somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদ বোনাস ।

১৭ ই আগস্ট, ২০১১ দুপুর ১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

করিম সাহেব নতুন অফিসে জয়েন করেছেন দুই মাস আগে। করপোরেট অফিস, সবকিছু টাইমলি হয়। নিয়মানুযায়ী, ছয় মাস না হলে বোনাস হয় না। করিম সাহেব একা নন, তাঁরা কয়েকজন একসঙ্গে জয়েন করেছিলেন। করিম সাহেব মানুষটা বেশ বুদ্ধিমান। বলতে গেলে বুদ্ধি বেচে খান। এতে অবশ্য তাঁর কোনো আলাদা অভিব্যক্তি নেই। বুদ্ধি বেচে তো অনেকেই খায়। তিনি তো আর গতর খাটিয়ে খান না! ঈদের আগে বোনাস পাবেন না! এটা কি হয়? বাসায় বউ-বাচ্চা আছে। আর কিছু না ভেবেই বড় সাহেবের রুমে গেলেন তিনি।
‘স্যার, আমার ঈদের বোনাস লাগবে।’
‘জয়েনের সময় তো আমি বলেই দিয়েছি, ছয় মাস না হলে বোনাস হবে না। আপনার ছয় মাস হয়েছে?’
‘না, স্যার। তবে আগামী চার মাস পর ছয় মাস হবে।’
‘আগে ছয় মাস হোক। আমি তো আপনার জন্য অফিসের নিয়ম বদলাতে পারব না।’
‘ঠিক আছে! আমি তাহলে সবাইকে গিয়ে বলছি, স্যার আমাকে এই ঈদে ফুল বোনাস দিয়েছেন!’
‘আচ্ছা, তোমাকেই দিলাম, আর কেউ যেন না জানে!’
যথাসময়ে অফিস থেকে ঈদের বোনাস ও বেতন নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন করিম সাহেব। মনটা বেশ ফুরফুরে। অফিসের বসকে কেমন ফাঁদে ফেলে বোনাসটা বাগিয়ে নিয়েছেন। অফিস থেকে বাসের লাইন পর্যন্ত পথটা কম নয়। প্রতিদিন হেঁটেই যেতেন। আজ পকেট গরম। একটা রিকশা ডেকে কিচ্ছু না বলে রওনা দিলেন। বাসস্ট্যান্ডে এসে রিকশাওয়ালাকে ১০ টাকার একটি নোট দিলেন। রিকশাওয়ালা এমনভাবে চোখ বড় করে তাকাল, করিম সাহেব রীতিমতো ভয় পেয়ে গেলেন।
‘ঈদের বোনাসটা দেবেন না?’
করিম সাহেবের বুকের ব্যথা আগে ছিল না, কিন্তু আজ মনে হয় একটু ব্যথা করল। রিকশাওয়ালা কী করে টের পেল ঈদের বোনাসের কথা!
দেন, আরও ১০ টাকা দেন।
বাসের লাইনে লম্বা ভিড়। পকেটটা আজ বেশ গরম, আবহাওয়া গরম। বাসে ঝুলে আজ আর বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না তার। অনেকক্ষণ হাত তুলে রাখার পর একটা সিএনজিচালিত অটোরিকশা এসে থামল পায়ের কাছে।
‘যাবেন?’
‘যাওনের জন্যই তো থামছি। কই যাইবেন?’
‘মিরপুর।’
‘২০০ টাকা।’
‘গুলশান থেকে মিরপুর ২০০ টাকা! আগে তুমি আমাকে বুঝিয়ে বলো, কেন ২০০ টাকা?’
‘যাবেন কি না, সেইটা কন! এত কিছু বুঝাইতে পারুম না। যাইলে ওঠেন, না যাইলে যাই।’
সিএনজিচালিত অটোরিকশা প্রায় টান দিতে যাবে। এদিকে বাসের লাইনের এত মানুষের সামনে মান-ইজ্জত হারানো ঠিক হবে না। বরং ২০০ টাকার মায়া ত্যাগ করে সবাইকে নিজের জাতটা একটু চেনাতে পারলে ক্ষতি কী! মনে মনে সিএনজিওয়ালাকে একটা ধন্যবাদ দিয়ে সিএনজিতে উঠে পড়লেন।
‘আচ্ছা, এইবার বলো, গুলশান থেকে মিরপুর ২০০ টাকা ভাড়া কেমনে হয়!’
‘শুনেন, যে জ্যাম, মিটারে আসবে ১০০ টাকার ওপরে। এদিকে গ্যাসের দাম বাড়াইছে, তার জন্য আরও ৫০ টাকা।’
করিম সাহেব মনে মনে খুশি হয়ে উঠলেন। যাক, ৫০ টাকা বাঁচল।
‘আর ধরেন স্যার, ঈদের বোনাস ৫০! মোট ২০০। আমাগোও ঘরে বউ-বাচ্চা আছে। খালি আফনেরা ঈদ করবেন, আমরা করুম না? আফনারা তো অফিসে বোনাস পান, আমরা কই পাই। আফনেরাই তো ভরসা।’
করিম সাহেবের বুকটা আবার ধক করে উঠল।
এ সময় বাসা থেকে ফোন!
‘এই, তুমি কই?’
