somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গৃহভূতের কাণ্ড - আন্‌ওয়ার এম হুসাইন

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের বাসায় ডাইনিং টেবিলের সাথে চেয়ারের সংখ্যা ছয়। এই ছয়টা চেয়ারের একটাকে নিয়ে একদিন হঠাৎ একটা গন্ডগোল উপস্থিত হল। চেয়ারটা পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টা যত সহজ মনে হচ্ছে আসলে তত সহজ না। সকালবেলা খেয়াল করলাম একেবারে পেছনে যে চেয়ারটা সেটা নাই। নাই মানে সারা বাসার কোথাও নাই। সেটা কবে থেকে নাই এটা বলা মুসকিল। চেয়ারের তুলনায় বাসায় লোক-সংখ্যার অনুপাত কম হওয়ায় সে চেয়ার সব সময় ব্যবহার হয় না। তাই ঠিক কখন থেকে নাই সেটা আঁচ করা মুশকিল। তবে সারা বাসা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও একটা চেয়ার আর বের করা সম্ভব হল না। চেয়ার তো আর সূঁচ না যে লুকিয়ে পড়ে থাকবে!

একটা জলজ্যান্ত চেয়ার হাওয়া হয়ে যাওয়ার সম্ভাব্য কারণ খোঁজার চেষ্টা করলাম সবাই মিলে। কাজের মেয়ে, বুয়া এদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করা হল, কেউ কোন কাজে বাইরে নিয়েছে পরে আনতে ভুলে গেছে এমন কিছু হয়েছে কিনা। নিচের দুইজন দারোয়ানকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, তারা কখনো কাউকে একটা চেয়ার নিয়ে বের হতে দেখেছে কিনা। অতিরিক্ত হিসেবে ড্রাইভারদেরকেও জিজ্ঞাসা করলাম। এই ধরনের অদ্ভুত প্রশ্নে তারা অবাক হল। আড়ালে হাসাহাসি করল। তবে তারা কেউ এ ধরনের চেয়ার নিয়ে যেতে বা আসতে কাউকে দেখেনি।

শেষে বিষয়টার একটা যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে চেষ্টা করলাম। হয়ত আমাদের কেউ কোন কাজে বাইরে নিয়ে গেছে আর নিয়ে আসেনি। পরে কেউ সরিয়ে নিয়েছে। এই কিসিমের নানান জোড়াতালি ব্যখ্যা দিলে সেটার কাউন্টার ব্যাখ্যাও হাজির হল। সুতরাং বিষয়টা অমীমাংসিত রেখে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। দেয়ার আর মোর থিংস ইন হ্যাভেন এন্ড আর্থ। একই ডিজাইনের আর একটা চেয়ার বানিয়ে নিয়ে সেট পুরা করে রাখলাম। আমার বড় মেয়ে ঐকিক নিয়মে অংক করে বের করল একটা চেয়ার হারানোর ফলে আমাদের পরিবারের ক্ষতির পরিমান কত।

ঘটনাটা প্রায় ভুলেই গেছি। হঠাৎ একদিন রাত তিনটার সময় ছোটভাই শামীম বিশদ ডাকাডাকি করে আমাদের সকলের ঘুম ভাঙিয়ে ফেলল। উঠতে দেরী হলে দরজা ভেঙ্গে ফেলবে এমন একটা অবস্থা। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে হুড়মুড় করে বের হতে গিয়ে আলমারীর সাথে ধাক্কা খেয়ে কপালের বামপাশ ফুলিয়ে ফেললাম। মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে গেল। “কি হয়েছে? কি হয়েছে? ঘরবাড়ি সব ভেঙ্গে ফেলবি নাকি?”
সে ততোধিক উত্তেজিত হয়ে “কি হয়েছে দেখে যান” বলে সে আমাদেরকে তার রুমে নিয়ে গেল।
সেখানে গিয়ে যা দেখলাম তার জন্য আমরা কেউ কোনভাবেই প্রস্তুত ছিলাম না। রাতের বেলা একটা প্রকাণ্ড ভূমিকম্প হয়ে গেলেও এতটা অপ্রস্তুত হতাম না। তার রুমে একটা ওয়ারড্রোব আছে। বিশুদ্ধ সেগুন গাছের তৈরি। রাঙামাটি থেকে অর্ডার দিয়ে বানানো। ওয়ারড্রোব না, যেন এক গাদা লোহা। খালি ওয়ারড্রোব নাড়াতে আটজন লোকের দরকার হয়।

সেই ওয়ারড্রোবটা ঘরে নাই। বাসার দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। শামীম বারান্দার দরজা খুলে ঘুমায়। কিন্তু বাইরে তো গ্রীল আছে। কী আজে বাজে চিন্তা করছি গ্রীল থাক আর না থাক, একটা জলজ্যান্ত ওয়ারড্রোব কি গ্রীল কেটে পাঁচতলা থেকে বের করে নেয়া সম্ভব! তালগোল পাকিয়ে গেছে সব কিছুতে।

