মালয়শিয়ার প্রায় এক দশকের বেশি আগে তোলা ছবি।
এই মাসে আমার প্রবাস জীবনের পনেরোতম বছর হল। ২০০৮ সালের এই মাসে আমি মালয়শিয়ার উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করেছিলাম। মালয়শিয়ায় দীর্ঘকাল অবস্থানের কারণে আমার জীবনের অনেক স্মৃতি রয়েছে মালয়শিয়ায়। তেমনি একটা স্মৃতি আজকে শেয়ার করলাম। সবাই চাইলে আরো কিছু শেয়ার করতে পারি, আগামী কয়েকদিন। আগেই বলে রাখি, লেখা হবে আমার নিজের স্টাইলে। বিষয়বস্তু ভালো না লাগলে করার কিছু নাই, জাস্ট ইগনোর করতে পারেন।
*** *** *** ***
কোলনোস্কপি ও পুটুমারা
১/
আমি জীবনে একবার সত্যি সত্যি পুটুমারা খাইছিলাম। একেবারে বাস্তবিক ও রূপক দুই অর্থেই।
যারা আমাকে চিনে তারা সবাই জানে যে আমি কি পরিমাণ খুঁতখুঁতে স্বভাবের। তবে এই খুঁতখুঁতানি কোন ভালো কিছুতে নাই। দুনিয়ার সব আজাইড়া বিষয়ে আমার খুঁতখুঁতানি। মাথাতে একবার কিছু একটা ঢুকলে সেটার দফা-রফা না করে ছাড়ি না।
সেই সময় খুব স্বাস্থ্য-সচেতন ছিলাম। নিয়মিত জিম করে আর সাঁতার কেটে মোটামুটি পেটের উপর হালকা সিক্স-প্যাকের আভা আসতে শুরু করেছে। এই সময় মাথায় ঢুকল স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে সবার আগে পেট ঠিক রাখতে হবে।
প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে ছয় চামুচ করে ইসপগুলের ভুষি খাওয়া শুরু করলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে চার গ্লাস পানি। তারপরে ঠান্ডা দুধ দিয়ে চিড়া আর কলা। তারপরে সকালের নাস্তা। দুপুর বারোটার ভিতরে লাঞ্চ শেষ। ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরে সন্ধ্যা সাতটায় ডিনার। এরপরে এক ঘণ্টা জিম করে এক ঘন্টা সাঁতরানো। সে এক কঠিন রুটিনে বাঁধা জীবন।
কিন্তু এত সব করেও মনের মধ্য শান্তি ছিলো না। মনে হত পেটের ভিতরে কি জানি গুড় গুড় করতেছে। চারিদিকে শুনি মানুষ পেটের বিভিন্ন পীড়ায় মারা যাচ্ছে। হুমায়ুন আহমেদও এদের মধ্য একজন। আমারো মনের ভিতর ভয়ের দানা জমাট বাঁধতে শুরু করেছে। পেটের ভিতরটা কেটে দেখতে পারলে শান্তি লাগত। তাই পেট নিয়ে বিস্তর পড়াশোনা শুরু করলাম। কিছুদিনের ভিতরে মানুষের পেটের ভিতরের কি স্ট্রাকচার আর কি করলে পেটের ভিতরটা দেখা যাবে সেটা সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা হয়ে গেল। এই ধারণা নিয়ে গেলাম ইউনিভার্সিটির মেডিক্যাল সেন্টারে।
মেডিক্যাল সেন্টারের ডাক্তার মহিলা আমার পেট টিপে-টুপে দেখে বললেন, “তোমার কিছু হয় নাই। বাসাতে যাও।”
আমি উল্টো তাকে প্রশ্ন করলাম, “তুমি এন্ডোস্কপি না করে কিভাবে বুঝলে যে আমার কিছু হয় নাই? কিছু হতেও তো পারে।” তাকে আরো বললাম, “তুমি কি হেলিকোবেক্টর পাইরোলি ব্যাকটেরিয়ার কথা মাথাতে রাখছ? এন্ডোস্কপি না করে তো তুমি সিদ্ধান্তে আসতে পারো না।”
সেই মহিলা ডাক্তার মুখ কাঁচুমুচু করে বলে, “হেলিকোবেক্টর পাইরোলি কি?”
