somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদ আনন্দ! গ্রামে ফেরা, নদীর সুখ-দুঃখ!

০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্বঃ ১

সময়কালঃ রোযার ঈদের দুই দিন আগে, ২০২৪

মেঘনা পার হয়ে আমাদের গ্রামের বাড়ি। এরকম বৈশাখ আসি আসি করছে। গাছে গাছে আমের মুকুল পরিণত হয়ে গুটি আম হয়েছে। কিছু আম প্রতি রাতে বাতাসে টুপ করে পড়ে। আমি নিঝুম দুপুরে নিরিবিলি পরিবেশে বাড়ির বারান্দায় খাতা দেখছি, বা হয়তো কিছু আরবী পড়া লেখা রপ্ত করছি। একেক বেলায় একেকটা করতে হচ্ছে, কারণ এই ছুটিটুকুই ফুরসত বাড়তি কিছু করার।



ঠিক জসীমউদ্দিনের সেই ছড়াটির মতো,
আয় ছেলেরা, আয় মেয়েরা ফুল তুলিতে যাই,
ফুলের মালা গলে দিয়ে মামার (আমার এখানে দাদা হবে) বাড়ি যাই।
ঝড়ের দিনে মামার দেশে আম কুড়াতে সুখ!
পাকা জামের শাখে উঠি রঙিন করি মুখ।

ছোট ছোট কিছু ছেলে মেয়ে দল বেঁধে এসেছে উঠোনের আম কুড়োতে। আমি চুপ চাপ তাদের দেখছিলাম, আর এই কবিতাটি মনে মনে আওড়ালাম। স্বর্গীয় সুখ তাদের চোখে মুখে। পার্থিব কোন জটিলতা, বিষণ্ণতা তাদের মুখে কোন ছায়া ফেলেনি।

সকালবেলায় আমিও আমার ছেলেকে নিয়ে এই কবিতা বলে বলে কিছু সবুজ-হলদে ছোট আম কুড়িয়েছিলাম। ওর অবশ্য মামার বাড়ি, নানার বাড়ি।

আমাদের পেছনের উঠোনে আগে একটা সরেস জাম গাছ ছিল, সামনের উঠোনের ডানদিকে বিশাল এক কামরাঙা গাছ ছিল, তার পিছনে গোটা দুয়েক আনারস গাছ। উঠোন পেরিয়ে বাড়ির সীমান্তে ছিল বেশ কয়েকটা সারি বেঁধে জাম্বুরা গাছ। মাঝে আছে কাঁঠাল গাছ, নারকেল, সুপারি, কড়ই গাছ। রসুইঘর মানে যেখানে মাটির চুলোয় রান্না হয়, সেটা ছিল হরমুল ( মানে শুকনো পাটকাঠি) দিয়ে বেড়া। আজ অবশ্য বেতের বেড়া। তার পাশে বাতাবি লেবুর গাছ। রসুইঘরের পিছনে ছিল শিমুল তুলা গাছ। পুকুর পাড় ঘিরে রসুইঘরের পাশে আম গাছ, ঠিক ঘরের পেছনেও আম গাছ, কাঁঠাল গাছ। সময়ের সাথে সাথে অনেক গাছই এখন আর নেই!

আরেক সকালে ছেলেকে নিয়ে গেলাম এক দাদার ঘরের কিনার ঘেঁষে পিছনে, সেখানে সারি সারি কলা গাছ, আর ছিল ডেউয়া গাছ। সেখানেও হলুদ হলুদ ছোট ডেউয়া ধরেছে, বাতাসে নিচে পড়ে, আর পা দিয়ে চাপ দিলে ঠুস করে শব্দ করে ফেটে যায়! রাকীনকেও দেখালাম, সে বেশি একটা মজা পেল না। অথচ এই কাজটা আমি ছোটবেলায় হরহামেশা করতাম। আমাদের নোয়াখালীর বাসার সামনে একটা ডেউয়া গাছ ছিল, প্রতিদিনই এই সিজনে গাছের তলায় পড়ে থাকতো ছোট ছোট হলুদ ডেউয়া, আমি পা দিয়ে চাপ দিলেই ঠুস!
আমাদের বাড়িতে আরেক দাদার বাড়ির সামনে একসময়ে ছিল গাব গাছ, কাও ফল গাছ! সেগুলোও আমাদের লক্ষ্যে ছিল, খাবারের হিসেবে। বাড়ির সামনের দিকে সদর রাস্তার দিকে আসতে দুই পাশে আখের ক্ষেত ছিল। কুরবান ঈদে বাড়ি গেলে চাচা-ভাতিজার-ভাতিজিরা মিলে লুকিয়ে ক্ষেতের মালিককে না জানিয়ে আখ চিবোনোর যে কি থ্রিল, সেটা বলে বোঝানো যাবে না!

