ছোটবেলায় একটা রচনা প্রায়ই আমরা লিখতাম, "আমার জীবনের লক্ষ্য" বা ইংরেজিতে "my aim in life".
গৎবাঁধাভাবে বেশিরভাগই লিখতাম আমরা চিকিৎসক হতে চাই, প্রকৌশলী হতে চাই বা শিক্ষক হতে চাই ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমাদের বাবা-মায়েরাও চাইতেন এগুলোই লিখি আর এগুলো হই, এই পেশাগুলোর পেছনে ছুটি।
আমি লিখতাম সায়েন্টিস্ট হতে চাই। আরেকটু বড় ক্লাসে উঠে লিখতাম ফিজিসিস্ট হতে চাই, অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট হতে চাই।
শেষ পর্যন্ত যদিও মধ্যবিত্ত জীবনকে আলিঙ্গন করে বাবা-মায়ের ইচ্ছেকে নিজের ইচ্ছের সাথে মিলিয়ে চিকিৎসক হয়েছি।
সে যাক গে!
অনেকেই আমরা অনেক কিছু হতে চেয়েছিলাম। কেউ মনে এক, কাগজে আরেক আর বাস্তবে অন্য আরেক।
আমরা সবাই আসলে অমলকান্তির মত রোদ্দুর হতে চেয়ে চেয়ে শেষ পর্যন্ত আর রোদ্দুর হতে পারিনি। সেই একই অন্ধকার ছাপাখানায় আমরা সবাই আসলে বন্দী!
বিশ্বাস হচ্ছে না তো?
গভীর রাতে হঠাৎ যখন ঘুম ভাঙবে, শুয়ে শুয়ে বুকে হাত দিয়ে একবার ভাববেন, দেখবেন আসলে বিশালাকার অফিসের সর্বোচ্চ পোস্টে থেকেও আপনি সেই অন্ধকার ছাপাখানায় যার যার দিনলিপি ছাপিয়ে যাচ্ছেন সময়ের পাতায় পাতায়। একদিন পাতা ফুরিয়ে গেলে আপনার দিনলিপি অকস্মাৎ শেষ হয়ে যাবে!
যাক গে, অনেক দূর চলে এলাম কথায় কথায়।
যা বলছিলাম।
আমাদের যেটা কখনোই "আমার জীবনের লক্ষ্য" হিসেবে লিখতে উৎসাহিত করা হয় না, তা হল, 'একজন সত্যিকার ভাল মানুষ হওয়া'।
এই কথাটা আমাদের মাথায় আসেও না, কেউ বলেও দেয় না কেন যেন!
আমরা যদি একজন সত্যিকার ভাল মানুষ হতে পারতাম, এই চিকিৎসক, প্রকৌশলী ইত্যাদি হবার পেছনে উন্মাদের মত না ছুটে, আমরা আজ সেই অন্ধকার ছাপাখানায় রোজনামচা লিখতাম না!
একটা সুন্দর, সুখী জীবন পেতাম, সমাজ পেতাম, বাংলাদেশ পেতাম।
আশা করছি আমাদের সন্তানদের "আমার জীবনের লক্ষ্য" অন্তত বদলাবে।
তাদের জীবনটা যেন অন্ধকার ছাপাখানায় রোজনামচা লিখতে লিখতে একদিন হঠাৎ শেষ না হয়ে যায়!