somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইউরো ২০১২ প্রিভিউ পর্ব ২ - নেদারল্যান্ডস

০৯ ই মে, ২০১২ রাত ১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ইউরো ২০১২ প্রিভিউ পর্ব ১ – জার্মানী

পর্ব ৩-৪-৫-৬ ও আছে বা আসছে, কোন কারনে আমার পোস্ট আর্কাইভে না দেখালে আমার প্রোফাইলে দেখে নিবেন।

বোনাস ছবি পোস্ট - ইউরো ২০১২ এর সব অফিসিয়াল জার্সি

মাত্র গতকালই প্রিভিউ পর্ব ১ দিলাম, আজ দিচ্ছি পর্ব ২ – নেদারল্যান্ডস। গ্রুপ বি থেকে পর্তুগাল নিয়ে লেখার ইচ্ছা ছিল এই পর্বে, কিন্তু তারা এখনও তাদের প্রিলিমিনারী স্কোয়াড ঘোষনা না করায় নেদারল্যান্ডস নিয়ে লিখছি। আমি প্রাইমারী স্কোয়াড থেকেই প্রিভিউ লিখছি, আশা করি বিগ স্টাররা কেউই ২৩ জনের মুল স্কোয়াড মিস করবে না!

পার্সোনালী হল্যান্ডের খেলা আমার খুব একটা ভাল লাগে যে তা না, এর কারন মুলত তাদের ইতিহাস। টোটাল ফুটবলের দেশ এখন আর টোটাল ফুটবল খেলে না, ক্যালকুলেটীভ পজিশনাল গেম খেলে সাফল্য নিয়ে আসে। সাফল্যের কথা শুনে অনেকে নাক উল্টাতেও পারেন, কি বা অর্জন করেছে তারা, কিন্তু রিসেন্টলী ইউরো বাছাই এর ফল দেখলে দেখবেন ১০ ম্যাচের মধ্যে ৯টাই জিতেছে তারা। তবে যতই ম্যাচ জিতুক, আমার মনে হচ্ছে না ইউরোতে সেমির উপরে যেতে পারবে। আবার গ্রুপ থেকেই বাদ পরে যেতে পারে, কারন এই গ্রুপের অন্য দল হচ্ছে জার্মানী, পর্তুগাল আর ডেনমার্ক। রিস্ক কিন্তু আছেই।

এটা এই ইউরোর জার্সি, কমলা কালার এই প্রথম আমার ভাল লাগলো।



কোচ বার্ত ভ্যান মারউইক রিস্ক ফ্রি অ্যাটাকিং খেলায় দলকে, অ্যাটাকিং ফ্রন্টলাইনে এদের এত প্রতিভা যে ২ জন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার থাকার পরেও এভাবে খেলেই সাফল্য পাওয়া যায়। যে কারনে মনে হচ্ছে নেদারল্যান্ডসের মুল ফর্মেশন থাকবে ৪-২-৩-১ আর ৪-২-২-২ এর মধ্যে।

প্লেয়ার রিভিউতে চলে যাই সরাসরি।

গোলকিপিং



ঈর্ষনীয় লাইনআপ এখানে। আন্তর্জাতিক পার্ফরমেন্স বিচারে হয়ত রোমার মার্টেন স্টেকেলেনবার্গের খেলার কথা মুল একাদশে, কিন্তু এবার নিউক্যাসেলের হয়ে টিম ক্রালের যেরকম পার্ফরমেন্স, মাত্র ২ টা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেললেও টিম যদি মুল একাদশে শুরু করে, অবাক হওয়ার কিছু নাই। সোয়েসনা সিটির মাইকেল ভ্রম হয়ত তৃতীয় কীপার থাকবে, আবার আয়াক্সের কিলেসেন বা ফেইনোর্দের মুল্ডার পোল্যান্ড-ইউক্রেনের প্লেনের টিকিট পাওয়ারও ভাল সুযোগ আছে।

