এটা শুধু আমার না, আমার মত হয়তো আরো অনেক ক্রিকেটভক্তের মনের কথা। আমরা সব দলের বিপক্ষেই একাধিক ম্যাচ জিতেছি কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বেলাতে পারিনি। এ পর্যন্ত ২১টি ওডিআই হয়েছে, অথচ ২০০৫এর কার্ডিফের ম্যাচ ছাড়া আর কোন জয় পাইনি। কেন পাইনি/পাইনা তার উত্তরটা অনেক বড়।
গত ম্যাচের কথাই যদি ধরি,
নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান(৩৩৩) তুলেছে বাংলাদেশ, তারপরেও জয়ের দেখা মিলে নি। নটিংহ্যামের ট্রেন্ট ব্রিজে ৪৮ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। নির্বিশ বোলিং, গা ছাড়া ফিল্ডিং আর ঢিলেঢালা ব্যাটিং দিয়ে অজিদের সাথে পেরে ওঠা মুশকিল। গত ম্যাচের সংক্ষিপ্ত স্কোর-
ম্যাচ ২৬: অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ
অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ৩৮১/৫ (ফিঞ্চ ৫৩, ওয়ার্নার ১৬৬, খাওয়াজা ৮৯, ম্যাক্সওয়েল ৩২, স্টয়নিস ১৭*, স্মিথ ১, কেয়ারি ১১*; মাশরাফি ৮-০-৫৬-০, মুস্তাফিজ ৯-০-৬৯-১, সাকিব ৬-০-৫০-০, রুবেল ৯-০-৮৩-০, মিরাজ ১০-০-৫৯-০, সৌম্য ৮-০-৫৮-৩)।
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩৩৩/৮ (তামিম ৬২, সৌম্য ১০, সাকিব ৪১, মুশফিক ১০২*, লিটন ২০, মাহমুদউল্লাহ ৬৯, সাব্বির ০, মিরাজ ৬, মাশরাফি ৬; স্টার্ক ১০-০-৫৫-২, কামিন্স ১০-০-৬৫-০, ম্যাক্সওয়েল ৩-০-২৫-০, কোল্টার-নাইল ১০-০-৫৮-২, স্টয়নিস ৮-০-৫৪-২, জ্যাম্পা ৯-০-৬৮-১)।
ফলাফল: অস্ট্রেলিয়া ৪৮ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া)
গতম্যাচ সম্পর্কিত কিছু তথ্য , মন্তব্য: (ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
Md Kobir Hossain:
# আমরা ম্যাচ হেরেছি যেখানে ?
.....আস্ট্রলিয়া............ বাংলাদেশ
10--53--0 ---<53 ; 10--53--1--<53
20--64--0 --<117; 20--59--1--<112
30--51--1 --<168; 30--65--2--<177
40--82--0 --<250 ; 40--68--0 ->245
50--131-4 --<381; 50--88--4 ->333
Total runs 381 ; Total runs 333
অস্ট্রলিয়া শেষ ১০ ওভারে ১৩১রান, বাংলাদেশ শেষ ১০ওভারে ৮৮ রান, ম্যাচ হেরেছে ৪৮রানে। শেষ ১০ ওভারে ৪১রান বেশি করেছে অস্ট্রলিয়া ; আমাদের বোলারা রান একটু বেশিই দিয়েছে।
অস্ট্রলিয়া বাংলাদেশ
ছক্কা ১০টি ছক্কা ৪টি
চার রান ৩৪টি চার রান ৩০টি
তিন রান ২টি তিন রান ১টি
দুই রান ২১টি দুইরান ১৭টি
এক রান ১১৭টি এক রান ১৩০টি
ডটবল ৯৯টি ডটবল১০৩টি
Extrs runs ১২টি Extrs runs ১৭টি
১. ব্যাটসম্যানরা ভাল করেছে। আসলে আমরা বোলিং এবং ফিল্ডিংয়ে খারাপ করেছি। ৪০টা রান বেশি দিয়ে ফেলেছি।" ম্যাচ শেষে বললেন মাশরাফি।
২. সাব্বির ওয়ার্নারের ক্যাচ মিস আর রান আউট মিস করছে সর্বনাশ করেছে। বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চে এতো রান চেজ করা যায় না। ম্যাচ হেরেছি প্রথম ইনিংসেই। কোন ব্যাটসম্যান এর দোষ দেওয়াটা বোকামি।
৩. ৩৮২ বড় স্কোয়ার ছিল কিন্তু ৪৫ ওভার পর্যন্ত জিতার স্বপ্ন দেখেছি আমরা। আমরা লড়াই করে হেরেছি। চেলেঞ্জ দিয়া বলমু এই স্কোয়ার যে কোন দল ৩০০ এর উপরে যাইতে পারত না। অজিদের বলিং লাইন ত যানেন ই
