somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খুশিতত্ত্ব

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষকে খুশি করানোর মোক্ষম উপায় কী? জানা থাকলে চট করে উত্তরটা বলুন। এবার উত্তরটা লিখে ভাবুন সঠিক লিখেছেন কিনা। বিজ্ঞের মত যারা নিজের জানা উত্তরটা ভেবে মনে মনে ‘এ আর কি কঠিন প্রশ্ন’ বলে হেসেছেন, তারা আরেকটু ধৈর্য্যশীল হোন।
আসলে, প্রশ্নটি মনস্তাত্ত্বিক। মানুষের মন বহুমাত্রিক এবং অসংজ্ঞায়িত। এতে co-incidence ছাড়া এমন কোন সাধারণ বৈশিষ্ট্য নেই, যাতে মনস্তাত্ত্বিক এই প্রশ্নটির একটি সর্বজনীন উত্তর পাওয়া যায়।
ভোজন রসিকদের তৃপ্তির সাথে অল্প খাওয়াতে পারলেই যথেষ্ট। খেতে খেতে অথবা খেয়ে-দেয়ে খাবারের প্রশংসা করলেও বুঝবেন আপনার প্রশংসা হচ্ছে। ভোজন পটুরা (পেঠুক) কিন্তু এদের চেয়ে ভিন্ন। যতই স্বাদের খাবার হোক উদরপূর্তি না হলে ওদের মন ভরে না। অখাদ্য-কুখাদ্য দিয়ে হলেও গলা অবধি খাওয়াতে পারলে আপনি তার কাছে হাতেম তাঈ। হাতেম তাঈ মেহমানকে খাওয়াতে পারলে খুশি হতেন। হযরত ইব্রাহিম আ. নিঃস্বকে খাওয়াতে পছন্দ করতেন। বুঝুন এবার, কেউ খেতে পারলে খুশি; কেউ খাওয়াতে পারলে খুশি।
কেউ কেউ আহার বিহারের চেয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারলে খুশি। “ভোজনং যত্রতত্র, শয়নং হট্ট মন্দিরে”। অনেকের আবার ঘুমানোরও চিন্তা নেই। মহামতি আলেকজান্ডার দার্শনিক ডায়োজেনিসকে চুপচাপ বসে রোদ পোহাতে দেখে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমি আপনার কী উপকার করতে পারি? দার্শনিক উত্তর দিলেন, “আমার সামনে থেকে সরে যেতে পারেন, আপনি আমার রোদ আগলে দাঁড়িয়ে আছেন।”
বাংলাদেশের কিছু কিছু শাশুড়িকে খুশি করতে হলে পায়ে ধরে সালাম এবং ‘আম্মা’ সম্বোধন যথেষ্ট কার্যকর। তবে সৌন্দর্য্য সচেতন হলে শৌখিন শাড়ি অথবা মেকাপ বক্স উপহার দিয়ে মুখ দিয়ে বের করাতে হয়, ‘জামাই আমার সোনার ছেলে’।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় দামী কলম ছাড়া লিখতেন না। তিনি একটি নতুন ডিজাইনের দামী কলম পেলে খুব খুশি হতেন।
নতুন ডিজাইনের জামার প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি দেখা যায় বাংলাদেশি কিছু তরুণীর। ‘পাখি’ নামক এক প্রকার পোশাক না পেয়ে অনেকে রাগে-ক্ষোভে-দুঃখে-অভিমানে ইতোমধ্যে নিজ জীবনের অবসান ঘটিয়ে পরকালীন জীবন যাপন শুরু করে দিয়েছেন। পোশাকটা পেলে তারা কী যে খুশি হত কে জানে! অবশ্য, ‘সানি লিউন’ মডেলের পোশাক প্রেমিদের কেউ এখনো সেকাজ করে নি। করলেও কারো কিচ্ছু যায় আসে না। কিন্তু, পোশাক প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতাদের খুশির জন্য ওদের বেঁচে থাকাটা জরুরি।
বই পোকাদের বই উপহার দিয়ে খুশি করানো যায়। তবে ক্লাসিক্যাল বই উপহার দেওয়ার আগে জেনে নিতে হয় তার সংগ্রহে এটি আছে কিনা। সাবধান, ভুলেও উপদেশমূলক বই উপহার দিতে যাবেন না। সে আবার ভেবে বসতে পারে, আপনি তাকে উপদেশ দিতে চান।
ফাও উপদেশদাতার অভাব এদেশে নাই। কাউকে উপদেশ দিতে পারলে এরা ভাবে রাজ্য জয় করে ফেলেছে। সৃষ্টিকর্তার সাথে কথোপকথনের সুযোগ থাকলে তারা হয়ত তাকেও উপদেশ দিত; প্রভু, তারাগুলো এত দূরে কেন? কাছে থাকলে ভাল হত, বাচ্চারা খেলতে পারত।
বাচ্চাদের খুশি করানোতে এক বিস্ময়কর ব্যাপার রয়েছে। বড়দের খুশি করাতে গিয়ে নিজে খুশি নাও হতে পারেন, কিন্তু বাচ্চাদের খুশি করালে আপনারও খুশি লাগবে। চকলেট পেয়ে কোন শিশু খুশি হলে, তার অভিব্যক্তি দেখে চকলেট না পেয়েও আপনার খুশি লাগবে। শিশুরা মুক্তানন্দে যা করে তাতে শুধু মুগ্ধ নয় বিস্মিতও হতে হয়।
সন্তান সম্ভবা মাকে খুশি করাতে উপযুক্ত আবহাওয়ায় প্রশ্ন করতে পারেন, ছেলে চান না মেয়ে? নাম কী রাখবেন? বড় হলে তাকে কী বানাবেন?
