somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নেতার জন্মদিনে নতশির শ্রদ্ধাঞ্জলি

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অহিংসায় নয়, উদারতায় নয়, শক্তি প্রয়োগ করেই ব্রিটিশকে ভারত থেকে তাড়াতে হবে- এই মন্ত্রকে ধারণ করে সুভাষ চন্দ্র বসু ব্রিটিশ শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে আমৃত্যু লড়াই-সংগ্রাম চালিয়েছেন । ভারতের যুব সম্প্রদায়কে নেতাজী বলেছিলেন "তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব"।
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারী। উড়িষ্যার কটক শহরে এক বাঙালি পরিবারে। তবে তাঁদের পৈতৃক নিবাস ছিল চব্বিশ পরগণা জেলার অন্তর্গত কোদালিয়া গ্রামে। নেতাজী ছিলেন বাবা-মার নবম সন্তান ও ষষ্ঠ পুত্র।
"আমি যদি না পড়িয়া এ স্থান পাই তবে যাহারা লেখাপড়াকে উপাস্য দেবতা মনে করিয়া তজ্জন্য প্রাণপাত করে তাহাদের কি অবস্থা হয়? তবে প্রথম হই আর লাষ্ট হই আমি স্থিররূপে বুঝিয়াছি লেখাপড়া ছাত্রের উদ্দেশ্য নহে- বিশ্ববিদ্যালয়ের 'চাপ্রাস' (ডিগ্রী) পাইলে ছাত্ররা আপনাকে কৃতার্থ মনে করে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের 'চাপ্রাস' (ডিগ্রী) পাইলে যদি কেহ প্রকৃত জ্ঞান না লাভ করিতে পারে- তবে সে শিক্ষাকে আমি ঘৃণা করি। তাহা অপেক্ষা মূর্খ থাকা কি ভাল নয়? এই ছিলেন নেতা সুভাষ , বাঙ্গালী জাতির মুক্তির দূত।
সুভাষ চন্দ্র বসুর বয়স যখন ১৩/১৪ বছর তখন তাঁদের এক আত্মীয় কটকে তাঁদের বাড়ীতে বেড়াতে আসেন। তিনি তাঁদের বাড়ীর নিকটেই থাকেন। নেতাজী একদিন তাঁর বাড়ীতে বেড়াতে যান এবং তাঁর ঘরে স্বামী বিবেকানন্দের অনেকগুলো বই দেখতে পান। তিনি স্বামীজীর বইগুলো তাঁর কাছ থেকে আনেন এবং পড়েন। এভাবে স্বামী বিবেকানন্দ ও তাঁর গুরুদেব শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের প্রতি তিনি আকৃষ্ট হন। স্বামীজীর বক্তৃতা ও চিঠিপত্রগুলো তাঁকে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করে।
অসম্ভব মেধাবী সুভাষ ১৯২০ সালে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস এ-পরীক্ষা দেন এবং চতুর্থ স্থান অধিকার করেন। ওই বছর তিনি ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে (আইসিএস) যোগ দেন। ১৯২১ সালের এপ্রিল মাসে তিনি ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস থেকে পদত্যাগ করে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন। ভারতকে ব্রিটিশদের হাত থেকে স্বাধীন করার জন্য তিনি সরকারি চাকুরি ত্যাগ করেন। ১৯২১ সালের ১০ ডিসেম্বর আইন অমান্য আন্দোলনের অভিযোগে চিত্তরঞ্জন দাস ও সুভাষ চন্দ্র বসুকে ব্রিটিশ পুলিশ গ্র্রেফতার করে। ১৯২২ সালে তিনি মুক্তি পান।
গান্ধীজির সাথে সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। কিন্তু গান্ধীজির অহিংস আন্দোলনের প্রতি তাঁর কোনো আগ্রহ ছিল না। তাই গান্ধীজিকে ছেড়ে তিনি আসেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের নিকট। তাঁর সান্নিধ্যে থেকে তিনি নিজেকে রাজনীতিতে আরো পরিপক্ক করে গড়ে তোলেন। এরপর নেতাজী স্বাধীনতা সংগ্রামী চিত্তরঞ্জন দাসের সাথে রাজনীতি শুরু করেন।১৯২৪ সালের এপ্রিল মাসে তিনি কলকাতা কর্পোরেশনের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার হিসাবে নিযুক্ত হন। চিত্তরঞ্জন দাস তখন কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন। সুভাষ চন্দ্র বসুর মাসিক বেতন ছিল ৩০০০ টাকা। কিন্তু তিনি সিদ্ধান্ত নেন মাসে ১৫০০ টাকা বেতন নিবেন। ওই বছর অক্টোবর মাসে নেতাজীকে স্বদেশী বিপ্লবীদের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। ব্রিটিশরা তাঁকে বার্মার কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। ১৯২৫-২৭ সাল পর্যন্ত তিনি মান্দালয়সহ বিভিন্ন কারাগারে ছিলেন।
১৯৪৩ সালের ৪ জুলাই ভারতীয় স্বাধীনতা সংঘের এক সাধারণ সভায় রাসবিহারী বসু তার ‘আজাদ হিন্দ বাহিনী’ সুভাষের হাতে তুলে দেন এবং সংঘের সভাপতির দায়িত্বও দেয়া হয় সুভাষ বসুকে। আর সেইখানেই তাঁকে নেতাজি নামে আখ্যা দেয়া হয়।
ভারতকে স্বাধীন করার সব আয়োজন শেষ করে ১৯৪৩ সালের ২১ অক্টোবর জাপানে গঠন করলেন অস্থায়ী আজাদ হিন্দ সরকার। সুভাষ হলেন সেই অস্থায়ী সরকারের যথাক্রমে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সমর ও পররাষ্ট্র সচিব।
সারা পৃথিবীতে সাড়া ফেলেছিলো সুভাষের অস্থায়ী সরকার। সেই সরকারকে স্বীকৃতি দিলো জাপান, জার্মানি, ইতালি, ক্রোয়োশিয়া, বার্মা, থাইল্যণ্ড, চিন, ফিলিপাইন, মাঞ্চুরিয়া
১৯৪৫ সালে ১৫ আগস্ট দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষ হয়েছে কিন্তু ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন তখনও চূড়ান্ত পর্যায়ে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু হিন্দ ফৌজকে ভেঙ্গে দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যান । কেউ জানে না কোথায় আছেন তিনি। তন্ন তন্ন করে খুঁজছে তাঁকে বৃটিশ সরকার। এ সময় কর্নেল ভোঁসলে ঘোষণা করেন, নেতাজি না থাকলেও, জাপানিরা হেরে গেলেও 'আজাদ হিন্দ ফৌজ' শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়াই করে যাবে। কয়েক হাজার ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পরও কোহিমা পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছিল আজাদ হিন্দ বাহিনীর কোনো কোনো দল। বৃটিশদের আর কোনো শক্তি ছিল না ভারতীয়দেরকে দাবিয়ে রাখার। শেষ পর্যন্ত ১৯৪৭ সালে বৃটিশ শাসক পাক-ভারত ভাগের মধ্য দিয়ে লেজ গুটায়। অর্জিত হয় বহুকাঙ্খিত ভারতের স্বাধীনতা, যে স্বাধীনতার জন্য নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুসহ অসংখ্য বিপ্লবী জীবন বিপন্ন করে লড়াই- সংগ্রাম করেছেন।
ধারণা করা হয় নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ১৯৪৫ সালের ১৯ আগষ্ট টোকিও যাবার পথে তাইওয়ানে এক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। তবে তাঁর মৃত্যুর সঠিক তারিখ ও স্থান সম্পর্কে এখনো বিতর্ক রয়েছে। তাঁর দেহাবশেষ কোনোদিনও উদ্ধার করা যায়নি।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

