যখন সিংগাপুরে ছিলাম ওখানকার এ্যভারেজ হাইটে আমাকে লম্বা ই বলা হতো যদিও আমি তেমন লম্বা নই। মাঝে মাঝে আমার হাইটের প্রসংসাও যে শুনিনি তা বলব না। বাড়ি ঘরেও সব কিছুই নাগালের ভেতর পেতাম। যে কোন শেল্ভ বা যে কোন কাবার্ড বিনা কষ্টই হাতের নাগালে পেতাম। অস্ট্রেলিয়া আসা মাত্র নিজেকে আর সব কিছুর পাশে যেন লিলিপুট মনে হয় । এখানকার এ্যভারেজ হাইটে আমাকে ছোট্ট একটা গরগড়িয়ে চলা বিন্দু বলে মনে হয়। যেখানে সেখানে "লিটল লেডি" ডাকটা শুনতেও শুরু করেছি । এখানকার বাচ্চা বাচ্চা মেয়ে গুলোকে দেখলে আমার খালা বলে মনে হবে কি বাজে ব্যপার!!
বাড়িতেও শেল্ভ গুলোও এত এত উচু করে বানানো যে নাগাল পেতে হলে আমার ক্লিফের সাহায্য চাইতে হয়। উপরের তাকে কি আছে দেখতে পর্যন্ত পাইনা। । সব কিছুই যেন বড় হবার পাল্লা দিচ্ছে। আকাশটা বড়, বাড়ির পাশে সাগরটা বড়, সাগরের পাশে দাড়িয়ে থাকা পাহাড় গুলোও বড়, শহরটা বড়, শহরের নদিটাও বড়, আমাদের ব্যালকনিটাও বড়। যখন নরমাল বাতাস বয় মনে হয় যেন সাগরে ঝড় হচ্ছে আর যখন সত্যিই ঝড় ওঠে সাগরে তখন মনে হয় যেন ভুমিকম্প হচ্ছে আর এর সাথে আরেক ডিগ্রি বাড়িয়ে দিয়ে আমাদের গাড়িটাও বড়। সিংগাপুরের গাড়িটা ছিল ছোট খাট আর কিউট । আসবার সময় ওটা বিক্রি করে এসে এখানে ক্লিফ একটা Wrangler Jeep কিনল পাহাড়ে পর্বতে, বনে জংগলে, অফ রোডে আর ক্যম্পিং এ যাবার জন্য। আচ্ছা ভাল কথা - যদি ওখানেই ঘটনা শেষ হতো !! সে করল কি সেই জিপের আসল চাকা বদলিয়ে ৬" বড় চাকাই শুধু লাগালো না বরং গাড়িটাকেও ৬" এক্সট্রা উচু করিয়ে নিল।
কি যন্ত্রনা!! ঐ গাড়ি দুর থেকে দেখলে মনে হয় বিশাল বিশাল ফ্লিং-স্টোন টাইপের পাথরের উপর লাল বিন্দু একটা গুড়গুড়িয়ে চলছে। আমি যখন ঐটাতে ওঠার চেষ্টা করি বলা চলে আমি Literally ওটাতে climb করি। যেন গাছে চড়ছি । কি যন্ত্রনা!! মানুষ জন পর্যন্ত হা করে তাকিয়ে দেখে আমার গাড়িতে চরা তারপরে মুখ ফিরিয়ে হাসে । তার উপর গাড়ির রংটাও লাল - আহ আর যাবে কোথায় যেন "সোনায় সোহাগা"।
এখানেই শেষ নয়। আমি যখন গারিটা চালানোর চেষ্টা করি হাজারো সিট এ্যাডজাস্টমেন্ট করার পরেও প্যাডেলে আমার পা পৌছাতে একটু কষ্টই হয়। হায়রে নিজের খাটোত্ব এভাবে আগে কখনও ফিল করিনি। গাড়িটা চালাতে গেলে মনে হয় যেন ছোট একটা ট্রাক চালাচ্ছি। তবে একটাই পজিটিভ দিক সেটা হলো ওটা চালাতে মজা আছে
তো এত সব বিশালতার মাঝে আমার কি আর ছোট কিছু হতে পারে? না না, তা হবার সুযোগই নেই !! বলা নেই কওয়া নেই বিশাল এক দঁাতের ব্যথা শুরু হলো। এতই বিশাল যে যখন ব্যথা ওঠে ইচ্ছে করে আমি যদি বানর হতাম তাহলে নির্ঘাত উপরে নিচে এমন করে নিজেকে আছার মারতাম যে মাথা গিয়ে ঐ উচু সিলিং ঠেকত ।
ডাক্তার দেখাব - তারও বিশাল অপেক্ষা। বিশাল লম্বা ছুটিতে সব ডেন্টিস্টরা যেছেন হলিডে-তে। দশ দিন অপেক্ষা করার পরে একজনের দেখা পেলাম। উনি দেখে শুনে বললেন আমার একটা দঁাতে রুট পর্যন্ত বিশাল এক ক্র্ক ধরেছে, তো দঁাত ফেলে দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। আচ্ছা বাবা তাই সই। সেটাই যদি হয় তাহলে এখনই তোল আমার দঁাত, কিন্তু না তাতো হবার নয় আবার আমাকে বিশাল অপেক্ষার পথ পাড়ি দিয়ে তিন দিন পরে দঁাত তুলতে হবে। আর এই তিন দিন আমি দঁাতের যন্ত্রনায় মরি ।
গত দুই সপ্তাহ দঁাতের যন্ত্রনায় ঘুমাতে পর্যন্ত পরিনাই , খেতেও পরিনাই । যাই হোক বহু অপেক্ষা আর কষ্টের পরে আজ ফািনালি দঁাত ফেলতে যাব। সকালে ঘুম ভেঙে বিছানা থেকেই দেখলাম সমুদ্র দুধ পুকুর হয়ে শন্ত হয়ে আছে। অঝোড় ধারে বৃষ্টি হচ্ছে। মনে হলো আমার দঁাত বিসর্জনের দুঃখে সাগর আর প্রকৃতিও যেন কেঁদে ভাসাচ্ছে। বাপ মা'য়ের দেয়া দুধ দঁাত নয় নিজের জন্ম দেয়া, গড়ে পিঠে মানুষ করা দঁাত বলে কথা। চলে যাচ্ছে চিরদিনের জন্য । এই দুঃখ কোথায় রাখি ? বুঝলাম বয়স হয়ে গেছে , এক পা কবরে দিতে বসেছি হায়রে কাপাল !!
সকালে উঠেই আমার দঁাত ফেলা উপলক্ষে শেষ বারের মত দঁাতটাকে শান্তনা দিতে গরুর মাংস বেশ কষিয়ে রান্না করে ফেললাম। শেষ বিদায় বলে কথা আছেনা !! এর মাঝে রেজওয়ানার একটা মেসেজ পেলাম ফেসবুকে - ও জিঙ্গেস করছে আমার ঘরে বন্যার পানি চলে এসেছে কিনা আরে আমার দঁাত চলে যাচ্ছে এখন বন্যাই কি আর অন্য কিছুই কি কিছুই যেন আসে যায় না
তার উপরে ব্লগ খুলে জ্বীনের বাদশাহ'র নামাহ পড়ার ভিডিও দেখেত আমার আক্কেল গুড়ুম এরা বলে কি পাগল নাকি
ভাল থাকুন সবাই। দঁাত ফেলে এসে জানাব আমার কয়'পা কবরে গেল