আজ সকালে ব্লগে ঢুকেই একটা পোস্ট দেখলাম, "দেবদূতদের জন্য একটা দিন.................."। তখনই মনে হল শিশুদের জন্য কিছু লিখি। কিন্তু আমি লেখক নই। আমার হাত দিয়ে কিছুই বের হয় না।
যাক, এরপর বিডিনিউজ পড়তে গেলাম......সেখানে অন্য সব খবরের পাশাপাশি "আস্ক দি কিডস ভাইয়া"-ও দেখছিলাম। সেখানে বাচ্চাদের করা কিছু কিছু প্রশ্ন দেখে আমি এতো অবাক হলাম!!!!! ঐসব প্রশ্ন আমার মাথায় কোনদিন আসেনি, আর উত্তর তো জানা দূরের কথা।
তখনি ভাবলাম ঐ প্রশ্ন-উত্তরগুলোই তো আমি ব্লগের সবার সাথে শেয়ার করতে পারি। শিশুরা যে অনেক বেশী বুদ্ধি মাথায় রাখে সেটাও অনেকের জানা হলো, আর আমার দেবদূতদের জন্য কিছু করা হলো ব্লগে।
দেখেন তো এই প্রশ্নগুলো আপনাদের মানে বড়দের মাথায় কখনো এসেছে কি? কে কয়টার উত্তর জানতেন বলবেন কিন্তু...............
প্রশ্ন ১। মাথায় আঘাত পেলে আমরা তারা জ্বলতে দেখি কেন?
উত্তর। আকাশ পরিষ্কার থাকলে স্বাভাবিকভাবে রাতের বেলা তারা দেখা যায়। কিন্তু দিনের বেলা তারা দেখেছ কখনও? হ্যাঁ, দিনেও মাঝে মাঝে তারা দেখা যায়। সে অভিজ্ঞতা আশা করি তোমাদের সবারই একটু আধটু আছে।
আসলে চোখে বা মাথায় আঘাত পেলে কখনো এরকম অভিজ্ঞতা হয়। মনে হয় যেন, ফ্লাশ লাইটের আলোয় চোখ ঝলসে গেল। আবার চারিদিকে কেমন যেনো ফুটকি ফুটকি তারাও ভাসতে দেখা যায়। একে অনেকে চোখে সরিষা ফুল দেখাও বলে। তারা দেখা বা সরিষা ফুল দেখা যাই বলি না কেন, এমন হয় কেন?
আসলে বস্তুকে থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে পড়ে। চোখ সংকেত পাঠায় মস্তিষ্ককে। তারপর আমরা কোন কিছু দেখতে পাই। চোখ যদি মস্তিষ্কে সংকেত না পাঠায় তাহলে আমরা কোন জিনিস দেখতে পারব না। চোখ থেকে এই সংকেত পৌঁছে দেবার কাজটি করে থাকে অপটিক নার্ভ। কিন্তু চোখে বা মাথায় জোরালো আঘাত পেলে অপটিক নার্ভ তার কাজ ঠিকমতো করতে পারে না। এতে চোখ থেকে মস্তিস্কে সংকেত পৌঁছাতে বাধা পায়। ফলে এই সংকেত জোরালো আলোয় রূপান্তরিত হয়ে আমাদের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। যার ফলে আমরা চারিদিকে তারা জ্বলতে দেখি বা সরিষার ফুলের মতো হলুদ দেখি।
প্রশ্ন ২। কুমিরের অশ্রু আসলে কী?
উত্তর। তোমরা যারা বাংলা ব্যাকরণ পড়েছো, তারা নিশ্চয়ই ’কুমিরের অশ্রু’ বা ‘কুম্ভীরাশ্রু’ বাগধারাটির সাথে পরিচিত। বাগধারাটির অর্থ হচ্ছে লোক দেখানো কান্না। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানো না- কেন এ রকম বাগধারার উৎপত্তি। আসলে কুমির যখন শিকার ধরে তখন এদের চোখে বিন্দু বিন্দু পানি দেখা যায়। যা দেখে মনে হয়, শিকারটা হত্যা করার কোন ইচ্ছে কুমিরের ছিল না। ভুল করে শিকারটা হত্যা করতে হয়েছে এবং সেই দুঃখে কুমিরের চোখ ফেটে কান্না আসছে।
কিন্তু মূল ব্যাপারটি হচ্ছে- খাবার ধরার জন্য বা অন্য অনেক কারণে কুমিরকে মুখ হা করতে হয়। আর যখনই হা করে তখনই এদের চোখে পানির ফোঁটা দেখা দেয়। কারণ মুখ হা করার সময় এদের উপরের চোয়াল খানিকটা উপরে ওঠে যায়। এর ফলে কুমিরের অশ্রুগ্রন্ত্রির পেশিতে চাপ পড়ে। এই চাপে অশ্রুগ্রন্ত্রিতে জমে থাকা পানি বেরিয়ে আসে চোখ দিয়ে। একেই আমরা বলি কুমিরের কান্না বা কুমিরের অশ্রু।
প্রশ্ন ৩। কুকুর কি রঙ দেখতে পায়?