৪। ম্যাচটা অল্পের জন্য হেরেছি। যদি সৌম্য এতো দ্রুত রান আউট না হতো এবং তামিম ও সাকিব যদি আরো কয়েক সময় টিকতে পারতো ও যদি আরেকটু হিট করে খেলতাম তাহলে হয়তো জিতেই যেতাম। যাই হোক,অনেক ভালো খেলেছে ব্যাটসম্যানরা আজ। হারলেও বাঘের মতো লড়াই করেছি। তাই আজ কোন আফসোস নেই।
৫। শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে ম্যাচ জিততে হলে ব্যাটিং, ফিল্ডিং ও বোলিং তিন ক্ষেত্রেই খুব ভালো করতে হবে এবং দলের প্রত্যেককেই নিজের সেরাটা দিয়ে খেলতে হবে। ক্যাচ মিস করাতো দূরের কথা, রান আউটও মিস্ করা যাবেনা। সাব্বিরের ক্যাচ মিসের মাশুল দিতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, আর মুশফিকের রান আউট মিসের মাশুল দিতে হয়েছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। আমাদের টিমের বোলিংয়ের অবস্থা খারাপ, গত বিশ্বকাপের পরিসংখ্যানও এবারের চেয়ে বেশ ভালো। লাইন-ল্যাংথের ঠিক নেই, বাউন্সার- ইয়র্কারের কার্যকর প্রয়োগ নেই, পেসারদের সুইং বা স্পিনারদের টার্ন নেই। এজন্যই ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া এ দুটি দল ৩৮০+ রান নিয়েছে। কোন দল ব্যাটিং এ যতো শক্তিশালী হোক না কেনো, পরে ব্যাটিং এ নামলে ৩২০+ রান করাটা বিরাট চ্যালেঞ্জের হয়ে থাকে। কাজেই বাংলাদেশ দলের শুধু ব্যাটিং ভালো হলেই হবেনা, বোলিং ও হতে হবে বিধ্বংসী, মাপা লাইন- ল্যাংথ্ এর, সুইংগ ও টার্ন সহ। আর রান আউট করার পাশাপাশি ক্যাচও ধরতে হবে সময়মতো।
৬। তাহলে এই ম্যাচ থেকে আমরা কি শিখলাম?
-যেকোনো দেশের বিরুদ্ধে ৩০০ উর্ধ্ব রান করার সামর্থ্য আমাদের আছে। শুধুমাত্র প্রতিপক্ষ ৩০০ রান করার পর তাদের আরো অতিরিক্ত করা ৭০-৮০ রান আটকানোর সামর্থ্য আমাদের নাই।
তাছাড়া আমরা আরো দেখলাম ফিল্ডিংয়ে একটা ছোট্ট ভুল পুরো একটা টিমকে বিশ্বকাপের মতো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে কিভাবে ভোগাতে পারে। সেদিন যদি মুশফিক রান আউটটা করতে পারতো, কিংবা আজ যদি সাব্বির ক্যাচটা মিস না করতো তাহলে হয়তো বিশ্বকাপের এই আসরে বাংলাদেশের ইতিহাসটা অন্যভাবে লিখা হতো।
তবে বুক চিতিয়ে লড়াই করার অদম্য ইচ্ছাটা আফসোসগুলো একটু হলেও ভুলিয়ে দেয়৷ প্রতিটা ম্যাচই আমরা প্রতিপক্ষের ঘাম ছুটিয়েছি। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাদেরকে আমাদের নিয়ে ভাবতে হয়েছে। আমরা ১০৫ রানে প্যাকেট হয়নি।
ইনশাআল্লাহ, ভবিষ্যতে আমাদের জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে!
বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের জন্য শুভ কামনা! ❤
সহায়ক লিংক:
::বোলিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশের হার -(অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ ম্যাচ রিভিউ)
:: গ্রাউন্ড ফিল্ডিং কেন ধারাবাহিক নই?
:: যে সব কারণে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট
::পরিসংখ্যানে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৯ সকাল ১১:৩০