somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অস্ট্রেলিয়া - ৬

০২ রা জুন, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সোনামাটি শহর কাল্গার্লি পৌছানোর আগে আরো দুটো সোনামাটি শহর সাউদ্যার্ন ক্রস ও কুল্গার্ডি পেরুলাম।


পথে ড্রিংক ড্রাইভিং এর সাবধান বাণী চোখে পরল। ভয়াবহ দৃশ্য! সত্যিকারের এক্সিডেন্ট থেকে রেখে দেয়া, এটা সবার দৃস্টান্তের জন্য।


আমরা কাল্গার্লি পৌছালাম সন্ধ্যার কিছুটা আগে। সবুজে সবুজে আমাদের স্বাগতম জানালো কাল্গার্লি। শহরে ঢোকার আগেই দুর থেকে বিশাল এক সোনার খনি চোখে পরল।

গাড়ি থেকে আকুল ভাবে দেখার চেষ্টা করলাম কোন সোনার টুকরা টাকরা দেখা যায় কিনা। জীবনে তো কখনও সোনার খনি চোখে দেখিনি /:)!!

খনি থেকে সদ্য তোলা সোনা কেমন দেখতে হয় জানিও না (পরে অবশ্য খনি থেকে তোলা খাটি সোনার নাগেট দেখেছি) । সোনামাটির সোনার খনি বিকেলের সোনা আলোয় অসাধারন। মনে হল চারিদিকে যেন সোনায় সোনাময়।


বিকেল ৫টায়। শহরটা যেন মৃত পুরী। কোথও কোন জনমানব নেই। এমনিতেই ক্রিসমাসের সময় তার উপর নিউইয়ার। সব সোনার কেজোরা বাড়ি চলে গেছে। লোকালরা শুধু শহরে, আর কিছু লোকাল এ্যবারজনিরা। তারাও সব মনে হয় দিনে দুপুরে পরে পরে ঘুম দিচ্ছে। হোটেল একেকটা তো পুরো পুরি বন্ধ। কেউ নেই যে আমরা জিঙ্গাসা করব কখন খুলবে।


অবশেষে এক গেস্ট হাউজে রুম পেলাম। দুজনে ফ্রেশ হয়ে বাইরে বেরুলাম রোদের আলো পরে যাবার আগেই শহরের কিছুটা দেখে নেবার জন্য। শহরে এবারও কাউকে দেখলাম না।

একটা গির্জা চুপ চাপ দঁাড়িয়ে। প্রথম মানুষ বলতে দুজন এ্যবারজনি কে দেখলাম গির্জায় ঢুকছে।

ঠিক করেছি পরের দিন সকালে খনি গুলো দেখতে যাবো। শহরের একটু বাইরে

সোনার খনি গুলোর পাশ দিয়ে আমরা ড্রাইভ করে যাবার সময় দুর থেকে বিশাল বিশাল ক্রেন আর ড্রিল মশেিন চোখে পরল। পাশে খনি শ্রমিকদের ছোট ছোট ঘর।

শেষ বিকেলের আলোয় খনির সমানে কিছু ছবি তোলা।

এর পরে আবার ও শহরের ভেতর মানুষ দেখবার আশায় আমারা ড্রাইভ করে বেড়াতে লাগলাম। এত শুনশান ছোট ছোট বাগানে সাজানো গোছানো শান্ত শহর কখনও দেখিনি আমি। কোথাও কোন খাবারের দোকানও চোখে পরছে না। সব যেন বন্ধ করে সবাই বাড়ি চলে গেছে। আমাদের খিদেয় প্রান যায় যায় অবস্থা। সারাদিন ড্রাইভ করে এসেছি। অনেক ঘোরা ঘুড়ির পরে একটা ফুডকোর্ট চোখে পরলো ফাইনালি....উমম....এবং তা খোলা :D:D:D!!!!

