এই পোস্টের উদ্দেশ্য কোন ধরণের রিভিউ দেয়া নয়, পাঠ প্রতিক্রিয়া বলা যেতে পারে। সামগ্রিকভাবে হুমায়ুন আজাদ পড়ে আমার যে অনুভূতি গুলো হয়েছে তা লেখার চেষ্টা করেছি।
হুমায়ুন আজাদ আমার প্রিয় না অপ্রিয় লেখক সে বিষয়ে আমি ঠিক নিশ্চিত নই। তবে তাঁর উপন্যাস ‘ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল’ আর ‘মানুষ হিশেবে আমার অপরাধসমূহ’ সহ বেশ কিছু প্রবন্ধ আমার পড়া হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় পড়লাম ‘সব কিছু ভেঙ্গে পড়ে’।
বইটা শেষ করার পর প্রথম যে চিন্তাটা আমার মাথায় ঘোরাফেরা করছে তা হল, বই এর ওপরে প্যারেন্টাল গাইডেন্স বা কে বা কারা পড়তে পারবে সে সম্পর্কিত চিহ্ন বা কথা থাকা দরকার। বইটির প্রাসঙ্গিক/ অপ্রাসঙ্গিক এডাল্ট কন্টেন্টের জন্য এ কথা তুলছিনা, সত্যি বলতে যৌনতা কোথায় প্রাসঙ্গিক আর কোথায় তা অপ্রাসঙ্গিক সে সম্বন্ধে আমার ধারণা পরিস্কার নয়। আমার কাছে মনে হয়েছে স্বভাবের দিক থেকে আজাদের প্রত্যেকটি বই-ই বিষন্নতায় পরিপূর্ণ। মানুষের বাচ্চা বিয়ানোর প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে তার প্রত্যেকটি আচার-আচরণ, চলাফেরা লেখকের অপছন্দনীয় এবং তা থেকে পাঠকের মনে বিষয়গুলো আদতেই কুৎসিত এমন ধারণা জন্মাতে পারে। এটা অবশ্য ঠিক যে হুমায়ুন আজাদের লেখার যা ধরণ তাতে একজন মাইনর হয়তো পুরো বইটা পড়ার আগ্রহ পাবেনা কিন্তু অতি আগ্রহী কোন শিশু পাঠক যদি দুর্ভাগ্যক্রমেও তার একটা বই পড়ে ফেলে তবে সেটা ঐ পাঠকের জন্য খুব একটা সুখকর অভিজ্ঞতা হবে বলে মনে হয় না। লেখকের ‘মানুষ হিশেবে আমার অপরাধসমূহ’ আমি পড়েছিলাম মানসিকভাবে পরিপূর্ণ হয়ে বেড়ে ওঠার আগে। বইটা নিতে আমার বেশ কষ্টই হয়েছিল। একই কথা পরিণত কিন্তু মানসিক ভাবে অপ্রাপ্তবস্ক পাঠকের বেলাতেও প্রযোজ্য।
এবার আসি ‘সব কিছু ভেঙ্গে পড়ে’র ব্যাপারে। বই এর সারকথা এর নামের মধ্যেই আছে। সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে মানুষের সম্পর্ক, তা সে পারিবারিক কিংবা অপারিবারিক যেটাই হোক না কেন, কত ঠুনকো তা তুলে ধরাই এর প্রধান উদ্দেশ্য বলে মনে হয়েছে। বাবা মা, স্বামী স্ত্রী কিংবা প্রেমিক প্রেমিকার সম্পর্কগুলোর আড়ালে মানুষগুলো মূলতঃ একা। সম্পর্কের ভিত্তিটা যত মজবুতই হোক না কেন, যে কোন কাঠামোর মতই একটি নির্দিষ্ট সময় পর সম্পর্কের কাঠামোটাও ভেঙ্গে পড়বে প্রকৃতির নিয়মেই।
গোটা বইটা পড়তে বেশ সময় লেগেছে। হুমায়ুন আজাদের অন্যান্য বইগুলোর মতই এ বইও অনেক হেয়ালিতে ভরা কিন্তু তার চাইতেও বেশি সমস্যা উৎপাদন করেছে হুমায়ুন আজাদের সরল ও সরাসরিভাবে বলা সত্য কথাগুলি। বই এর মূল মজাটাও সেখানেই মনে হয়েছে। পাঠক হিসেবে আমি বেশ দুর্বল চিত্তের। তাই, আজাদের সরল কিন্তু ধারালো বক্তব্য গুলো নিতে আমার বেশ সময় লেগেছে বৈকি। হুমায়ুন আজাদের বই পড়লে আমার নিরর্থক মানব জীবন আরো বেশি অর্থহীন মনে হয়। আশেপাশের সবাইকে অসৎ আর কুটিল মনে হতে থাকে। বই এর সব কিছুকে মিথ্যা ভাবতে ভালো লাগে কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয় এমন কিছু কি আমি কখনো আমার আশেপাশে ঘটতে দেখি নাই? লেখকের অন্যান্য বই এর মত এই বই ও আমাকে এ নিয়ে ‘ডিলেমা’র মধ্যে ফেলেছে।
বরাবরের মতই হুমায়ুন আজাদের নিজস্ব ভঙ্গিমায় লেখা এ বই বিষয়বস্তুর দিক থেকে আমার পছন্দ হয় নাই (লেখকের অন্যান্য বই গুলোর মতই), কিন্তু অপ্রিয় কথা গুলো কাউকে বলতে দেখলে ভালো লাগে। অন্তত এই কথা গুলো আর কেউ এভাবে বলে নাই। অপ্রিয় সত্য গুলো বলার জন্য কারো থাকার প্রয়োজন রয়েছে।
হুমায়ুন আজাদের বই হিসেবে ‘সব কিছু ভেঙ্গে পড়ে’ গতানুগতিক। আমার কাছে উপন্যাসটির এমন কোন কিছু চোখে পড়েনি যা দ্বারা এটিকে লেখকের অন্য উপন্যাস থেকে আলাদা করা যাবে। কিন্তু হুমায়ুন আজাদ পড়তে যারা ভালোবাসেন তাদের জন্য এটি রিকমেন্ডেড।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ হুমায়ুন আজাদের সব কিছু ভেঙ্গে পড়ে
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১১টি মন্তব্য ৬টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা
তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান
উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!
এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।
"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন
কে কাকে বিশ্বাস করবে?
করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।
সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন