somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাধবকুন্ড আর চঞ্চল ভাইয়ের আত্মার আত্মকাহিনী - ১

৩০ শে নভেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এবার কুলাউড়া এসে চঞ্চল ভাই’র অবস্থা দেখে আমি তো হতবাক। তার মনটা একটু ভালো করার চেষ্টায় অনেক কথা বলার চেষ্টা করলাম, জানার চেষ্টাও নেহায়েত কম হল না। ফল হল এই, উনি আমাকে নিয়ে মাধবকুন্ড যাবার প্ল্যান করে ফেল্লেন। আপত্তি না করে উনার সাথে বেরিয়ে পড়লাম।

মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের সশব্দ উপস্থিতি যেন টারশিয়ারি যুগের পাহাড়ের নীরবতা ভাঙ্গার এক অবিশ্রান্ত প্রচেষ্টা। উঁচু থেকে সশব্দে পড়ে অবিরাম এ স্রোতধারার চলার যেন কোন শেষ নেই। এর শব্দ পাহাড়ের গায়ে প্রতিধ্বনি হয়েই যেন বার বার ফিরে আসে। নানান নাম-না-জানা গাছ-পালা, লতা-পাতা আর সবুজের সমারোহে এখানে জীবনের উদ্বাত্ত উপস্থিতি।নবীন-প্রবীণের উচ্ছ্বাস আর ঝরনার শব্দও এ পাহাড়ের মাঝে প্রাণ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে না। বিজ্ঞানের অবদানে মানুষের দূরের পৃথিবী আজ হয়েছে অনেক কাছের, সেই সাথে প্রকৃতি হয়েছে বিপন্ন, নিঃস্ব। সভ্যতা তার সব সৌন্দর্য কেড়ে নিয়েছে। প্রায় দশ বছর পর মাধবকুন্ড এসে এর কোন ব্যত্যয় দেখলাম বলে অন্ততঃ আমার মনে হল না।

এখানে এসে চঞ্চল ভাইয়ের মনের বন্ধ জানালাগুলো যেন খুলে গেল। সেই কবে, প্রায় ৮৬ কি ৮৭ সালের দিকে, তখন উনি এখানে আসতেন এ্যাডভেঞ্চার এ। তেল-চিনি-চাল আর চুলো নিয়ে চলে আসতেন এ প্রকৃতির মাঝে। পাশের চা-বাগান আর খাসিয়া পুঞ্জিতে তার তখন অবাধ চলাফেরা। তার মুখ থেকে শোনা দু’একটি গল্পের কথা এখানে না বল্লেই না।

অনীতা আর অসিত

মাধবকুন্ডর পাশেই খাসিয়া পুঞ্জি। অনীতা এ গ্রামের রাণীর ছোট মেয়ে। তাদের প্রথা অনুযায়ী সেই হবে গ্রামের পরবর্তী রাণী। সবাই তাকে স্নেহ করে, সেই সাথে ভবিষ্যত রাণী হিসেবে সম্মানও করে। পাশের এক চা বাগানে মিশনারি স্কুল শেষে অনীতা তখন কলেজে যায়। ধীরে ধীরে বনের আশেপাশের গাছ-গাছালি বড় হয়, সেই সাথে বড় হয় অনীতাও। কলেজ পাশ দিয়ে সে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার জন্য তৈরী। মা-বাবা আর গ্রামের সকলের চোখের পানি আর অজানা ভয়-ভীতি - সব পেছনে ফেলে অনীতা চলে আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। লোক-প্রশাসনের ছাত্রী অনীতা তখন শুধুই একজন ছাত্রী। দেখে বোঝার উপায় নেই সে এক অখ্যাত খাসিয়া গ্রামের রাণী হতে চলেছে।

অসিত মা-বাবার একমাত্র আদরের সন্তান। অনেক পূজা-অর্চনা দিয়ে আর মানত করে তবে এ সন্তানের মুখ দেখেছেন তারা। কাজেই ছেলের কোন বায়না আর ফরমাসই অপূর্ণ থাকেনি। তবে অসিত বুদ্ধিমান ছেলে, পড়াশোনায়ও ভালো। সেও একই সময়ে এলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে। অনীতার সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠলো অনেক অল্প সময়েই। অনীতা গ্রামের মেয়ে, পাহাড়ী মেয়ে। শহুরে আর দশটা মেয়ের থেকে সে যেন কেমন আলাদা। তার সংযমী আচরণ, বিচক্ষণতা আর সহজ-সরল জীবন সহজেই আকৃষ্ট করে অসিতকে। কিন্ত্ত সংসার নিয়ে ভাবার সময় তখন তার নেই, সে তখন ফার্স্ট ক্লাস ধরে রাখার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় ব্যস্ত।

দেখতে দেখতে সময় পেরিয়ে যায়। অনীতা ভালো রেজাল্ট করে, অসিতেরও ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে সবাই যার যার গন্তব্যে চলে যায়। অনীতা ফিরে আসে তার গ্রামে। তখন তার মা’র বয়েস হয়েছে, সময় এসেছে তার দায়িত্ব বুঝে নেবার। এদিকে অসিত ব্যাংকে ভালো চাকরী পায়, কিন্ত্ত তার মন ততদিনে বুঝতে পেরেছে অনীতার অভাব। অনীতার অনুপস্থিতিতে তার বু্কটা হু হু করে ওঠে। মা-বাবাকে জানায় তার পছন্দের কথা। তখন তার মা তাকে জিজ্ঞেস করে,‍‍‍‌‌‌‌‌‌ সে কখোনো অনীতাকে বলেছে কিনা, তাদের প্রেম কতদিনের ইত্যাদি। অসিত হেসে ফেলে। ভাবে, শুধু তো বন্ধুত্বের কথাই বলা হয়েছে, আসল মনের কথাটা বলা হয়নি কখোনোই। তখন মোবাইল ফোন ছিলো না, ছিলো না ই-মেইলও। চিঠি লিখে সে অনীতাকে জানায়, সে বেড়াতে আসছে তাদের গ্রামে। (চলবে)
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×