somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"নিষিদ্ধ অরণ্য" বই: প্রেম, সমাজ ও ধর্মের শিকার হয় যে অরণ্যে।

২১ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাত্র পড়া শেষ করলাম “নিষিদ্ধ অরণ্য” নামে চমৎকার একটি উপন্যাস। লেখক “সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ” অত্যন্ত চমৎকার আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে মানবজীবনের চলমান টানা-পোড়েন, প্রথা, একগুঁয়েমি ও অসংলগ্নতা তুলে ধরেছেন এ বইতে।

বইয়ের প্রতিটি চরিত্রতে একধরণের আকর্ষণ পেয়েছি পড়তে যেয়ে। মজহার চাচা, যিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান একজন সঙ্গীত সাধক ও দার্শনিক। শিক্ষক দিনমণি, যার নেশাই নতুনকে জানা। দিনমণির মেয়ে প্রজ্ঞা, যার প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিদীপ্ত কথায় স্বার্থপর ও লোভী জমিদারের ভালো মানুষ টাইপের উদাস শিকারি ছেলে ইন্দ্র মূহুর্তে শিকারের ছলাকলা ভুলে আরো উদাস হয়ে যায়।

ইন্দ্রকে গ্রামের মানুষরা ভালোবাসে তার মানুষের প্রতি সহজাত সরলতাপূর্ণ ভালোবাসার জন্য। তাছাড়া সে জমিদারের ঔরশজাত সন্তান হয়েও গাঁয়ের মানুষের হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঘ হত্যা করে বীর বনে গেছে। সেই ইন্দ্র যখন দিনমণির মেয়ে প্রজ্ঞার সাথে পরিচিত হয়, তখন শিক্ষক দিনমণির অত্যন্ত পড়ুয়া মেয়ে প্রজ্ঞার প্রগাড় বুদ্ধিদীপ্ত দুরন্তপনায় ইন্দ্র ভুলে যায় সে কতো বড় শিকারি।

প্রজ্ঞা ইন্দ্রকে কটাক্ষ করে বলে, বাঘ মেরেছেন বলে বন্দুক দাগিয়ে লোকদের দেখাতে হবে নাকি আপনার প্রতিভা? আপনি কি শিশু নাকি??
ইন্দ্র হতবাক হয় প্রজ্ঞার বাক্যবাণে।

প্রজ্ঞা জঙ্গলে ঘুরতে ইন্দ্রের সাহায্য নেয়। কারণ তার মৃতা মায়ের একটি হারানো জমি আছে এ জঙ্গলে। ইন্দ্রকে সেটা খুঁজে দিতে হবে। কেউই জানে না জঙ্গলের কোথায় সে টাঁড় বা জমি। সেই জমি আছে কি নেই তা নিয়েই সংশয়। ইন্দ্র বুঝে নেয় যে, বাঘ মারা ইন্দ্রের জন্য এ এক অন্যরকম চ্যলেঞ্জ। যা নেই, তা খুঁজে বের করা তার কম্ম নয়। তবুও প্রজ্ঞার আকর্ষণে সে নিজের অস্তিত্বকে প্রজ্ঞার কাছে সঁপে দেয়। তাকে যেভাবেই হোক প্রজ্ঞাকে সাহায্য করতে হবে।

মজহার চাচা, যিনি ইন্দ্র ও প্রজ্ঞাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন। তিনি অসৎ জমিদারের বিরুদ্ধে গিয়ে অত্যন্ত সুচারুরূপে ইন্দ্র ও প্রজ্ঞাকে মিলিত করার ব্যবস্থা করে দেন। গল্পের শেষে হঠাৎ প্রজ্ঞার বাবা দিনমণির অন্য এক পরিচয় আবিষ্কার হয়। কুসংস্কারে আচ্ছন্ন সমাজ সে পরিচয় পেয়ে দিনমণিকে বাড়ি ছাড়া করতে উঠে পড়ে লাগে। সবাই যখন এদিকে ব্যস্ত, ইন্দ্র আর প্রজ্ঞা তখন জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায় প্রজ্ঞার মায়ের হারানো জমির খোঁজে। এর মধ্যে আরেকটি বিরাট বাঘ এসেছে জঙ্গলে। গাঁয়ের লোকেরা ইন্দ্রের উপর ভরসা রাখে। ইন্দ্রই পারবে বাঘ মেরে দিতে।
প্রজ্ঞা ইন্দ্রের জীবনটাকে আশা আর স্বপ্নের রেশ দিয়ে বদলে দেয়। ইন্দ্র যখন নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়েও প্রজ্ঞাকে আপন করে পেতে চায়, তখন বুদ্ধিমতী প্রজ্ঞা ইন্দ্রকে নিষেধ করে। সে কটাক্ষ করে ইন্দ্রকে। ইন্দ্র অভিমানে জঙ্গলের গভীরে ঢুকে যায়।

এরমধ্যে প্রজ্ঞার মায়ের জমি বা টাঁড় পাওয়া যায়। প্রজ্ঞার কথাই সত্য হয়। এদিকে সবকিছুর ঝামেলা মিটিয়ে মজহার চাচা যখন ইন্দ্র আর প্রজ্ঞাকে সেই হারানো গোপন জমিতে যেয়ে থাকতে বলবেন, তখন হঠাৎ করে হাওয়া হয়ে যায় প্রজ্ঞা আর ইন্দ্র।

কোথায় হাওয়া হয়ে যায় তারা? কেউ কেনো খুঁজে পায় না তাদের??

মজহার চাচা, দিনমণি, গ্রামবাসী- এবং আরো যারা যারা ইন্দ্র ও প্রজ্ঞাকে ভালোবাসতো তারা খুঁজে বেড়ায় দু’জনকে। কেনো যেনো পাওয়া যায় না ওদের। বড় টুইস্টেড ফিনিশিং!!
পড়লে পস্তাইবেন, না পড়লে আরো বেশি পস্তাইবেন- কথা দিলাম।

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:১২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×