১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি পাকিস্তানি পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন। রাজপথে ঝরে পড়া কোনো কোনো প্রাণ জন্ম দিতে পারে একটি অভ্যুত্থান, টলিয়ে দিতে পারে রক্তচক্ষু শাসকের আঁকড়ে রাখা গদি; এদেশের শহীদ অাসাদ তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। আসাদের মৃত্যুই ছিল আইয়ুবশাহীর মসনদের কফিনে শেষ পেরেক।
আসাদ-হত্যার প্রতিক্রিয়াতেই গণআন্দোলন পরিণত হয় গণঅভ্যুত্থানে। আসাদ শহীদ হওয়ার মাত্র ৩ দিনের মাথায় ২৪ জানুয়ারি পতন হয় আইয়ুবশাহীর। আসাদের আত্মত্যাগ ও গণঅভ্যুত্থানের পথ ধরেই এগিয়ে আসে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। আর সেই থেকে আসাদ বিপ্লব আর বিদ্রোহের জ্বলন্ত প্রতীক। আসাদের রক্তাক্ত শার্ট কবি শামসুর রাহমান লিখেছেন 'আসাদের শার্ট' শীর্ষক সেই বিখ্যাত কবিতাটি--
আসাদের শার্ট
শামসুর রাহমান
গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তকরবীর মতো কিংবা সূর্যাস্তের
জলন্ত মেঘের মতো আসাদের শার্ট
উড়ছে হাওয়ায় নীলিমায়।
বোন তার ভায়ের অম্লান শার্টে দিয়েছে লাগিয়ে
নক্ষত্রের মতো কিছু বোতাম কখনো
হৃদয়ের সোনালি তন্তুর সুক্ষ্মতায়
বর্ষীয়সী জননী সে-শার্ট
উঠোনের রৌদ্রে দিয়েছেন মেলে কতদিন স্নেহের বিন্যাসে।
ডালিম গাছের মৃদু ছায়া আর রোদ্দুর-শোভিত
মায়ের উঠোন ছেড়ে এখন সে-শার্ট
শহরের প্রধান সড়কে
কারখানার চিমনি-চুড়োয়
গমগমে এভেন্যুর আনাচে কানাচে
উড়ছে, উড়ছে অবিরাম
আমাদের হৃদয়ের রৌদ্র-ঝলসিত প্রতিধ্বনিময় মাঠে,
চৈতন্যের প্রতিটি মোর্চায়।
আমাদের দূর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা।
আসাদ-হত্যার প্রতিক্রিয়ায় কবি শামসুর রাহমান আরও একটি অমর কবিতা লিখেছিলেন 'এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়?'
এ লাশ আমরা রাখবো কোথায় ?
শামসুর রাহমান
এ লাশ আমরা রাখবো কোথায় ?
তেমন যোগ্য সমাধি কই ?
মৃত্তিকা বলো, পর্বত বলো
অথবা সুনীল-সাগর-জল-
সব কিছু ছেঁদো, তুচ্ছ শুধুই !
তাইতো রাখি না এ লাশ আজ
মাটিতে পাহাড়ে কিম্বা সাগরে,
হৃদয়ে হৃদয়ে দিয়েছি ঠাঁই।
শহীদ আসাদকে নিয়ে হেলাল হাফিজ লিখেছিলেন তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিতা 'নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়'।
নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়
হেলাল হাফিজ
এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
মিছিলের সব হাত
কন্ঠ
পা এক নয় ।
সেখানে সংসারী থাকে, সংসার বিরাগী থাকে,
কেউ আসে রাজপথে সাজাতে সংসার ।
কেউ আসে জ্বালিয়ে বা জ্বালাতে সংসার
শাশ্বত শান্তির যারা তারাও যুদ্ধে আসে
অবশ্য আসতে হয় মাঝে মধ্যে
অস্তিত্বের প্রগাঢ় আহ্বানে,
কেউ আবার যুদ্ধবাজ হয়ে যায় মোহরের প্রিয় প্রলোভনে
কোনো কোনো প্রেম আছে প্রেমিককে খুনী হতে হয় ।
যদি কেউ ভালোবেসে খুনী হতে চান
তাই হয়ে যান
উৎকৃষ্ট সময় কিন্তু আজ বয়ে যায় ।
এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় ।
লিংক : শহীদ আসাদকে নিয়ে ৩টি বিখ্যাত কবিতা