somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

We hate pakistan n rajakar (মৃত ফেইসবুক গ্রুপ)

০২ রা আগস্ট, ২০১২ ভোর ৬:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৭১'এর ভয়াল ও পৈশাচিকতার ইতিহাস পড়ে পাকিস্তানীদের প্রতি আমার একটি স্বাভাবিক ঘৃণা জন্মেছিল। ঘৃণা জন্মেছিল ইসলামের নামধারী একটি গোষ্ঠীর উপর। সে সময়ের ঘোর পাকিস্তান ও জামাত বিরোধী আমি কিছুটা উগ্রও ছিলাম বটে। আজ আমার মধ্যে সেই উগ্রতা নেই। কিন্তু আজও রয়ে গেছে সেই ঘৃণা। তখন ২০০৯'এর দিকে ফেইসবুকে একটি গ্রুপ বানিয়েছিলাম। গ্রুপটির নাম দিয়েছিলাম 'We hate pakistan n rajakar'। আমার মতো ঘোর পাকিস্তান বা জামাত বিরোধী কাছের বন্ধুরাই ছিল সেই গ্রুপের সদস্য। সদস্য সংখ্যা যে বেশি ছিল তা নয়। সব মিলিয়ে এই ১০/১৫ জন ছিল মাত্র। কিন্তু তবুও ছিল তো। আজ বহুদিন পর সে গ্রুপে উঁকি দিলাম। আমার বানানো সে গ্রুপটি তেমনি আছে। ফেইসবুকের কল্যাণে চেহারা বদলেছে। কিন্তু সদস্যরা কেউ নেই। শুধুই আমি।