চলার পথে ছিল দুটো তাল গাছ। খুব ভোরে টুপ করে তাল পড়ার শব্দ হতো! কে আগে দৌড়ে যাবে সেই তাল আনতে! যে আগে যাবে, তালের মালিক সে! গাছ যারই হোক!

বাউনবাড়িতে ছিল ইয়া মোটা মোটা আম গাছ, কড়ই গাছ। যেটা দেখলে বোঝা যায় এ অঞ্চলের বসত বাড়ির প্রচলন প্রায় দুইশ আড়াইশ বছর আগের। সেগুলো এখন আর নেই! সব কেটে ফেলা হয়েছে, হয় বাড়ির খুটির জন্য, নয়তো আসবাবপত্রের জন্য। কি ঘন ছিল সেই বাউনবাড়ি, গা ছমছম করতো!

আরো ছিল এক বিখ্যাত তেঁতুল গাছ, যেটা এখনো আছে, কালের সাক্ষী হয়ে। তার নিচে নাকি এক ফকির সন্যাসীর আস্তানা ছিল, একদিন গায়েব হয়ে গেছে। সবাই ওই গাছের নিচে যেতে ভয় পায়! ভূতের ভয়ও আছে। তার পাড়ের আছে এক সুন্দর টলমলে পুকুর। বাড়ির বৌ-ঝিরা আড়াল পেত বলে সেখানে গোসল করতে যায় সময়ে সময়ে। ছেলেরাও করে। আমার ছোট চাচা আমাকে সাঁতারের কত কসরত দেখাতো! কত গলদা চিংড়ি মেরে খেয়েছে আমার চাচা, জাল দিয়ে মাছ ধরার এডভেঞ্চার করা হতো, তার ফল! কে জানি চাষ করেছে, জানি না!

নোয়াখালীর বাড়িতে একটা কদম ফুল গাছ ছিল, প্রতি বর্ষায় আমি সেটা খুব মিস করি! কাঁঠাল পাতা আর কদম ফুলের সবুজ বল দিয়ে বানানো গাড়ি চালানো ছিল আমাদের শিশুকালের বিশাল আবিষ্কার! আরো ছিল শুকনো ঝরে পড়া সুপারী গাছের পাতা দিয়ে টানাগাড়িতে চড়া! নারকেলের পাতা দিয়ে নানারকম কুটিরশিল্প বানানো, নকশা - শোপিস বানানো! আমার কলেজ লাইফে পাশের বাড়ির খালাম্মার বানানো কলাগাছের শুকনো আঁশ দিয়ে বিভিন্ন শোপিস আমি বিজ্ঞান মেলায় দেখিয়েছিলাম! অনেকটা পাটের আঁশের মতোই দেখা যায়। বিভিন্ন রঙ দিয়ে সেগুলো নানান বাহারের করা যায়! চমৎকার দেখতে ছিল শো-পিসগুলো!

কলার মোচার ভর্তা, থানকুনি পাতার ভর্তা। আমাদের ছোট কাটা পুকুরের মাছগুলো আম্মার গলা শুনলেই পাড়ের কাছে এসে যেত! ছিল ঝাঁক দেয়া মেহেদি গাহচ, তুলসি গাছ, গাঁদা ফুল গাছ। ছিল আব্বা-আম্মার চাষ করা কচু গাছ, অবশ্যই জোঁকে ভরা। চিকন লতি আর কচুর শাক ভাজি খেতে যত মজা, জোঁক ততই ভয়ংকর! একবার আমার গায়ে উঠে এসেছিল! মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে! উফ্‌ বাবা!

বাড়ির বাউন্ডারী ঘেঁষে সারি করা নারকেল গাছ, দিনে দিনে মাটি সরে অন্যের জমিতে চলে যায় গাছগুলো, মনে হয় যেন গাছ হাঁটে!
চাইলাম নদীর কাহিনী লিখতে, লিখে ফেললাম অনেক গাছের স্মৃতি!

এ মুহূর্তে লিখতে বসে ছোট বেলার অনেক খেলার কথাই মনে পড়ছে, আর বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়া রেললাইনের কথা ভোলাই যায় না! আরেকদিন লিখবো সেই গল্পগুলো!

এবার নদীকে ঘিরে সুখ-দুঃখের গল্পে ফেরা যাক। ...

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৫৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×