আর সব কিছু আগের মতই ঠিকঠাক। ওয়ারড্রোব এর জায়গাটা শুধু খালি। এখানে যে ওয়ারড্রোব ছিল এবং একটু আগে সরানো হয়েছে, সে আলামত পুরাটাই আছে। আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে বাড়িওয়ালাকে ডেকে তুললাম। এতরাতে কেন ডাকছি ইত্যাদি জিজ্ঞাসাবাদের জবাব দিয়ে তাকে বাসায় ধরে নিয়ে আসলাম। বাড়িওয়ালা সরেজমিনে দেখেটেখে লা-জবাব। একটু বলতে চেষ্টা করেছিলেন, আমরা হয়ত ওয়ারড্রোব সরিয়ে দিয়ে---। মুখ থেকে বের করার আগেই আমরা সবাই রৈ রৈ করে উঠায় সেদিকে আর গেলেন না।

তবুও নিজে সমস্ত দরজা জানালা চেক করলেন। সিঁড়ি-লিফট পরীক্ষা করলেন এবং নিচে দারোয়ান-কর্মচারী যারা আছে সবাইকে রাতের বেলাতেই জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। এমনকি বিগত কিছুদিনের মধ্যে কোন ওয়ারড্রোব বাসা থেকে বের হয়েছে কিনা সেটার উত্তরেও নেগেটিভ শুনলেন।
শেষে একটু বলার চেষ্টা করেছিলেন যে আমাদের কোন ওয়ারড্রোবই ছিল না। কিন্তু সেটাতেও সুবিধা করতে পারলেন না, কারন গতবার বাড়িভাড়া নিতে এসে কথাপ্রসঙ্গে পাহাড়ী ফার্নিচারের কথা উঠায়, তিনি ওয়ারড্রোবটা চেখে দেখেছিলেন এবং ওটার ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। কত দাম, কিভাবে কিনেছি ইত্যাদি নানান বিষয়ে শামীমের সাথে আলাপ করেছেন। শামীম পয়েন্ট বাই পয়েন্ট সে আলাপ তুলে ধরলে তিনি কিছুক্ষণ চুপচাপ হা করে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। যেন এতবড় ঘটনার পরেও ফ্যানটা কিভাবে ঘুরছে এইটা একটা আশ্চযের্র বিষয়।

শেষে বললেন, “বাসায় থাকেন আপনারা জিনিস কিভাবে হারিয়েছে সেটা টের পান নাই। আর আমি অন্যবাসা থেকে কিভাবে এর সমাধান করব?” তাঁর কথাও ঠিক। এর কোন সমাধান আমরা কেউই খুঁজে পাচ্ছিলাম না।

বাড়িওয়ালার কাছে এটা শুধু একটা ওয়ারড্রোব হারিয়ে যাওয়া আর আমাদের কাছে এর চেয়ে অনেক বেশি কিছু। আমাদের মনের মধ্যে এমন একটা অস্বস্তি তৈরি হল যে আমাদের পক্ষে শান্তিতে ঘুমানো খাওয়া দাওয়া করা অসম্ভব হয়ে পড়ল। সারাক্ষণ বাসার মধ্যে একটা গা ছমছম করা ভাব। এক অচেনা বাতাসে আমাদের হাসি-আনন্দ সব নিভে গেল। আর ভয় কাজ করতে লাগল, এরপর কি হয়! এর পর কি হয়! চেয়ার গেল, ওয়ারড্রোব গেল। এরপরে কি আলমারী টান দিবে? এটা ভাবতেই আলমারী থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র সব সরিয়ে ফেললাম। দরকারী কাগজপত্র, দলিল দস্তাাবেজ যা ছিল আলমারী থেকে সরিয়ে নিরাপদ জায়গায় রাখলাম। একাধিক কপি করে বিভিন্ন জায়গায় রাখলাম। স্ক্যান করে গুগলড্রাইভেও জমা করলাম। তবুও মন মানে না।

সবচেয়ে কষ্টে পেয়েছে আমার ছেলে। সে তার চাচার ওয়ারড্রোবের নিচের তাকের একটা অংশ জোর-জবরদস্তি করে দখল নিয়েছিল। সেখানে তার পছন্দের সব খেলনা আর দুনিয়ার সব হাবিজাবি নিয়ে জমা করত। এখন ওয়ারড্রোবের সাথে সাথে সেই সবও গায়েব। পুরো বিষয়টা তাকে কোনভাবেই বুঝানো যাচ্ছিল না। আর তাতেই তার জেদ বাড়ছিল। ওয়ারড্রোব গায়েব করার জন্য আমাদের সবাইকে সে কিভাবে শাস্তি দিবে বার বার তার বয়ান দিচ্ছিল।

