somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা সাহিত্যের জীবনবাদী শিল্পী মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কালজয়ী কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী জুড়ে মানবিক মূল্যবোধের বিপর্যয়ের সময়ে বাংলা কথা-সাহিত্যে যে কয়েকজন লেখকের হাতে নতুন বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয় মানিক বন্দোপাধ্যায় ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম।

১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর মাত্র ৪৮ বছর বয়সে মানিক বন্দোপাধ্যায় পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। অমর এই কথাসাহিত্যিকের আজ ৬৮তম মৃত্যুবার্ষিকী।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন বাংলা সাহিত্যের জীবনবাদী শিল্পী। তাঁর লেখাতেই প্রথম সম-সাময়িক কালের মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত বাঙালি জীবনের ট্রাজেডি ফুটে উঠে। নিম্নবিত্ত ও সর্বহারা মানুষের ক্ষয়ক্ষতি, মনুষ্যত্বের অপচয়, ক্লেদ-হতাশা ও দু:খ বেদনায় তার সততা, নিষ্ঠা ও আদর্শ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক স্বতন্ত্রধারায় চিরভাস্বর।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন বর্তমান ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুমকায়। তার বাবা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় ও মা নীরদাসুন্দরী দেবী। ১৪ সন্তানের মধ্যে মানিক ছিলেন অষ্টম। বাবা তার নাম রেখেছিলেন প্রবোধকুমার আর ডাক নাম ছিলো মানিক। তিনি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নামেই লেখালেখি করেন।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাবা ছিলেন ঢাকার সেটেলমেন্ট বিভাগের সাব-রেজিস্ট্রার। বাবার বদলির চাকরির সূত্রে মানিকের শৈশব-কৈশোর ও ছাত্রজীবন অতিবাহিত হয়েছে পূর্ব ও পশ্চিম বাংলার নানা স্থানে। তার মা নীরদাসুন্দরীর আদিনিবাস ছিল পূর্ববঙ্গের গাউদিয়া গ্রামে। এই গ্রামটির পটভূমি তিনি রচনা করেন তার প্রসিদ্ধ উপন্যাস 'পুতুলনাচের ইতিকথা'।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় মেদিনীপুর জেলা স্কুল থেকে ১৯২৬ সালে প্রবেশিকা এবং বাকুড়ার ওয়েসলিয়ান মিশন থেকে ১৯২৮ সালে আই.এস.সি পাশ করেন। এরপর কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে গণিত বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন। পরবর্তীতে সাহিত্য চর্চায় ব্যাপক মনোনিবেশ করার ফলে অনার্স পাশ করা হয়ে ওঠেনি।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে অনার্সের ছাত্র ছিলেন সেময় ক্যান্টিনে একদিন আড্ডায় এক বন্ধুর সঙ্গে মানিক বাজি ধরেন তিনি তার লেখা গল্প বিচিত্রায় ছাপাবেন। ওই সময় কলকাতায় বিচিত্রা পত্রিকা ছিল অত্যন্ত বিখ্যাত এবং কেবল নামকরা লেখকেরাই তাতে লিখতেন। তার প্রথম গল্প 'অতসী মামী' বিচিত্রায় ছাপা হয়। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই গল্পটি পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নামটি পরিচিত হয়ে ওঠে বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে। এরপর থেকে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা পাঠাতে থাকেন মানিক।

সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশের করায় একাডেমিক পড়ালেখায় মানিক বন্দোপাধ্যায়ের মন ওঠে যায়। অনার্স পরীক্ষা না দিয়েই ইতি টানেন শিক্ষাজীবনের। সাহিত্য রচনাকেই তিনি পেশা হিসেবে বেছে নেন। এরপর কিছুদিন 'নবারুণ' পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে এবং পরবর্তী সময়ে 'বঙ্গশ্রী' পত্রিকার সহসম্পাদক হিসেবে কাজ করেন।


১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি একটি প্রেস ও প্রকাশনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন যা কিছুদিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে মানিক কয়েক মাস একটি সরকারি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে সুরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে কমলা দেবীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। এ সময় থেকে তার লেখায় কমিউনিজমের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতের দাঙ্গাবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন এবং ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে প্রগতি লেখক ও শিল্পী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন।

জীবনের অতি ক্ষুদ্র পরিসরে তিনি রচনা করেন ৪২টি উপন্যাস ও দুই শতাধিক ছোটগল্প। পদ্মা নদীর মাঝি ও পুতুল নাচের ইতিকথা উপন্যাস দু’টি তার বিখ্যাত রচনা। এই উপন্যাসের মাধ্যমেই তিনি সর্বাধিক জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি অর্জন করেন। পদ্মা নদীর মাঝি চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু সাহিত্য রচনায়ই নিয়োজিত ছিলেন না। তিনি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথেও জড়িত ছিলেন। ১৯৪৬ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় তিনি কলকাতার টালিগঞ্জ অঞ্চলে ঐক্য ও মৈত্রী স্থাপনের প্রয়াসে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। বাংলা সাহিত্যের এই অমর শিল্পী ১৯৫৬ সালে ৩ ডিসেম্বর কলকাতায় ইহলোক ত্যাগ করেন।

জীবনবাদী মানিক বন্দোপাধ্যায়ের লেখালেখির সময়কাল স্বল্পপরিসরের। ১৯৩৫ সাল থেকে লেখালেখি শুরু করেন এবং তখন থেকেই মৃগী রোগে আক্রান্ত হন। মাত্র একুশ বছর তিনি লেখালেখি করেন। ৪৮ বছর বয়সে এই অমর লেখক পৃথিবী ছেড়ে চলে যান।

বাংলা সাহিত্যানুরাগী ও সাহিত্যকর্মীদের জন্য অবশ্যপাঠ্য একটি নাম মানিক বন্দোপাধ্যায়। অথচ কী আশ্চর্য, আজ যে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী এ খবরই রাখি না আমরা অনেকে।

মানিক বন্দ্যোপাধায়ের উল্লেখযোগ্য সাহিত্য কর্ম

উপন্যাস :
১। জননী (১৯৩৫), ২। পদ্মানদীর মাঝি (১৯৩৬), ৪। পুতুলনাচের ইতিকথা (১৯৩৬), ৫। জীবনের জটিলতা (১৯৩৬), ৫। স্বাধীনতার স্বাদ (১৯৫১) ৬। পাশাপাশি (১৯৫২), ৭। সার্বজনীন (১৯৫২), ৮। ফেরিওয়ালা (১৯৫৩), ৯। হরফ (১৯৫৪), ১০। পরাধীন প্রেম (১৯৫৫), ১১। হলুদ নদী সবুজ বন (১৯৫৬)।

ছোটগল্প :
১। প্রাগৈতিহাসিক (১৯৩৭), ৩। মিহি ও মোটা কাহিনী (১৯৩৮), ৪। সরীসৃপ (১৯৩৯), ৫। বৌ (১৯৪০), ৫। সমুদ্রের স্বাদ (১৯৪৩), ৫। ভেজাল (১৯৪৪), ৬। হলুদপোড়া (১৯৪৫), ৭। আজ কাল পরশুর গল্প (১৯৪৬), ৮।খতিয়ান (১৯৪৭), ৯। মাটির মাশুল (১৯৪৮) ১০। ছোট বকুলপুরের যাত্রী (১৯৪৯), ১১। ফেরিওলা (১৯৫৩), ১২। লাজুকলতা (১৯৫৪)।

নাটক :
ভিটেমাটি (১৯৪৬) ।


# ০৩ ডিসেম্বর ২০১৪
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×