বিনোদনের মহড়া।
শাহবাগের মোড়ে গাবতলী টু সদরঘাটের বাসে অপেক্ষায় দাড়িয়ে ছিলাম। দুপুরের ক্ষীপ্ত রোদে রাস্তার প্রচন্ড জ্যামে শরীর থেকে ঘাম বেড়িয়ে আসার মত না। সময়টা সকালেই রাস্তা পূরোটাই ফাঁকা। পাশে এক ভদ্র দেশের প্রথম সারীর জাতীয় এক পত্রিকা পড়ছে আর মিটিমিটি হাসে। হাসঁবেই না কেনো? দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিরা যেভাবে মানুষকে হাঁসিয়ে যাচ্ছে, হয়তো তা কিছু দিন পর ভারতীয় রম্য মিরাক্কেল কে হার মানাবে। কিন্তু ওনার হাসিটা একটু অন্য রকম। বেশ তো, তাহলে কি ফাকাঁ রাস্তায় ওনি একাই মজা নিবেন? না কৌতুহল ভাঙ্গাতে একটু ওকি মেরে দেখি ওনি আসলেই কি পড়ছে? না তো বেশী কিছু পড়ছে না, ও একটু বিনোদন পাতাটাই। এখনকার জামানায় বিনোদন টাই কে বেশী গুরুত্ব দেয় পত্র-পত্রিকায়। ভদ্র লোক কি যেনো বললেন, দ্বিতীয়বার বলার আগেই কান পেতে রই, বাতাসে ভেসে আসা একটু শুনতে পেলাম, তিনি গম্ভীর ভাবে বলতেছিলো, বাহ!!! দেশের যে কি হবে? তা উপর আল্লাহই জানে!!! আমার দিকে তাকানোর সাথে সাথেই আমি জিজ্ঞেস করলুম, আপনার বাসায় ছেলে মেয়ে আছে? না বলছিলাম আমার মত!! ওনি একটু হেসেই উত্তর দিলেন, আছে রে!! তারপর আমি আবার বললাম, তা বাসায় কি পত্রিকা নেয়া হয়!! লোকটি বিরক্তভাব নিয়ে উত্তর দিলেন না। এ বলেই লোকটি দৌড়ে বাসে উঠে চলে যায়। কি এমন কারণ যে বাসায় তিনি পত্রিকা নেন না? মূলত ওনার হাসাই ছিলো একমাত্র কারণ! হাসার রহস্যগুলো আছে আজকাল পত্র-পত্রিকার বিনোদন পাতার নগ্নতা ভরা দৃশ্য।
ভদ্র লোকটি আরো কিছু বলে গেলেন তা শুনে মর্মাহত কে না হবেন? বাসায় টেলিভিশন আছে। বিনোদনের আরক টি উৎস। এঘটনা গুলো হয়তো অনেকেরই মনে পড়বে। আমাদের গ্রামে টিভি ছিলো একটি, প্রায় দেখতাম, যে পরিবারে টিভি ছিলো, তারা পরিবারে সকলে মিলে একসাথে টিভি দেখতেন। আমরা কিন্তু লোভ সামলাতে পাড়তাম না। যে করেই হোক টিভি দেখতে হবে। তাই পড়া শেষ না করেই রাতে চুরি করে বাড়ী থেকে পালিয়ে টিভি দেখতে যেতাম। হা করে তাকিয়ে ছিলাম এক পলকে ওই চতুর্ভূজ আকারের যন্ত্রটির দিকে। এখন আর ওই ভদ্র লোক টির ইচ্ছে করে না টেলিভিশনে চেয়ে থাকতে। কারণ তাদের দম্পত্তির দ্বিধাভত্তির কারণ হয়ে দাড়িয়ে আছে টেলিভিশন। রাতে বাসায় গেলে সমসময় ওনি দেখতে পান তার একমাত্র প্রাণের প্রিয়া বসে আছে টেলিভিশন নামক আজব বাক্সের সামনে। উপর দিয়ে যদি পৃথিবী নড়ে যায়ও তাকে কিন্তু নাড়ানো সম্ভব না বলে সাধারনত ধারণা দিলেন অসহায় স্বামী। এদিকে রাত নয়টায় তার শাশ্বড়ি পানির জন্য হয়রান, তার ছেলে-মেয়ে রা পাশের রুমে একজনে ফেইসবুকে মাতাল হাওয়া খাচ্ছে, অন্যজনে ইলেকট্রনিক যন্ত্রে সুপারম্যান হয়ে যাচ্ছে। তবে ছেলে-মেয়েরা বেশ সুবিধায় আছে, পড়াশোনায় ওদের জিপিএ পাওয়া এখন কমন ব্যাপার। এবার আসি স্ত্রীর বিনোদনের কথা, পরিবারের সমস্ত হাল ছেড়ে তিনি এখন বিনোদনে আছেন। এটা কিন্তু পত্রিকার ওই বিনোদন পাতা না। এটা হচ্ছে ইন্ডিয়ার প্রতি দিনের সিরিয়াল জীবনের ঘটনাবলি। এখানে নগ্রতা নেই বেশী, তবে আছে মৃত্যুর কারণ , আছে সংসারের জুট ঝামেলার কারণ। ওই যে অসহায় স্বামী এখনও স্ত্রীর ভালোবাসা থেকে অবহেলার পাত্র। যাইহোক নিত্যনতুন প্রতিটি সংসারে এখন ভারতীয় চ্যানেল গুলোর দখল। যেখানে সিরিয়াল ব্যতীত আছে আরো সানি লিওন এর মত ব্যক্তিরা। যা প্রতিনিয়ত মানুষ দেখে আর তাদের কামনা মিটায় আবার তা বেশ হৈহুল্লোর ভাবে প্রচার হচ্ছে দেশের পত্র-পত্রিকার মিডিয়াগুলোতে।