আমি উনার দিকে এমনভাবে তাকালাম যে উনি কেমন জানি কুঁকড়ে গেলেন। মনে মনে বললাম, “কই থেকে যে এইগুলা ডাক্তারি পড়ে আসছে?” তারপরে উনাকে কিছুক্ষণ পেপটিক আলসারের সাথে হেলিকোবেক্টর পাইরোলির সম্পর্ক বুঝালাম। উনি সব শুনে আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন, “বাবা, গুগল করেই যদি ডাক্তার হওয়া যেত তাহলে তো আর আমাদের একাডেমিক শিক্ষার কোন মূল্য থাকে না। আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান দিয়ে বললাম তোমার কিছু হয় নাই। তাও আমার কথা তোমার ভালো না লাগলে ইউনিভার্সিটির মেডিক্যালে গিয়ে ডাক্তার দেখাও।”
আবার গজগজ করতে করতে উনার চেম্বার থেকে বের হয়ে ইউনিভার্সিটির মেডিক্যালে ফোন দিয়ে এপয়ন্টমেন্ট নিলাম।
আমাদের ইউনিভার্সিটির মেডিক্যাল মালয়শিয়ার অন্যতম সেরা হাসপাতাল। সেখানে যে ডাক্তার আমাকে দেখলেন তিনি ভারতীয় তামিল বংশোদ্ভুত। উনার চেম্বারে গিয়ে আমার সমস্যার কথা বলাতে উনি হাসি হাসি মুখে বললেন, “তোমাকে দেখে তো কিছু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। তুমি কি সুন্দর একটা হাস্যজ্জ্বোল ছেলে।”
আমি আমার ভুল বুঝতে পারলাম। সাথে সাথে চেহারাতে একটা দুঃখী ভাব আনার চেষ্টা করলাম। ডাক্তার আমার এই দুঃখীভাবে আর আশ্বস্থ হলেন না। বললেন, “তোমার কিছু হয় নাই। বাড়ি যাও।”
আগের মহিলা ডাক্তারটা তাও পেট টিপে-টুপে দেখে বলছিলেন “কিছু হয় নাই” আর এই ব্যাটা ডাক্তার চেহারা দেখেই বলে দিল “কিছু হয় নাই”। এটা কোন কথা?
আমিও নাছোড়বান্দা। আমার পেটের ভিতর আমি দেখেই ছাড়ব। এদিকে ডাক্তার আমার এন্ডোস্কোপি করবেন না। আমি বলি, “আমি টাকা দিব। তোমার সমস্যা কি?” ডাক্তার বলে, “দেখো এটা সরকারী হাসপাতাল। এখানের সবকিছুতে জনগণের হক আছে। তোমার টাকা আছে মানে এই না যে তুমি একটা রিসোর্স অপচয় করে যার টাকা নাই তার হক মেরে দিবে। তোমার টাকা থাকলে প্রাইভেট হাসপাতালে যাও।”
এইসব নীতিকথা শুনতে বিরক্ত লাগে। উনার চেম্বার থেকে বের হয়ে একটা প্রাইভেট হাসপাতালে ফোন দিয়ে এপয়ন্টমেন্ট নিলাম। এই প্রাইভেট হাসপাতাল আবার এক কাঠি সরেস। ওরা সরাসরি ইউনিভার্সিটির হাসপাতাল থেকে ওদের প্রাইভেট হাসপাতালে চলে যেতে বলছে। দরকার লাগলে ওরা নাকি এখনই এম্বুলেন্স পাঠাবে আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ডাক্তার নাকি সকাল থেকে আমি আসব বলে পথ চেয়ে বসে আছেন।
আমি মনে মনে বলি, এই না হল আসল ডাক্তার। এরা রোগীর সমস্যার আর চাহিদার কথা বুঝে। কালবিলম্ব না করে চলে গেলাম সেই প্রাইভেট হাসপাতালে।
