়।ভার্সিটির শিক্ষিত চোররা যে বাংলা ভাষা- সাহিত্যের পাশাপাশি বিদেশি সাহিত্যেও উৎসাহী হয়ে উঠছে তা জানতে পেরে আমি অবশ্য যার পর নাই আনন্দিতই হয়েছিলাম। যাই হোক ওর মধ্যে এ বইটিও ছিলো। পড়া হয়নি বিধায় আবারো কিনলাম।

ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল- হুমায়ুন আজাদ


এই বইটা এখনো পড়ছি। অল্প যেটুকূ পড়লাম তাতে মনে হল বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসা কিংবা পাকিদের প্রতি ঘৃণা, তা যে কতটুকু তীব্র হতে পারে তা জানার জন্য হলেও এ বইটা পড়া দরকার। পাকিস্তানীরা যখন বাংগালিদের শাসনের নামে শোষণ করছে, তখন যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি চারদিকে বিরাজ করছে তা লেখক প্রকাশ করেছেন তলপেটে আটকে থাকা অনন্ত গর্জনশীল প্রস্রাবধারা বলে। ঐ সময়কে এর চেয়ে ভালো আর কি দিয়ে ফুটিয়ে তোলা যায়?

সব কিছু ভেঙ্গে পড়ে- হুমায়ূন আজাদ


এ বইটা এখনো পড়া হয়নি। ভুমিকা পড়ে যা বোঝা গেলো তা হচ্ছে, ব্রিজ থেকে শুরু করে নারী পুরুষ কিংবা যুবক যুবতীর মধ্যকার সম্পর্ক, সব কিছুই এক ধরণের কাঠামো। কাঠামোর কাজ ভার বওয়া। যতদিন ভার বইতে পারে ততদিন তা টিকে থাকে, ভার বইতে না পারলে ভেঙ্গে পড়ে। বইয়ের protagonist মাহবুব জানে,” সত্য হচ্ছে ভেঙ্গে পড়া, কাঠামোর কাজ ওই ভেঙ্গে পড়াকে, চরম সত্যকে, কিছু কালের জন্য বিলম্বিত করা, কিন্তু একদিন সব কাঠামোই ভেঙ্গে পড়বে।“
বুঝতে পারছি হুমায়ূন আজাদের আরেকটি প্রথাবিরোধী বই এটি।

চতুরংগ- সৈয়দ মুজতবা আলী


সৈয়দ মুজতবা আলী আমার প্রিয় লেখকদের মধ্যে একজন। পাঠ্য বইতে ‘রসগোল্লা’ নামের লেখাটি পড়ার পর মজা পেয়ে তাঁর অন্যান্য লেখা গুলো সংগ্রহ করা শুরু করি। সে ধারাবাহিকতায় এখন এ বইটি পড়ছি। এটি মূলত লেখকের ৪৩টি রচনার সংকলন। রচনার বিষয়বস্তু বিবিধ, কিন্তু সবগুলো লেখাতেই লেখকের পান্ডিত্যের পরিচয় মেলে। বইএর প্রথম প্রকাশ ১৯৫৮ সালে। ২০১২ সালে এর রিপ্রিন্ট করেছে স্টুডেন্ট ওয়েজ। বইয়ের প্রচ্ছদটা আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। প্রচ্ছদ করেছেন সব্যসাচী হাজরা। মোট কথা হাতে নিলেই মন ভালো হয়ে যাবার মতো একটি বই।

শার্লক হোমস- আর্থার কনান ডয়েল


টিপিকাল নীলক্ষেতের বই। নীলক্ষেতের এ বই গুলোর অনুবাদ সাধারণত ভয়ঙ্কর টাইপের হয়। তবে এটা পড়তে অতটা খারাপ লাগেনি। আবার মনে হচ্ছে শার্লক হোমস এর আসল স্বাদটাও পাইনি। আপনাদের কাছে এর ভালো কোন অনুবাদের খবর থাকলে জানাবেন আশা করি।
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×