প্রেমিকা সুন্দরী হলে এবং তার একাধিক শুভাকাঙ্ক্ষি থাকলে বিয়ের আগে তাকে খুশি করানোর জন্য একটি মাত্র পদ্ধতি যথেষ্ট নয়, বহুমুখী পদক্ষেপ দরকার। তম্মধ্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হল- নিয়মিত শপিং মার্কেটে বা পার্কে যাওয়া, চাইনিজ রেস্টুরেন্টে খাওয়ানো, কসমেটিক্স সামগ্রী উপহার দেওয়া আর মাঝে মাঝে মুগ্ধ (ভান করা) হয়ে তাকিয়ে রূপের প্রশংসা করা।
রূপের চেয়ে গুণের প্রশংসা ভালবাসে রাজমিস্ত্রি আর কাঠমিস্ত্রি। কোন এক মিস্ত্রির সাথে তুলনা (বানিয়ে বলা যাবে) দিয়ে বুঝিয়ে বলুন, সে অমুকের চেয়ে দক্ষ এবং আন্তরিক বলে একাজ তাকে দিয়ে করানো হচ্ছে।
সঙ্গমপ্রিয় পুরুষ নতুন নারীর নাম-গন্ধ পেলেও খুশি হয়ে যায়। একান্ত সুযোগ মিললে তো আর কথাই নেই। কিন্তু নারীবাদী পুরুষরা (ব্যতিক্রম ছাড়া) নারী সঙ্গমের চেয়ে নারীর গুণ কিংবা অধিকারের কথা শুনতে ও বলতে বেশি ভালবাসে। তাদের যুক্তিতে একাত্মতা ঘোষণা করলে খুশিতে টগবগ হয়ে আপনাকে নতুন নতুন তত্ত্ব শুনাবে।
অভিনয় শিল্পীদের অটোগ্রাফ চেয়ে খুশি করানো যায়। তবে অভিনয়টা সবার এক-আধটু জেনে রাখা উচিত। অনেককে খুশি করানোর জন্য রাগ হলেও কষ্টে হেসে বলতে হয় ‘রাগ করি নি’। রাগ জিনিসটা কম থাকে সাধু পুরুষদের। সংযম এবং পরকালীন ভীতির কথা প্রকাশ করে এদের খুশি করানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। অশিক্ষিত কিংবা অর্ধ শিক্ষিত মোল্লা যারা সাধু সাজে তাদেরকে খুশি করানোর জন্য টাকা খরচ করতে হয় এবং কায়দা করে (অভিনয় করে) শুনিয়ে দিতে হয় ‘‘হুজুর, সবাই আল্লাহর বান্দা কিন্তু সবাই তো আর তার পেয়ারা বান্দা না। আপনি যখন আছেন.......?” সে আপনার মাথায় হাত রেখে কিছুক্ষণ বিড়বিড় করে আপনার মাথায় কার্বনডাই-অক্সাইড বমি করলে বুঝবেন, তিনি খুশি; এই তার খুশির অভিব্যক্তি (যদিও অভিনয়)।
সরকারি কর্মকর্তা (ব্যতিক্রম ছাড়া) নারী-পুরুষ সমান অধিকার সূত্রে উভয় জাত ঘুষ পেলে খুশি।
দাওয়াতি মোল্লা, গোরখোদক, কবর পাহারাদার, কাফন-আগরবাতি ব্যবসায়ী, এম্ব্যুলেন্স চালকরা খুশি হয় মানুষ মরলে। তবে পুলিশ (ব্যতিক্রম ছাড়া) খুশি হয় মানুষ নিহত হলে, মরলে নয়।
ইন্টারনেট প্রেমিকরা ফ্রিতে MB পেলে কী যে খুশি হয় তা Internet Service Providor রা কেন বুঝে না তা আমি নিজেও বুঝি না। অবশ্য, এসব জটিল মনস্তাত্ত্বিক বিষয় আমার না বুঝারই কথা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×