somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অনুভব সাহা
যেসব ঘটনা মনে দাগকাটে টুকে রাখি। জানি, বেশীর ভাগ লেখাই অখাদ্য হয়; তারপরও লিখি, ভালোলাগে। তবে ইদানিং একটু সংকোচে থাকি, মনে হয়; কখন কি বলি, আর কার কোন অনুভূতিতে গিয়ে আঘাত লাগে!

স্মৃতিকথা: ছাত্র রাজনীতি, যেমন দেখেছি আমি

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[খাতা কলমে কখনোই কোন রাজনীতির সাথে ছিলাম না। কোনদিন কোন মিছিলেও যাই নি। তারপরও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ছাত্ররাজনীতির গ্যাঁড়াকলে পড়তে হয়েছে। চোখের সামনে যা ঘটেছে, যেমনটা দেখেছি, সেসব নিয়েই এই পোস্ট লিখছি-]

হাইস্কুল পর্যন্ত রাজনীতির কোন বালাই ছিল না। এএসসি পাশ করে যেই না কলেজে ভর্তি হলাম, শুরু হল ছাত্র রাজনীতির দৌরাত্ব। প্রায় প্রতিদিনই মিছিল হতো। অনার্সের ছেলেরা নেতৃত্ব দিত বাঁকিরা স্লোগান ধরতো, ক্লাস না থাকলে আমাদের ব্যাচেরও অনেকে মিছিলের পেছনে লাফাতো। মিছিলে অলিখিত একটা নিয়ম ছিল: মিছিল শুরু হলে সামনে থাকা যাবে না। তাই মিছিল দেখলে আমরা ক্লাসে ঢুকে যেতাম। একদিন মিছিল দেখে গণিতের স্যারের রুমে ঢুকে গিয়েছিলাম। স্যারেরা সেই সময় ক্লাসে থাকলে দরজা বন্ধ করতে বলতো, পড়ানো বন্ধ রেখে চুপচাপ দাঁড়িয়েথাকতো। আর হোস্টেলের নিয়ম হল: হলে থাকলে মিছিলে যেতে হবে। ছাত্র রাজনীতি সম্পর্কে এক নেগেটিভ ধারণা নিয়ে কলেজ জীবনটাতাই মেসেই কেটেছে।

অ্যাডমিশনের পর সরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। আমার ধারণা ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটিতে রাজনীতি কম। কিন্তু ভর্তি হয়ে দেখলাম পরিস্থিতি ভিন্ন।
ভার্সিটিতে ক্লাস শুরু হয়েছে এক সপ্তাহও হয়নি। র্যাগ দিতে ইমিডিয়েট সিনিয়ররা হলে নিয়ে গেল। মানসিক নির্যাতন শেষে এক ভাই আরেক হলে নিয়ে গেল। দোতলায় ছাত্রলীগ ব্লকে এক ভাইয়ের রুমে যাই। সে ছাত্রলীগ নেতা, আমাদেরই জেলার। সেদিন বেশ অমায়িক দেখেছি ভাইকে। প্রথম দেখায় ভালোই লেগেছিল। আমাদের সাথে অনেক্ষণ গল্প করলো, ক্যাম্পাসের মাঠে গিয়ে বাঁকিতে বরই খাওয়ালো, সবার সাথে মিলে চলতে বললো, রাজনীতির দিকে না এসে যেন ঠিকঠাকমনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করি সেটাও বললো। পরে অবস্য এক ছাত্রকে খুনের ঘটনায় তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, তারপর জেল টেল হয়েছিল কি না জানা হয় নি। আমি এখনো ভাবি, অমন অমায়িক ছেলেটা খুনও করতে পারে/খুনের সাথে জড়িত থাকতে পারে!


