somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ন্যানোপ্রযুক্তি কি ও তার ইতিহাস

০৩ রা অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইতিহাস:

১৯৫৯ সালের ২৯ জানুয়ারি রিচার্ড ফাইনম্যান ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে অনুষ্ঠিত আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটির এক সভায় There's Plenty of Room at the Bottom শীর্ষক এক বক্তৃতা দেন। এই বক্তৃতাটিই সর্বপ্রথম ন্যানোপ্রযুক্তির ধারণা দেয়। ১৯৮৯ সনের নভেম্বরের ৯ তারিখ ন্যানোটেকনলজির জন্য একটা অন্যতম স্মরণীয় দিন হিসবে বিবেচিত হবে। এই দিনে ক্যালিফোর্নিয়ার IBM এর Almaden Research Center এ Don Eigler এবং Erhard Schweizer ৩৫ টি Xenon অণু দিয়ে IBM এর লগোটি তৈরি করেছিলেন। সেইদিনই প্রথম অণুকে ইচ্ছেমত সাজিয়ে পছন্দমত কিছু তৈরি করা সম্ভব হয় মানুষের পক্ষে। এইদিনই প্রথম মানুষ প্রকৃতির সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি অণুর কাঠামোকে ভাঙতে সক্ষম হয়েছিল। অণুর গঠনকে ইচ্ছেমত তৈরি করে অনেক কিছু করা সম্ভব। এক বিশাল সম্ভাবনার দ্বার মানুষের সামনে উন্মোচিত হল। শুধু মাত্র অণুর কাঠামোগত পার্থক্য হবার কারণেই কয়লা এত সস্তা আর হীরক এত দামী। দুটি জিনিসের মূল উপাদান হল কার্বণ। শুধু মাত্র অণুর গঠনের পার্থক্যের কারণে হীরক পৃথিবীর সবথেকে শক্ত দ্রব্য আর কয়লা কিংবা পেন্সিলের শীষ নরম।
১৯৯৯ সনে Cornell বিশ্ববিদ্যালয়ের Wilson Ho এবং তার ছাত্র Hyojune Lee অণুকে জোড়া লাগানোর প্রক্রিয়া প্রদর্শন করেন। এতদিন পর্যন্ত অণু-পরমানুর সংযোগ শুধু মাত্র রাসয়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমেই সংগঠিত হত। কিন্তু ন্যানোটেকনলজির মাধ্যমে অণু-পরমানুক ভেঙে কিংবা জোড়া লাগিয়ে অনেক কিছুই করা সম্ভবনার দ্বার খুলে দিল।


ন্যানোপ্রযুক্তি কী?


