somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষ হারিয়েছে তার মনুষ্যত্ব

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যখন ছোট ছিলাম সমাজে এক পরিবারের সাথে আরেক পরিবারের মধুর সম্পর্ক দেখতে পেতাম । যেমন ধরুন শবে বরাতে সবাই সবার বাড়িতে হালুয়া রুটি দিয়ে আসত, রমজানে সাহরীর সময়ে প্রতিবেশীরা সবাইকে ডেকে তুলত, কারো বাড়িতে ভাল রান্না হলে অন্যের বাড়িতে তরকারি দিয়ে আসত অথবা দাওয়াত করত, বিভিন্ন পারিবারিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানে সবাই বিনাপারিশ্রমিকে কাজ করত আনন্দের সাথে । এভাবেই কাটছিল দিন । কিন্তু মাঝে মাঝে দেখতাম এক পরিবারের সাথে আরেক পরিবারের ছোট ছোট বিষয় নিয়ে অনেক বড় ঝগড়া বিবাদ শুরু হয়েছে । বিষয় গুলা এতই ছোট ছিল যে শুনে হাসবেন এ বাড়ির মুরগি সে বাড়িতে গেল কেন, এ বাড়ির বৃষ্টির পানি আমার জমিন দিয়ে যাচ্ছে কেন, তারা আমার জমিনের ওপরে দিয়ে হাটছে কেন, আমার জায়গায় তারা ধান চাল বা ফসল তুলছে কেন এমন আরো অনেক বিষয় ।
বয়স যত বাড়তে লাগল আমার মনে হল মানুষের মাঝে কলহের মাত্রা আরো বেড়ে যেতে লাগল। এক প্রতিবেশী আরেক প্রতিবেশীকে নিজে জায়গা দিয়ে হাটতে দিবে না বলে রাস্তায় বেড়া দিয়েছে, একজনের বাড়ির মুরগি আরেক জনের বাড়ি গিয়েছে বলে মেরে ফেলেছে এমন আরো অনেক বিষয় । জমির সীমানা নিয়ে যে দ্বন্দ্ব আমি দেখেছি ছোট বেলা থেকে তা কোনদিন ই ভুলব না । আমার মন বিষণ্ণতায় ভরে গিয়েছিল মনে হয়েছিল মানুষ কেন এত নিষ্ঠুর হয়ে যাচ্ছে । তখন আমি সম্ভবত ক্লাস ৭ বা ৮ এ পড়তাম ( খুব সম্ভবত ৮ এ ) হালকা জোরে বৃষ্টি হচ্ছিল এমন সময়ে চিৎকার চেচামেচি শুনলাম সাথে মহিলার কান্নার আওয়াজ । পরে দেখি বৃষ্টির পানি নিয়ে দ্বন্দ্ব । দুই ভাইয়ের পাশাপাশি বাড়ি ছিল , এক ভাইয়ের ইটের বাড়ির টিনের চালের পানি আরেক ভাইয়ের মাটির দেয়ালে পড়ত । সে বলেছিল ব্যবস্থা করতে যাতে পানি দেয়ালে না পড়ে, কিন্তু তারা করেনি । সেদিন কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে ছোট ভাইকে বড় ভাই ও তার ছেলে মিলে হত্যা করেছে । :( । কয়েক বছর জেল খাটার পর সব আসামীরা মুক্তি পেয়েছে ।
ভোটের সময়ে দেখেছি আম্লিক তার সন্ত্রাসীদের নিয়ে ভোট কেন্দ্র দখল করেছে আর তারা সবাই এলাকার বিএনপি এবং জামাত পরিবারের কেউ ভোটকেন্দ্রে এলে বাশ দিয়ে মেরে ফেলার জন্য দাবড়ানি দিচ্ছে । আম্মা আব্বুর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভোটকেন্দ্রে গিয়েছি তার বেশীক্ষন থাকা হয়নি । একজন দেখেছি মারতে মারতে আধমরা করে ফেলেছিল জানিনা সে বেঁচে ছিল কিনা । মেম্বার, চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে ভোট চুরির গল্প শুনেছি যারা চুরি করেছে তাদের কাছে থেকে । জামাত সমর্থিত সতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্ট বয়বৃদ্ধ মানুষকে চড় থাপ্পড় দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে, বিএনপির নির্বাচনি ক্যাম্প আম্লিক গুড়িয়ে দিয়েছে । দেখেছি বিএনপির নেতাদের নির্বাচনের আগে দোকান আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিল সন্ত্রাসী আম্লিক । নিজে দেখেছি নির্বাচনের আগে বিএনপি জামাত কারোই ঘরে রাতে ঘুমাতে পারেনি, যাযাবরের মত জীবনযাপন করত তারা, কত রাত কত দিন যে তারা পরিবার থেকে বিচ্ছর থেকেছে । এলাকায় একটি প্রাইমারি স্কুল ছিল, সেখানে বিএনপির একজন প্রধান শিক্ষক ট্রান্সফার নিয়ে এসেছিল । আম্লিকের জনগন সে শিক্ষককে স্কুলে শিক্ষকতা করতে দেয়নি, ক্লাসে ঢুকতেই দিত না ।
বড় হতে হতে দেখলাম মানুষ হত্যা কত সহজ, শিবির করলেই তাদের হত্যা করা হত । দেখেছি ২৮ অক্টোবর লাশের ওপরে নৃত্যের দৃশ্য, দেখেছি শাপলায় নির্বিচারে তৌহিদি জনতাকে হত্যার দৃশ্য ।
গ্রাম থেকে শহরে আসার পর সবাই বলত শিবির খুব খারাপ, তারা রগ কাটে । মেসে শিবির আছে নাকি সেজন্য পুলিশ মেস রেইড দিত । মেস রেইডের ভয়ে আমার বন্ধুরা কত রাত যে রেল স্টেশনে কাটিয়েছে, পরের দিন আমার কাছে কিভাবে ঘুমিয়েছে তার বিবরন দিত । কত ছাত্রকে শিবির বলে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে, অমানুষিক নির্যাতন করে শারীরিক ভাবে অনেককে অক্ষম করে দিয়েছে । শিবির হলেই তাকে ক্রসফায়ার দিয়েছে, ছাত্রত্ব বাতিল করেছে । ছাত্রদলের কর্মীর সাথেও সেই একই কাহিনী । আমার এই ছোট বয়সে আরো দেখেছি ছত্রলীগ পলিটেকনিক অধ্যক্ষকে পানিতে ফেলে দিয়ে সে শিক্ষককে রাজাকার ট্যাগ লাগিয়ে ট্রান্সফার করে দিতে ।
আরো দেখেছি ৫/১০ টাকার জন্য বড় বড় সাহেবেরা রিকশা ওয়ালা মামাদের বেদম মারতে । গাড়ির সাথে রিকশা অটো কেন লেগেছে তার জন্য গাড়ি থেকে নেমে রিকশা অটোওয়ালা মামাদের বেদম মার খেতেও দেখেছি । খুব খারাপ লাগত । মনে হত দুনিয়া হয়ত আমার জন্য না, এ দুনিয়া অনেক নিষ্ঠুর । একজন আরেক জনের সাথে হালকা ধাক্কা লেগেছে কেন এই বিরাট কলহ মারামারি করতেও দেখেছি ।
আওয়ামী গুম, খুন, আয়নাঘরের, জুলাই ২০২৪ ছাত্র হত্যা তো আমরা দেখলাম ।