বাড়িওয়ালা বলল, ‘এটা গৃহভূতের কাজ হতে পারে। এক ধরনের ভূত আছে, নিরীহ টাইপের। মানুষের ক্ষতি-টতি করে না। ঘরে থাকে। মাঝে-মধ্যে দুষ্টামি-টুস্টামি করে।’

গৃহভূত হোক আর যাই হোক, এইভাবে তো আর বসবাস করা যায় না। ওদের কাছে যা দুষ্টামী আমাদের কাছে তা তো মারাত্মক। এরপর কি কাণ্ড ঘটে কে জানে। বাড়ীওয়ালাকে নোটিশ দিয়ে দিলাম। এবার শুরু হল নতুন যুদ্ধ। ঢাকা শহরে যারা আছে, সবারই কমবেশি এই যুদ্ধের অভিজ্ঞতা আছে। একেক বাসা দেখতে একেক অভিজ্ঞতা। অযাচিত, অভদ্র সব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়—
‘আপনারা কয়জন থাকবেন? কাজের লোক কয়জন? ছুটা বুয়া রাখবেন?’
‘বাচ্চা-কাচ্চা কি বেশি দুষ্ট নাকি? ওদেরকে শাসনে রাখবেন। শাসনে না রাখলে ওরা মানুষ হবে না বলে দিলাম (মনে হয় আমরা বাসা দেখতে যাইনি, কিভাবে বাচ্চা পালতে হয় তার ট্রেনিংয়ে গিয়েছি)। আপনাদেরকে দেখে তো মনে হয় না বাচ্চা-কাচ্চা শাসন করতে পারেন।’ (চেহারায় আফসোসের ছাপ)।
‘রাত এগারটায় গেট বন্ধ হবে। বাসায় কোন প্রোগ্রাম করলে বাড়িওয়লাকে জানিয়ে রাখতে হবে।’
‘তিনমাসের এডভান্স দিতে হবে।’
‘ছয়মাসের এডভান্স দিতে হবে। আমার নতুন বাসা কিছু কাজ বাকি আছে সেটা শেষ করে নিতে হবে তো। আপনারাই তো থাকবেন। কাজগুলো হয়ে গেলে আপনাদেরই সুবিধা হবে।’ (যেন ফ্রি থাকতে দেবে!)
‘চাকুরি করেন? নাকি ব্যবসা করেন? আপনার দেশের বাড়ী কোথায়? আপনার বাবা কি করেন? আপনার শ্বশুর কি করেন? (আমার দাদা আর নানার কথা জিজ্ঞেস করেনি, চাইলে তাও করতে পারত, কিন্তু করেনি, বাড়িওয়ালা নিশ্চয় উঁচু বংশীয় লোক!) । আপনার সাথে উনি কে? আপনার শালা? আচ্ছা উনি কি করেন? উনি কি বিয়ে করেছেন?’
‘আপনার অফিসের বসের নাম্বারটা দিবেন। তার সাথে কথা বলতে হবে। আপনার অফিসে ঠিকঠাক মত বেতন দেয় তো?’
‘আপনার আগের বাড়িওয়ালার সাথে একটু কথা বলিয়ে দিবেন।’
এই রকমের যত সব আজগুবি প্রশ্ন আর আজগুবি প্রস্তাব।
এক বাসার দারোয়ান গেট না খুলেই বলল, এখানে তো বিদেশিদেরকে ভাড়া দেয়া হয়। সেই সাথে ভড়কে দেয়ার মত বাসা ভাড়া উল্লেখ করে বলল, “আপনারা কি বিদেশি কারো জন্য বাসা খুঁজছেন?”
আমি বললাম, ‘আমি নিজেই বিদেশী। ইন্ডিয়ান। এজন্য বাঙলা কথা কই?’ দারোয়ানও কম যায় না বলল, ‘পাসপোর্ট আছে?’ পাসপোর্ট দেখিয়ে নিজের দেশে বাসা ভাড়া নিতে হবে এ কথা যদি আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা জানত!
শেষে বললাম, “না, আসলে জ্বীনদেরকে ভাড়া দেয় আমরা এমন বাসা খুঁজছি। আমাদের সাথে জ্বীন আছে! জ্বীনদের পাসপোর্ট লাগে না।”

মজার অভিজ্ঞতাও আছে, এক দারোয়ান কে জিজ্ঞেস করলাম, “বাসার কন্ডিশন কি?”
সে জানাল চমৎকার ব্যবস্থা আছে, “তিনটা হুইবার ঘর, একটা বইবার ঘর, একটা খাইবার ঘর, একটা চুলার দুয়ার আর তিনটা টাট্টিখোলা।”