তখন সবে ২য় বর্ষে উঠেছি। রোল অনুসারে হলে সিট দেয়া হল। আমার রোল একটু পেছনের দিকে থাকায় সিট পেলাম না। উপায় না দেখে স্থানীয় এক বন্ধুর সিটে উঠলাম। সেই হলে ছাত্ররাজনীতির প্রভাব তেমন ছিল না, তবে শাখা ছিল। চশমাপরা ফর্সা চেহারার চুপচাপ স্বভাবের একজনকে জানতাম, সে ছাত্রদল করে। অবস্য তাকে কখনোই প্রকাশ্য কিছু বলতে/করতে দেখিনি। মোটাগাটা চেহারার আরেকজনকে জানতাম সে ছাত্রলীগ করে। ওর রুমে সিগারেটের কড়া গন্ধ পাওয়া যেত। হলের একটা রুমে শিবিরের লাইব্রেরি ছিল। কিছুটা গোপনে। শিবিরের ছাত্রদের আমি দুটো ক্যাটাগরি পেয়েছি। একটাইপ লেখাপড়ায় বেশ ভালো, ধার্মিক, ভদ্র; আরেক টাইপ পড়ালেখায় পিছিয়ে, ধর্ম তেমন মানেনা, কিছুটা উগ্র।

....

সেকেন্ড ইয়ারে নিজের নামে সিট পেলাম। নিয়তির কি খেল, লটারিতে সিট পড়লো ছাত্রলীগ ব্লকে। প্রথা অনুযায়ী রুমে ওঠার আগে ছাত্রলীগের এক ক্লাসমেট আমাদের কয়েকজনকে ডেকে বললো, "দোস্ত তোদের সিট তোআমাদের ব্লকে পড়েছে। (আমাদের ব্লকে এটা ওটা হবে)তোরা ভালো ছেলে, ওখানে থাকতে সমস্যা হবে। নীচে এক রুম ফাঁকা আছে। তোরা ওখানে থাক।" ধমক নয়কথাগুলো রিকোয়েস্ট সুরেই ছিল। এক রুমমেট একটু প্রতিবাদ করলো, নিজের রুম ছেড়ে নীচের স্যাঁতস্যাঁতে রুমে কেন যাব বলে। পরে শুনলাম আমাদের রুমে উঠবে আমার সেকশনেরই কিছু ছেলে। কথানা বাড়িয়ে রাজি হয়ে গেলাম[রাজি না হয়ে উপায়ও ছিলনা, আর হল প্রভোস্টকে বললেও লাভ হতো না]। নীচতলার রুমটা একটু স্যাতস্যাতে, আলো বাতাসও কম, তবে মন্দ না। ভালো দিক হল গরমকালে বেশ ঠান্ডা থাকে, আবার এখান থেকে ডাইনিংরুমও কাছে। এছাড়া পেপার রুম, গেস্টরুম, টিভিরুম সবই নীচতলায়।

হলের দিনগুলো ভালোই যাচ্ছিল। তবে মাঝেমধ্যে সন্ধ্যা রাতের দিকে হঠ্যাৎ ককটেলের আওয়াজ পাওয়া যেত। প্রথমদিকে চমকে যেতাম, ভেতরটা কেঁপেউঠতো, পরে গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল। প্রায়ই ভাবতাম এটা নিয়ে প্রভোস্ট স্যারকে বলবো, পরে আর বলি নি।কি দরকার উটকো ঝামেলা করার? অন্য সবার যদি এতে আপত্তি না থাকে, আমি কেন কালার হতে যাব? আর হলে যে এসব হয়, প্রভোস্ট স্যার সেটা আমার চেয়েও ভালোজানে। একবার পুলিশ হলে সবার রুম চেক করেছিল, আমাদের সাথে কথা বলে দরজা থেকে চলে গিয়েছিল। এই হলের সবাই একই ব্যাচের ছিলাম। ছাত্রলীগের রুমগুলোর সামনে দা, বটি আর পিস্তলের ছবি(আঁকা) ছাড়া কারো সাথে ঝামেলা হতে দেখি নি, শুনিও নি। [হলে শিবির বা ছাত্রদলের কোন তৎপরতা চোখে পড়েনি]

ছাত্রলীগ দিয়ে একেবারে যে লাভ হয়নি তা নয়। বিশ্বকাপ উপলক্ষে কমন রুমে আমরা নতুন টিভি চাইলাম। প্রভোস্ট স্যার তো রাজি হয় না, পরে ছাত্রলীগের দাবী মুখে স্যার টিভি দিয়েছিল। টিভির দাম বাবদ সেজন্য অবস্য প্রতিমাসে হলভাড়ার সাথে অতিরিক্ত ২০টাকা দিতে হত। আবার নানা ছুতোয় ক্লাসটেস্ট বা পরীক্ষা পেছাতে হলে ছাত্রলীগ অন্যত্তম ভূমিকা পালন করতো।



চ ল বে.....

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১:৩৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×