২/
হাসপাতালে গিয়ে দেখি এলাহি ব্যাপার-স্যাপার। বিশাল হাসপাতাল, কিন্তু রোগী তেমন নাই। ডাক্তার, নার্স, বয় সবাই কেমন জানি এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। হাসপাতালের দেয়ালে দেয়ালে অসম্ভব দামী সব পেইন্টিং। সিলিং-এ বিশাল বিশাল ঝাড়বাতি। মেঝেতে দামী কার্পেট, তার উপরে বসার জন্য দামী সোফা। দেখে মনে হয় ফাইভ-স্টার হোটেল।
আমার ডাক্তার একজন ভারতীয় শিখ। উনাকে আমার সমস্যার কথা বলাতে উনি নিজেই বললেন, “শুধু এন্ডোস্কপি করলে তো পুরো জিনিস বুঝা যাবে না। সাথে কোলনস্কপিটাও একটু করতে হবে।”
আমি এবার অবাক হয়ে বলি, “এটা আবার কি?”
“এটা হল এন্ডোস্কপির বিপরীত। এন্ডোস্কপিতে যেমন মুখ দিয়ে ক্যামেরাওয়ালা পাইপ ঢুকানো হয় ঠিক তেমনি কোলনস্কপিতে তোমার পুটু দিয়ে ক্যামেরাওয়ালা পাইপ ঢুকানো হবে। একটু চিনিচিনে ব্যাথা হবে বটে কিন্তু তোমার পুটুর ভিতরটার ফকফকা একটা পিকচার পাওয়া যাবে।”
আমি তো মহাখুশি। এতো মেঘ না চাইতেই শুধু বৃষ্টি না, একেবারে তুফানের তান্ডব।
ডাক্তার আরো বলে, “শুভ কাজে দেরী করতে নেই বাছা। কালকেই করে ফেল। আসলে করতে পারলে এখনই করতাম। কিন্তু কিছু মেডিসিন দিয়ে তোমার পেটের ভিতরটা আগে সাইজ করতে হবে। তাই আজ রাতে এই পথ্যগুলো খেয়ে আগামীকাল সাত সকালে চলে আসো। আমরা তোমার পথ পানে চেয়ে বসে থাকব।”
আমিও বললাল, “আসলেই শুভ কাজে দেরী করতে নেই। সবাই যদি আপনাদের মতন করে বুঝত তাহলে পৃথিবীতে আজ কোন জরা-ব্যাধি থাকতনা।”
আমার কথা শুনে ডাক্তার কেমন যেন হে হে করে হাসতে থাকে। আমি ডাক্তারের দেয়া মেডিসিন নিয়ে বাসাতে চলে আসলাম। এখন নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে আগামী দিনের জন্য। আগামী দিন আমার স্বপ্ন পুরণের দিন।
৩/
পরেরদিন সকালে এক সুরেলা নারী কন্ঠের ফোন পেলাম। ডাক্তার নাকি আমার পথ চেয়ে অধীর আগ্রহে বসে আছেন। আমার কিঞ্চিৎ দেরী দেখে নাকি উনার খুব চিন্তা হচ্ছে। ডাক্তারের সচেতনতায় আমি মুগ্ধ। কালবিলম্ব না করে বউকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্য বের হলাম। যদিও আমার বউ আমার এইসব কার্যকলাপে মহাবিরক্ত।
ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে দেখি ডাক্তার সাহেব তার আরেক ডাক্তার বন্ধুকে নিয়ে বসে আছেন। উনার ডাক্তার বন্ধুটি নাকি এনেশথেশিয়া বিশেষজ্ঞ। সাথে রয়েছে অতীব সুন্দরী এক ভারতীয় শিখ নার্স। আমার ডাক্তার নাকি আমার জন্য মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করছেন। উনার এনেশথেশিয়া বিশেষজ্ঞ বন্ধু আমাকে সুনিয়ন্ত্রিত মাত্রার ঔষধ দিয়ে ঘুম পাড়াবেন যাতে পুটুতে ক্যামেরা ঢুকানোর সময় ব্যাথা না পাই। আমি উনাদের কাজ-কর্ম দেখে একেবারেই মুগ্ধতার চরম সীমানাতে পৌছে গেলাম।