গ্রুপের বর্ণনায় যা লিখেছিলাম তা হুবহু এখানে তুলে দিলাম।

We hate pakistan n rajakar :
পৃথিবীর ইতিহাসে এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে বাংলাদেশী জাতির জন্য ১৯৭১ একটি গৌরবোজ্জ্বল সময়, অপর দিকে মানব জাতির চরম কলঙ্কের স
ময়ও এটি। কারণ ১৯৭১ এই সময়টিতে ৩০ লক্ষ মানুষ হত্যা করা হয়েছিল এবং প্রায় ৫ লক্ষ মা-বোন ধর্ষিত হয়েছিল, যার মধ্যে ৭/৮ বছরের কন্যা শিশুও ছিল। ১ম ও ২য় বিশ্বযুদ্ধের কথা আমরা সবাই জানি, ১ম ও ২য় বিশ্বযুদ্ধেও এত মানুষ হত্যা করা হয়নি। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ৯ মাস ব্যাপী এই যুদ্ধে পরে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং আমাদের সাথে যোগ দেয়। যদিও বলা হয়ে থাকে এখানে ভারতের স্বার্থ জড়িত ছিল, কিন্তু ভারত যদি সাহায্য না করত আমাদের ১ কোটি শরণার্থী আশ্রয় না দিত তাহলে ভারতে পালিয়ে যাওয়া এই ১ কোটি শরণার্থী পাকিস্তানি আর্মির হাতে মারা পরত কিংবা না খেয়ে মারা যেত। এই যুদ্ধে ভারত ও রাশিয়া ছিল আমাদের পক্ষে অপরদিকে চিন ও আমেরিকা ছিল পাকিস্তানের পক্ষে। এই যুদ্ধে হয়ত ভারতের স্বার্থ ছিল, কিন্তু আমাদের দেশের স্বাধীনতায় ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের অবদান অনস্বীকার্য। প্রশ্ন উঠতে পারে আমরা কেন স্বাধীনতা চেয়েছিলাম, কারণ আমাদের স্বাধীনতা ছাড়া উপায় ছিলনা। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান এই একটি দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষের ভাষা ছিল বাংলা, কিন্তু পাকিস্তানী গোষ্ঠী চেয়েছিল উর্দু হবে রাষ্ট্র ভাষা। এই ভাষার জন্য আমাদের রক্ত দিতে হয়েছে। আমাদের দেশের মানুষ না খেয়ে থাকতো, পূর্ব পাকিস্তানের কোন উন্নয়ন হতোনা, এই অঞ্চলের টাকা দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়ন হতো, পশ্চিম পাকিস্তানীরা ছিল প্রথম স্তরের নাগরিক আর আমরা ছিলাম ২য় স্তরের নাগরিক। সেনাবাহিনী সহ রাষ্ট্রীয় নানা প্রকার সরকারি চাকুরীতে পূর্ব পাকিস্তানীরা সুযোগ পেতোনা। কারণ তারা জানত পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি তারা যে বৈষম্য করছে পূর্ব পাকিস্তান এক সময় স্বাধীনতা চাইবে। পূর্ব পাকিস্তানের পাট বিক্রির টাকা দিয়ে তারা ইসলামাবাদ শহর তৈরি করেছিল যেখানে আমরা না খেয়ে কষ্ট করতাম। শুধু তাই নয়, আমরা হচ্ছি চিরকালের বাঙ্গালি, হাজার বছরের ঐতিহ্য সংস্কৃতি আমাদের, আমাদের দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম হলেও আমরা সবাই বাঙ্গালি জাতি, আর পশ্চিম পাকিস্তানীরাও ছিল সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিম কিন্তু অন্য সংস্কৃতির অন্য জাতি। তাই তাদের সংস্কৃতির সাথে আমাদের সংস্কৃতির মিল ছিলনা বলে তারা হাজার বছরের বাঙ্গালি সংস্কৃতি ধ্বংস করে দিতে চাইল। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সকল দিক দিয়ে আমরা ধ্বংস হতে লাগলাম। পড়াশুনাসহ রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রে সরকারি বিনিয়োগ ছিল নাম মাত্র, অথচ আমাদের অঞ্চল থেকেই পাকিস্তান বেশি লাভবান হতো। ১৯৭১ এর যুদ্ধটি ছিল একটি অন্যায় যুদ্ধ, ভীতু পাকিস্তানি আর্মিরা রাতের বেলা আমাদের আক্রমণ করে বসে। অথচ মধ্য প্রাচ্য সহ কোন মুসলিম দেশ আমাদের সাপোর্ট করেনি। গণহত্যা নিয়ে একটিও কথা বলেনি। তৎকালীন আওয়ামীলীগ ছিল তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র রাজনৈতিক দল যার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান পুরো বাংলাদেশি জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং তৎকালীন পাকিস্তানের রাজনৈতিক দল জামাতে ইসলামি ও মুসলিম লীগ পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল। শুধু তাই নয় জামাতে ইসলাম ও তাদের ছাত্র সংঘটন ইসলামি ছাত্র সংঘের (বর্তমান ইসলামি ছাত্রশিবির) তৈরি রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনী সরাসরি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে গণহত্যা ও গণ ধর্ষণে যোগ দিয়েছিল। পাকিস্তানিরা এক সময় বুঝতে পারে তাদের পরাজয় নিশ্চিত। এদেশিও রাজাকার বাহিনী মনে প্রাণে পাকিস্তানকে চেয়েছিল কিন্তু তারা বুঝত না এটা ছিল আমাদের প্রতি পাকিস্তানের অন্যায়। তারা একতরফা ভাবে মুসলিম রাষ্ট্র যাতে টিকে থাকে সেটা চেয়েছিল, কিন্তু এতে যে আমাদের কত সমস্যা হতো তা বোঝেনি, কারণ তারা ছিল অন্ধ, উগ্র মৌলবাদী। তারা মুখে সাধারণ মানুষকে বুঝাতো তারা ইসলামের পক্ষে কিন্তু তারা সত্যিকার অর্থে ইসলামের বিপক্ষে ছিল কারণ ইসলাম কোনদিন বলেনা যে ইসলামিক রাষ্ট্র অন্যায় করলে তাকে সাপোর্ট করতে হবে। জামাতে ইসলামীর একজন বড় নেতা যার বর্তমান নাম “আবুল কালাম আজাদ” সে ১৯৭১ সালে ফতুয়া দিয়েছিল যুদ্ধে নারী ও শিশু ধর্ষণ হালাল। তিনি এখনও বিভিন্ন বেসরকারি টিভিতে ফতুয়া দেন। তাদের তৈরি রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনী যুদ্ধের শেষের দিকে আমরা যেন কোনদিন বাঙ্গালি বাংলাদেশি জাতি হয়ে দাঁড়াতে পারি তাই আমাদের দেশের সোনার সন্তান বুদ্ধিজীবী, ছাত্রদের ধরে নিয়ে মেরে ফেলেছে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে আমেরিকা আমাদের বিপক্ষে গেলেও তাদের জনগণ আমাদের পক্ষে ছিল, যেমনটি ছিল ইরাক যুদ্ধের সময়, আমেরিকার একজন গায়ক “জর্জ হেরিসন” Concert for Bangladesh নামে একটি Concert আয়োজন করেছিল যা আমাদের শরণার্থীদের মুখে খাবার দিয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানের সকল জনগণ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তো করেনি বরং সাপোর্ট করেছিল, বিহারি জনগণ আর্মিদের সাথে একসাথে লুট, ধর্ষণ, গণহত্যার চালাত। কিন্তু আজকাল আমাদের দেশের তরুণদের মুখে শোনা যায় তারা বলে মিলিটারিরা অন্যায় করেছিল পাকিস্তানের জনগণের তো কোন দোষ নাই। আজকাল তরুণরা বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তান ক্রিকেট দল সাপোর্ট করে পাকিস্তানের পতাকা উড়ায়। বাংলাদেশের ৩০ লক্ষ মানুষ তোমরা দেখে যাও যাদের কারণে তোমরা আমাদের ছেড়ে চলে গেছ, যারা আজও এই গণহত্যার জন্য ক্ষমা চায়নি তোমাদের অপমান করে আমরা বাংলার মাটিতে পাকিস্তানের পতাকা উড়াই। আমরা কি জাতি হিসেবে এতটাই ছোট হয়ে গেছি যে আমাদের কোন মান অপমান বোধ নেই?

আমরা পাকিস্তানকে ঘৃণা করব। যতদিন এই অন্যায়ের জন্য ক্ষমা না চাইবে, যতদিন এই অন্যায়ের বিচার না হবে ততো দিন ঘৃণা করব। তা নাহলে এরকম অন্যায় আরও হবে।

আরিফ হোসেন সাঈদ, ৩০শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯
নারায়ণগঞ্জ
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১২ সকাল ৭:০০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×