১ম পর্ব পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় পর্বঃ
৩০শে জুলাই সকালে, Rezaur Rahman Lenin বনানীতে ফাহিম ও আন্দালিবের বাড়িতে পৌঁছান। সেখান থেকে ছেলেদের পুরান ঢাকার পরবর্তী নিরাপদ আশ্রয়স্থলে সরিয়ে নেবেন। কিন্তু সেই সেফ হাউজে পৌঁছানোর পর রেজা বুঝতে পারলেন, জায়গাটি আদালতের খুব কাছাকাছি। এ কারণে এটি ততটা নিরাপদ নয়। তাছাড়া, ছেলেরা থাকার জায়গা কিছুটা কম স্ট্যান্ডার্ড হওয়ায় অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ল এবং হাউকাউ শুরু করে। তারা ফাহিম ও আন্দালিবের বাড়িতে ফিরে যেতে চাইছিল।
কিন্তু আমার আস্থাভাজন নারী সাংবাদিক একদমই রাজি ছিলেন না। তবুও, ছেলেরা আন্দালিবকে ফোন করল। আন্দালিবও তাদের ফিরে আসার কথা বললেন। কিন্তু নারী সাংবাদিক এই বিষয়ে অনড় ছিলেন। তিনি চান না, তার বন্ধু ও বিশাল কোম্পানিটির কোনো ক্ষতি হোক। তাই তিনি ওয়াহিদ আলমকে জিজ্ঞাসা করলেন, তার দেওয়া সেফ হাউসের প্রস্তাব এখনও আছে কিনা। ওয়াহিদ আলম খুবই উদারভাবে রাজি হলেন।
ওয়াহিদ আলমের কন্টাক্ট ও সেফ হাউজের ঠিকানা রেজাকে দেওয়া হলো। রেজা ছেলেদের সেই সেফ হাউজে পৌঁছে দিলেন। সেফ হাউজটি মূলত ওয়াহিদ আলমের বায়িং হাউসের হেড অফিস। ফ্ল্যাটটি ছিল খুবই নিরাপদ। থাকার সুযোগ-সুবিধাগুলো ছেলেদের জন্য মানসম্পন্ন ছিল, যা পুরান ঢাকার জায়গাটি পূরণ করতে পারেনি। রেজা নারী সাংবাদিকের আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ছেলেদের ফোনে প্রিমিয়াম ভার্সনের VPN ইন্সটল করে দিলেন।
যখন নারী সাংবাদিক রেজার সাথে শিক্ষার্থীদের সেফ হাউজের সমন্বয় করছিলেন, তখনই সালমানের কাছ থেকে একটি মেসেজ পেলেন—বিকেল ২টা ১৩ মিনিটে। সালমান জিজ্ঞেস করল, পরের দিনের জন্য তারা কী ধরনের প্রোগ্রাম ঘোষণা করতে পারে। বিকেল ৩টা ২৪ মিনিটে, সালমান আদালতের বাইরে সারাদেশে প্রতিবাদ করার বিষয়ে তার মতামত চাইল।
নারী সাংবাদিক এই আইডিয়াটি পছন্দ করলেন। আরও পরামর্শ দিলেন, ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকায় প্রতিবাদ করার। তখন ক্যাম্পাসগুলো বন্ধ ছিল। বিকেল ৪টা ৫৪ মিনিটে, সালমান নারী সাংবাদিককে হান্নানের সাথে কথা বলতে বলল। তাকে ফেসবুক পেজ থেকে এই প্রোগ্রাম ঘোষণা করতে বলার জন্য। কারণ, হান্নান তখন লিফলেট বিতরণকে পরের দিনের প্রোগ্রাম হিসেবে বিবেচনা করছিল।
নারী সাংবাদিক হান্নানের সাথে কথা বললেন। হান্নান রাজি হলেন। বিকেল ৫টা ৩২ মিনিটে, সালমান নারী সাংবাদিককে একটি বাংলা বার্তা পাঠালেন তার মতামতের জন্য ও ইংরেজিতে অনুবাদের জন্য। সন্ধ্যার মধ্যে প্রোগ্রামটি ঘোষণা করা হলো।
এরই মধ্যে, হান্নান নারী সাংবাদিককে জিজ্ঞাসা করল—তিনি কি তাদের জন্য নতুন জামা-কাপড় ও লুঙ্গির ব্যবস্থা করতে পারবেন? তারা তাদের মাপও পাঠিয়ে দিল। নারী সাংবাদিক তার এক সহকর্মীকে টাকা দিলেন। সহকর্মী মিরপুরে থাকেন। তাকে জামা কিনে মিরপুর ডিওএইচএসে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বললেন।