এবার বউয়ের কাছ থেকে বিদায় নেবার পালা।
বউয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এন্ডোস্কপি করার রুমে গিয়ে দেখি সেই সুন্দরী নার্স বসে আছে। সে আমাকে জামা-কাপড় খুলে একটা আলখাল্লার মত কাপড় পড়তে বলল। সেই আলখাল্লার মত কাপড়ের পাছার জায়গাটা আবার বিশাল গোল করে কাটা। মানে আমি জামা ঠিকই পড়ে আছি, কিন্তু পাছাতে কোন কাপড় নাই।
এই সময় সেই নার্স আমাকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কি করো?”
বললাম, “ইঞ্জিনিয়ার, এখন PhD করছি।”
নার্স পুরাই অভিভূত হয়ে বলল, “ওয়াও। তুমি তো সেই ব্রিলিয়ান্ট।”
আমি মনে মনে বলি, হে ধরনী তুমি দ্বিধা হও, আমি আমার উদোম পাছা নিয়ে তোমার ভিতরে ঢুকে যাই। আমার কথা বিশ্বাস না হলে যে কেউ পাছাতে কাপড় না পড়ে নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জনটা কোন সুন্দরী মেয়েকে বলার চেষ্টা করবেন। আমার অনুভূতিটা তখন আপনি বুঝতে পারবেন।
একটু পরে ডাক্তার সাহেব উনার এনেশথেশিয়া বিশেষজ্ঞ বন্ধুকে নিয়ে রুমে প্রবেশ করলেন। এই সুন্দরী নার্স ডাক্তারকে বললেন যে আমি ইঞ্জিনিয়ার ও বর্তমানে PhD করছি। আমি আবার মনে মনে বলি হে ধরনী তুমি দ্বিধা হও, আমি আমার উদোম পাছা নিয়ে তোমার ভিতরে ঢুকে যাই।
ধরণী দ্বিধা হল না, আমি আমার উদোম পাছা নিয়ে ডাক্তারের রুমে বসে থাকলাম। ডাক্তার আগ্রহের সাথে আমার ফিল্ড অব রিসার্স জিজ্ঞেস করছেন। আমি উদোম পাছা নিয়ে ব্যক্তিত্ব সহকারে উনাকে বুঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু কেন যেন আমার ব্যক্তিত্ব ধরে রাখতে পারছি না।
হাতে ক্যানোলা লাগিয়ে সেই নার্সটা একটা ইনজেকশন পুশ করতেই কেমন যেন তন্দ্রাতে চলে গেলাম। মানে কে কি বলছে সব আবছাভাবে শুনতে পাচ্ছি, কিন্তু চেতনা কেমন যেন নাই হয়ে গিয়েছে। এর মাঝেই ডাক্তার আর নার্সের ভিতর কথোপকথন শুনতে পাচ্ছি। তারা বলাবলি করছে আমি নাকি ইঞ্জিনিয়ার, আমি নাকি PhD করছি, আমি নাকি সেই ব্রিলিয়ান্ট। এর মাঝে পুটুতে সুরসুরি টের পাচ্ছি। খুব হাসি পাচ্ছিল তখন।
যখন জ্ঞান ফিরে আসল তখন ডাক্তার বললেন, “বাছা তোমার পুটুর ভিতরের ভিডিও খুব সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এখন ভিডিওটা এডিটিং করে তোমাকে দেখাব। ভিডিওটি আলরেডি আমাদের এডিটরের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। আধাঘন্টার মত সময় লাগবে। তুমি পাশের রুমের বেডে গিয়ে বিশ্রাম নাও।”