ন্যানো একটি মাপার একক। ম্যাট্রিক একক এর শুরুটা হয়েছিল ১৭৯০ সনে ফ্রান্সে। ফ্রান্স জাতীয় পরিষদ এককগুলিকে সাধারণ করবার জন্য কমিটি গঠন করে এবং তারাই প্রথম ডেসিমাল কিংবা দশ একক এর ম্যাট্রিক পদ্ধতির প্রস্তাব করেন। এবং দৈর্ঘ্যের একক এক মিটার এর সূচনা করেন। তারা পৃথিবীর পরিধির ৪০,০০০,০০০ ভাগের এক ভাগকে এক মিটার বলেন। মিটার শব্দটি গ্রিক শব্দ metron থেকে এসেছে যার অর্থ হল, পরিমাপ। এছাড়া মিটার এর ১০০ ভাগের এক ভাগকে সেন্টিমিটার বলা হয়। ১৭৯৩ সনে ফ্রান্সে আইন করে তা প্রচলন করা হয়। ১৯৬০ সনে এই মিটার এর সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়। ক্রিপটন ৮৬ এর কমলারঙের রেডিয়েশন এর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ১,৬৫০,৭৬৩.৭৩ ভাগের এক ভাগকে মিটার বলা হয়। ১৯৮৩ সনে মিটার এর সংজ্ঞা পুনরায় পরিবর্তিত করা হয়, বর্তমান সংজ্ঞা অণুযায়ী, বায়ুশুন্যে আলোর গতির ২৯৯,৭৯২,৪৫৮ ভাগের এক ভাগকে মিটার বলা হয়। এই মিটার এর ১,০০০,০০০,০০০ (১০০ কোটি) ভাগের এক ভাগকে ন্যানোমিটার বলা হয়। ন্যানো শব্দটি গ্রিক nanos শব্দ থেকে এসেছে যার অভিধানিক অর্থ হল dwarft কিন্তু এটি মাপের একক হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর এই ন্যানোমিটার স্কেলে যে সমস্ত টেকনোলজি গুলি সর্ম্পকিত সেগুলিকেই বলে ন্যানোপ্রযুক্তি।
মিটার এককটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে জড়িত। বাড়িঘর আসবাবপত্র সবই আমরা মাপি এই মিটার এককে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত মিলিমটার স্কেলে যন্ত্রপাতির সূক্ষতা মাপা হত। মিলিমিটার এর ছোট কোন কিছু নিয়ে চিন্তা ভাবনার অবকাশ ছিলনা। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পরে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এক নতুন যুগের সূচনা হল। সেমিকণ্ডাকটর তার পথযাত্রা শুরু করল। আর এর শুরুটা হল, ট্রানজিস্টর আবিষ্কার দিয়ে। তখন মাইক্রোমিটার একক দিয়ে আমাদের চিন্তভাবনা শুরু হল। বলা যায় যাত্রা শুরু হল, মাইক্রোটেকনোলজির।
এর পরে টেকনোলজি এগুতে লাগলো প্রচন্ড গতিতে। নানা জিনিসপত্র, যার মধ্যে টেলিভিশন, রেডিও, ফ্রিজ ইত্যাদি ইত্যাদি। আর তা কিভাবে আরো ছোট করা যায় তা নিয়েই প্রচন্ত যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। কোন কম্পানি কত ছোট আকারের এই সমস্ত ভোগ্য জিনিস আমাদের কাছে পৌঁছাতে পারবে, তার প্রতিযোগীতা শুরু হল। আর এই সমস্ত ব্যাপারটা সম্ভব হল, সেমিকণ্ডাকটর সংক্রান্ত প্রযুক্তির কল্যাণে। প্রথম দিকের রেডিও কিংবা টিভির আকার দেখলে আমাদের এখন হাসি পাবে। এত বড় বড় জিনিস মানুষ ব্যাবহার করত কিভাবে? সেই প্রশ্নটি হয়তো এসে দাড়াবে। কিন্তু এখন বাজারে দেয়ালে ঝুলাবার জন্য ক্যালেন্ডারের মত পাতলা টিভি এসেছে। সামনে হয়তো আরো ছোট আসবে।
১৯৮০ সনে IBM এর গবেষকরা প্রথম আবিষ্কার করেন STM(Scanning Tunneling Microscope) এই যন্ত্রটি দিয়ে অণুর গঠন পর্য়ন্ত দেখা সম্ভব। এই যন্ত্রটির আবিষ্কারই ন্যানোপ্রযুক্তিকে বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষম হয়েছে। কিভাবে কাজ করে এই STM। এই যন্ত্রে খুব সূক্ষ পিনের মত সুচাল টিপ আছে এবং তা যখন কোন পরিবাহী বস্তুর খুব কাছে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তা থেকে টানেলিং নামে খুব অল্প পরিমাণে বিদ্যুৎ পরিবাহিত হয়। এবং এই বিদ্যুৎ এর পরিমাণ দিয়েই সেই বস্তুটির বাহিরের স্তরের অণুর চিত্র তৈরি করা হয়। তবে এই STM এর ক্ষেত্রে যা দেখতে চাইবো তাকে অবশ্যই বিদ্যুৎ পরিবাহী হতে হবে। কিন্তু বিদ্যুৎ অপরিবাহীর অণুর গঠন কিভাবে দেখা যাবে? না মানুষ বসে থাকেনি। অসম্ভবকে সম্ভব করেই মানুষ যেভাবে এতদূর এসেছে, তেমনি ভাবে এই অসম্ভবকে সম্ভব করা গেল AFM দিয়ে। STM এর ক্ষেত্রে টানেলিং বিদ্যুৎ দিয়ে কাজ করা হয় এবং AFM দিয়ে সুক্ষ্ম পিন দিয়ে অণুর গঠন দেখা সম্ভব।


