somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেদের মেয়ে জোছনার চুমুকাহিনী

১০ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সর্পদংশনে মৃত জোসনাকে ভাসানো হল ভেলায়!!

বুধবার, ফেব্রুয়ারি ২, ২০০০

"নাগপুর জেলার দুধরাজ থানার সর্পবান্ধা গ্রামের চেয়ারম্যেনের দশ বৎসর বয়সি কণ্যা সিডিতে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ছবি দেখতে গিয়ে কাকতালীয়ভাবে সাপের কামড়ে মারা গেছে৷ গত কুরবানি ঈদে চ্যানেল নাগিনী'তে 'বেদের মেয়ে জোসনা' দেখার পর চেয়ারম্যান কাজী সাহেবের একমাত্র কণ্যা জোসনা সিনেমাটার বিশাল ভক্ত হয়ে যায়। ভাতের পাতে মাংস আর সিডিতে বেদের মেয়ে জোসনা সিনেমা না চালু করলে জোসনার ভাত হজম হত না। গত মঙ্গলবার প্রতিদিনের মতো সে সিডি চালিয়ে 'বেদের মেয়ে জোসনা' ছবিটি দেখার সময় টিভির পর্দা ঠিক করতে গিয়ে টিভির পেছনে হাত দিতেই সেখানে ঘাপটি মেরে থাকা একটি বিষাক্ত সাপ তার হাতে ছোবল দেয়৷ এর কিছুক্ষণ পরই তার মৃত্যু হয়৷ বাড়ির লোকজন জানান, ঈদের পর থেকে নিয়মিত বেদের মেয়ে জোসনা ছবিটি দেখা জোসনা খাতুনের নেশায় পরিণত হয়েছিল৷ আরও জানা যায় যে তাকে বাঁচানোর সকল চেষ্টা ব্যর্থ হলেও কুসংস্কারাচ্ছন্ন চেয়ারম্যানের প্রবল ইচ্ছায় তাকে কলার ভেলায় ভাসিয়ে দেয়া হয় নদীতে।"

রিপোর্ট: ইলিয়াস কুদ্দুস, সর্প বিষয়ক রিপোর্টার, চ্যানেল নাগিনী।

কেরামত ওঝার সর্পকাহিনী

বেদে সর্দার কেরামত ওঝা একদিন সকালে ওঠেই নদীর ধারে ভাসতে থাকা ভেলায় ফুটফুটে একটি মেয়েকে শোয়া অবস্থায় দেখতে পেল। দ্রুত ভেলাটিকে টেনে এনেই সে বুঝতে পারল এই মেয়েকে কালনাগ কেটেছে। কালনাগের বিষে মেয়েটির সারা শরীর নীল হয়ে ছিল। দয়ার সাগর কেরামতের দিলে মেয়েটির জন্য মায়া উথলে উঠল। বিন্দুমাত্র দেরী না করেই সে বীণ বাজিয়ে কালনাগকে ডাকা শুরু করল যাতে নাগ এসে বিষ নামাতে পারে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। সারাদিনের চেষ্ঠা বৃথা গেল কেরামত ওঝার। রাতে সে স্বপ্ন দেখল কালনাগকে। কালনাগ তাকে বলছিল যে কেরামতের কাছে বন্দি আছে নাগরাজ্যের চুম্বনদেবী কালনাগিনী। চুম্বনদেবীকে হারিয়ে পুরো নাগরাজ্যে চুম্বনের আকাল শুরু হয়ে গেছে। চুম্বন হল সেই জিনিস যার চাহিদা সর্বোচ্চ কিন্তু যোগান সর্বনিম্ন। তার ওপর চুম্বনদেবীকে হারিয়ে সাপেরা চুম্বন করতে ভুলে গেছে। আর সাপেদের ভালবাসা নিবেদনের একমাত্র উপায় হল চুম্বন। কালনাগিণীর জন্য পুরো সাপরাজ্যে সাপেদের বংশবৃদ্ধি থেমে গিয়ে ধ্বংস হতে চলেছে। আর একমাত্র কালনাগই চুমু দিয়ে বিষ নামিয়ে মেয়েটিকে বাচাতে পারবে। কিন্তু শর্ত হচ্ছে চুম্বনদেবী সর্পনাগিণীকে ছেড়ে দিতে হবে।

