র্যাগিং বা র্যাগ ডে'র সঙ্গে এই প্রজন্মের সব ছেলেমেয়েই কমবেশি পরিচিত। কোনো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাপর্বের শেষ দিনটি আনন্দ উল্লাসের সঙ্গে সব সহপাঠী মিলে যে উৎসবটি পালন করে থাকে, সেটিই র্যাগ ডে। আর এই দিনের নানা আনুষ্ঠানিকতাকে বলা হয় র্যাগিং। র্যাগ ডে এখন কেবল বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ পর্যায়ে নয়, ছড়িয়ে পড়েছে স্কুল পর্যায়েও। নগর-মহানগর ছাড়িয়ে পাশ্চাত্য থেকে আসা এই সংস্কৃতি এখন পৌছে গেছে গ্রামাঞ্চলেও। সেই সঙ্গে র্যাগিং নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
র্যাগ ডে হয় সাধারণত ক্লাসের শেষ দিন। শিক্ষাজীবন সমাপ্তিতে পালিত বিদায়ের দিনে চোখের জলের পরিবর্তে আনন্দ-উল্লাস করাকে অনেকেই বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন বলেই মনে করেন। বিদায়ে মন থাকবে ভারাক্রান্ত, আবেগে আপ্লুত। কিন্তু তার পরিবর্তে আনন্দ উৎসবের নামে যে কর্মকাণ্ড হয়, সেগুলোকে অনেকেই নিছক আনন্দ-উল্লাস বলে মানতে রাজি নন।
র্যাগ ডে এখন আর সহপাঠীরা মিলে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া, গানবাজনা আর রঙা মাখামাখির মাঝে সীমিত নেই, এটি পালনের নামে এমন কিছু ঘটনা ঘটে গেছে, যেগুলোকে নিপীড়ন আর অসভ্যতার সঙ্গেই তুলনা করা যায়। নিরীহ অনেক শিক্ষার্থীই ইদানিং র্যাগিং জড়াতে চান না, র্যাগ ডে পালনের জন্য বাধ্যতমূলক চাঁদা দেওয়ার পরও ওইদিন ক্যাম্পাসে আসেন না। এমনকি একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যাগিং নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
র্যাগিং শব্দের প্রচলিত অর্থ হচ্ছে 'পরিচয় পর্ব' অর্থাৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষার্থীদের সাথে পুরাতন শিক্ষার্থীদের একটা সখ্যতা গড়ে তোলার জন্য যে পরিচিতি প্রথা সেটাকে র্যাগিং বলে অভিহিত করা হয়। কি করে এটি শিক্ষাজীবন সমাপ্তিতে পালিত উৎসবে রূপান্তরিত তা বলা মুশকিল।
র্যাগিং এর প্রথম শুরুটা হয়েছিল গ্রিক কালচারে; সপ্তম ও অষ্ঠম শতকে খেলার মাঠে টিম স্পিরিট নিয়ে আসার জন্য। কালের বিবর্তনে পশ্চিমা ইউনিভার্সিটিগুলোতে এটা ঢুকে যায় অষ্টদশ শতাব্দীতে বিশেষ করে ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে। ১৮২৮ থেকে ১৮৪৫ সালের দিকে আমেরিকার ইউনিভার্সিটিতে এর প্রচলন ঘটে বিভিন্ন ছাত্র সংস্থা পাই, আলফা, বিটা, গামা, কাপ্পা ও অন্যান্য ছাত্র সংস্থার উদ্ভবের মাধ্যমে। এগুলোতে সদস্যদের সাহসের পরিচয় নিতে র্যাগিং (পশ্চিমে এটাকে বলে হ্যাজিং) এর প্রচলন ঘটে।
আমাদের উপমহাদেশে ইংরেজদের মাধ্যমে এই অপসংস্কৃতি অনুপ্রবেশ করে এবং এর বিবর্তিত রূপটা রয়ে যায়। ইউরোপ-আমেরিকায় এর যাত্রা হলেও বর্তমানে আমাদের এই ভারতীয় উপমহাদেশেই এর ব্যবহার সর্বাধিক। বিশেষ করে ভারতে র্যাগিংএখন চূড়ান্ত বাজে আকার ধারণ করেছে। যেসব দেশে র্যাগিং এর উদ্ভব হয়েছে, তারা সময়ের সাথে সাথে ঠিকই এর প্রভাব মুক্ত হয়েছে আর আমাদের উপমহাদেশে আরো ভয়ংকর রূপ নিয়েছে।
ইতিহাস ঘাটলে এমনটাই দেখা যায় যে, আমরা বাজে সংস্কৃতিটাকে লালন পালন করছি কিন্তু যারা এর সূচনা করেছে তারা অনেক আগেই ছুড়ে ফেলেছে। আমাদেরও সময় এসেছে র্যাগিং নামে চলা সামাজিক অনাচার ছুড়ে ফেলে দেয়ার।