somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্রিসবেন-২

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ৮:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ক্রিসমাস এসে গেল আর সেই সাথে এসে গেল ইন্টারনেট আর টিভি কনেকশন। ছোট হয়ে এলো আমার পৃথিবী আবার। ক্লিফের ও টানা দশ দিনের ছুটি। ঠিক করলাম আমরা সানশাইনকোস্টে ক্যম্পিং এ যাবো কদিনের জন্য।

ঠিক করলে কি হবে ওয়েদার খুবই খারাপ হতে শুরু করল। বন্যায় ভেসে গেছে সানশাইনকোষ্টে যাবার পথ। মানুষ বাড়ি ঘরহীন হয়ে পরেছে এখানে। মনে পরে আমার দেশের বন্যার কথা। মানুষ যখন বিপদে পরে তখন দেশ জাতি নির্বিশেষে সবাই একই রকম অসহায় হয়ে পরে। বিশাল একটা জায়গা রকহ্যাম্পটনের সবার বাড়ি পানির নিচে।

কি আর করা ঘরে বসে বসে সমুদ্রের উথাল পাথাল ঝড় আর সাগরে জোয়ার ভাটার খেলা দেখি। এর মাঝে আমাদের হোদল রাজার নাম্বার পেয়ে উনাকে ফোন দিলাম। অনেক দিন পর আবার বাংলায় কথা বলাবার সুযোগ হলো :)। উনি উনার লেখার মতনই মজার মানুষ বলে মনে হলো কথা বলে। খুব মজা করে কথা বলেন। জানা গেল উনি আমার কাজিনের স্টুডেন্ট ছিলেন :-*

হোদোল রাজা পরিচয় করিয়ে দিলেন আমাদের আরেকজন ব্লগার ম্যাকানিক্স এর সাথে উনিও ব্রিসবেনে থাকেন । উনি আমাকে ফোন দিয়ে জানালেন কোথায় বাংলাদেশি দোকান আছে যেখানে আমি বাংলাদেশি মশলা পাবো.....আরো কিছু ইম্পর্টেন্ট ইনফরমেশন। যা সত্যিই আমার দরকার ছিল। অনেক ধন্যবাদ এই দুজন মানুষকে সাহায্যের জন্য। আর উনাদের সাথে কথা বলেও মনটা কিছুটা ভাল লাগল।

ক্রিসমাসে রান্না বান্না না করে আমরা ঠিক করলাম শহরে কোথাও গিয়ে লাঞ্চ করব। শেষ মুহুর্তের ডিসিশনে ওয়েব দেখে বুকিং দিলাম ব্রিসবেন রিভারে কুকাবুরা প্যডেল বোটে ক্রিসমাস লাঞ্চের জন্য। ভাগ্য ভাল থাকায় জায়গা পেলাম ওখানে।



সেই পুরোনো দিনের প্যডেল বোট। তিন তলা জুরে রেস্টুরেন্ট। চমৎকার দৃশ্য নদির দুপাশে!

আর খাবারও খুব চমৎকার। আমরা দুজন কাউকেই চিনিনা তাই নিজেদের ছবি নিজেরাই তুললাম

আর লাঞ্চ করতে করতে নদির দুপাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে সময় কেটে গেল।

পরের দিন বক্সিং ডে সেল। দুজন গা ঘিন ঘিনে বৃষ্টিতে ভিজে শহরে গেলাম কিছু কেনাকাটার আশায়। পরের ক'টা দিন আসলে শপিং করেই কাটল। বড়ির জন্য কিছু জিনিস কেনা আর তার সাথে নিজেদের :)

ক'দিন পরে সূর্য়ের মুখ দেখলাম আবার। চলে এলো নিউ ইয়ার ইভ। ২০১০ এর শেষ আলোর দেখলাম আমাদের ব্যালকনি থেকে।

আমাদের বাড়ির পাশের হোটেলে গেলাম নিউ ইয়ার ইভ সেলিব্রেট করতে আর সবার সাথে। সেখানে পরিচয় হলো এ্যালিসন এর সাথে। মজার মেয়ে সে।

কিছুটা পাগলি টাইপের তবে চমৎকার মানুষ।



প্রচুর ফায়ার ওয়ার্কস দিয়ে আমাদের ছোট্ট বে তে সাবাই মিলে নিউ ইয়ারকে সেলিব্রেট করলাম।