যাইহোক, এতকিছুর পরও বাংলাদেশ সুন্দর আছে, না আমি বলি নাই, এক ব্যক্তি পল্টনে এক চায়ের দোকানে বেশ হাক ডেকে বলে যাচ্ছ্ প্রমাণ হিসাবে দেখাচ্ছে বাংলাদেশের উন্নত তখ্য প্রযুক্তি। যোগাযোগের ব্যবস্থা, ইন্টারনেট, ৩জি ইত্যাদি ইত্যাদি।
আরো বললের বাংলাদেশে যে অনলাইন নিউজ পোর্টাল গুলো বের হচ্ছে তা মানুষের কাছে সহজেই যেকোন বার্তা বা খবর পৌছে যায়।
আমাদের গ্রামে এক ঘটনা ঘটিয়ে ছিলো এক ১৩ বছরের ছেলে। তা কিন্তু উন্নত প্রযুক্তির ফলে। মোবাইল ব্যবহার এখন খুব সহজলভ্য। হাতে হাতে ও কমদামেই পাওয়া যাচ্ছে। ছেলেটি সহজেই কমদামী একটি মোবাইল কিনি গ্রামীনফোন থেকে মাত্র ২.৫০ টাকায় ছড়িয়ে দেয় গ্রামজুড়ে ঝগড়া-বিবাদ কিংবা মারামারি। গুগল থেকেই সহজে পর্ন ছবি ও ভিডিও ডাউনলোড করে ফেইসবুক বন্ধুদের কাছে ছড়িয়ে দেয়। সেই সাথে পাশের এক বড় বাড়ীর একমাত্র মেয়ের ছবিও শেয়ার করে , সাথে তার মোবাইল নাম্বার। শুরু হয়ে গেল কুরুক্ষেত্র। হ্যা বলছিলাম অনলাইন সাইট গুলোর কথা। মূহুর্তের ভিতরে সংবাদ পৌছে দেওয়ার অন্যতম মাধ্যম। এদের ও বিনোদন নাম কোন পাতা আছে, তাদের নিউজের হেডলাইন পড়ে আপনার এ মনে হতে পারে যে, আপনি আর বাংলাদেশে নাই। আছেন সানি লিওন বা পর্নোস্টারদের নেতৃত্ব কোন পর্নোর দুনিয়া। অনলাইন নিউজ সাইটগুলোর লীড নিউজ হয়ে থাকে এ রকম,”মোশারফ করিম পরকিয়ায় স্ত্রীর সাথে ধরা পড়েছে!!, সানি লিওন নতুন পর্ন ভিডিও বের হচ্ছে!! পরি মনি ঘন ঘন চুমু খাচ্ছে শাকিবের গালে” এবার ফাসঁ হলো মৌসুমির সেক্স ভিডিও ( ভিডিওসহ) .. যে কারণে আপনি সহবাসে ব্যর্থ, প্রেমিকার সাথে সহবাস করার উপায়. নায়িকাদের পরিত্র হরনের ঘটনা( ভিডিও সহ) ইত্যাদি। তাহলে এ থেকে বুজা যায় আমাদের কে বিনোদনের মাধ্যমে পর্নের দিকে উসকে দিচ্ছে অনলাইন সাইট গুলো।
আমাদের বিনোদনের আরেকটি মাধ্যম বলতে বুলে গেছি। বাংলা সিনেমা। সেই বাংলা প্রথম ছবি মুখ মুখোস থেকে শুরু করে বর্তমানের শেষ ছবিটি পর্যন্ত একটু মিলিয়ে দেখুন তো মিল খুজে পান কিনা?? একটা সময় ছিলো রিকশাওয়ালা সপ্তাহে ১০ বা ২০ টাকা জমা রাখতেন তার পরিবার নিয়ে সিনেমা হলে যেতে। আর এখন রিকশাওয়ালা কে জোর করেও নিতে পারি না সিনেমাহলে। পরিবার নিয়ে যাবে তো দুরের কথা। বর্তমান সিনেমাতে যে মেয়ে যত উলঙ্গ হয়ে নাচতে পারবে , গাইতে পারবে, দেহ দিতে পারবে, সেই হয়ে ওঠে দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। আর তার কাছে গিয়েই শুরু হয় পরিচালক থেকে সাংবাদিক হতে সকল শ্রেনীর মানুষের লুলামী। আর তা কি পরিবার নিয়ে দেখা সম্ভব ? তারপরও আমাদের মাননীয় পরিচালক গন বারবার বলেন, আপনারা পরিজন-পরিবার জন নিয়ে সিনেমা হলে আসুন, আমাদের কে অনুপ্রাণিত করুন। প্রশ্ন হলো, কি জন্য আসবো? আপনাদের নগ্নতা দেখতে?
আসলেই বাংলাদেশে এখন চলছে বিনোদনের নামে যৌন শিক্ষা, যা হয়তো সামনে ক্রমশ বেড়ে চলবে? যার প্রধান ভূমিকায় থাকবে দেশের পত্র-পত্রিকায়, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, সিনেমা, কিংবা ভারতীয় চ্যানেল গুলো।