অন্তর্জাল থেকে নেওয়া সূর্যোদয়ের ছবিটি এআই দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।

ইসলামের পবিত্র আলো ওদের চোখে যেন চিরন্তন গাত্রদাহের কারণ। এই মাটি আর মানুষের উন্নয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক রহমানের হঠাৎ ‘জামায়াত-বিরোধী’ উচ্চারণ: রাজনীতির মাঠে নতুন সংকেত, নাকি পুরোনো সমস্যার মুখোশ?

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৯

তারেক রহমানের হঠাৎ ‘জামায়াত-বিরোধী’ উচ্চারণ: রাজনীতির মাঠে নতুন সংকেত, নাকি পুরোনো সমস্যার মুখোশ?

বিএনপি রাজনীতিতে এক অদ্ভুত মোড়—অনেক বছর পর হঠাৎ করেই তারেক রহমান সরাসরি জামায়াতকে ঘিরে কিছু সমালোচনামূলক কথা বললেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচনে বিএনপি কি ২৭৮ আসন পেতে যাচ্ছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:১০



একটি বিজ্ঞাপন দেখতে পাচ্ছি। আগামী নির্বাচনে বিএনপি ইতিহাসের সর্বোচ্চ আসন পেতে যাচ্ছে। জাতীয় সংসদে একদলের সর্বোচ্চ প্রাপ্ত আসন ২৭৮ টি। এটি বিএনপি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারীর জাতীয় সংসদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এডমিন সাহেব আমাকে নিয়ে অনেক বক্তব্য দিতেন এক সময়।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৯



আমার "চাঁদগাজী" নিকটাকে উনি কি জন্য ব্যান করেছিলেন, সেটা উনি জানেন; আসল ব্যাপার কখনো আমি বুঝতে পারিনি; আমার ধারণা, তিনি হয়তো নিজের দুর্বলতাগুলো নিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকতেন; মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাদের পাকিস্তান প্রেমের কারণ কী?

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৫

খানিকটা কৌতুহল থেকে লিখলাম এই পোস্ট। জানতে চাওয়ার জন্য। আমাদের দেশ পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়েছে অনেক আগে, সেই একাত্তরে। লম্বা একটা সময়। সেই সময়ে যারা বুঝতে শিখেছে তারা আজকে জীবনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×