গত সেপ্টেম্বরে ইন্টারনেট ৪১ বছরে পড়ল। এত অল্প সময়ে আর কোনো প্রযুক্তি এতটা উন্নতি লাভ করেছে বলে মনে হয় না। এমনকি গত পনের বছর বা তার চাইতে কিছু বেশি সময়ে ইন্টারনেট নিজেকে রীতিমত ঢেলে সাজিয়েছে, তাও একবার নয়, কয়েকবার। আর এ কারণেই আজ থেকে মাত্র এক দশক আগের নেট প্রযুক্তি এখন ঐতিহাসিকদের গবেষণা আর আমাদের হাসি তামাশার বিষয়। একুশ শতকের প্রথম দশকের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আমরা যে এখন কেবল ইন্টরনটে কেনাকাটা, ব্যাংকিং, চাকরী এবং দেখাসাক্ষাৎই করি তা নয় - প্রতি মুহূর্তে কি করছি না করছি তা দুনিয়াবাসীকে জানাই (উদাহরণ: টুইটার) এবং এমনকি ডায়েরিও রক্ষণাবেক্ষণ করি অনলাইনে (ব-গিং)। গান শোনা থেকে শুরু করে টিভি দেখা পর্যন্ত আমাদের সব কাজই এখন ঘটে চলেছে সাইবারস্পেসে। কাজেই প্রশ্ন উঠতেই পারে: এরপর কি? প্রযুক্তির অবিরত পরিবর্তন আর উন্নতি অগ্রগতির স্রোতে
ইন্টারনেটের অদূর ভবিষ্যতের কয়েকটি অগ্রগতি সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করা আমাদের লক্ষ্য, যদিও কাজটা মোটেই সহজ নয়। এসব ভবিষ্যদ্বাণী যে একেবারে অক্ষরে অক্ষরে ফলে যাবে তাও নয়। তবে বর্তমানের বিভিন্ন গবেষণার ফলাফলের সুবাদে এসব প্রযুক্তি অদূর ভবিষ্যতে ন্টারনেটের ভুবনে জায়গা করে নেবে বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা। আসুন তাহলে শুনে নেয়া যাক সেসব প্রযুক্তি সম্বন্ধে, যেগুলো উদ্ভাসিত করবে আগামীর নেট দুনিয়াকে।
অডিও ওয়েব সার্ফিং
ইন্টারনেটের অডিয়েন্স তথা নেট নাগরিকদের সংখ্যা কিন্তু দিনদিনই বাড়ছে। যত বেশি সম্ভব মানুষকে ইন্টারনেটের জালের নিচে নিয়ে আসার চ্যালেঞ্জটাও দিনদিন জোরালো হচ্ছে। আর তার সঙ্গে মিল রেখে শব্দের মাধ্যমে ওয়েব ব্রাউজ করার প্রচলনও সামনে বাড়বে। এখনও
বুঝতে পারছেন না ‘শব্দের মাধ্যমে ওয়েব ব্রাউজ করা’ কি জিনিস? উদাহরণ দিয়ে বলি। মনে করুন একটি ট্রেন যাচ্ছে। অনেক যাত্রীর কানে আছে হেডফোন, যেটি তাদের মোবাইল ফোন, পিডিএ অথবা ল্যাপটপের সঙ্গে যুক্ত। সেসব মোবাইল ডিভাইসে খোলা আছে বিভিন্ন ওয়েব সাইট। এসব ওয়েব সাইটের তথ্যগুলো হেডফোনের মাধ্যমে যাত্রীদের কানে পৌঁছে যাচ্ছে টেক্সট-টু-স্পিচ প্রযুক্তির কারণে। ঠিক যেন একজন খবর পাঠক ওয়েব সাইটটা পড়ে শোনাচ্ছেন তাদেরকে। আর যাত্রীরাও এরপর কোন অংশটা শুনবেন বা কোন পেজে যাবেন সেটা মুখে বলছেন। সঙ্গে সঙ্গে তামিলও হয়ে যাচ্ছে সে নির্দেশ। গত এক দশকে কণ্ঠস্বর শনাক্তকরণ প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতির কারণে উপরের এই কাহিনী এখন সত্যি হবার অপেক্ষায় আছে। আধুনিক কিন্ডল ই-বুক এবং অ্যাপল এর ম্যাক ওএসএক্স অপারেটিং সিস্টেমের নতুন ভারসনের বদৌলতে টেক্সট-টু-স্পিচ প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। কাজেই মুখে মুখে নির্দেশ দেবার মাধ্যমে ওয়েব ব্রাউজিং করার জন্য আমাদের আর খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে হয় না।
যে কোনো ডিভাইসে করা যাবে ওয়েব সার্ফিং