আমি এই হাসপাতালের কার্যকলাপে পুরাই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। এদের নাকি নিজস্ব প্রফেশনাল ভিডিওগ্রাফার, ফটোগ্রাফার, এডিটর সব আছে। যাদের অনেক টাকা তারা নাকি এই হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাসায় যাবার ক্ষণটা ভিডিও করে রাখে। আবার বাচ্চার জন্ম, অথবা ছোট ছেলেদের সুন্নতে খাৎনাও নাকি অনেকে ভিডিও করে। আমি তো অবাক। কালে কালে কত কিছু যে জানতে হবে। কোলনস্কপির মতও একটা জিনিসও যে মানুষে ভিডিও করে, এডিটিং করে সেটা এখানে না আসলে জানতাম না।
আধা ঘন্টা পরে ডাক্তার আমাকে আর আমার বউকে একটা প্রজেক্টর রুমে নিয়ে গেলেন। রুমতো না একটা ছোটোখাটো থিয়েটার। রুমে সুন্দর আরামদায়ক সোফা। বসলে মুখ দিয়ে আপনা-আপনি বের হয়ে আসে “আহ”। আধো অন্ধকার সেই রুমে এনেশথেশিয়া বিশেষজ্ঞ আর সেই সুন্দরী নার্স আছে। শুরুতেই আমার ডাক্তার একটা নাটকীয় বক্তৃতা দিলেন। উনি ও উনার সহকর্মীরা আমার মত এক মহান ব্যাক্তির ‘পুটু’ নাড়াচাড়া করে কিভাবে ধন্য হলেন সেই বিষয়ে বিশদ বর্ণনা ছিল। বিবিধ বিশেষণে জর্জরিত সেই বক্তৃতা শুনে আমার সন্দেহ হল যে এদের এইসব লিখে দেওয়ার জন্য হয়ত আলাদা লোক আছে। সবশেষে বেশ নাটকীয় কায়দায় উনি ঘোষণা করলেন যে আমার আসলে কিছুই হয় নাই। এই আনন্দে উনি ও উনার সহকর্মীরা প্রায় কেঁদেই দিলেন। আমি সত্যি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। মনে হচ্ছিল উনারা না জানি আমার কতদিনের পরিচিত।
ভিডিও শুরু হল এক নাটকীয় মিউজিকের মধ্য দিয়ে। শুরুতেই আমার নাম-ধাম ও পরিচয় দেখাল। নামের পাশে আবার ব্রাকেটে PhD লেখা। যদিও PhD শেষ হতে তখনও ঢের দেরী কিন্তু এটা দেখে চোখে প্রায় পানি চলে আসল।
ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান “ইত্যাদি”-এর সূচনা সংগীতে যেভাবে একটা টানেলের ভিতর দিয়ে “ইত্যাদি” লেখাটা যেতে থাকে ঠিক সেভাবে আমার পুটুর ভিতরে এক গোলাপি টানেলের ভিতর দিয়ে ক্যামেরাটা যেতে থাকে। ভিডিওতে অনেক নাটকীয় কায়দায় এটা-সেটা বলা হচ্ছে। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছি। আমার এতদিনের স্বপ্ন নিজের পেটের ভিতরটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখা সম্ভব হচ্ছে। পরিশেষে ভিডিওতে বলা হল যে আসলে আমার কিছু হয় নাই। এতদিন ধরে চলা নাটকের শেষ হল বলে আমার বউ হাফ ছেড়ে বাঁচল। আমি ভেবেছিলাম আমার কিছু হয় নাই সেই আনন্দে সে হাফ ছেড়ে বেঁচেছিল। কিন্তু পরে বুঝেছি যে আমি আসলে অনেক ভুল ছিলাম।