বাবা সেখানে কিছু মানুষের দেখা পেলাম এ্যাটলিস্ট ;)!! খুব বেশি না হলেও মানুষতো!! এর আগে মনে হয়েছিল কোন মৃত পুরী বা ঘুমোন্ত পুরীতে আমরা চলে এসেছি।

রাত ৮টা তেই মনে হলো। যেন গভীর রাত!! কোথাও কোন সারা নেই। রাস্তার টিম টিমে লাইট গুলোও যেন ঘুমুতে চায়। দুরে কোথাও দু'একটা কুকুর হাকছে। পতিতা পাড়ায় সারি সারি ঘরের সামনে লাল লাল আলো জ্বলছে....সেখানেও কোন জনমানব নেই। শুনশান...!!!

পরের দিন সকালে আমারা প্যাক করে একবারে গেস্ট হাউজ থেকে চেক আউট করে বের হলাম। কারন খনির দেখা সেরে আবারও পার্থের পথে রওনা হবো।


উত্তেজনায় আমার তো অস্থির অস্থির অবস্থা। জীবনে প্রথম সোনার খনি দেখবো বলে কথা B-)। তাছার সবাই বলে কাল্গার্লির মাটিতে যেখানে সেখানে সোনা পাওয়া যায়। মানুষজন নাকি ছুটিতে ওখানে সোনা খুজতে যায়। আমার ইচ্ছে করছিল ড্রাইভ না করে ওখানে হেটে হেটে সোনা খুজি ;);)

সোনার খনিতে ফাইনালি যখন পৌছালাম.....আহ্ অসাধারন ব্যপার !!!

বিশাল ব্যপার!! কতযে গভিরে গিয়ে মাটি খুড়ে সোনা তুলছে।

কিন্তু তুলছে রাশি রাশি মাটি, বিশাল বিশাল দানবের মত ট্রাক দিয়ে। এই ট্রাক গুলোর বাকেট - যা দিয়ে মাটি ট্রাকে তোলা হয় তা আমার হাইটের চাইতে দুইগুন বড়। ট্রাক গুলো মাটি নিয়ে ধুকতে ধুকতে পিপড়ার মত খনির গায়ে কাটা পথে উপরে উঠে আসছে।

চাকা গুলোতে বসলে আমাকে লিলিপুট লাগে :|





অথচ উপর থেকে ট্রাক গুলোকেও লিলিপুটের গারির মত লাগে দেখতে।


এই বিশাল ট্রক গুলো শত শত ফিট মাটির গভিরে গিয়ে তুলে আনছে সোনামাটি।

সেই মাটি ছেকে ওরা বের করছে সোনা।

বিশাল ড্রিল মেশিন দিয়ে ও ডাইনামাইট ফাটিয়ে একদল ক্রমাগত মাটি খুড়ে যাচ্ছে।

আরেক দল মাটির গায়ে কাটা পথ ধরে গভীরে গিয়ে বিশাল ট্রাকে করে মাটি তুলে আনছে।



অন্য দল নিচে পানি ছিটিয়ে মাটির ধুলো থামাচ্ছে।

কি চমৎকার টিম ওয়ার্ক!!


আমার খুব সোনামাটি হাতে নিয়ে দেখতে ইচ্ছে করল। কিন্তু খনির ভেতরে ঢোকা যায় না।

তাই খনির বাইরের কিছু মাটি হাতে নিয়ে দুধের সাধ ঘোলে মেটালাম :|/:);)। কুল্গার্লি তে তো শুধু খনিতেই নয় যেখানে সেখানেই সোনা থাকতে পারে ;) তাই তো সবাই বলে :)


পথে সল্ট লেকের পাশে গাড়ি থামিয়ে চমৎকার বিশাল সল্ট লেক দেখতে গেলাম। সাদা সাদা লবনে ভড়া লম্বা বা ছোট ছোট নদির মত দেখতে। ওরা বলে এসব লেকে লবন পানির লেভেল বেশি থাকায় পানি মাটির উপরে উঠে আসে আর তা রোদে শুকিয়ে লবন হয়ে যায়। এসব সল্ট লেক থেকে ওরা কমার্শিয়ালি খাবার লবন উৎপাদন করে।

লবনের নদী গুলো দেখতে যে কি চমৎকার লাগলো। আমার পেছেনের সাদা রেখটিই সল্ট লেক।


এবার ফেরার পালা। উচুনিচু পাহাড়ি পথে ফিরে আসা পার্থে।


সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১০ সকাল ১০:২৬
৬০টি মন্তব্য ৫৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×