এই ডটকম সেই ডটকম এ চেক করলাম। সুখকর অভিজ্ঞতা কোথায়? সবগুলোই পরিপূর্ণ আলোবাতাসে ভরপুর বারান্দাওয়ালা বাসা - শুধু লাইট আর ফ্যান চালিয়ে রাখতে হয় সার্বক্ষণিক, এই যা। সব যুদ্ধের শেষ আছে। বাসা খোঁজারও ইতি আছে। নতুন বাসা ঠিক করলাম। সে আরেক ইতিহাস, সেটা অন্যসময় বলা যাবে। তো যথাসময়ে নতুন বাসায় উঠে পড়লাম।

বাসা খোঁজা আর বাসা চেঞ্জের ঝামেলায় ওয়ারড্রোবের বিষয়টা মাথা থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। নতুন বাসায় উঠে ভয় হতে লাগল, যে ওয়ারড্রোব কিংবা চেয়ার নিয়ে গেছে সে যদি নতুন বাসা চিনে ফেলে! যদি নতুন বাসায়ও হানা দেয়! তাহলে কি হবে?
সে ভয় যে অমূলক না, সে যে আমাদেরকে ভুলে নাই, সেটা নতুন বাসায় উঠার দ্বিতীয় দিনেই টের পাওয়া গেল। সেদিনও শামীম মাঝরাতে চেঁচামেচি-চিৎকার করে আমাদের ঘুম ভাঙাল। আজকে আবার কোন কাহিনী হল সেই টেনশানে আমি বিছানা থেকে নামতে পারছিলাম না। সবাই ওর ঘরে গিয়ে দেখল, ওয়ারড্রোবটা চুপচাপ জায়গামত বসে আছে। খুলে দেখা গেল জিনিসপত্র যা ছিল সব একই আছে। কোন নড়চড় নাই। যেই তাকে যা ছিল তাই। এমনকি আমার ছেলের সব খেলনাগুলোও।

বুঝলাম আমরা বাসা ছেড়ে দিল গৃহভূতেরা আমাদের ছাড়েনি। আমাদের সঙ্গী হয়ে নতুন বাসায় চলে এসেছে। এ থেকে আর মুক্তি নাই। একদিন দিয়ে ভালই হয়েছে। ওয়ারড্রোবটা তো অন্তত পাওয়া গেল।

কিন্তু গৃহভূতের বিষয়টা আর কেউ বিশ্বাস করছে না। ভূতেরই যেখানে অস্তিত্ব নাই, সেখানে গৃহভূত আবার কি জিনিস? পরিচিত স্বজনেরা এটা বিশ্বাস তো করেই না উলটো মনে করে আমি ভাওতাভাজি করে এটেনশন নেয়ার চেষ্টা করছি। আমাকে নিয়ে হাসাহাসিও করে, বলে গাঁজাখুরি গুল ছাড়ছি। অবস্থাটা বোঝ! আমি আছি আমার যন্ত্রনায় আর মানুষ ভাবছে আমি এটেনশন নেয়ার ধান্ধা করছি। আমার বন্ধু রাকীব পরিচিত স্বজনের কাছে আমার নামে নানান কথা ছড়াচ্ছে। সেদিন আমাকে ট্যাগ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে, ‘সাপের মাথায় মনি আছে এ হয়ত বিশ্বাস করা যায়। সাপের পা দেখা সম্ভব হইলেও হইতে পারে। কিন্তু এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে মানুষ যে গৃহভূত নামে আজগুবি কাহিনী বানিয়ে মানুষকে বোকা বানানো যেতে পারে তা আগে জানতাম না! কমেন্টে এসে সবাই আমাকে ধুয়ে দিচ্ছে। আমি তাদেরকে যতই বলি আমার পুরনো বাড়িওয়ালার সাথে কথা বল কিংবা আমার বাসায় এসে দেখে যাও তাদের একটাই কথা আমরা তো মিসির আলী নই যে রহস্য অনুসন্ধানে নেমে পড়ব। আমাদের অনেক কাজ আছে। বউ-বাচ্চা, ঘর-সংসার আছে। তোমার কল্পিত গৃহভূতের সন্ধানে নামা আমাদের কাজ না।

অথচ যদি বলতাম বটগাছের ভূতের কাহিনী সবাই বিশ্বাস করত, তেঁতুল গাছ কিংবা তালগাছ বললে তো কথাই নেই। শাকচুন্নী কি মেছো ভূতের কথা বলে কোন হিস্টিরিয়া রোগির কাহিনী শোনালে সবাই একবাক্যে মেনে নিত। একবারও কেউ কিন্তু এত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করত না। মিসির আলীকে ডাকত না। আসলে ভূতে কারো সমস্যা নাই। সমস্যা গৃহ-ভূতে। সবাই ধরেই নিয়েছে ভূত থাকবে তালগাছে, তেঁতুল গাছে। বাস্তবতা হল গৃহ-ভূত আছে, আমার মত যারা এর শিকার তারা জানে যে আছে।