উত্তর। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে কুকুর মানুষের বিশ্বস্ত বন্ধুতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু মানুষ পৃথিবীতে আসার আগে কুকুর ছিল বন্যপ্রাণী। বন্য কুকুর কীভাবে মানুষের বিশ্বস্ত বন্ধুতে পরিণত হল, সেটা নিয়ে আফ্রিকায় বেশ কটি রূপকথা বা উপকথা প্রচলিত আছে। সে যাই হোক, এই পৃথিবী আমাদের চোখে রঙিন। তাই স্বাভাবিকভাবে আমাদের ধারণা, সব প্রাণীর চোখেই পৃথিবী রঙিন। কিন' আসলে কি তাই?
গবেষকরা বিভিন্ন গবেষণায় দেখেছেন, বেশিরভাগ প্রাণী তাদের চোখে পৃথিবীর রঙ দেখতে পায় না। অর্থাৎ তারা প্রকৃতির কোন রঙ দেখে না। এই দলে কুকুরও পড়ে। গবেষকরা নিশ্চিত হয়েছেন, মানুষ ও বানর প্রজাতির প্রাণীরাই শুধু রঙিন পৃথিবী দেখতে পায়। এমনকি স্পেনের বিখ্যাত বুল ফাইটে ম্যাটাডোর ষাঁড়ের সামনে লাল কাপড় নেড়ে তাকে রাগানোর চেষ্টা করেন। গবেষকরা বলেন, ষাঁড়ের সামনে যদি অন্য কোন রঙের কাপড়ও এভাবে নাড়া হয় তাহলেও ষাঁড়কে রাগানো সম্ভব। কারণ ষাঁড় আসলে লাল রঙ আলাদা করে বুঝতেই পারে না। কারণ ষাঁড়ের চোখেও পৃথিবী সাদাকালো বা ধূসর।
জানো বোধহয়, যারা কোন রঙ বুঝতে পারে না তাদেরকে কালারব্লাইন্ড বা বর্ণান্ধ বলে। কুকুরসহ বেশিরভাগ প্রাণীই বর্ণান্ধ। কুকুর তার স্বাভাবিক কাজকর্মের জন্য রঙের চেয়ে গন্ধের উপর বেশি নির্ভরশীল। তাই রঙ না দেখলেও তার জন্য কোন ঝামেলা হয় না।
তোমরা হয়তো জানো, মানুষও বর্ণান্ধ হতে পারে। এসব মানুষ জন্ম থেকে প্রকৃতির বিশেষ কোন রঙ বুঝতে পারে না। শোনা যায়, আমাদের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথও নাকি বর্ণান্ধ ছিলেন।
প্রশ্ন ৪। পেন্সিল ষড়ভুজ হয় কেন?
উত্তর। পেন্সিলের বাইরের গঠন বিভিন্নরকম হতে পারে। গোল, চ্যাপ্টা, ষড়ভুজাকার ইত্যাদি। কিন্তু অধিকাংশ পেন্সিলের বাইরের গঠন ষড়ভুজাকার, তা হয়তো সবাই খেয়াল করে দেখেছো। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানো না সঠিক কারণটা।
আসলে উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য পেন্সিল গোলাকার না করে ষড়ভুজাকার করা হয়। কারণ গোলাকার পেন্সিলের তুলনায় ষড়ভুজাকার পেন্সিলে কম খরচ হয়। হিসেব করে দেখা গেছে যে, একই পরিমাণ কাঠ দিয়ে ষড়ভুজাকার পেন্সিল তৈরি করা যায় ৯টি। অথচ সেই একই পরিমাণ কাঠ দিয়ে গোলাকার পেন্সিল তৈরি করা যায় মাত্র ৮টি।
এছাড়াও ষড়ভুজাকার পেন্সিলের আরেকটা বাড়তি সুবিধা আছে। সেটা হচ্ছে, গোলাকার পেন্সিল টেবিলে রাখলে তা গড়িয়ে নিচে পড়ে যায়। কিন্তু ষড়ভুজাকার পেন্সিল এই দোষ থেকে মুক্ত। ষড়ভুজাকার পেন্সিল টেবিলে গড়ায় কম।
প্রশ্ন ৫। ইঁদুর জিনিসপত্র কেটে নষ্ট করে কেন?