স্বপ্ন ভাংতেই কেরামত ওঝার মনে পড়ল তার খাচায় একটি কালনাগিনী আছে। এই কানাগিনীই যে চুম্বনদেবী তার চিনতে ভূল হল না। ওঝা চিনতে সাপের ভুল হতে পারে কারণ সাপ মূর্খ, কিন্তু সাপ চিনতে কেরামতের ভূল হয় না কারণ সে ওঝা! প্রেম ভালোবাসায় চুম্বনের মর্যাদা বুঝতে পেরে সাথে সাথে কেরামত সেই নাগিনীকে ছেড়ে দিয়ে বীণ বাজানো শুরু করল। অবশেষে কাল নাগ এসে মেয়েটির সাপেকাটা স্থানে চুমু দিয়ে বিষ নামিয়ে চলে গেল। এদিকে মেয়েটি জেগে ওঠে শুধু নিজের নাম ছাড়া কিছুই মনে করতে পারল না। চেয়ারময়ানের মেয়ে জোসনা থেকে সে হয়ে গেল বেদের মেয়ে জোসনা। কেরামত ওঝা জোসনাকে নিজের মেয়ের মতই আদর ভালবাসায় বড় করতে লাগল। নিজের মেয়েকে স্কুলে না ভর্তি করালেও জোসনাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিল। তবে জোসনাকে এত আদরের পেছনে কেরামতের ওঝার দয়ার চেয়ে লোভই বেশি কাজ করেছিল সেটা কেউ জানে না। জোসনার স্মৃতি ফিরে আসলে তাকে নিয়ে তার পরিবারের কাছে যেয়ে বিপুল অর্থ দাবির স্বপ্ন দেখেই দিন কাটাত কেরামত। এদিকে কেরামতের লোভকে সবাই মহানুভবতা ভেবে ভুল করল। বুদ্ধির সীমা আছে কিন্তু বোকামীর কোন সীমা নেই। আর দুনিয়াতে বোকা মানুষের সংখাই বেশি কেরামতদের সংখ্যা নগণ্য!

ঘটনাকাল: ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯

আজ জোসনাকে প্রেম নিবেদন করবে কাঞ্চন। যেদিন থেকে জোসনা তাদের স্কুলে ভর্তি হয়, গ্রামের মেম্বারপুত্র কাঞ্চন জোসনার রূপে মুগ্ধ হয়ে অপলক চেয়ে থাকত। বেদের মেয়ে হলেও জোসনা এই ১৮ বৎসরের জীবনে কম করে হলেও শত নদীর ঘাটের জল খেয়ে ইসমার্ট জীবন-যাপনে পটু। স্কুলে যাবার আগে ঠোটে লাল লিপস্টিক মাখা ছাড়া কখনই বের হত না সে। তারপর যেদিন থেকে বুঝতে পারল মেম্বারপুত্র কাঞ্চন তার প্রেমে পরেছে সেদিন থেকে ঠোটে লিপস্টিকের পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে, চোখে কাজলের পরিমাণও বেড়ে গেল। তিন স্তরে লাল লিপস্টিক ঠোটে মাখিয়ে স্কুলে যাবার সময় বাতাসে উড়ে এসে শত শত কৃমির বীজ লেপ্টে যেত সেখানে। কিছু দিন পর পর তাই পাতলা পায়খানা জোসনার হ্যাবিটে পরিণত হল। অবশ্য দুইটাকা দামের কৃমির ঔষুধ স্কুল ব্যাগে সব সময় রাখত জোসনা, তবু লিপস্টিক দেয়া থেকে তাকে কেউ বিরত রাখতে পারত না। এদিকে কাঞ্চনের ঠোট সারা বছরই ফেটে থাকত। কিন্তু শীত এলে তার ফাটা ঠোট ভাতের মাড়ের মত উজ্জল হয়ে উঠত। সেই উজ্জলতার রহস্য হল সারা শীতে নাকের সর্দির জলে ঠোটের আর্দ্রতার জোগান। অবশ্য সেই নিয়ে জোসনার মাথা ব্যাথা ছিল না। বরং গরমকালে চোছড়া গাছের বাকলের মত, কাঞ্চনের বিবর্ণ ঠোট দেখতে দেখতে সে বড়ই বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিল।

