চার মাসেরও বেশী সময় ধরে শিক্ষকদের আন্দোলন, দশ দিনের ঘেরাও, আর ছাত্রদের চার দিনের অনশন। এতে প্রায় অচল হয়ে পড়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। দাবি ছিল একটাই, উপাচার্য শরীফ এনামুল কবীরের পদত্যাগ। তবে উপাচার্য বারবারই বলে আসছিলেন, এ দাবি অযৌক্তিক। দুই পক্ষের অনমনীয় এই অবস্থানে শেষ পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্দোলনকারী এবং উপাচার্য, দুই পক্ষকেই ডেকে পাঠান গণভবনে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে আন্দোলনকারীরা বলেন, তারা দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়েছেন। আর পদত্যাগ করবেন কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে উপাচার্যও বলেন তিনি খুশী মনে বাড়ি যাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন শরীফ এনামুল কবীর। রাষ্ট্রপতি তা তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণও করেন। পরে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে জানানো হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ণ ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডঃ আনোয়ার হোসেনকে নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। উপাচার্যের পদত্যাগকে স্বাগত জানিয়েছেন এই দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এদিকে সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য আনোয়ার হোসেন ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনকে জানান, তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর সবার সাথে কথা বলে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনবেন। এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশকে উর্ধ্বে তুলে ধরবেন।
আনোয়ার হোসেন স্যারকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। বিভিন্ন বিষয়ে তার বক্তব্য বেশ ভাল লেগেছে আমার কাছে। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তার ভূমিকা বেশ সাহসী ছিল। এছাড়াও স্পষ্টভাষী চরিত্রের জন্যও আনোয়ার স্যার আমার বেশ পছন্দের লোক।
তবে এই নিয়োগ আমার কাছে সরকারের কূট চাল বলে মনে হয়েছে। আনোয়ার স্যার সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঢাবির উপাচার্য নির্বাচন নিয়ে কথা বলছিলেন। এই নিয়োগের মাধ্যমে এক ঢিলে পাঁচ পাখি মারা হলো। ১) আনোয়ার স্যারের মুখ বন্ধ করা গেলো, ২) ঢাবিতে অধিকতর অনুগত ভিসি আআমস আরেফীন সিদ্দিকিকে আরো কিছু দিন রাখা গেলো, ৩) নিজের দলের লোক হিসেবে আনোয়ার স্যারকে নিয়োগ দিয়ে জাবির উপাচার্য পদকে নিজেদের করে রাখা গেলো, ৪) জাবিতে বিবদমান শিক্ষকদের দুই গ্রুপ থেকে কাউকে নিয়োগ দিলে অপর গ্রুপ ঝামেলা পাকাতো, তা বন্ধ করা গেলো এবং ৫) আগের ভিসি নির্বাচন না দিয়ে তিন বছর পদ আঁকড়ে ছিল, নতুন ভিসি নিয়োগ দিয়ে সরকারের বাকি দিনগুলোও কাটিয়ে দেয়া যায় কি না।
এখন দেখার বিষয়, আনোয়ার স্যার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সত্যিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন কি না। ক্ষমতার লোভে পদ আঁকড়ে থেকে করূণ পরিণতি বরণ করেন, না কি নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রেখে দ্রুত নির্বাচন ঘোষণা করে তার চরিত্রের গুণাবলী অটুট রাখেন। দেখার অপেক্ষায় রইলাম।