একেবারে সাম্প্রতিক ঘটনাটা বলি। নতুন বাসায় ওঠার পরে বেশিদিন হয় নাই। একদিন শুক্রবার সকালবেলা চা খেয়ে আয়েশ করে পত্রিকার পাতা উল্টাচ্ছি। মেসি-নেইমার-বার্সেলোনা-ম্যানচেস্টার এইসব নানান করিৎকর্মা খবরাখবরে চমৎকৃত হচ্ছি। এর মধ্যেই আমার ছেলের মা, ‘ঐ ঐ - করে চিৎকার দিয়ে উঠল।’ পত্রিকার ভেতর থেকে মুখ উঠিয়ে ওদিকে তাকাতেই দেখি টেবিল থেকে একটা কাঁচের মগ মধ্যাকর্ষনের আহবানে সাড়া দিয়ে নিচের দিকে পতিত হচ্ছে। কিন্তু না------- যা দেখলাম, তা যে না দেখেছে সে জীবনেও বিশ্বাস করবে না। মগটা ফ্লোরের কাছাকাছি গিয়ে থেমে গেল, তারপর স্লো মোশনে গিয়ে ফ্লোরে বসে পড়ল। অদৃশ্য কেউ যেন ক্যাচ ধরে তারপর নামিয়ে রাখল। আমরা স্পষ্ট দেখলাম মগটা শূণ্যে ভেসে রইল, তারপর গিয়ে ফ্লোরে বসে পড়ল।
আমার স্ত্রী আমার দিকে তাকাল। বিষ্ময়ে তার চোখ হীরার মত জ্বলছে। ঘটনা সেও প্রত্যক্ষ করেছে। আমি একা হলে ভাবতাম এ বোধহয় আমার চোখের ভুল। দুইজনের চোখে তো ভুল হতে পারে না। আমার ছেলে বিকট আনন্দে চিৎকার দিল, ‘মা ভাঙ্গে নাই, ভাঙ্গে নাই।’ সে ভয় পাচ্ছিল মগটা ফেলে ভেঙ্গে ফেলায় মায়ের বকুনি খাবে। কিন্তু যখন ভাঙ্গেনি তখন তার উচ্ছ্বাসের সীমা নাই। নিজেই মগটা উঠিয়ে জায়গা মত রাখল।

এর আগে চেয়ার এবং ওয়ারড্রোব নিয়ে ঘটনাগুলো না ঘটলে আমরা হয়ত এটাকে চোখের ভুল কিংবা কাকতাল হিসাবেই মেনে নিতাম। কিন্তু ভূতপূর্ব ঘটনাগুলো আমাদেরকে বুঝিয়ে দিল এখানে নিশ্চয় কোন অশরীরী হাত আছে। ঘটনা যতই নিজেদের পক্ষে থাকুক ঘরের মধ্যে কিছু অশরীরী ঘুরে বেড়াচ্ছে এটা ভাবতেই শরীর কেমন রিরি করে উঠে। কিন্তু আগেরবার বাসা পালটিয়ে এ বাসায় এসেছি। এখন তো দেখছি বাসা নয় সে বা তারা আমাদেরকেই বেছে নিয়েছে। স্বস্তি এটাই এখন পর্যন্ত তেমন কোন ক্ষতি করে নাই। ওয়ারড্রোব নিয়ে গিয়েছিল দিয়ে গেল। হ্যাঁ, চেয়ারটা পাইনি বটে। আজকে মুনিয়ার সাধের মগটা তো বাঁচল।


কদিন বাদে শুক্রবার বিকেলে গেলাম বসুন্ধরা সিটিতে। কেনা-কাটা ছিল কিছু। ওখানে বেশ দেরী হয়ে গেল। শপিং শেষে মুনিয়া বলল, এখান থেকে খেয়ে যাই। এখন আর যেয়ে রান্না করতে পারব না। শামীমও বাসায় নেই। ও গেছে গ্রামের বাড়ি। বাইরে খাওয়ার কথা শুনে ছেলে-মেয়ে দুটো লাফিয়ে উঠল। খেয়ে-দেয়ে যখন বের হলাম তখন তুমুল বৃষ্টি। অনেক কষ্টে রিকশা পাওয়া গেল। রাস্তার জ্যাম কাদা-পানি এইসব ঠেলে-ঠুলে বাসায় আসতে আসতে অনেক রাত হয়ে গেল। সারাপথ মুনিয়া গজরাতে গজরাতে আসল বারান্দার সব জামা-কাপড় ভিজে গেল বলে। ও সেগুলো ঘরে রেখে আসতে চেয়েছিল। দোষটা আমারই। আমি বলেছিলাম, বৃষ্টি আসবে না। ঝকঝকে বিকালবেলা দেখে তো আর জানতাম না আকাশের ষড়যন্ত্র। আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসের মত আমিও ভুল ফোরকাস্টিং করে এখন বকা খাচ্ছি। বৃষ্টি-কাদা-জ্যাম সব কিছুর জন্যই দায়ী আমি! আমিই যেন এইসব দুর্ভোগ ডেকে নিয়ে এসেছি।