নাড্জি নামের একটা জায়গায় গেলাম ওয়েট ল্যান্ডে হাঁটতে।

গিয়ে দেখি তার অর্ধেকটার বেশিই বন্যায় ডুবে আছে। শেষে নদির পাড় দিয়ে ঘোরাঘুরি করলাম। এখানে প্রায় ৭০% মানুষের মাছ ধরার নেশা। হলিডেতে আমাদের বাড়ির সামনে প্রতিদিন মানুষ মাছ ধরতে আসে সাগরে ছিপ আর জাল নিয়ে, চমৎকার দক্ষতায় সাগরে জাল ছোড়ে ওরা। নাড্জিতেও দেখলাম মানুষজন নদির পারে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা মাছ ধরে সময় কাটাচ্ছে। ক্লিফকেও এবার ক্রিসমাসে একটা মাছ ধরবার গিয়ার কিনে দিলাম। আর সেটা নিয়ে দুজন একদিন আমাদের জেটিতে মাছও ধরতে গেলাম ঘন্টা দু'য়েকের জন্য, যদিও শেষ পর্যন্ত কিছু ধরতে পারিনি ;)


একদিন পরে সূর্য ওঠায় গেলাম টুউম্বা নামের একটা শহরে। আমাদের বাসা থেকে ২ ঘন্টার ড্রাইভ। পথে এখানে সেখানে ছোট শহর গুলোতেও ঢু মারলাম। সময় যেন থেমে গেছে এই শহর গুলোতে। সেই আগের মতন পুরোনোই রয়ে গেছে বার রেস্টুরেন্ট গুলো। কোন পরিবর্তন নেই। মনে হয় অতিতের কোন ওয়েস্টার্ন শহরে চলে এসেছি।



দুপাশে সবুজ আর পাহাড়ি আঁকাবাকঁা পথ ধরে টুউম্বা পৌছালাম। চমৎকার জায়গা! পাহাড়ের উপর সবুজে ভড়া। চমৎকার সব পাখি আর বাড়ি। এককেটা বাড়ি আরেকটার চাইতে যেন সুন্দর।







এক কুকাবুরা দম্পতির সাথে দেখা হওয়ায় তাদের কিছু ছবি তুললাম :)

আর উনারাও খুব গর্ব করে পোজ দিলেন আমাকে। ;)

ওরা যখন ডাকে মনে হয় যেন হা হা হা করে অট্ট হাসি দিচ্ছে ;) মনে ওদের খুবই আনন্দ সারাক্ষন :)

এর পরদিন গেলাম গোল্ডকোষ্টে। তবে শুধু ড্রাইভ করে যাওয়া আর আসাই হয়েছে। নেমে তেমন করে ঘুরে দেখা হয়নি লাঞ্চ করা ছারা। বলা চলে যাষ্ট এ ডে ট্রিপ শুধু কি করে যেতে হয় টা দেখবার জন্য। পরের বার ঘুরে দেখব বলে ঠিক করলাম।

দু'দিন পরে ফোনে পরিচয় হলো আরেকজন আমাদের ব্লগার নাআমি'র সাথে। তাও আবার হোদোল রাজার বদৌলতে। :) মনটা আরো ভাল হয়ে গেল। কি বলে যে হোদল রাজা পরিবারকে ধন্যবাদ দেব :|:|

কথা বলে নাআমি - কে অসাধারন লেগেছে। দেখা এখনও হয়নি তবে আশা করি খুব শিঘ্রি হবে। এর মাঝে আমি চরম দাঁাতে ব্যথায় ভুগছি। :( একটা দাঁতকে বিদায় জানাতে হবে খুবই শিঘ্রি :( উমমম বয়স বাড়ছে ......:|

দাঁতে ব্যাথা শুনে এ্যালিসন এল ক্লোভ ওয়েল আর দঁাতে ব্যথার পেইন কিলার নিয়ে আমাকে দেখতে। যদিও পারভিন আপুর কথা মত ক্লোভ আগে থেকেও মুখে রাখছিলাম। তবে এই স্বজনহীন পরিবেশে এ্যলিসনের বন্ধুতা আর কেয়ার অনেক ভাল লাগলো।

ক্রিসটিন নামের মেয়েটার সাথেও পরিচয় হলো। ও আমাদের বিল্ডিং এর ইন চার্জ। এই বিল্ডিং এই থাকে। চমৎকার নরম আর বন্ধুতা মনের মানুষ। আস্তে আস্তে এখন ভাল লাগতে শুরু করেছে আমার নতুন আবাস অবশেষে :)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ১১:০১
৩৭টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×