somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদ আনন্দ! ঢাকায় ফেরা, নদীর সুখ-দুঃখ!

০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব ২

সময়ঃ ৫ এপ্রিল, ২০২৫

ঈদের ছুটি কাটিয়ে বাড়ি থেকে ফেরা।

বাড়ির পুকুরগুলো এখন একেবারেই জীর্ণ! চৈত্রের দাবদাহে পানি শুকিয়ে মৃতপ্রায়। কোন কোন পুকুরের পানি পুরোপুরিই শুকিয়ে গেছে, সেখানে চলছে শেষ মুহূর্তের মাছ ধরা, হাত দিয়ে কালো কর্দমাক্ত মাটিতে ছোট ছোট মাছ খুঁজে বেড়ানোর মাঝে মনে হয় একটা আনন্দ আছে। গ্রামের ছোট ছোট ছেলেরা এই কাদামাটি ঘাটতে খুবই পছন্দ করে!

অথচ গতবছর সেই যে ফেনীর বন্যা হলো, আমাদের পুকুরগুলো উপচে পড়েও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, জলাবদ্ধতায় সবাই ঘরবন্দী ছিল। বাড়ির সামনের রাস্তায় হাঁটুপানি। কেউ কেউ ভেবেছিল মেঘনা নদীর পানিই বুঝি এখানে এসে গেছে! না, তা নয়। চাঁদপুরে অনেক পুকুর তখন ভেসে গিয়েছিল, ভেসে গিয়েছিল প্রজেক্টের মাছ!



এখন এই শুষ্ক মৌসুমে ফরিদগঞ্জ সীমানা পার হয়েই ডাকাতিয়া নদীর উপরে ব্রিজে এলাম, দেখি সারা নদী ভরা কচুরীপানা! তার উপরে অনেক অনেক হালকা বেগুনী রঙের ফুল ফুটে আছে। দেখতে অনেক চমৎকার! কিন্তু এর আরেকটা মানে কিন্তু নদীতে স্রোত নেই! তাই জলা জমে আছে। পানির স্তর অনেক নিচেই। আরো এগোলে আরেকটা শাখা দেখলাম, সেখানে পানি অনেকটা প্রবাহমান! দুঃখজনক হলো, এই খরস্রোতা তেজস্বিনী ডাকাতিয়া নদী ফেনীর কাছে গিয়ে ম্যাপ থেকে হারিয়ে গেছে অবৈধ দখলে।

এরপর রফরফ-এ চড়ে বসলাম। ঢাকায় আসবো, বেশ বড় লঞ্চই। অনেকে আগেই কেবিন বুক করে রেখেছিল, তাই সিঙ্গেল কেবিন পেলাম না। বিজনেস ক্লাসে পেছনের দিকে দুটো সিট পেলাম। তাই সই। ভালই! বরাবরই সোনার তরী, ঈগল, রফরফ, আব-এ-জমজম এ ফার্স্ট ক্লাস, বিজনেস ক্লাস বা কেবিন, যেকোনটাই চলনসই। এছাড়াও আছে মেঘনার তরী, বোগদাদীয়া, এম্ভি হাসান ইমাম, কালকে আরেকটা লঞ্চ দেখলাম পারাবত! এসব লঞ্চে এ জীবনে এ কত চড়েছি! তার কোন ইয়ত্তা নেই! লঞ্চে চড়ে জার্নি করতে আমিও পছন্দ করি! আমার ছেলেরও অনেক পছন্দ! অনেক দৌড়াদৌড়ি, ছুটোছুটি করতে পারে। লঞ্চে চড়ে পাউরুটি, ডিম-এর স্যান্ডউইচ আমার খাওয়া চাই-ই চাই, খিদে পাক আর না পাক! অনেক মজা লাগে এই কম্বিনেশন! বেঞ্চমার্ক খাবার লঞ্চের। ঠিক যেমনটা দূরপাল্লার ট্রেনের কাটলেট। আজকাল অবশ্য ট্রেনে চিকেন ফ্রাই, বার্গার এসবও দেয়।

আর লঞ্চ ঘাটে ভরা বর্ষাকালে তাজা তাজা ইলিশ ভাজা খাওয়া! অনেক মজা!

এই বিলাসিতা পদ্মায় বেশি হয়, বিশেষ করে ফেরীঘাটে! আমাদের মেঘনার ইলিশও কম নয়!

বরাবরের মতো বুড়িগঙ্গার কালো পানি দিনশেষ! আজ আর বড় আক্ষেপ করি না। দেখে দেখে অভ্যস্ত! লঞ্চ থেকে নেমে অটোতে উঠলাম। সিএনজির ড্রাইভাররা জোট বেঁধে ভাড়া বেশি চাচ্ছিল। আমার সন্দেহ হচ্ছিল অটো শহরের মাঝখান দিয়ে যেতে পারবে কিনা! যাক, অটোচালক বেড়ীবাঁধের উপর দিয়ে চলে এলেন। প্রায় ফাঁকাই বলা চলে এই রাস্তা। আমার জন্য অনেকটাই নতুন অভিজ্ঞতা। রাস্তায় জ্যামের ঝক্কি পোহাতে না হলেও আসতে আসতে দেখলাম শুকিয়ে যাওয়া, দখল হওয়া সরু বুড়িগঙ্গা, আবর্জনার স্তুপ কোথাও কোথাও। কামরাঙ্গীচর, সোয়ারী ঘাট, হাজারী বাগ, রায়ের বাজার বধ্যভূমি, মোহাম্মদপুর বসিলা পার হয়ে অটো এগিয়ে চললো। এতো নিরিবিলি রাস্তা, মাঝে মাঝে ভয়ও লাগছিল! এখানে কাউকে মেরে ফেলে রেখে গেলে কেউ দুইদিনেও খুঁজে পাবে না! বধ্যভূমির পাশে বিশাল কবরস্থান! অটোওয়ালা বললো, এটা নাকি ঢাকার সবচেয়ে বড় কবরস্থান! মনে পড়লো, অনেক শহীদ বুদ্ধিজীবি এখানে শুয়ে আছেন। অটো চলতে চলতে গাবতলীর নয়নয়াভিরাম বাঁক পার হয়ে মিরপুর বধ্যভূমির পাশ দিয়ে মাজার রোডে এসে উঠলো। আরো কিছুক্ষণ পর শাহ আলী মাজার পেরিয়ে চেনা রাস্তা মিরপুর ১ এ এসে উঠলো! এবার হাঁফ ছাড়লাম। কিছুক্ষণ পর বাসায় এসে পৌঁছালাম। একরাশ ক্লান্তি নিয়ে গোসল করে কিছুটা খেয়েই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। লঞ্চে এতোটুকু কষ্ট হয়নি, কিন্তু বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে আসার সময়ে বুড়িগঙ্গার এই জীর্ণ দশা মনে ভীষণ রকমের অবসাদ ঢেলে দিলো। সারাটা অঙ্গই যেন ব্যাথায় আক্রান্ত হয়ে গেল! মিরপুরের কাছে এসে অবশ্য তুরাগ নদী দেখেছি। সেখানে পানির অবস্থা ভালই ছিল, টলমলে।

মনে যখন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে, সারা দেহই নিথর হয়ে থাকে। সেই নিথর অবস্থা কাটতে আমার সারারাতই লেগে গেল!
...
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:০১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×