তখন কারফিউ শুরু হয়ে গিয়েছিল। সব দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। তার সহকর্মী তার এক বন্ধুর সাহায্য নিলেন। বন্ধু তার এক পরিচিত কাপড়ের দোকানের মালিককে চুপিসারে দোকান খুলিয়ে কাপড় কিনলেন। পরের দিন সকালে ওয়াহিদ আলম মিরপুরের একটি নির্ধারিত স্পট থেকে কাপড়গুলো সংগ্রহ করেন।
৩১শে জুলাই দুপুর ১টা ৩১ মিনিট। সালমান আমার আস্থাভাজন নারী সাংবাদিককে টেক্সট করে জানালেন, গতকালের প্রোগ্রামের অবিশ্বাস্য সাড়া সম্পর্কে। এরপর তিনি পরের দিনের জন্য লিফলেট বিতরণের মতো একটি "সফট" প্রোগ্রাম ঘোষণার জন্য পরামর্শ চাইলেন।
কিন্তু তিনি সালমানকে কঠোরভাবে নিষেধ করলেন। কারণ, কাগজের লিফলেট বিতরণ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। জেনারেশন জি হিসেবে তাদের এমন বিষয়ে আরও সচেতন হওয়া উচিত। তিনি আরও বললেন, পরের দিন সফট প্রোগ্রাম ঘোষণা করলে আন্দোলনের গতি কমে যাবে।
বরং, তিনি পরের দিন জাতিসংঘের অফিসের বাইরে বিক্ষোভ করার পরামর্শ দিলেন। সেখানে দাবি জানাতে হবে, জাতিসংঘ যেন এই আন্দোলন দমনে সরকার যে গণহত্যা চালিয়েছে, তার স্বাধীন তদন্ত করে। সালমান তারপর জানালেন, অন্যরা পরের দিনের জন্য একটি সফট প্রোগ্রাম চাইছে। আর ইউএন ভবনের বাইরে বিক্ষোভ তার পরের দিন করা যেতে পারে।
কিন্তু পরের দিন ছিল বৃহস্পতিবার। তাই বৃহস্পতিবারের পরের দিন, অর্থাৎ শুক্রবারে জাতিসংঘের অফিসের বাইরে প্রতিবাদ করা অর্থহীন হতো। যদি জাতিসংঘের ভবনের বাইরে বিক্ষোভ করতে হয়, তাহলে তা বৃহস্পতিবারই করতে হবে। সালমান বললেন, তিনি অন্যদের সাথে কথা বলে আবার জানাবেন। সালমান আরও জিজ্ঞাসা করলেন, নারী সাংবাদিক কি আরও দুজন ছাত্র অধিকার পরিষদ নেতার জন্য নিরাপদ ঘরের ব্যবস্থা করতে পারবেন কি না। নারী সাংবাদিক তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে রাজি হলেন।
এরই মধ্যে, কাদেরের আশ্রয়দাতা নারী সাংবাদিককে ফোন করলো। সে জানালো, নাহিদের গুরু আন্দোলনকে ধীরে চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলো পুনরায় খোলার দাবিকে ঘিরে আন্দোলনকে পরিচালনা করতে বলেছেন। নাহিদের গুরু কে? আমার খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, তার নাম মহফুজ আবদুল্লাহ। এখন তিনি মহফুজ আলম নামে পরিচিত।
তখন নারী সাংবাদিক Shafiqul Alam'কে ফোন করলেন এবং মহফুজ আবদুল্লাহ সম্পর্কে জানতে চাইলেন। দেখা গেল, শফিকুল আলম এই মহফুজকে খুব ভালো চেনেন। তিনি মহফুজকে দুটি বাংলা দৈনিকে চাকরি দিয়েছিলেন। কিন্তু মহফুজ সেখানে বেশিদিন টিকতে পারেননি। নারী সাংবাদিক শফিকুল আলমকে বললেন, মহফুজের সাথে কথা বলতে, যেন সে চুপ থাকে। আন্দোলনকে বিভ্রান্ত না করে কিংবা আন্দোলনের পথে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়।
শফিকুল আলম তিন ঘণ্টা পরে ফোন করলেন। জানালেন, মহফুজকে সতর্ক বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। নারী সাংবাদিক সালমানকেও মহফুজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন এবং কঠোরভাবে বললেন, আন্দোলনকে ধীরে চালানো যাবে না।