ডাক্তারের দেয়া ডিভিডি রেকর্ড নিয়ে প্রজেক্টর রুম থেকে বের হলাম। এবার বিল দেবার পালা।
বিলের কাউণ্টারে গিয়ে শুনি আমার ইন্সুরেন্স নাকি এই প্রসিডিউর কভার করতে পারবে না। কারণ, প্রথমত আমার কিছু হয় নাই। দ্বিতীয়ত, আমি স্বেচ্ছায় কোন ডাক্তারের রেফারেন্স ছাড়া নিজে মাতবরি করে এই প্রসিডিউরের ভিতর দিয়ে গেছি। তাও যদি আমার কোন অসুখ ধরা পড়ত তাহলে নাকি ইন্সুরেন্স কোম্পানি পুরো বিলটাই দিত। যেহেতু কিছুই হয় নাই, তাই ইন্সুরেন্স কোম্পানির কোন দায়বদ্ধতা নাই। আমি মনে মনে ভাবি, এরা কি মানুষ? এত পাষাণ কি কেউ হয়?
আমি ভাব দেখিয়ে বললাম, “আমি বিল নিজের পকেট থেকেই দিব। দেখি আমাকে বিলটা দাও।”
বিল সাথে সাথেই সামনে চলে আসল। ভক্কর-ঝক্কর সব মিলায়ে বিল আসছে প্রায় আট হাজার রিঙ্গিট। সেই সময়ের হিসাবে প্রায় দুই লাখ বিশ হাজার টাকা। বিল দেখে আমার অন্তরাত্মা শুকিয়ে গেল। এতক্ষণ পুটুতে ব্যাথা না করলেও সত্যি সত্যি বিল দেখে আমার পুটুতে চিনিচিন ব্যাথা হওয়া শুরু করল। এতক্ষণে এই হাসপাতালের এত ভক্কর-ঝক্কর কার্যকলাপের মর্ম বুঝতে পারলাম। আমি ভাবছিলাম এইগুলো সব এমনি-এমনি ফ্রি করছে। ইউনিভার্সিটির হাসপাতালে এই প্রসিডিউর করলে খরচ সব মিলায়ে আসত সর্বোচ্চ পনেরো হাজার টাকা। আর এই প্রাইভেট হাসপাতালে সেই পনেরো হাজারের সাথে আরো প্রায় দুই লাখ পাঁচ হাজার টাকা যোগ করতে হচ্ছে। আমি মনের দুঃখে ক্রেডিট কার্ড এগিয়ে দিলাম। চোখের সামনে দেখলাম কার্ড থেকে টাকাগুলো কাটা হচ্ছে। মুখের ভিতরটা শুকিয়ে যাচ্ছে, বুকটা খালি হয়ে যাচ্ছে, পুটুতেও ভীষণ ব্যাথা হচ্ছে খালি মুখ ফুটে বলতে পারছিনা “পুটুমারা খেলাম আমি, আবার বিলও দিতে হচ্ছে আমাকে।” হায়দার হোসেনের সেই গানের মতঃ
আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া
করিতে পারিনি চিৎকার
বুকের ব্যাথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার
ট্যাক্সিতে করে ফেরার সময় জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে বুকে হাত দিয়ে বসে ছিলাম। বুকটা সত্যি একটু ব্যাথা করছিল। বউকে বললাম, “এতগুলো টাকা জলে গেল। এখন তো বুকটা একটু ব্যাথা করছে। হার্ট এটাক হলো নাকি?”
বউ উদাস হয়ে বলল, “হার্ট এটাক সত্যি হলে তো সমস্যা নাই। এটা ইন্সুরেন্স কভার করবে। সো নো চিন্তা, ডু ফুর্তি।”
________________________________________________
সমাপ্ত
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ২:১৬