কাঞ্চনকে মুখে কিছু বলতে না পারলেও জোসনা একবার স্বপনে কাঞ্চনের ঠোটে ফরাসি চুমুতে লিপস্টিক মেখে দিয়েছিল। সেই চুম্বনে কাঞ্চনের ঠোট কিছুটা হলেও আদ্রতা পেল সত্যি, কিন্তু পরেরদিন আমাশয়ের কারণে তার স্কুলে আসা হল না। হঠাৎ কোন কারণ ছাড়া আমাশয়ের কারণ কাঞ্চণ বুঝতে না পারলেও জোসনা যখন শুনল, কাঞ্চনের আমাশয় হয়েছে তখন ঠিকই বুঝতে পারল নিজের প্রেমের জোর। স্বপ্নের চুমুতেই কাঞ্চনের আমাশয় হয়ে গেল আর বাস্তবে কি না কি হবে সেটা নিয়ে সে বেশ চিন্তিতও বোধ করল জোসনা। অবশেষে জোসনার সকল চিন্তার অবসান ঘটিয়ে কাঞ্চন জোসনাকে বলল যে তার সাথে কিছু গোপন কথা আছে। জোসনার মনে প্রেমের দোলা বয়ে গেল এবং প্রেমের নাম বদনা কথাটির সত্যতা সে হাড়ে হাড়ে টের পেল। কারণ সেরাতে তাকে বদনা হাতে ক্ষণে ক্ষণে টয়লেট অভিমুখে যাওয়া-আসা করতে দেখা গেল। দুই টাকার আমাশার বড়িও কোন কাজে আসল না। দুই দিন দুই রাত স্যালাইনের ওপর থেকে আমাশয় বিদায় নিল। এতে করে কাঞ্চনের সাথে প্রেম করার বাসনা তার মন থেকে চিরতরে বিদায় নিল। কিন্তু ইতিমধ্যে কাঞ্চনকে জোসনা মন দিয়ে বসে আছে বলে ভিন্ন আংগিকে চিন্তা করতে বাধ্য হল। প্রেম না করে বরং বিয়ে করলে সারাক্ষণ বদনা হাতে দৌড়ানোর ঝামেলাটাকে ঝাটা দিয়ে বিদায় করতে পারবে। তবে জোসনার লিপস্টিকের ছোয়ায় বিয়ের পর যে কাঞ্চনের সার্বক্ষণিক সংগি হিসেবে বদনা বেছে নিতে হতে পারে সেটা জোসনার মাথায় একদমই আসল না।

গ্রামের পাশের নদীর ধারে কাঞ্চণের বলামত জায়গায় জোসনা অপেক্ষা করছিল। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। প্রেমের নাবিক কাঞ্চণ এসেই জোসনাকে প্রপোজ করল। কানার মনে মনে জানা আর জোসনার মনে সন্দেহ ছিল, এর আগেও কাঞ্চণ কারও সাথে প্রেম করেছিল কিনা! তাই সে তার পোষা সাপটি এনে নদীর ধারে ঝোপে লুকিয়ে রেখেছিল। এই সাপটির একটি গুণ আছে, এটা মিথ্যা বললেই কামড়ে দেয়। কাঞ্চনের প্রপোজে জোসনার মনে প্রেমের দোলা লাগলেও 'প্রেমের নাম বদনা' মনে করে সে তৎক্ষণাক জিজ্ঞাস করে বসল যে কাঞ্চণ আগে কাউকে ভালবাসত কিনা। কাঞ্চন না বলতেই মিথ্যা কথা বুঝতে পারা সাপ তাকে কেটে দিল। সাপের কামড় খেয়ে কাঞ্চণ ঢলে পড়তে লাগল আর গাইতে লাগল , " বেদের মেয়ে জোসনা আমায় কথা দিল না, হাসি হাসি ফাকি দিয়া পীরিত বুঝল না!"

মোরাল: চুমু হচ্ছে অমৃতের মত, একবার পান করলে তৃষ্ণা বাড়তেই থাকে। তবে আমাশয়ের বড়ি সাথে রাখাই বুদ্ধিমানের লক্ষণ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:৩২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×