somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুন্দর একটা ঘর

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঝিনুক একেবারেই টায়ার্ড।সে প্রায় তিন ঘন্টা গরমের মধ্যে বউ সেজে শুয়ে আছে।আজ তার বাসর রাত-তার বর তার পাশেই ঘুমিয়ে আছে।না,ওর বর এতোটা কেলাস হতেও পারে নাও হতে পারে যে বাসর রাতেই ঘুমিয়ে পড়েছে।আসলে ঝিনুক নিজেই কোন কথা-বার্তা,খাতিরদারি এড়ানোর জন্য মটকা মেরে পড়েছিল বিছানায়।বর নিজেই ভেবেছে সে ঘুমিয়ে গেছে তাই সেও...।


তার বিয়ে হচ্ছে বোনের বাড়ীতে,না বোনের বাড়ি না-ভাড়া বাসাতে। ঝিনুক জেলা শহরের মেয়ে।ইন্টার পাশ করে ঢাকা বোনের বাসা এসেছে ঘুরতে,প্রথমবারের মত।এসে সে যারপরনাই হতাশ।তার ধারনা ছিল বোনের বিয়ে যখন শহরেই হয়েছে তার বাসাও নিশ্চয় সেরকম যেরকম টিভি নাটকে দেখা যায়-এপার্টমেন্ট টাইপ।সাজানো ড্রয়িং রুম,বারান্দা,টাইলস দেয়া বাথরুম,টিভি ফ্রীজ,ভালো লোকেশন।




কিন্তু কিসের কি!বাসা তো না যেন গোডাউন।একটা চারতলা বাড়ির নিচতলায় দুইটা রুম তার মধ্যে একটায় আবার টিনের ছাঁদ।দুই রুমের একটায় আবার গ্যাসের চুলা মানে আলাদা রান্নাঘর নেই। একটা ছোট ফ্রীজ,একটা নন-ব্র্যান্ড টিভি,বসার জন্য এলোমেলো ভাবে কয়েকটি প্লাস্টিক আর রঙ চটা কাঠের চেয়ার,দুই ঘরে দুইটা খাট যার একটি আবার রডের। বাড়ীতে ঢুকেই ঝিনুকের চোখে পানি চলে এসেছিল,বোনের সংসারে এসেই যেন ঝিনুক প্রথমবার অনুভব করল কল্পনা আর বাস্তবতার সীমারেখা টুকু।



এরচেয়েও বেশী চুপ মেরে গিয়েছিল যেদিন সে দুলাভাইএর অফিস গিয়েছিল,শখের বশেই একদিন মার্কেটে টুকটাক কেনাকাটা সেরে ফেরার পথে নেমে গিয়েছিল অফিসে।ভেতরে ঢুকতে হয়নি,বাইরেই দেখা হয়ে গেল-বসের বউ এর সাথে গাড়ী থেকে নামছে,হাতে তার ই বাজারের ব্যাগ।ম্যাডামের গাড়ির দরজাটা পর্যন্ত সে খুলে দিচ্ছে।সেদিনই বুঝে নিয়েছিল সে ,বোনের জামাই কত ছোট চাকরী করে।



ভেতরে ভেতরে একটা ভয় তাকে গ্রাস করে।সে কখনোই এমন আটপৌড়ে জীবন চায়না।কোটিপতি স্বামী না -একটু স্যান্ডার্ড তো হতেই হবে।যেমনতা সে কল্পনায় ভেবে রেখেছিল নিজের বোনের স্বামী-সংসারের সম্পর্কে।



মনে মনে একজনকে পেয়েও গিয়েছিল সে-সাব্বির,তীতুমীর কলেজ এ অনার্স পাশ করে মাস্টার্স এ ভর্তি হল।পড়ার জন্য একটা বইএর দরকার হলে নিজে থেকেই দিতে চাইল।বাসায় যেয়ে আনতে গেলে অনেক কথাই বলল পড়াশোনা সম্পর্কে।ঝিনুকের বোনের বিল্ডিং এই ভাড়া থাকে,তিনতলায়।তবে বোনের মত গরীবি বাসা না ওদের।ওরা পুরা ফ্লাট নিয়ে থাকে।আলাদা ড্রইং,ডাইনিং সুন্দর করে সাজানো,পরিপাটি।হবেই বা না কেন-ওর বাবা অনেকদিন ফ্রান্স এছিলেন।ওর বড় বোনের বিয়েও ফ্রান্সে,সেখানেই থাকে।মেজো ভাই সরকারী অফিসার হয়ে বউ নিয়ে সিলেট এ পোস্টিং।মা,বাবা,দাদী আর ছোট ছেলে সাব্বির কে নিয়ে একেবারেই সচ্ছল নির্ঝঞ্ঝাট পরিবার।ঠিক যেমনটি ঝিনুকের কাঙ্খিত,মনের মত।



কিন্তু ভাগ্যিশ বোনের বাড়িতে এসে আগে ভাগেই ওর সুখ,সচ্ছলতা,শোখিন আর আরামদায়ক জীবন আর সুন্দর স্বামী-সংসার এর সপ্নটা অনেক বড় একটা ধাক্কা খেয়েছিল,তাই হয়তো অবচেতন মনেই সে একটু একটু করে প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল সেই একি ভাঙ্গাচোরা স্বামী-সংসারের জন্য যেমনটি তার বোনের।এই প্রস্তুতিটুকু না থাকলে হয়তো সে মরেই যেত যখন শুনল যাকে নিয়ে সে খুব সুন্দর একটি জীবনের সপ্ন দেখছে সেই নাকি তাদের গাড়ির ওয়ার্কশপের কেয়ারটেকার এর সাথে ঝিনুকের বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।



