আগে আমাদের এইটা বুঝতে হবে যে জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে কি না। অন্য যেকোন বিষয়ের মত জাতীয় সঙ্গীত বিষয়েও কি সবার মতামত দেয়ার অধিকার আছে?
একটা সুস্থ গণতান্ত্রিক পরিবেশে যে কেউ যে কোন বিষয়ের পক্ষে বা বিপক্ষে মত দিতে পারে। জাতীয় সঙ্গীতও তাই।
আমার জাতীয় সঙ্গীত ভালো লাগে। সেই ভালোলাগা যদি আরেক জনের উপরে চাপায়া দিতে হয় তাহলে সেইটা তো আর জাতীয় থাকে না। সেইটাকে জাতীয় করতে হলে যার ভালো লাগে না তার কথাটাও মনযোগ দিয়া শুনতে হবে। তার সাথে তর্কবিতর্কের রাস্তাটা খোলা থাকতে হবে। এখন যদি তর্ক-বিতর্কের রাস্তা বন্ধ করে বলা শুরু করি তুমি জাতীয় সঙ্গীতের বিরুদ্ধে বলেছো মানে তুমি আসলে একটা শয়তান তখন সমাজে সুস্থ মতপ্রকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। এবং এর ফাঁকতালে ফ্যাসিজম ঢুইকা পড়ে।
এখন এই প্রজন্মের কেউ যদি প্রশ্ন করে এই যে জাতীয় সঙ্গীত আপনারা যখন ঠিক করছিলেন, তখন কি আমারে জিগায়া ঠিক করছিলেন। যখন আমারে জিগান নাই তখন আমার ঠেকা কি সেই জিনিস মানার? এর উত্তরে যদি বলেন, এইটা সবাই জাতীয় সঙ্গীত বইলা মাইনা নিচে তুমিও মাইনা নেও। তাহলে তার উপরে এইটা চাপায়া দিলেন। ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, সামাজিক কিংবা ভাষাগত অথবা অন্য যে কোন কারণে এইটা তার ভালো না লাগতে পারে। তাহলে তার সেই ভালো না লাগাকে আমরা ডিল করব কিভাবে?
সুতরাং জাতীয় সঙ্গীতের এই প্রশ্নটা একটা তাত্ত্বিক প্রশ্নও বটে।
প্রথমত আমাদেরকে তার সেই ভালো না লাগার অধিকারকে স্বীকার করতে হবে, সম্মান জানাতে হবে। তারে বলব, যেহেতু দেশেরভাগ মানুষ এইটারে জাতীয়সঙ্গীত হিশাবে ওন করে, তুমি এইটা মাইনা নেও। গণতন্ত্রে যেমন সংখ্যাগরিষ্ঠের সরকারকে সংখ্যালঘিষ্টরা মাইনা নেয়। তুমিও এইটারে জাতীয় সঙ্গীত মাইনা নেও।
সে কি তাহলে নতুন কোন সঙ্গীতকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে হাজির করতে পারে?
হ্যাঁ পারে। অর্ধশত বছর আগে তারে না জিগায়া কেউ যদি তার জন্য জাতীয় সঙ্গীত ঠিক কইরা দিতে পারে, তবে সেও নিজের পছন্দের জাতীয় সঙ্গীত নিয়া হাজির হইতে পারতে হবে। আর তার সঙ্গীতরে যদি সবাই জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে মাইনা নেয় তবে সেইটাই জাতীয় সঙ্গীত।
সমাজে যদি এই তর্ক বিতর্কে অবকাশটুকু না থাকে তবে সেই সমাজে ফ্যাসিবাদের রাস্তা উন্মুক্ত। বেহুলার বাসর ঘরে যেভাবে সাপ ঢুকেছিল সেভাবে।
এটুকুন বুঝলে বর্তমান জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে কথা বলতে পারি।
এই জাতীয় সঙ্গীত নিয়া আগেও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছিল। ঢাকার একজন বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক আফতাব আহমাদ একবার জাতীয় সঙ্গীত নিয়া প্রশ্ন তুলেছিলেন। সম্ভবত বলেছিলেন, জাতীয় সঙ্গীত কোন ঋষিবাণী নয় যে একে পরিবর্তন করা যাবে না। তখন তাকে বেশ হেনস্থা হতে হয়। তাঁর রুম-টুম পোড়ানো বা ভাংচুর করা হইছিল।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের নজীর আছে। গুগল করলে পাইবেন।
আমি এত কথা কইতেছি শুধু এইটা বোঝানোর জন্য যে জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন করা যায়, এ নিয়ে প্রশ্ন করা যায়। এইটা বেদবাক্য না। এইটারে বেদবাক্য বানানোও ঠিক না।
তো আমাদের জাতীয় সঙ্গীত কি পরিবর্তন করতে হবে?
আমাদের জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে অনেকের অনেক প্রশ্ন আছে। যৌক্তিক প্রশ্ন। এইটা যেমন একটা দিক, তেমনি এর বিপরীত দিকও আছে। এত বছরে এই সঙ্গীতকে ঘিরে অনেকের আবেগ-অনুভূতি তৈরি হইছে। এই পাল্টানোর কথা বললে, তাদের খারাপ লাগবে।
একটা তর্ক উপস্থিত হবে। যেমনটা অলরেডি হইছে।
এখন এই তর্ক বিতর্কের সময় না। আরো অনেক গুরত্বপূর্ণ কাজ আছে দেশে। সেই সব কাজে মনোনিবেশ করা উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:১২