মোঃ রফিক(ছদ্দনাম) একটি আমদানিকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক। ঢাকার দিলকুশায় স্থাপিত এ প্রতিষ্ঠানটি মূলত চীন হতে এনার্জী বাল্ব ও কিছু ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী আমদানিকরে দেশব্যাপী বাজারজাত করে থাকে। ১৭ বছর আগে স্থাপিত এ প্রতিষ্ঠানটি বেশ ভালভাবেই চলছিল কিন্তু গত মাসে হঠাৎ বিপত্তি দেখা দিল। প্রতিষ্ঠানটির একটি বেসরকারি ব্যাংকের চলতি হিসাবে থাকা প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা খোয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে রফিক সাহেবের অফিসের একাউনট্যান্টসহ আরো দুজন কর্মকর্তা দায়ী বলে রফিক সাহেব ধারণা করছেন। তবে ব্যাংক হতে জানা গেছে চেকের পাতায় স্বাক্ষরটি আসলেই রফিক সাহেবের। ঘটনার তদন্তে রফিক সাহেব একটি স্বনামধন্য চার্টার্ড একাউনট্যান্সি ফার্মের কাছে পরামর্শ চাইলেন। চার্টার্ড একাউনট্যান্সি ফার্মের সিনিয়র পার্টনার একজন ফরেনসিক একাউন্টিং বিশেষজ্ঞের নেতৃত্বে একটি টীম গঠন করে রফিক সাহেবের প্রতিষ্ঠানে পাঠালেন। সফল তদন্ত শেষে বের হয়ে এল প্রকৃত অপরাধীর নাম।
ফরেনসিক একাউন্টিং(Forensic Accounting) ধারণাটি বহির্বিশ্বে যেমন নতুন আমাদের দেশেও এর প্রচলন হয়েছে বেশী দিন হয়নি। সীমিত আকারে হলেও ফরেনসিক একাউন্টিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মসূচী পরিচালনা করা হচ্ছে। ২০১২ সালের শেষের দিকে পদ্মা সেতুর দূর্নীতির তদন্তে দুদকের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানে সহযোগীতা করবে বলে বিশ্ব ব্যাংক আগ্রহ জানায়। আর্থিক দূর্নীতি তদন্তে ফরেনসিক অডিট ও ফরেনসিক একাউন্টিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ কারণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। প্রফেশনাল ফরেনসিক একাউনট্যান্ট বিশেষজ্ঞ নিয়োগের বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখতে পারে। ব্যাংকে দূর্নীতি ও জাল-জালিয়াতির সিংহভাগ আর্থিক সংশ্লিষ্ট হওয়ায় অন্যান্য দূর্নীতির সাথে এর গঠনগত ও উৎপত্তিগত ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আর্থিক জাল-জালিয়াতির ঘটনা ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর অডিট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ফরেনসিক একাউন্টিং বিষয়ে আলাদা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে।
ফরেনসিক একাউন্টিং বলতে হিসাববিজ্ঞানের একটি বিশেষ শাখাকে বোঝায় যা বিশ্লেষনের মাধ্যমে আদালতের নিকট গ্রহণযোগ্য তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে। ফরেনসিক একাউন্টিং জ্ঞান একজন তদন্ত কর্মকর্তাকে আর্থিক দূর্নীতির সাক্ষ্য প্রমান সংরক্ষণ ও তা আদালতে উপস্থাপনে দক্ষ করে তোলে। দ্রুত অপরাধীকে সনাক্তকরণের বিষয়ে এ বিষয়ে জ্ঞান একান্ত প্রয়োজন। আর্থিক দূর্নীতি অনেক ক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলার কারণেও হতে পারে।
ফরেনসিক একাউন্টিং-এর মূলত দুটি উপ-শাখা রয়েছে ঃ ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়(Litigation Support) ও আর্থিক তদন্ত(Investigative Accounting)। রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার জন্য ফরেনসিক একাউন্টিং ব্যাপক ব্যবহার করা যেতে পারে। একজন ফরেনসিক একাউন্টিং বিশেষজ্ঞ ব্যবসায়ের জটিল আর্থিক বিষয়সমূহ তদন্তের স্বার্থে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে থাকেন। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তসমূহ সার্থকভাবে ব্যবহারের জন্য তিনি একটি রিপোর্ট প্রনয়ণ করে থাকেন। তিনি ব্যাংক, বীমা, পুলিশ বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানকে সেবা দিতে সক্ষম। তিনি আর্থিক ঘটনার সাক্ষ্য সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে থাকেন। আজকাল এসবের জন্য কম্পিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যসমূহ যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন গ্রাফ ও চার্ট তৈরী করা হয়ে থাকে। সর্বোপরি বিচার ব্যবস্থাকে সহযোগিতা করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। এ জন্য তার প্রচলিত আইন বিষয়েও যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হয়।
(এসোসিয়েশন অব ব্যাংক অফিসার্স বাংলাদেশ-এবিওবি এর মূখপত্র ঊন্মেষ এর স্বাধিনতা ও জাতিয় দিবস ২০১৫ সংখ্যায় প্রকাশিত )