somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাতীয় পরিচয় পত্র প্রকল্পে বেহাল দশা

০৪ ঠা আগস্ট, ২০০৭ দুপুর ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিযুক্ত ভোটার লিস্ট না কি জাতীয় পরিচয় পত্র? বিভ্রান্তি শুরুতেই। নির্বাচন কমিশন এই প্রকল্পকে ছবিযুক্ত ভোটার লিস্ট প্রকল্প বললেও সেনা বাহিনীর দাবি এটি জাতীয় পরিচয় পত্র প্রকল্প। সেনাবাহিনী’র বক্তব্য মেনে নিলে প্রায় ১০ কোটি মানুষের জন্য জাতীয় পরিচয় প্রকল্প তৈরির প্রকল্প হাতে নিয়েছে বর্তমান সরকার। ইতিমধ্যে ঢাকার অদুরে শ্রীপুরে জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরির একটি পাইলট প্রকল্প পরিচালনা করেছে নির্বাচন কমিশন ও সেনাবাহিনী। উক্ত প্রকল্পটিকে নির্বাচন কমিশনার শাখাওয়াত হোসেন বিভিন্ন গনমাধ্যমে ১০০ ভাগেরও বেশি সফল বলে দাবি করেছেন। তথাপি এসংক্রান্ত বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে ধরা পড়েছে একাধিক অসঙ্গতি। ফলে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে দেশের ১০ কোটি মানুষ আদৌ জাতীয় পরিচয় পত্র পাবে কি না কিংবা পেলেও তা কতটুকু নিখুঁত হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
বর্তমান জাতীয় পরিচয় পত্র প্রকল্পে ব্যবহার করা হচ্ছে অত্যাধুনিক বায়োমেট্রিক্স ফিঙ্গার প্রিন্ট প্রযুক্তি। ছবি এবং দুই হাতের চার আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে তৈরি এই প্রক্রিয়া পুরোটাই প্রযুক্তি নির্ভর। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচিং চেকিং নিয়ে। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের দাবি, বর্তমানে যে প্রক্রিয়ায় ফিঙ্গার প্রিন্ট চেকিং করা হচ্ছে তা আসলে ঠিক নয়। ফিঙ্গার প্রিন্ট নেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা অনলাইনের মাধ্যমে ন্যাশনাল ফিঙ্গার ম্যাচিং সার্ভারের মাধ্যমে চেক করতে হবে। নতুবা একই ব্যক্তি একাধিক এলাকায় গিয়ে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিলে তা ধরা সম্ভব হবে না। ফলে একজনের পক্ষে দুই বা ততোধিক জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি করা কোন কঠিন ব্যাপার হবে না।
সাপ্তাহিক ২০০০ এর অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশের ৬১টি জেলায় মোবাইল ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি রয়েছে। পাশাপাশি ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কও তৈরি হয়েছে বেশ কিছু জেলায়। সব মিলেয়ে বর্তমান অনলাইন নেটওয়ার্ক দিয়েই জাতীয় পরিচয় পত্র প্রকল্প পরিচালনা করা সম্ভব বলে মত দিয়েছেন একাধিক নেটওয়ার্ক ও টেলিকম বিশেষজ্ঞ। এ প্রসঙ্গে গ্রামীণ সল্যিউশনস এর চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার কাজি ইসলাম জানান, এখানে মুলত দুইটি ফ্যাক্টর কাজ করে। একটি হচ্ছে খরচ আরেকটি হচ্ছে টাইম। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডাটা ট্রান্সফার হচ্ছে। থানা লেভেলে যে ডাটাটা প্রসেস হচ্ছে সেটা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেন্ট্রাল সার্ভারে পাঠানো যেতে পারে।
তিনি জানান, এরফলে একটি সুবিধা হচ্ছে সেন্ট্রালে বসে কে কোথা থেকে কি ধরনের ডাটা ইনপুট দিচ্ছে তা মনিটর করা সম্ভব। এই একাউন্টিবিলিটি’র জন্য ইন্টারনেট কানেকশনটা দরকার।
