কিছুদিন আগে বাংলাদেশে হয়ে গেল শরীফ থেকে শরীফা বা সমকামিতা নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা, প্রতিবাদ। এটাকে নেতিবাচক ধারণায় রেখেই মূলত সমালোচনার পাল্লা ভারী ছিল। যদিও বিষয়টা ছিল সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকের একটি গল্প নিয়ে, কিন্তু প্রতিবাদ এসেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে।
এ প্রসঙ্গে আরো কিছু কথা বলার প্রেক্ষাপট তৈরী হয়। যা প্রায় অনুল্লেখই থাকে। আজকাল যদিও কিছুটা অল্প করে হলেও নারী কর্তৃক পুরুষ নির্যাতনের কিছু ঘটনা রিপোর্ট হচ্ছে, আলোচিত হচ্ছে।
কিন্তু এরপরও যেটা প্রায়ই আড়ালে থাকে সেটা হলো পুরুষ বা নারী কর্তৃক পুরুষ ধর্ষণ বা যৌন হয়রানির কথা।
একটা সময়ে ইরাকে আবু গারাইব জেলে মার্কিন নারী ও পুরুষ সৈন্য কর্তৃক ইরাকী পুরুষদের বিবস্ত্র করে সমকামি আচরণে বাধ্য করা সহ নানান অত্যাচারের কথা বিশ্ব ব্যাপী আলোচিত ছিল। তারপর এসেছিল গুয়ানতানামা বে-র ঘটনা। সম্প্রতি দেখলাম কসোভাতে যুদ্ধকালীন পুরুষ ধর্ষণের অভিযোগ রিপোর্ট হচ্ছে। এটা সিরিয়াতেও ঘটেছে।
kosovo reporting
Syria Case Report
কিন্তু ঘরের কাছে ছেলেদের হোস্টেলে বা লিল্লাহ বোর্ডিং স্যার বা শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রদের শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা হয়, অনেকটাই পেডোফিলিয়ার পর্যায়ে পড়ে সেটা। মোটাদাগে স্যারেরা বা হুজুরেরা ক্লাসে অনেক মারে, পড়া না পারলে অনেক মারে – এই অভিযোগের আড়ালেই পুরো বিষয়টাকে কাভার করার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু মূল ঘটনা হয়তো আরো গভীরে থাকে। সেগুলো প্রকাশ করতে দেয়া হয় না, বা ছাত্রদের মাঝে সে পর্যায়ের সচেতনতা থাকে না নিজের ব্যাপারে খুলে বলার।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে র্যা গিং অনেক সময়েই আলোচনায় আসে, যেটা মূলত সিনিয়র ছাত্র কর্তৃক নতুন ভর্তি হওয়া জুনিয়র ছাত্রদেরকে করা মানসিক বা শারীরিক যৌন হয়রানি। অনেক সময়েই সেটা মাত্রা ছাড়িয়ে যায় বা প্রতিবাদ করার কোন সুযোগ থাকে না। আর্মিদের ট্রেনিং সেন্টার গুলোতে, ক্যাডেট কলেজেও এই র্যা গিং ব্যাপারটা বহুল প্রচলিত।
রাজনৈতিকভাবে নেতা কর্তৃক কর্মীদেরকে চোরা কারবারীতে বাধ্য করা, অস্ত্র বহনে বাধ্য করা, রাজনৈতিক কারণে নারীদের শ্লীলতাহানিতে ব্যবহার করা, ক্যাসিনো, খুন, অবৈধ উপায়ে অর্থ কামাই, জোর করে মিছিলে নেয়া হলের জুনিয়র ছাত্রদের– এরকম নানান অপকর্মই ছেলেদেরকে দিয়ে করাতে বাধ্য করে নেতারা।
এটা তো গেল সেইম পার্টি কেইস! পুলিশ বা বিরোধী পক্ষের নেতা কর্মী দ্বারা আহত, নিহত, রাজনৈতিক মামলা হয়রানি, ব্ল্যাকমেইলিং – এরকম হাজারো মানসিক ট্রমার কথা তো বহুল আলোচিত বিষয়।
এগুলো যে একেকটা ছেলের মনে অনেক গভীর ট্রমা বা বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নষ্ট করে দেয়, সেটা হয়তো আমাদের অনেকেরই বোধগম্য হয় না বা এটা যে একটা সিভিয়ার অপরাধ, সেভাবে গণ্যই হয় না।
একটা প্রবাদ আছে, চোর জেলে গেলে ডাকাত হয়ে বেরিয়ে আসে! এটা অনেকটাই টর্চার সেলের নির্যাতন বা অন্যান্য দাপুটে আসামীদের ছোটখাট আসামীদের উপর করা অত্যাচারের ফলাফল।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কর্তৃক অধঃস্তনদের গালাগালি, এমনকি হাত তোলার ঘটনাও পর্যন্ত ঘটে। কর্মস্থলে নারীদের যৌন হয়রানি রোধে আইন থাকলেও সেখানে সুস্পষ্টভাবে পুরুষরাও আইনি সহায়তা পেতে পারে এরকম কোন সুবিধা নেই।
পুরোনো সমাজ ব্যবস্থায় দাস নির্যাতন ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। আজকাল অনেক চা-এর দোকানে, ভিক্ষাবৃত্তিতে, পকেটমার পেশায় এরকম ছোট ছোট শিশুসম বালকদের মার ধর করা নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা।
লক্ষ্য করলে দেখবেন, পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারগুলোতে নারীরাই মূলত ভিকটিম হিসেবে বিবেচিত হয়, পুরুষ নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:৫৬