ঘরে ঢুকেই মুনিয়া ছুটে গেল বারান্দায়। ভেজা কাপড় দেখে আমার উপর আরেক চোট যাবে সেটা বুঝতে পারছি। অপরাধ হালকা করার জন্য নিজে থেকেই ছেলে-মেয়ে দুটোকে ঘুমানোর জন্য রেডি করতে থাকি। হঠাৎ মুনিয়ার চিৎকার, “তাড়াতাড়ি এদিকে আসো। তাড়াতাড়ি আসো। দেখে যাও।”
আমি ভয় পেয়ে দৌড় দিলাম। খাটের উপরে একগাদা শুকনা কাপড়। ঐ দিকে ইশারা করে বলল, “দেখ।’’
দেখ! আরে বাবা শুকনা কাপড় দেখার কি আছে। ও, বুঝলাম সে কাপড় ঘরে রেখে গিয়েছিল, তাই ভিজে নি, সেটাই সে দেখাতে চাচ্ছে। কিন্তু না, সে আসলে এটা বোঝাতে চায় নি। সে যা বোঝাতে চেয়েছিল তা আরো মারাত্মক। তা হল, এই কাপড় বারান্দাতেই ছিল। কেউ বৃষ্টির আগে ঘরে এনে রেখেছে। একজন আরেকজনের চোখের দিকে তাকালাম। আমি ভাবছিলাম আমাদের কি ভয় পাওয়া উচিত না আনন্দিত হওয়া উচিত!

রাতের বেলা মুনিয়া আমাকে ফিসফিস করে বলল, ‘ঘরের ভেতরে অশরীরী ঘুরে বড়াচ্ছে ভাবতেই কেমন যেন গা চমচম করে।’ আমি বললাম, ‘তা করে, কিন্তু আমাদের কোন ক্ষতি তো করছে না।’
‘তা করছে না। কিন্তু ঘরে বাচ্চা-কাচ্চা আছে আমার কিন্তু ভয় ভয় লাগছে। কখন যে কি হয়!’
ভয় তো আমারও লাগছে। আমি তবু সেটা প্রকাশ করলাম না। বরং মুনিয়াকে অভয় দিতে লাগলাম। সকাল থেকে আমরা সহজ স্বাভাবিক জীবন যাপন করছিলাম। কোথাও কোন ছন্দপতন লক্ষ্য করলাম না।

বেশ ক‘দিন বাদে রাকীব তার বাসায় আমাদেরকে দাওয়াত দিল। গিয়ে দেখি বেশ লোকজন। তার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন। আমাদের কমন বন্ধুবান্ধবেরা তো আছেই। ছেলেরা সবাই ড্রইং রুমে লাগামহীন আড্ডা দিচ্ছে । আর মেয়েরা ভেতরের ঘরে। এর মাঝে সবাই আমাকে নিয়ে পড়ল। ‘ভাই আপনার পোষা ফার্নিচার-ভূতের কি অবস্থা?’ রাকীব বলল, ‘সবাই তোর ভূতের কাহিনী শোনার জন্যই আমাকে ধরেছে।’ মেজাজটাই বিগড়ে গেল। এখানে আসাটাই বিরাট একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু ওদের চাপাচাপি তে শেষ পর্যন্ত শুরু করতে হল গৃহ-ভূতের কাহিনী। ওরা হাসে। ছোট বাচ্চারা অবিশ্বাস্য আজগুবি গল্প বললে আমরা যেমন হাসি। একজন বলে, ‘ওয়ারড্রোবটা বোধ হয় খাটের নিচে ধূলো ময়লার ভেতরে লুকানো ছিল।’ বাকীরা হা হা হা করে অট্টহাসি দেয়। আমি কি গোপাল ভাঁড় যে হাসির গল্পের আসর বসিয়েছি। করোটির নিচে নরম মেজাজ মোটেই বিষয়টি পছন্দ করছে না। কপালে ভাঁজ পড়ছে। সে দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে আরেকজন বলল, ‘ভাই তালগাছে, তেঁতুল গাছে ভূত থাকে জানি। কিন্তু আপনার বাসারগুলো তো ভূত না কুলি। ওয়ারড্রোব নিয়ে টানাটানি। ঘরে এত লোকজন তবু কাউকে ধরে না। মাল-পত্র নিয়ে লুকোচুরি।’

