ব্যাংক আমাদের জীবনের এক অপরিহার্য অংশ হয়ে দাড়িয়েছে। ধনী-গরিব, ছোট বড় সবারই ব্যাংক হিসাব থাকাটা একটা প্রয়োজন হয়ে দাড়িয়েছে। আসুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে ব্যাংক হিসাব খোলা যায়। প্রথমেই আসা যাক কোথায় খুলবেন ব্যাংক হিসাব। বাংলাদেশ ব্যাংক এর প্রত্য নিয়ন্ত্রনাধীন ৪৭ টি ব্যাংক আছে যাদেরকে বলা হয় তফসিলী ব্যাংক। এদের মাঝে আছে সরকারী, বেসরকারী ও বিদেশী ব্যাংক। উল্লেখ্য কোঅপারেটিভ ব্যাংক, গ্রামীন ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক ইত্যাদি প্রতিষ্টানের নামের সাথে ব্যাংক শব্দটি থাকলেও ঐগুলি তফসিলী ব্যাংক বা ব্যাংক নয়। তফসিলী ব্যাংক এর সুবিধা নিয়ে পরবর্তিতে লিখার ইচ্ছা রয়েছে। আপাতত হিসাব খোলার ইচ্ছা থাকলে কোন সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংক এর শাখায় এ যেতে পারেন। ব্যাংক শাখা চয়েজ করার বেপারে যাতায়াত সুবিধা, অনলাইন সুবিধা, দেশের বিভিন্ন জায়গায় শাখার বি¯তৃতি ইত্যাদি বিবেচ্য। অনেক শাখা শনিবারে খোলা থাকে। তাছাড়া ব্যাংক চার্জ ও সার্ভিস কোয়ালিটি বিবেচনায় রাখবেন।
হিসাব খোলার জন্য প্রথমে আপনাকে ফর্ম নিতে হবে। বাংলাদেশে আমানত হিসাব খোলার ফর্ম মাত্র দুই প্রকারঃ
১. ব্যক্তিগত হিসাব ফর্ম: হিসাবের শিরোনাম বা টাইটেল অব একাউন্ট যদি কোন ব্যক্তির নামে হয় তবে তা পারসোনাল একাউন্ট বা ব্যক্তিগত হিসাব। অর্থাৎ এ ফর্মের মাধ্যমে এক বা একাধিক ব্যক্তির নামে হিসাব খোলা যাবে।
২. অব্যক্তিগত হিসাব ফর্ম : হিসাবের শিরোনাম বা টাইটেল অব একাউন্ট যদি কোন দোকান/ব্যবসা/কাব/শিা প্রতিষ্ঠানের নামে হয় তবে তা অরগানাইজেশনাল একাউন্ট বা অব্যক্তিগত হিসাব।
এবার জেনে নেওয়া যাক কি ধরনের হিসাব খোলবেন।
আমানত হিসাবের প্রধান প্রধান প্রকারভেদ সমূহঃ
১. চলতি হিসাবঃ প্রধানত ব্যবসায়ীদের জন্য। কোন সুদ প্রদান করা হয় না। দিনে যত খুশি লেনদেন করা যায়। ভবিষ্যতে ঋন হিসাব খুলতে সুবিধা হয়।
২. সঞ্চয়ী হিসাবঃ যে কেউ এই হিসাব খুলতে পারে। সাধারণত বার্ষিক ৪% থেকে ৬% সুদ প্রদান করা হয়।
লাভজনক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান হলে অবশ্যই চলতি হিসাব খুলতে হবে, সঞ্চয়ী হিসাব খোলা যাবে না। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান যেমন স্কুল/কলেজ ইত্যাদি চলতি বা সঞ্চয়ী যে কোন হিসাব খুলতে পারবে। কোন ব্যবসায়ী তার নিজের নামে চলতি হিসাব খুলতে পারবেন। কোন বিশেষ পেশাজীবি যেমন আইনজীবি/ডাক্তার তার নিজের নামে চলতি হিসাব খুলতে পারবেন। চাকুরীজীবি/গৃহিনী/কৃষক/ছাত্র/বেকার এরা কেবল সঞ্চয়ী হিসাব খুলবেন।
৩. ডিপিএস হিসাবঃ যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই হিসাব খুলতে পারে। প্রতি মাসে একটি নির্দৃষ্ট অংকের টাকা জমা দিতে হয়। সাধারণত ৫ বছর বা ১০ বছর মেয়াদী হয়।
৪. এফডিআরঃ যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই হিসাব খুলতে পারে। এই হিসাব খোলার সময় বড় অংকের টাকা জমা দিতে হয়, তারপর প্রতি মাসে বা প্রতি ৩ মাসে সুদ পাওয়া যায়।
এখন জেনে নেওয়া যাক কি কি লাগবেঃ
১. পূরণকৃত ফর্মঃ আপনার পছন্দের শাখা থেকে সংগ্রহ করুন। যদি একাধিক ব্যক্তির নামে(যৌথ) হিসাব হয় তবে ফর্মের ’ব্যক্তি সংক্রান্ত তথ্যাবলী’ প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফটোকপি করে নিন।