ভাবগতিকে মনে হচ্ছে প্রযুক্তি উদ্যোক্তারা যে কোনো বস্তুর মধ্যে ইন্টারনেটকে প্রোথিত করার জন্য আদাজল খেয়ে নেমেছেন। ফ্রিজ বা অন্যান্য গৃহস্থালী পণ্যের সঙ্গে টাচস্ক্রিন
যুক্ত করাসহ নানা প্রযুক্তি উদ্যোগ মানুষ ও যন্ত্রের যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন এক পৃথিবীর সন্ধান দিতে যাচ্ছে। এই নতুন পৃথিবীতে তথ্যই রাজা - content is king নতুন নতুন ডিভাইসের মধ্যে ইন্টারনেটকে ছড়িয়ে দেয়ার মানেই হল আরো বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে একে পৌঁছে দেয়া। সেটা ইন্টারনেটকে রান্নাঘরে বা চলন্ত ট্রেন যেখানেই নিয়ে যাওয়া হোক না কেন। এসব জায়গায় যে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হবে তাতে যে ইন্টারনেটের সমস্ত কার্যক্রম বা ‘ফাংশানালিটি’ই থাকবে তা নয়, থাকবে কেবল প্রাসঙ্গিক সুযোগ সুবিধাগুলো। কিচেন কাউন্টারে যে নেট সংযোগ থাকবে তাতে প্রাসঙ্গিক বিষয় বা সুবিধাগুলো, যেমন রান্নাবান্নার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়, মুদিপণ্যের তালিকা, খাবারের রেসিপি ইত্যাদি যাতে ভালভাবে প্রদর্শন করা যায় সে ব্যবস্থা থাকতে হবে। অবশ্য এর খারাপ দিকও আছে। টেলিভিশনের মত ডিভাইসে ইন্টারনেটকে প্রোথিত করে দেয়ার মানেই হল স¤প্রচার প্রতিষ্ঠানগুলো তখন আরো বেশি সংখ্যক দর্শকের কাছে পৌঁছানোর জন্য নানারকম বিজ্ঞাপনী অত্যাচার শুরু করতে পারে। এ কারণে এদিকটায় ভালভাবে লক্ষ রেখেই যা করার করতে হবে।
ডটকম ডোমেইন প্রাধান্যের অবসান
ইন্টারনেট যতদিন ধরে আছে ডটকম (.com) টপ লেভেল ডোমেইন-এর প্রাবল্য বা প্রাধান্যও আছে ততদিনই। কোনো ওয়েব সাইট বাণিজ্যিক (কমার্শিয়াল) হোক বা না হোক, শেষে .কম টপ লেভেল ডোমেইন যেন থাকতেই হবে। ভাবটা এমন - নামের শেষে .কম না থাকলে বুঝি সম্মান থাকে না! তবে এর ফলে যা হয়েছে তা হল, .কম দিয়ে সহজ সরল বা যুক্তিযুক্ত যত নাম আছে তার সবগুলোই শেষ হয়ে আসছে। মানুষ এখন হয় অন্যান্য এক্সটেনশনের দিকে ঝুঁকে পড়ছে, না হয় অদ্ভুত অদ্ভুত সব শব্দ তৈরি করছে। এভাবেই অদূর ভবিষ্যতে আরো নতুন নতুন এক্সটেনশন জন্ম নিতে থাকবে। এমনকি ‘গো-ড্যাডি’ (GoDaddy)-র মত ডোমেইন নেম সেবাদাতা বড় বড় কোম্পনিগুলো এক্সটেনশন সাবস্ক্রিপশন ধরনের সেবা প্রদানও শুরু করতে পারে। এ সেবা গ্রহণ করলে আপনার পছন্দের ডোমেইন নামের জন্য বিভিন্ন রকমের এক্সটেনশন পাওয়ার ব্যাপাওে আপনি নিশ্চিন্ত হতে পারবেন। তবে অদূর না হলেও মোটামুটি দূর ভবিষ্যতে আরো একটা ট্রেন্ড দেখা যাবে। এটি হচ্ছে, ওয়েব সাইটের নাম তথা URL মনে রাখার প্রয়োজন ফুরাতে পারে। এমন একদিন আসবে যখন সার্চ ইঞ্জিন, আরএসএস রিডার, অনলাইন কমিউনিটি এবং নেটওয়ার্কেও মাধ্যমেই আমরা প্রবেশ করব ওয়েব সাইটে - কোনো ওয়েব ঠিকানা টাইপ করার মাধ্যমে নয়। সেদিন ওয়েবে সরাসরি প্রবেশ করার (ইংরেজিতে যাকে direct traffic বলা হয়) প্রয়েজনীয়তা শেষ হয়ে যাবে। আর তখন .কম ডোমেইন নামের আকর্ষণ বা প্রাসঙ্গিকতা বলেও কিছু থাকবে না।
Collected from Ontorjal