সালমান বলল, এই আন্দোলনে অনেক স্টেকহোল্ডার রয়েছে। সব পক্ষের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছানো কঠিন। তবুও, যতদিন সে বেঁচে আছে, ততদিন আন্দোলন তীব্রগতিতে চলবে। চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সে নিজের জীবন দিতেও প্রস্তুত। এবং এখনো সে প্রাণান্তকর পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
সালমান আরও জানাল, সে ছাত্রদের নয় দফা দাবি লিখেছে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকার সময় মিডিয়া হাউসে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে তা পৌঁছে দিয়েছে। তবে, পরের দিনের প্রোগ্রামটি সফট হতে হবে। কারণ, ছেলেরা বেশ ক্লান্ত। তাদের একটু বিশ্রাম দরকার। তিনি তার কাছে প্রোগ্রামের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম এবং হ্যাশট্যাগ চাইলেন।
নারী সাংবাদিক ফাহিমকে জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি কি এ বিষয়ে সাহায্য করতে পারবেন? ফাহিম তাকে বেশ কিছু হ্যাশট্যাগ এবং শিরোনাম পাঠালেন। যেহেতু ছাত্ররা সফট প্রোগ্রাম চাইছিল, নারী সাংবাদিক সারা দেশে শহীদদের স্মরণে সন্ধ্যা ৯টায় ক্যান্ডেল লাইট ভিজিল বা মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের পরামর্শ দিলেন।
এই প্রোগ্রামটি শক্তিশালী এবং আবেগঘন ছবি ও ভিডিও তৈরি করবে—যা সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোড়ন তুলবে।
সালমানও এই আইডিয়াটি পছন্দ করলো। বললো, অন্যদের সাথে আলোচনা করবে। কিন্তু সন্ধ্যা ৮টা ৫৬ মিনিটে, সালমান জানালো, পরের দিনের প্রোগ্রামের নাম হবে “রিমেম্বারিং হিরোজ”। এতে থাকবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। কিন্তু মোমবাতি প্রজ্জ্বলন থাকবে না। এবং শনিবারের জন্য তারা "মার্চ ফর ক্যাম্পাস" প্রোগ্রামের পরিকল্পনা করছে—স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবিতে।
নারী সাংবাদিক এটা শুনে কাদেরের আশ্রয়দাতার সাথে কথা বললেন। এটা শুনে তিনিও সমানভাবে ক্ষুব্ধ হলেন। নারী সাংবাদিক তখন সালমানকে বকলেন। তিনি বললেন, এরকম প্রোগ্রামের মাধ্যমে আন্দোলনের গতি কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যদি তারা ক্যাম্পাস-কেন্দ্রিক দাবিতে ফোকাস করে, আন্দোলন তার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাবে না। জনসমর্থনও কমে যাবে। কারণ, আন্দোলনের বর্তমান তীব্রতা দীর্ঘদিন ধরে রাখা সম্ভব নয়।
তাছাড়া, তিনি এটাও বললেন, শেখ হাসিনা সময় পেলে পুনরায় সংগঠিত হয়ে যাবে। তাদের প্রত্যেককে সে তাড়িয়ে তাড়িয়ে শিকার করবে। নারী সাংবাদিক আরও বললেন, তিনি তার বন্ধুদের জীবন এবং ক্যারিয়ার ঝুঁকিতে ফেলছেন না। এতো মানুষের মৃত্যুর পর এটা কোটা-কেন্দ্রিক আন্দোলনে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না।
রাত ১১টা ১৫ মিনিটে, সালমান তাকে জিজ্ঞাসা করলো, তিনি কি সব ছাত্রনেতাদের সাথে জুম মিটিংয়ে বসে এই বিষয়গুলো বলতে পারবেন? তিনি রাজি হলেন। কিন্তু সেই মিটিংটি কখনো হয়নি।
লেখকঃ জুলকার নাইন সায়ের সামি
মুলপোস্টঃ
প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্বঃ
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১২:০১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