সেন্ট্রাল ডিফেন্স



এখানে দুইটা স্থানের জন্য অটোমেটিক চয়েস ভাইস ক্যাপ্টেন জন হেইটিঙ্গা, যে সেন্ট্রাল ডিফেন্সে খেলতে পারে আবার প্রয়োজনে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডেও খেলতে পারে। ফার্স্ট টাইম ট্যাকল বা চার্জ হেইটিঙ্গাই করবে টিমে। আর একটা পজিশনের জন্য মোটামুটি নিশ্চিত মালাগার জরিস মাথিসেন। তবে এরা ছাড়াও বেশ ভাল ব্যাকআপ আছে নেদারল্যান্ডসের – উইলফ্রেড বুমা আর খালিদ বুলারোজ। প্লাস পয়েন্ট হল, উইলফ্রেড বুমা লেফট ব্যাকেও দুর্দান্ত আর বুলারোজ রাইট ব্যাকেও খেলতে পারে। ভার্সেটালিটি অ্যাট ইটস বেস্ট! সেন্ট্রাল ডিফেন্সে আরও একজন দুর্দান্ত ব্যাকআপ আছে, ফেইনোর্দের রন ভ্লার।

রাইট আর লেফট উইং ব্যাক



রাইট ব্যাকে অটো চয়েস হল আয়াক্সের গ্রেগরী ভ্যান ডার উইসেল। ব্যাকআপ সাপোর্ট দেয়ার জন্য বুলারোজ তো আছেই। লেফট ব্যাকে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়ে নেদারল্যান্ডসের এরিক পিটারস ইনজুরীর জন্য ইউরো মিস করায়, তাই বুমাকেই লেফট সাইড সামলাতে হবে। মাত্র ১৮ বছরের জেট্রো উইলিয়েমস হয়ত এই কারনেই মুল ২৩ জনের দলে ঢুকে পড়তে পারে বুমার ব্যাকআপ সাপোর্ট হিসেবে।

পুরো ডিফেন্স লাইনে হয়ত সেরকম বড় স্টার নাই, কিন্তু ওই যে বার্ত ভ্যান মারউইক, ডিফেন্সের সিঙ্ক্রোনাইজেশন দুর্দান্ত ভাবে করতে পারেন। ইউরো বাছাইতে ১০ ম্যাচে নেদারল্যান্ডস গোল খেয়েছিল মাত্র ৮টা।

সেন্ট্রাল ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার



এখান থেকে নেদারল্যান্ডসের স্টার সমুদ্র শুরু হল। দুইটা পজিশনের অটোমেটিক চয়েস হল ক্যাপ্টের মার্ক ভ্যান বমেল আর ম্যান সিটির নাইজেল ডি জং। দুজনেই মাসকুলার আর শারিরীকভাবে আক্রমনাত্মক, প্রতিপক্ষের স্ট্রাইকার আর অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারদের কে যে পুরো ৯০ মিনিট অসংখ্য লাথি আর চার্জ সহ্য করে টিকে থাকতে এখন থেকেই মেন্টাল প্রিপারেশন নেয়া শুরু করতে পারে। এই দুজনের মধ্যে একটু উইক পয়েন্ট হল ভ্যান বমেল, বয়স হয়েছে তো তাই আগের মত স্পিড নাই, তবে ট্যাকলের জোর ঠিকই আছ। এই সিজনে এসি মিলানের হয়ে এভারেজ পার্ফরমেন্স হলেও গত সিজনে দুর্দান্ত ছিল।

ম্যাচের মধ্যে ভ্যান বমেলকে উঠিয়ে নেয়া হলেও ডিফেন্স থেকে হেইটিঙ্গা কাভার দিতে পারবে, আবার সাথে ২৩ জনের দলে ভ্যালেন্সিয়ার মাদুরোও থাকবে মোটামুটি নিশ্চিত ভাবেই। বাকি ব্যাকআপদের কে অত ভাল করে চিনি না বলে নাম দিতে পারছি না।