২. স্পেসিমেন সিগনেচার কার্ডঃ অনেব ব্যাংক এটি হিসাব খোলার ফর্মের সাথে দিয়ে দেয়। এতে ব্যাংক অফিসারের সামনে হিসাবধারী(গণ) সার করবেন।
৩. পরিচয়দানকারীঃ সাধারণত ঐ ব্যাংকের কোন গ্রাহক পরিচয়দানকারী হবেন। চলতি হিসাব খুলতে হলে কেবলমাত্র চলতি হিসাবধারী গ্রাহক পরিচয়দানকারী হবেন। পরিচয়দানকারী হিসাব খোলার ফর্মের নির্ধরিত স্থানে নমুনা সার, নাম, ঠিকানা, হিসাব নম্বর ইত্যাদি লিখবেন ও হিসাব পরিচালনাকারীর ফটোগুলি সত্যায়িত করবেন। তিনি হিসাব খোলার দিন উপস্থিত না হওে চলবে।
৪. ফটোঃ হিসাব পরিচালনাকারী প্রত্যেক ব্যক্তির ২ করে পাসপোর্ট সাইজ ফটো লাগবে। ফটোগুলি পরিচয়দানকারী কতৃক সত্যায়িত হতে হবে। নমিনীর ১ কপি ছবি লাগবে যা হিসাব পরিচালনাকারী কর্তৃক সত্যায়িত হবে।
৫. নমিনীঃ কেবলমাত্র ব্যক্তি হিসাবে একজন নমিনী প্রদান করা যাবে এবং করতেই হবে। প্রাতিষ্ঠানিক/অব্যক্তিক হিসাবে নমিনী দেয়া যায় না। নমিনীর স্বার প্রয়োজন নাই। তবে নাম ঠিকানা দিতে হবে। নমিনীর যেকোন একটি পরিচয়পত্র দিলে ভাল হয়।
৬. টাকাঃ নির্ধরিত জমা স্লিপ পূরন করে টাকা জমা দিতে হবে। সঞ্চয়ী ও চলতি হিসাবের জন্য ব্যাংক ভেদে ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা লাগবে। ডিপিএস এর জন্য কিস্তি সমপরিমান ও এফডিআর এর জন্য এফডিআর সমপরিমান টাকা লাগবে।
৭. কাগজপত্রাদিঃ হিসাব পরিচালনাকারী প্রত্যেক ব্যক্তির পরিচয়পত্রের ফটোকপি লাগবে। এেেত্র জাতীয় পরিচয়পত্র ও কমিশনার/মেয়র/চেয়ারম্যান কতৃক পদত্ত নাগরিক সনদ সর্বাধিক গ্রহন যোগ্য। উক্ত পরিচয়পত্রের অনুপস্থিতিতে পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্ম সনদ, চাকুরী পরিচয়পত্র, স্টুডেন্ট কার্ড ইত্যাদি হতে যেকোন দুইটি উপস্থাপন করুন।
সকল প্রকার প্রতিষ্ঠানের হিসাবের েেত্র যা যা অতিরিক্ত লাগবে
ক) প্রত্যেক হিসাব পরিচালনাকারীর নাম-পদবাীসহ সীল।
খ) ট্রেড লাইসেন্স
গ) প্রতিষ্ঠানটি একমালিকানা প্রতিষ্ঠান না হলে রেজুলিশন লাগবে যাতে থাকে নির্দিষ্ট ব্যাংকের নির্ধারিত শাখায় হিসাব খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ও হিসাবটি কে পরিচালনা করবে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত। রেজুলিশনে পর্ষদ/বোর্ড/গভর্নিং বডির সদস্যরা স্বার করবেন।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানভেদে নিুলিখিত কাগজ পত্রাদি লাগবে
১. পার্টনারশীপ ফার্মঃ পার্টনারশীপ ডীড।
২. কাব/সমিতিঃ গঠনতন্ত্র ও রেজিষ্ট্রেশন।
৩. শিাপ্রতিষ্ঠানঃ অনুমোদনপত্র
৪. এনজিওঃ এনজিও বোরো হতে লাইসেন্স।
৫. প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানীঃ সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন, মেমোরেন্ডাম অব এসোসিএশন, আর্টিকেল অব এসোসিএশন।
৬. পাবলিক লিমিটেড কোম্পানীঃ সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন, মেমোরেন্ডাম অব এসোসিএশন, আর্টিকেল অব এসোসিএশন, সার্টিফিকেট অব কমেন্সমেন্ট অব বিজনেস।
পরিশেষেঃ
১. সংযুক্ত সকল কাগজের মূলকপি সাথে রাখবেন।
২. হিসাব খোলার দিন ও প্রথম বার চেকবই উঠানোর দিন আপনার নিজেকে যেতে হবে।
৩. আপনার বর্তমান ঠিকানায় ব্যাংক হতে চিঠি আসতে পারে। বিষয়টি খেয়াল রাখবেন।
৪. চেকবই তোলার জন্য ঐদিনই নিধারিত ফর্মে আবেদন করবেন।
৫. জমাস্লিপ ও হিসাব নাম্বার সংরন করুন।
৬. ব্যাংকের ডাটাবেইজে আপনার নামের বানান সঠিকভাবে তোলা হল কিনা চেক করে নিন।
৭. ডেবিট কার্ড নেয়ার জন্য আলাদাভাবে আবেদনের প্রয়োজন থাকলে করে নিন।