‘সিএনজিতে বাসায় আসছি।’
‘বাসায় আসতে হবে না। জলদি রেলস্টেশনে যাও। টিকিট করা লাগবে না?’
করিম সাহেব ভুলেই গিয়েছিলেন টিকিটের কথা।
সিএনজিওয়ালাকে মোট ৩০০ টাকা দিয়ে তিনি কমলাপুরে নামলেন।
টিকিট নেই। টিকিট শেষ। কী করা! টিকিট না হলে বাড়ি যাওয়া হবে না। আর বাড়ি না গেলে ঈদটাই মাটি। এর মধ্যে একজন লোককে বেশ হাসিখুশি চেহারায় এগিয়ে আসতে দেখে তাঁর একটু কৌতূহল হলো। একি! লোকটার হাতে আবার ট্রেনের টিকিট!
‘ভাই, টিকিট কই পাইলেন!’
‘পাইছি! একটু সিস্টেম কইরা পাইছি।’
‘সিস্টেমটা কী, ভাই?’
লোকটি ভিড়ের মধ্যে কালো টি-শার্ট গায়ে একজনকে দেখিয়ে বললেন, ‘কিছু ঈদ বোনাস দিয়ে দেবেন। পৃথিবীর যেকোনো জায়গার টিকিট আছে তার কাছে।’
করিম সাহেব মনে মনে বললেন, কালো টি-শার্ট। এ জন্যই কি বলে ব্ল্যাকে টিকিট!
টিকিট কেটে এবার বাসে। সিএনজি আর না। ৩০০ টাকা দিয়ে বাসে গোটা ঢাকা দুই দিন চক্কর মারা যেত।
বাস কারওয়ান বাজার পার হয়ে ফার্মগেট যেতে না যেতেই আবার ফোন।
‘এই, তুমি কই?’
‘বাসে, ফার্মগেটে। বাসায় যাচ্ছি।’
‘আর বাসায় যেতে হবে না। মার্কেটে আসো। আমরাও আছি।’
ঘড়ির দিকে তাকালেন। রাত ১০টা। এখন এখান থেকে আবার মার্কেটে।
অগত্যা রিকশা! রিকশা তখন পান্থপথের আগের গলিতে। এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। আশপাশে রিকশা-গাড়ি দ্রুত ছুটে যাচ্ছে। সবার অনেক তাড়া। একটা মোটরসাইকেল এসে থামল।
‘স্লামালাইকুম, আংকেল।’
‘ওয়ালাইকুম। কিন্তু আমি তো...’
‘ওই ব্যাটা, রিকশা টানস ক্যান! দেখস না আংকেলের সাথে কথা বলছি। আংকেল, বেশি কিচ্ছু বলার নেই, ঈদের বোনাসটা...।’
হাত বাড়িয়ে দিল ছেলেগুলো। বলেছিলাম না, করিম সাহেব বুদ্ধিমান। বেতন আর বোনাস পেয়ে সোজা গিয়েছিলেন অফিসের বাথরুমে। পুরো টাকা মোট চার ভাগ করে দুই পায়ের মোজায় দুই ভাগ, প্যান্টের ভেতরের গোপন পকেটে এক ভাগ, আর মানিব্যাগে এক ভাগ।
মানিব্যাগটা বের করলেন তিনি। ভদ্রঘরের সন্তান। মানিব্যাগে হাতও দেয়নি, তবে পুরো টাকাটা করিম সাহেব নিজেই দিয়ে দিয়েছেন।
‘আংকেল, শপিংয়ে যাচ্ছেন বুঝি! যান।
এই ব্যাটা, তোর রিকশাভাড়া। খবরদার, আংকেলের কাছে আর চাইবি না। আংকেল, স্লামালাইকুম।’
আশপাশের যাত্রীরা দেখল, এক আংকেল তাঁর আদরের ভাইস্তাদের ঈদ বোনাস দিলেন।
পথে রিকশাওয়ালা জিজ্ঞেস করল, ‘স্যার, আফনের ভাতিজা লাগে?’
করিম সাহেব কিছু বললেন না। নিজের বুদ্ধির কারণে এতগুলো টাকা এখনো নিজের কাছে রয়ে গেছে ভেবেই তিনি খুশি।
‘হ্যাঁ, আমার ভাতিজাই তো!’
এরপর শপিং। একে একে নিজের সব গোপন জায়গার টাকা বেরিয়ে গেল করিম সাহেবের।
একটা সিএনজি নিয়ে বাসায় গেলেন। এই ব্যাটা আবার মিটারে রাজি হয়েছে। ভাড়া দেওয়ার পর দেখলেন, আরও ৫০ টাকা তখনো পকেটে। সিএনজিওয়ালার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘সবাই ঈদ বোনাস নিল, তুই নিবি না!’ বলেই নোটটা বাড়িয়ে দিলেন।
বাসায় গিয়ে করিম সাহেব ভাবতে লাগলেন। ভেবে ভেবে এক ঐতিহাসিক সূত্র বের করলেন। ঈদ বোনাসের টাকা কখনো একা ভোগ করা যায় না, সবাই মিলেমিশে ভোগ করতে হয়। তিনি খুব বেশি দুশ্চিন্তা করলেন না। নিজের বুদ্ধির ওপর এখনো তাঁর পুরো আস্থা আছে।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×