ফিঙ্গার প্রিন্ট প্রসেসিং বিষয়ে জনাব ইসলাম জানান, ফিঙ্গার প্রিন্ট প্রসেসের জন্য ফিঙ্গার প্রিন্ট প্রসেসিং সার্ভার লাগে। ফিঙ্গার প্রিন্ট প্রসেসিং একটি বিশাল কাজ। এজন্য বিশাল ক্ষমতা সম্পন্ন সার্ভার লাগবে। সেন্ট্রাল সার্ভার লাগবে। সেই সার্ভার এর সাপোর্টিংয়ে ফিঙ্গার প্রিন্ট ম্যাচিং সার্ভারগুলো বসাতে হবে।
বর্তমানে ব্যবহৃত সফটওয়্যারটি প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হয়েছিলো তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ জনাব মোস্তফা জব্বারের কাছ থেকে। তিনি শ্রীপুরের পাইলট প্রকল্প ঘুরে এসে সাপ্তাহিক ২০০০ কে জানান, নির্বাচন কমিশন যে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করছে সেটা তৈরি করেছে টাইগার আইটি ও দোহাটেক নামক দুইটি প্রতিষ্ঠান। সফটওয়্যারটি মোটামুটি ভালোই। তবে এটিতে যখন ওয়েবক্যাম দিয়ে ছবি তোলা হয় তখন পুরো ল্যাপটপই স্লো হয়ে যায়। ফলে কাজ সম্পন্ন করতে গিয়ে অনেক সময় নষ্ট হয়। এটি সফটওয়্যারটির একটি মন্দ দিক।
বর্তমানে জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে সাধারন মানের অফসেট কাগজ। উক্ত কাগজে প্রিন্ট করার পর তা লেমিনেটিং করে সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী’র একটি সুত্র। এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে একজন সেনা কর্মকর্তা জানান, ন্যাশনাল আইডি কার্ডটি দেখতে দুর্বল হলেও এতে টুডি বারকোড প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। অত্যাধুনিক এই প্রযুক্তিতে আইডি কার্ডের মধ্যে একজন মানুষের ইংরেজি নাম, ডেট অফ বার্থ, আইডি নাম্বার আর ফিঙ্গার প্রিন্ট অন্তর্ভুক্ত আছে। যেকোন টুডি বারকোড রিডার দিয়ে চেক করে এসব তথ্য কার্ড থেকে বের করা যাবে।
বর্তমান প্রক্রিয়ায় বায়োমেট্রিক্স ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রসেসিং এর জন্য এখন পর্যন্ত কোন সার্ভার বাংলাদেশে আনা হয়নি। এমনকি এধরনের সার্ভার কেনার কোন দরপত্রও আহবান করেনি নির্বাচন কমিশন। ডাটা স্টোরেজ ক্যাপাসিটি’র জন্য জাতীয় বা সেন্ট্রাল সার্ভারও তৈরি করা হয়নি। বসানো হয়নি ব্যাকআপ সার্ভার। সর্বশেষ ল্যপটপ ক্রয়ের যে দরপত্র আহবান করা হয়েছে সেখানেও তেমন কোন ভাল ব্রান্ডের অংশগ্রহণ নেই। সবমিলিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্র প্রকল্পের হার্ডওয়্যার সেটআপই এখনো তৈরি নয়। বর্তমানে ব্যবহৃত সফটওয়্যারটি বড় পরিসরে কাজ করার জন্য পরীক্ষিত নয়। ফলে এটির সফলতা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। ইন্টারনেট কানেকটিভিটি’র মাধ্যমে কাজ করার কোন পরিকল্পনাও নেই সংশ্লিষ্টদের। সেনাবাহিনী সুত্রে জানা যায়, জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করাই সেনাবাহিনীর কাজ। এবং নির্বাচনের পুর্বেই জাতীয় পরিচয়পত্র হয়ে যাবে। ওদিকে নির্বাচন কমিশন জানাচ্ছে জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি তাদের কাজ নয়। তাদের প্রয়োজন ছবিযুক্ত ভোটার লিস্ট। সবিমিলিয়ে এ যেন এক গোলকধাঁধা।

সাপ্তাহিক ২০০০ এর বর্তমান সংখ্যায় এই সংক্রান্ত একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি পড়তে চাইলে এই লেখার উপর ক্লিক করুন।

সরাসরি লিংক:
Click This Link
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×