somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাস কন্ডাক্টর এবং আমি যখন একই স্কুলের ছাত্র

১১ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবন মানেই আমার অনুভূতি, অভিজ্ঞতা আর দর্শন।
জীবন মানে আমিত্ব।
জীবন মানে আমার কথা।
কিন্তু একটা সেকেন্ডে সবকিছু উলটে গেলো।
বাসে করে আসছিলাম, আর বাস কন্ডাক্টরের দিকে বারবার চোখ চলে যাচ্ছিলো। পরিচিত চেহারা। খানিক পরেই চিনে ফেললাম তাকে। আমাদের এলাকায় থাকে। শুধু তাই না, আমি যে স্কুলে পড়েছিলাম- সে সেই স্কুলের ছাত্র ছিলো।

কথা বলতে যাবো, তখন একজন লোক তাকে ধমকে উঠলো।
"ওই বেটা, তুই আমার ব্যাগ সরাইলি ক্যান? আমার পা রাখতে সমস্যা হয় না?"
"মামা, ব্যাগ না সরাইলে মানুষ দাঁড়াইবো ক্যামনে? একটু কষ্ট করেন, আমি আপনারে পাশের সিটে বসাইয়া দিতেসি। উনি সামনের স্টপেজে নামবেন, তারপর আপনি আরামে বসতে পারবেন।"
"চোপ বেটা! ফালতু কোনানের, থাপ্পর দিয়া দাঁত ফালাইয়া দিমু।"
বলেই কন্ডাক্টরকে একটা ধাক্কা মারলো। কন্ডাক্টর ছেলেটি ধাক্কা সামলে পড়ে যেতে নিয়েও উঠে গেলো। বোঝা যায় সে এসবে অভ্যস্ত। আর ওইসব ভদ্র পোষাক পড়া নিরীহ গোছের লোকেরাও অভ্যস্ত দুর্বলকে অত্যাচার করে কষ্ট দিতে!

ক্ষণিকের জন্য মনে হলো, আমি যদি এখন কন্ডাক্টরের সাথে কথা বলি তবে লোকেরা কী ভাববে? ভাবতেই অবাক হলাম। নষ্ট সমাজের ভাবনা থেকে আমার চিন্তাও মুক্ত নয়। কী অমানুষের মতো ভাবছি! সব ভাবনা ঝেড়ে কন্ডাক্টরকে প্রশ্ন করলাম এরপর।
"তুমি কি মিরপুরে থাকো না?"
"জ্বি ভাই"
দরাজ কন্ঠে উত্তর দিলো। তারপর আমার দিকে তাকালো অবাক হয়ে। আমি প্রশ্ন করলাম,
"তুমি বশির উদ্দিন স্কুলে পড়েছিলা না?"
"জ্বি ভাই, আপনিও মনে হয় বশির উদ্দিনে পড়সেন?"
"হ্যাঁ, তুমি পড়াশোনা বন্ধ করেছো কোন ক্লাস থেকে?"
ছেলেটি বললো, "মেট্ট্রিক পাস করার পরই বন্ধ করসি।"
"কি আশ্চর্য! কেনো? তুমি উন্মুক্ততেও পড়তে পারতে!"
আমার চোখের দিকে তাকিয়ে সে সটান জবাব দিলো, "বাবা মারা গেছে, তাই।"
বলতে একটুও চোখ কাঁপলো না তার। একটুও সে অসহায় বোধ করলো না।

আমি মূহুর্তে অসহায় বোধ করলাম। আশ্চর্য! একই স্কুল থেকে পাস করে বেড়িয়ে আজ আমি কতো আনন্দে পড়াশোনা করে চলছি, ইচ্ছেমতো নিজের জীবন গোছানো-ভাঙার খেলা খেলছি, অথচ সেই স্কুলের ছাত্র হয়ে ছেলেটি জীবনকে ভাঙ্গা-গড়ার কোনো সুযোগই পায়নি!
কী সাধারণভাবে তার পরিবর্তিত অবস্থাকে সে মেনে নিয়েছে! তার বেশভূষা, কথাবার্তা আর চিন্তাগুলোকে মূহুর্তে পরিবর্তন করে দিয়েছে নিয়তির নিষ্ঠুরতা।
কতো ভাগ্যবান আমার মতো মানুষগুলো। যাদের বাবা-মায়েরা প্রতিনিয়ত আমাদেরকে মানুষ হিসেবে গড়ার জন্য অঢেল হস্তে দিয়ে যাচ্ছে।
আমি মাথা নিচু করে বাস থেকে নেমে এলাম। বিদায় বেলায় তাকে কোনোরকমে বললাম, এলাকায় গিয়ে আমার সাথে দেখা কোরো। উন্মুক্তে ভর্তির ব্যাপারে সাহায্য করবো।
আর কিছু মুখ দিয়ে বেরোলো না। ওই মূহুর্তে অনুভব করলাম অন্যের জীবনের অনুভূতিগুলো, অন্যের অভিজ্ঞতাগুলো, অন্যের দর্শনগুলো। নিজেরগুলোকে এখন বেশ ছ্যাবলা মার্কা বলেই মনে হচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:৩০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×