উত্তর। যাদের বাড়িতে ইদুরের উৎপাত আছে তারা ভালোমতোই জানো ইঁদুরের বদ স্বভাবের কথা। এমন কিছু নেই যা ইঁদুর নষ্ট করে না। বইপত্র, কাপড়চোপড়, দলিল দস্তাবেজ, বিছানা-বালিশ, খাদ্যশস্য সবকিছুই ইঁদুরের শিকার হয়। কিন' সত্যি বলতে কী, এসবের অধিকাংশই ইঁদুরের খাদ্য নয়। বরং সে যা খায় তার চেয়ে নষ্ট করে আরো কয়েকগুন। তাহলে প্রশ্ন জাগতেই পারে, ইঁদুর এসব জিনিস অনর্থক নষ্ট করে কেন? সেটা জানার আগে জানতে হবে ইঁদুরের কিছু শারীরিক বৈশিষ্ট্যকে।
ইঁদুরের চোয়ালে উপর নিচ মিলিয়ে দুজোড়া বিশেষ ধরনের দাঁত থাকে, যাকে বলে কৃদন্ত। এই কৃদন্ত দিয়েই তারা যাবতীয় জিনিস কেটে ছোট ছোট করে খাওয়ার উপযোগী করতে পারে। শুধু তাই নয়, অন্যান্য সব জিনিস তারা এই দাঁত দিয়েই কেটে নষ্ট করে।
কৃদন্তের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই দাঁত সবসময় বাড়তে থাকে। এমনকি ইঁদুরের দৈহিক বৃদ্ধি শেষ হয়ে গেলেও তা বাড়তে থাকে। দাঁতগুলো বেশি বড়ো হয়ে গেলে সেগুলো ইঁদুরের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই দাঁতগুলোকে ব্যবহার উপযোগী রাখতে ইঁদুরকে বাধ্য হয়ে সেগুলো ছোট রাখতে হয়।
আর সেগুলোকে ছোট রাখার উপায় হচ্ছে সবসময় কিছু না কিছু কাটাকুটি করা। কোন বস্তু কাটার ফলে তাদের দাঁতের সাথে সেই বস্তুর ঘষায় দাঁতের দৈর্ঘ্য সবসময় ঠিক থাকে। আর দাঁতও থাকে ধারালো। আর তাই ইঁদুর সময় সুযোগ পেলেই কাটাকুটি খেলায় মেতে ওঠে কোন কিছুর তোয়াক্কা না করেই।
প্রশ্ন ৬। মাটি ছাড়া মানিপ্লান্ট মরে যায় না কেন?
উত্তর। বারান্দা কিংবা বসবার ঘরে কাঁচের বোতল বা শিশিতে মানিপ্লান্ট সাজিয়ে রাখবার অভ্যেস অনেকেরই আছে।
মানিপ্লান্ট বোতলের ভেতরে পানির ওপরে নির্ভর করে অনেক দিন বেঁচে থাকে। মাঝে মাঝে অবশ্য বোতলের পানি পাল্টে দিতে হয়। কিন্তু কীভাবে শুধু পানিতে দিনের পর দিন মানিপ্লান্ট বেঁচে থেকে এবং ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে, তা অনেককেই অবাক করে। এ বিষয় নিয়ে গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা এর একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
মানিপ্লান্টের বৈশিষ্ট্য হল, পাতাগুলো তুলনামূলকভাবে অন্যান্য গাছের পাতা থেকে আয়তনে অনেকটা বড় হয়ে থাকে। আর এরা ঘরের বাল্বের মৃদু আলোকেও জৈব খাবার তৈরির কাজে লাগাতে পারে। তোমরা তো জানোই, সবুজপাতা বাতাসের কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস এবং পানি থেকে আলোর সাহায্যে জৈব খাবার নিজেই তৈরি করতে পারে। মানিপ্লান্টও পাতার সবুজ রঞ্জক বা পিগমেন্ট ( ক্লোরোফিল), কার্বন ডাই-অক্রাইড এবং পানি নিয়ে নিজের খাবার তৈরী করে। আলোর সাহায্যে নতুন কিছু তৈরি হয় বলে পাতার এই কাজকে সালোকসংশ্লেষণ বলে।
জৈব খাবার ছাড়াও গাছের খনিজ লবণ, নাইট্রোজেন দরকার। মানিপ্লান্টের পক্ষে বাতাসে ভেসে আসা কিছু খনিজ লবণ পেলেও, নাইট্রোজেন পাওয়া সম্ভব হয় না। তাহলে প্রশ্ন থাকে : এসব জিনিস ছাড়া মানিপ্লান্ট বেচেঁ থাকে কীভাবে?
ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যায যে, মানিপ্লান্টের নিচের দিকের একটা পাতা ঝরে গেলে তবেই একটা নতুন পাতা তৈরি হয়। তলার পাতা ঝরে পড়ার আগে পাতার খনিজ লবণ, নাইট্রোজেন ইত্যাদি পুষ্টিকারক উপাদান পাতা থেকে বেরিয়ে কান্ডে চলে যায়। এই থেকেই নতুন পাতা সম্পূর্ন পুষ্টির যোগান পায়। অর্থ্যাৎ মানিপ্লান্টের খনিজবস্তুর ভাণ্ডার আমৃত্যু একই রকম থেকে যায়। এ কারণেই শুধু পানিতেই অনেক দিন বেঁচে থাকতে পারে মানিপ্লান্ট।
আরো জানতে চাইলে এখানে দেখুন......
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ১০:৪১