সম্প্রতিক সময়ে একটি বুক শেলফ কেনার জন্য একটি দোকানে গিয়েছিলাম । এক লোক দোকানীকে মারবে বলে তার পুলাপান দের ফোন করেছে । তাদের কেন আসতে দেরি হয়েছে তার জন্য তাদের ধমকাচ্ছে । ভাড়াটিয়া লোকদের দোকানি মারার জন্য বলা মাত্রই দেখলাম তারা দোকানিকে মারা শুরু করেছে, তারা তাকে মেরে ফেলবে এমন রাগ । অথচ তারা জানত না তারা তাকে কেন মারছে । সেদিন মনে মনে ভাবলাম পকেটে টাকা থাকলে এমন কুত্তার অভাব হয়না ।
আজ বাইরে গিয়েছিলাম কিছু ভাইদের সাথে দেখা করতে ফেরার পথে দেখলাম এক ছাত্র ভাইয়ের সাথে টিকিট কাউন্টারের লোকজনের কথাকাটাকাটি চলছে, কাউন্টারের লোকজনের মারমুখি ভাব ঠেলা ঠেলা করছে এই বুঝি মেরেই দিল । মন খারাপ করে অটোতে চড়েছি মেসে চলে আসব এসময়ে আরেক জায়গায় দেখছি কিছু লোকজন ঝগড়া করছে ।
আজকে কুয়েটে ছাত্রদল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, শিবিরকে বেধরক পিটিয়েছে । অনেকে ছাত্রদলকে বাহবা দিচ্ছে শিবির পিটিয়েছে বলে । কেন ভাই শিবিরকে হত্যা কেন করতে হবে ? ক দিন আগেও তো আপনারা শিবিরের মত নির্যাতিত ছিলেন তখন ত একসাথে আন্দোলন করেছিলেন । রাতে আবার স্লোগান তুলেছে একটা একটা শিবির ধর ধইরা ধইরা জবাই কর । বাহ এরা নাকি ছাত্র । এখন আপনি পোস্ট পড়ার পর শিবির ট্যাগ দিবেন । আপনাকে বলব আপনিও হারিয়েছেন আপনার মনুষ্যত্ব ।

খুব বেশী ব্যাখ্যা করব না শুধু বলব মানুষ হারিয়েছে তার মনুষ্যত্ব, যার নমুনা এসব কর্মকান্ড ।
ছোট এ বয়সে অনেক ঘটনার সাক্ষী একদিনে সব বলা সম্ভব না, সামনের দিনে আরো বলব ইনশাআল্লাহ্‌ ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১২:৩৮
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×