ঘটনা যদি বিশ্বাসই না করবে তবে বলতে চাপাচাপি করা কেন বাবা। আমি আছি আমার যন্ত্রণায়, এরা আছে মজা করার তালে। রাকীবের এক বন্ধু বলল, ‘শুধু জামাকাপড় ঘরে এনে দেয়, রান্না-বান্না করে দেয় না? এই কাজের লোকের আকালের দিনে এমন গৃহপালিত ভূত পেলে তো ভালই।’ ওর এক কলিগ বলল, ‘ভাই ভূতের বাচ্চা-কাচ্চা থাকলে আমাদেরকেও দিবেন একটা করে।’ রাকীব বলল, ‘ওর বাসার এইসব ঘটনা যখন ঘটে তখন ওতো ঘুমিয়ে থাকে, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে।’ হা হা হা। হাসির হল্লা বয়ে যাচ্ছে যেন। নিজেকে বেশ অপমানিত মনে হল। আমি তো কোন গল্প ফাঁদি নাই, যা সত্য তাই বলেছি। তবে কেন বাবা আমাকে নিয়ে এত হাসাহাসি। রাকীবের বউয়ের হাতের অতি সুস্বাদু সুখাদ্যগুলোও গলা দিয়ে নামতে চাইল না।

মেজাজ খারাপ করে বাসায় আসলাম। জামা কাপড় ছেড়ে সোফায় বসলাম। বসে বসে মোবাইল থেকে রাকীবের নাম্বার ডিলিট করলাম, ফেসবুকে আনফ্রেন্ড করলাম, মেসেঞ্জারেও ব্লক করে দিলাম। ওর সাথে আর কোন সম্পপর্ক নাই। হঠাৎ ফ্যানের দিকে চোখ আটকে গেল। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছিল। ঠাণ্ডা আবহাওয়া তাই ফ্যান বন্ধ। যা দেখলাম তার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না। কেউ একজন ফ্যানের ধূলো-ময়লা মুচছে। যে মুচছে তাকে দেখছি না। যা দিয়ে মুচছে তাও দেখছি না। শুধু কেউ যে এখন এটাকে ধূলো ময়লা পরিষ্কার করে সাফ-সুতরো করে দিচ্ছে সেটা বোঝা যাচ্ছে। ধূলো-ময়লা উড়ে গিয়ে ফ্লোরে জমা হচ্ছে। আমি তাকিয়ে রইলাম সেদিকে। ফ্যানটা আমার পরিষ্কার করার কথা ছিল। মুনিয়া ক‘দিন ধরেই বলছিল, এত ময়লা হয়েছে। আলসেমির জন্য করা হয় নাই। বিষয়টা কেন জানি আমার মধ্যে ভয়ের পরিবর্তে একটা ভাললাগা তৈরি করে দিল। ভুলে গেলাম রাকীবের বাসার মেজাজ খারাপ করা সময়।

