নির্যাতনের বিচার না পেয়ে অবশেষে পেশা ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সাংবাদিক জাহিদ। নির্যাতনকারীদের গ্রেফ-তারের দাবি জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন তিনি। অপরাধীরা গ্রেফতার এবং বিচার না পেলে সাংবাদিকতা পেশাই ছেড়ে দেবেন অবজার-ভারের তরুণ সাংবাদিক জাহিদ আল আমিন। বিচার না পাওয়া অভিমানী এক সাংবাদিকের এ এক ভিন্ন ধরনের প্রতিবাদ।
সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে একদিন বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটিতে সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। জীবনের নিরাপত্তাহীনতার কারণে আজ সেই পেশাটিকেই চিরদিনের মতো ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছেন। গত দুই বছর ধরে সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখেও সাংবাদিক-তায় নিজেকে টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দুই বছর আগে রিপোর্ট করার কারণে চট্টগ্রাম মেডিকালে সন্ত্রাসী ডাক্তার ও ইন্টার্নিদের হাতে নির্মমভাবে নির্যাতিত হন সাংবাদিক জাহিদ। কিন্তু আজো বিচার পাননি তিনি।
২০০৫ সালের ২১ জুলাই চট্টগ্রামে যৌতুকের বলি এসিডদগ্ধ গৃহবধূ হোসনে আরার ওপর সরেজমিন প্রতিবেদন করতে চট্টগ্রাম মেডিকালে গিয়েছিলেন জাহিদ আল আমিন। আগে থেকেই ওতপেতে থাকা কয়েক সন্ত্রাসী ডাক্তার শতাধিক রোগীর সামনেই অতর্কিতে ঝাপিয়ে পড়ে তার ওপর। তারা চার ঘণ্টা ধরে জাহিদের ওপর চালায় পৈশাচিক নির্যাতন। সন্ত্রাসীরা তার বা পা ও হাত ভেঙে দেয়। দেশ-বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার পর এখনো সে পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি।
নির্যাতন প্রসঙ্গে জাহিদ বলেন, চমেক হাসপাতালে বিদ্যমান অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর প্রকাশের জের ধরেই ওরা চার ঘণ্টা আটকে রেখে দফায় দফায় আমার ওপর নির্যাতন চালায়। পাষ- ডাক্তাররা ওয়ার্ডের শতাধিক রোগীর সামনে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ইনজেকশনের সুই ফুটায়। ইট দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়। ওরা থেতলে দেয় আমার দুই হাত এবং ভেঙে দেয় বাম পা টি। এক পর্যায়ে মেরে ফেলার জন্য এক রোগীর বিছানার চাদর দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেয়ার সময় স্থানীয় থানা পুলিশ ও চট্টগ্রামের সাংবাদিক নেতারা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আমাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করেন।
চট্টগ্রাম মেডিকালের এ চক্রটির অস্ত্র, মদ, ওষুধ চুরি, চাদাবাজি, লাশ নিয়ে বাণিজ্য, অ্যাম্বুলেন্স ও সার্টিফিকেট ব্যবসাসহ নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করার কারণে কয়েকদিন ধরে সন্ত্রাসী ডাক্তাররা জাহিদকে খুজছিল।
সেই সন্ত্রাসী ডাক্তারদের একজন সেলিম ওরফে বেয়াদব সেলিম এখন জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে কর্মরত। ডা. সাইফুল দোর্দ- প্রতাপের সঙ্গে এখনো চট্টগ্রাম মেডিকালেই আছে। তানভীর হাবীব তান্নার বিরুদ্ধে মামলা থাকা সত্ত্বেও সাংবাদিকের ওপর হামলার পুরস্কারস্বরূপ বিগত জোট সরকার তাকে চট্টগ্রাম মেডিকালেরই নিওরোসার্জারি বিভাগে চাকরি দিয়েছে। মশিউর রহমান দিপু এখন ঢাকায়। আর ফারাহ চৌধুরী এখন চমেকের গাইনি ওয়ার্ডে ইন্টার্নি করছে। ওয়ার্ড বয় শওকত বহাল তবিয়তে চমেকের ১৯ নাম্বার ওয়ার্ডে। পুলিশ আজো সাংবাদিক নির্যাতনকারী অন্য সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করতে পারেনি।
হামলার পর চিহ্নিত ওইসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পাচলাইশ থানায় ওই সাংবাদিক এ ব্যাপারে একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেছিল। এছাড়া মামলা তুলে নেয়া এবং দু-দুবার অপহরণ চেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর মতিঝিল ও সবুজবাগ থানায় আরো দুটি সাধারণ ডায়েরি নথিভুক্ত রয়েছে। তবে পুলিশ গত দুই বছরেও এ মামলায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার তো দূরের কথা চার্জ শিটও প্রদান করেনি।
জাহিদের ওপর নির্যাতনের ২৪টি মাস অতিবাহিত হয়েছে। সেই পাশবিক নির্যাতনের স্মৃতি আজো ভুলতে পারেনি সে। এখনো খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটতে হয় তাকে। মেরুদ-ে গুরুতরভাবে আঘাত করার কারণে নিয়মিত থেরাপি নিতে হয়। চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে এসেও রেহায় পাননি, এখনো সন্ত্রাসীদের মৃত্যুর হুমকি তাকে তাড়া করে ফিরছে।
দীর্ঘ দুই বছর প্রতীক্ষার পর বর্তমান সরকারের সময়ে সুবিচার ও নিরাপত্তার আশায় বুক বেধেছেন সাংবাদিক জাহিদ। বর্তমান নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ ব্যাপারে একটু আন্তরিক হলে একজন তরুণ সম্ভাবনাময় সাংবাদিকের আবারো নিজ পেশায় আত্মনিয়োগ করতে পারেন।
আর যদি বিচার না পান তাহলে নীরব প্রতিবাদস্বরূপ সাংবাদিকতা পেশা ছেড়ে দেবে কিছুদিন আগে দিল্লি থেকে সাংবাদিকতার ওপর ডিগ্রি নিয়ে আসা এ তরুণ সাংবাদিক।
সাংবাদিকতা পেশা ছেড়ে দিতে চান নির্যাতিত জাহিদ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।