রাইট আর লেফট উইঙ্গার



রাইট আর লেফটে রোবেন আর ডার্ক কিউট মোটামুটি ধরে নেয়া যায় বেস্ট ইলেভেনে খেলবে। দুজনেই সাইড সোয়াপ করে খেলতে পারে, তাই সমস্যা হবে না। রোবেনের ক্লাস নিয়ে বেশী বলা আমার সাজে না, পুরা একটা ক্লাস, লুইস ফিগোর কথা বারবার মনে করিয়ে দেয় আমাকে। ডার্ক কুইটকে নিয়ে যদি সন্দেহ থাকে তাহলেও সমস্যা নাই, ব্যাকআপ হিসেবে বার্সার ইবাহিম আফেলাই (রাইট) আর পিএসভির উইনালডাম (লেফট) একেবারে খারাপ না। এসি মিলানের উর্বি এমানুয়েলসনও থাকবে আশা করি, ভার্সেটাইল একটা প্লেয়ার, মুলত লেফট উইঙ্গার হলেও সেন্ট্রাল অ্যাটাকিং মিডেও খেলতে পারে।

সেন্ট্রাল অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার



এইখানে একটা পজিশন, যেখানে নিশ্চিতভাবেই থাকবে ওয়েসলি স্নাইডার। এই সিজনের শেষের দিকে সেই পুরান স্নাইডারের ঝলক দেখা গেছে, সর্বশেষ মিলান ডার্বিতে তো এসি মিলানকে ভালই নাচাইছে একা। ব্যাকআপ কে? নাম শুনলে ভয় পাবেন, স্পারসের রাফায়েল ভ্যান ডার ভার্ট আর পিএসভির কেভিন স্ট্রুটম্যান। এই তিনজনের মধ্যে কেভিন স্ট্রুটম্যানের নাম কম পরিচিত, কিন্তু একে বলা হচ্ছে নেদারল্যান্ডসের এমার্জিং ট্যালেন্ট। সেন্ট্রালেও খেলতে পারে আবার লেফট উইঙ্গারেও সমান পারদর্শী।

স্ট্রাইকার



এখানেও একই সমস্যা, রবিন ফন পার্সি অটোমেটিক চয়েস হলেও শালকের ক্লাস-জান হান্টেলারকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখা একটা বড় আফসোসের ব্যাপার। ইতিমধ্যেই ডাচ মিডিয়াতে কথা হচ্ছে কিভাবে ফন পার্সি আর হান্টেলারকে একসাথে খেলানো যায়, এমনকি কোচ নিজেও স্বীকার করেছেন এদের দুজনকে কিভাবে একসাথে খেলানো যায় মুল একাদশে সে ব্যাপারে চিন্তা করবেন।



শালকের হয়ে এই সিজনে ৪৭ ম্যাচে যে ৪৮ গোল করতে পারে, তাকে আপনি কিভাবে বেঞ্চে বসিয়ে রাখবেন!!!

যারা থাকলে ভাল হত

অবশ্যই এরিক পিটারস। আরও মিস করব রায়ান বাবেলকে।

ইউরো ২০১২ প্রেডিকশন

গ্রুপ অফ ডেথে কোন প্রেডিকশন খাটে না আসলে, তবে গ্রুপ পর্ব পার করতে পারলে আমি ধরে রেখেছি ম্যাক্সিমাম সেমিফাইনাল পর্যন্ত যেতে পারবে। খেলার স্টাইল খুব একটা দর্শনীয় না, বরং বমেল আর ডি জং এর লাথিমারার ইতিহাস এত সমৃদ্ধ (!), বিউটিফুল গেম অফ ফুটবলে ছোট হলেই একটু কালো দাগ থাকে।

তবে দিন শেষে ফলটাই আসল, আর সেখানে নেদারল্যান্ডস যথেস্টই সফল। চ্যাম্পিয়নশীপ ম্যাটেরিয়েল লাগে না আমার কাছে যদিও তারপরেও নিজেদের দিনে সব ম্যাচেই জেতার সামর্থ আছে এদের।

এই টিম থেকে প্লেয়ার অফ দ্যা টুর্নামেন্ট কে হতে পারে, ফন পার্সি না স্নাইডার না রোবেন? আমার ভোট রবেন, যদি মুড়ি মুড়কির মত গোল মিস না করে।

ডি জং এর এই ছবিটা দেয়ার জন্য হল্যান্ডের সাপোর্টারদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলাম



সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১২ ভোর ৪:৪২
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×