খুব ই অবাক আর হতবাক হয়ে ঝিনুক গিয়েছিল ওদের তিনতলার সুন্দর ঘরটিতে ঘটনাটা ভাল করে শোনার জন্য।সেদিনই কথায় কথায় সাব্বির এর মা বলল সাব্বির এর বিয়ের কথা।তাদের নিজেদের বেশ বড় একটা প্লট আছে ঠিক এই বাড়ির এক রাস্তা পরেই।সেটা নাকি সাব্বির এর বাবা বিল্ডারদের কাছে দিয়ে দিয়েছেন।ওরা তিন তলা পুরাটা পাবে।এই বাড়ীর বাড়িওয়ালার দুই মেয়ের বড়টাকে সাব্বিরের মা,বাবা,বোন সবাই খুব পছন্দ করে।মেডিকেলের ছাত্রী আবার খুবই সুন্দরী।এতদিন ভাড়া ছিলেন তাই বলতে পারেননি।নিজেদের বাড়ির ডিল্ টা ফাইনাল হয়ে যাবার পর নিজেই সম্মানের সাথে বলে এসেছেন বাড়িওয়ালীকে।আপনারাও বাড়ীওয়ালা আমরাও,সমানে সমানে স্ট্যাটা্স,পাশাপাশি বাড়ি হওয়ায় থাকাও হবে এতো কাছাকাছি।কেননা নিজেদের মধ্যেই বিয়েটা হোক।বাড়ীওয়ালী নাকি খুব ই খুশি,তারাও রাজি এরাও।আর সাব্বিরতো আগের থেকেই প্রিপেয়ার্ড।শুনে একেব্রেই চুপ মেরে গেল ঝিনুক।বুক ফেটে আর কোন কথাই বের হলনা প্রায় একমাস।আর এটাই হয়ে গেল ওর বিয়ের সম্মতি।



সাব্বির নিজেই অনেক কিছু গুছিয়ে দিল। এমন কি ওদের নতুন কেনা প্রিমিও গাড়িটা ফুল দিয়ে সাজানো হল বিয়ের গাড়ি হিসাব।অবশ্য সাব্বির নিজে ছিলনা বিয়ের কোন উতসবে,সে গিয়েছিল বাড়িওয়ালির বড় মেয়ের সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবীর বাচ্চার সিজারিয়ান ডেলিভারিতে হসপিটালে ডিউটি দিতে-হবু বৌএর বান্ধবী বলে কথা।সাব্বিরের কাছ থেকে অবশ্য এই না থাকাটাই ঝিনুকের সবচেয়ে বড় পাওয়া।বিয়ের সময় অবাক হয়ে করল লক্ষ্য করল ওর স্বামীকে, ওর ভালোলাগার একেবারেই বিপরীত।



স্বামীর বাসায় নাকি গিয়েছিল ওর বোনেরা,সে শুনেছে।বরের বাসা নাকি ওর বোনের বাসার চেয়ে ভাল-পুরাটাই পাকা ছাদ,একটা আবার টিনের না।রুমও একটা বেশি,তবে খুশি হবার কিছু নেই-ওটাকে ড্রয়িং রুম হিসাবে সাজানো যাবেনা।কারন ওটা নাকি সাবলেট দেয়া দুই বোনের কাছে!!! হা হা ,মনে মনেই হেসে উঠেছিল ঝিনুক।বিয়ের দিন অনুষ্ঠান শেষ হবার আগে ঝাপিয়ে বৃষ্টি নামল,শুনলো ঐ সাজানো গাড়িতে করে নাকি যাওয়া যাবেনা আজ স্বামীর বাসায়,বাসায় নাকি বৃষ্টির পানি ঢুকে এলাহী অবস্থা।বিস্মিত হয়ে ভাবে ঝিনুক-কেমন বাসা হলে এই দুই ঘন্টার বৃষ্টিতে বাসায় পানি ঢুকে বন্যা হয়ে যায়।আবার ও হাসে মনে মনে।স্বামী সংসারের প্রতি কোন আকর্ষনই অনুভব করেনা সে।শুধুই নিজেকে সাম্নের দিকে টেনে নেয়া।



সবচেয়ে আশ্চর্যের ঘটনা হল-বৃষ্টি্র কারনে বিয়ের দিন স্বামীর বাসায় যাওয়া হয়না তার।খুবই আন্তরিক সাব্বিরের মা তাই নিজ দায়িত্তে নিজের বাসায় তড়িঘড়ি করে বাসর সাজানোর ব্যাবস্থা করেন।বাসর ঘরে ঢুকে এসে আবারো হতবাক হয় ঝিনুক-এই ঘরে সে দ্বিতীয়বারের মত।প্রথমবার সে এসেছিল যেদিন প্রথম একটি ডিকশনারী চাইতে গিয়ে পরিচয় হয় সাব্বির এর সাথে।এতা যে সাব্বিরেরই ঘর!!!


৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×