টপ টু ডাউন ও ডাউন টপ

ন্যানোটেকনোলজির ক্ষেত্র দুটি প্রক্রিয়া আছ। একটি হল উপর থেকে নীচে (Top to Bottom)ও অপরটি হল নীচ থেকে উপর (Bottom to top)। টপডাউন পদ্ধতিতে কোন জিনিসকে কেটে ছোট করে তাকে নির্দিষ্ট আকার দেয়া হয়। এই ক্ষেত্র সাধারণত Etching প্রক্রিয়াটি সর্ম্পকিত। আর ডাউনটুটপ হল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আকারের ছোট জিনিস দিয়ে বড় কোন জিনিস তৈরি করা। আমাদেরর বর্তমান ইলেক্ট্রনিক্স হল, টপডাউন প্রযুক্তি। আর ন্যানোটেকনোলজির হল, বটমটপ প্রযুক্তি। ন্যানোমিটার স্কেলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বস্তুর উপাদান দিয়ে তৈরি করা হবে এই ন্যানোপ্রযুক্তিতে। সহজে বুঝবার জন্য একটা উদাহরণ দেয়া যাক। মনে করুন, আপনার একটা বিশেষ ধরনের DNA এর প্রয়োজন। সুতরাং বটমটপ প্রযুক্তিতে, সেই DNA এর ছোট ছোট উপাদান গুলিকে মিশ্রন করে সেই কাঙ্খিত DNA টি তৈরি করা হবে। তবে নানোপ্রযুক্তিতে শুধু মাত্র বটমটুটপ প্রযুক্তিই নয়, বরং টপটুবটম প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই দুটির সংমিশ্রন করা হবে।
আমরা যারা কম্পিউটার ব্যবহার করছি তারা জানি যে, প্রতি বছরই কম্পিউটার এর মূল্য কমছে। প্রতিবছরই আগের তুলনায় সস্তায় আরো ভাল কার্যক্ষমতার কম্পিউটার পাওয়া যাচ্ছে। আসলে এই কম্পিউটার এর সাথেও ন্যানোটেকনোলজি সম্পর্কিত রয়েছে। কম্পিউটার এর ভিতর যে প্রসেসর আছে, আপনারা প্রায় সবাই ইন্টেল প্রসেসর এর নাম শুনে থাকবেন? এই প্রসেসর এর ভিতরে রয়েছে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ন্যানোমিটার স্কেলের সার্কিট। আর তাতে ব্যবহৃত হচ্ছে ন্যানোটেকনলজি। ইন্টের প্রসেসরে, সিলিকন এর উপর প্যাটার্ণ করে সার্কিট বানান হয় তার বর্তমান সাইজ হল ১০০ ন্যানোমিটার। সামনের তিন বছরে এর আকার হবে ৭০ ন্যানোমিটার। এবং সাতবছরে এর আকার হবে ৫০ ন্যানোমিটার। ইন্টেল আশা করছে যে ২০১০ সনে তারা ৩০ ন্যানোমিটার সাইজে নিয়ে আনতে পারবে। আর আজকের থেকে তখন এই প্রসেসর এর আকার অর্ধেক হয়ে আসবে। সেই দিনটা খুব বেশী দূরে নয় যেদিন আপনার মোবাইলটি কাজ করবে কম্পিউটারের মত। (বর্তমানেই এই ধরনের কিছু মোবাইল বাজারে এসেছে)। এছাড়া রয়েছে কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক। এই হার্ডডিস্কের তথ্য সংরক্ষণের ক্ষমতা দিন দিন বড়ছে। এই হার্ডডিস্কেও ব্যবহৃত হচ্ছে ন্যানোটেকনলজি। এখন বাজারে ৩০০ গিগাবইটেরর হার্ডডিস্ক পাওয়া যাচ্ছে। আথচ এই ব্যাপারটা আজ হতে ১০ বছর আগেও ছিল কল্পনার বাহিরে।


সূত্র:উইকিপিডিয়া
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×