পরদিন রাত তিনটার সময় এক অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন। বেশ ক‘বার ফোন দিয়েছে। এত রাতে কে অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন করে ঘুম ভাঙায়! ফোন দিয়েই যায়। মুনিয়া বলে হয়ত পরিচিত কেউ কোন বিপদে পড়েছে। ধর। ফোন ধরে কণ্ঠ চিনে ফেলি। রাকীবের গলা।
‘দোস্ত, তোর ওয়াড্রোবটা কিভাবে নিয়েছিল।’ মেজাজটা চূড়ান্ত রকমের খারাপ হয়ে গেল। নিশ্চয় রাত জেগে আড্ডা দিচ্ছে। আর ফোন করে আমাকে যন্ত্রণা দিচ্ছে, মজা নিচ্ছে। বললাম ‘তুই এই কথার জন্য রাত-নিশিতে ফোন দিছস? ফাইজলামির একটা সীমা তো থাকে।’
‘দোস্ত প্লিজ, আমিও বিপদে পড়েই তোরে ফোন দিছি।’ মরিয়া হয়ে ও বলে চলল ‘আমার বাসার আলমারিটা খুজে পাচ্ছি না।’
‘খাটের নিচে খুঁজে দেখ, দোস্ত।’
‘দোস্ত, তোর বদদোয়া লাগছে। একটু হেল্প করনা প্লিজ।’
‘আমি কি করতে পারি দোস্ত।’
‘দোস্ত, সব ইম্পর্টেন্ট কাগজ, সার্টিফিকেট, দলিল-পত্র সব ওখানে। আমারে একটু হেল্প কর না, প্লিজ।’ একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে বেচারা।
আমি বললাম, ‘দোস্ত, আমার আসলেই জানা নাই এ ক্ষেত্রে কি করতে হবে। সত্যি বলছি, আমি জানি না। তবে অপেক্ষা করে দেখ, কি হয়। আমার ক্ষেত্রে যা হয়েছিল, হয়ত ফেরত আসতেও পারে। আল্লা আল্লা করা ছাড়া তো কোন রাস্তা দেখি না।’
আমি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। মিথ্যে বলব না, আমার একটা আরামের ঘুম হয়েছিল।
সকাল বেলা কাজের মেয়েটা ঘর ঝাড়ু দিতে গিয়ে বিকট চিৎকার।
ড্রইং রুমে ঢাউস সাইজের একটা আলমারি।
রাকীব কে ফোন দিলাম। তাড়াতাড়ি বাসায় আয়। আসার সময় তোর আলমারির চাবিগুলো নিয়ে আসবি। সেদিনই আলমারি ফেরত নেয়ার ব্যবস্থা হল। ওতে যা ছিল সব একই আছে।
যাওয়ার সময় বললাম, ‘আমার ভূতদের সালামি দিবি না?’
তার অবস্থা এমন যে, চাইলে সে রাজত্ব লিখে দিবে। আমি শুধু বললাম, ‘ওদের অপমান করিস না।’
এককান দুইকান করে ঘটনা বাড়িওয়ালা পর্যন্ত পৌঁছে গেল। পরদিন সকালে বাড়িওয়ালা এসে বলল, ‘দেখেন ভূত-জ্বীন নিয়ে আমার কারবার না। আমার কারবার মানুষ নিয়ে। জ্বীন-ভূত নিয়ে বাড়ির বদনাম হোক এটা আমি চাই না।’
আরে একি আপদ। মাত্র বাসায় উঠার ঝামেলা শেষ করে যদি বাড়ি ছাড়ার নোটিশ পাই তবে কেমন লাগে বল! তাকে কোনভাবে বুঝানোই যাচ্ছে না। শেষে চালাকি করে আমি বললাম, ‘যা বলছেন ভেবে-চিন্তে বলছেন তো? ভূতেরা কিন্তু আমার পোষা বিশ্বাস না হয়, ওকে ফোন করে জিজ্ঞেস করুন, বলে রাকীবের একটা কার্ড দিলাম।
বাড়িওয়ালা ঘাঘু মাল, সেসবকে কোন পাত্তাই দিল না। বলল, তার নোটিশের কোন নড়চড় হবে না।
আমিও বললাম, ঠিক আছে, ‘ভূতেরা যদি মাইন্ড করে, পরে কোন কিছুর জন্য আমাকে দায়ী করবেন না যেন।‘
‘ওসব ভূত-পুত আমার দেখা আছে। আপনি বাসা খোঁজেন। আমার মনে হয় একটু পুরনো-ভাঙাচোরা টাইপের বাড়ি হলে আপনার জন্য ভাল হবে। আপনার পোষা ভুতেরা ওটা পছন্দ করবে বেশি।‘
কি আর করা। এমন যন্ত্রণায় আগে পড়িনি কখনো। আবার সেই বাসা পাল্টানোর বিশাল ঝক্কি। মনে মনে একটু আশা করতে লাগলাম ভূতেরা যদি একটু সাহায্য করে।
পরদিন ভোরবেলা কলিংবেলের পর কলিংবেল। দরজায় করাঘাত। ভেঙে ফেলবে যেন। বাইরে বাড়িওয়ালা। দেখে মন বিষিয়ে গেল। একবার মনে হল বলি, পরে আসেন। কিন্তু যা ভাবি তা সবসময় করতে পারি না। খুললাম।
খুলতেই সে আমার দুই হাত ধরে বলল, ‘হুসাইন সাহেব রাগ করবেন না, প্লিজ। বাসা খোঁজার দরকার নেই। কাল হঠাৎ কার কাছে কি শুনে কি বলেছি, না বলেছি; কিছু মনে করবেনা প্লিজ।
আমি বললাম, ‘কি হয়েছে, আপনি এমন করছেন কেন?’
‘হুসাইন ভাই, আপনি তো সবই জানেন। মাফ করে দিয়েন ভাই। যত দিন ইচ্ছা এই বাসায় থাকবেন। নিজের মনে করেই থাকবেন। বলে চলে গেল। বুঝলাম গৃহভূতেরা নিশ্চয় কোন না কোন থেরাপি দিয়েছে বাড়িওয়ালাকে।
মুনিয়া বলল, ‘গৃহ-ভূত একেবারে খারাপ জিনিস না।’
আগে আমি দেখলে হাত কচলে বাড়িওয়ালাকে সালাম দিতাম। এখন সে আমাকে তিন মাইল দূর থেকেই হাত উঁচিয়ে সালাম দেয়। হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়।
যারা ঢাকা শহরে থাকে তারা জানে, বাড়িওয়ার কাছ থেকে এই ধরনের সমীহ পাওয়া যে, কত বড় পাওয়া।
--গৃহভূতের কাণ্ড
--আন্ওয়ার এম হুসাইন

[গল্পটি কিশোর বাংলা বিজয় দিবস সংখ্যায় প্রকাশিত। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২১ এ পেন্সিল পাবলিকেশন্স থেকে আসছে আমার গল্পগ্রন্থ "প্রত্যুষের গল্প"।]

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১:৪১
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×