somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ঈদের স্মৃতি

১৯ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৪:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদ অর্থ আনন্দ। আনন্দ তো জীবনে এক দুবার নয়, বার বার বহুবার এসেছে। তবে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসবটি নিয়ে কথা বলছি। বলছি রোজার ঈদের কথা। তখন বেশ ছোট কিন্তু সব মনে আছে। স্কুলে পড়ি না বা পড়ি। বয়স ছয় সাত বা আট। আমি তখন গ্রামে থাকি। পুরো এক মাস রোজা রাখার পর ঈদ আসত। ঈদের আগের দিনটিতে খুব আনন্দ হত। তবে পুরো রোজার মাসের কিছু কথা বলে নিই।

মা আর বুবু (দাদি) রোজা রাখতেন। আমি রাখতে চাইতাম। আসলে আমিও রোজা রাখতাম কিন্তু আমার রোজাটা ভিন্ন ছিল। এটা আমার পছন্দ ছিল না। আমি চাইতাম আমার রোজাটা স্বাভাবিক হবে। অন্য সবার মতই রোজা হবে। কিন্তু মা বুবু বলতেন ছোটদের রোজা দুপুর পর্যন্ত এক বার আর সন্ধ্যে পর্যন্ত এক বার। সবাই দিনে একটা রোজা রাখে আমি রাখতাম দুটো। দুপুরে একবার ইফতারি করতাম আর সন্ধ্যে বেলা আরেকবার। ছোটবেলা বড়দের ওই কথাগুলো বিশ্বাসও হত না আবার মিথ্যে বলেও ধরা যেতো না। তবে কিছু একটা বুঝে ফেলতাম। তার জন্য কিছুটা মন খারাপ হত। তবে দুটো করে রোজা রাখার দিনগুলো কিন্তু আমার খারাপ যায়নি। আমি পড়তাম আমার গাঁয়ের স্কুলে। স্কুল গাঁয়ের ভেতরেই। হেটে যেতাম আবার হেটে বাড়ি ফেরা। স্কুলে যাওয়া ছিল আমার কাছে উৎসবের মত। কিন্তু রোজার ত্রিশ দিনই স্কুল বন্ধ। তাই সারাদিন বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়ানো। এ বাড়ি ও বাড়ি এক করে ফেলা। কখনো কখনো এ সময় বর্ষা চলে আসতো। আমরা ছোটরা বর্ষার জলে নেমে শাপলা শালুক কুড়াতাম। এগুলো দিয়ে ইফতারি সেহরির মত মালা-ঠুলি খেলব। এ বন ও বন ঘুরে এটা ওটা জোগাড় করা হত। দলটাকে একটা পরিবারের রূপ দেয়া হত। সেখানে জামাই-বউ, ছেলে-মেয়ে, বাচ্চা-কাচ্চা সবই থাকত। দলের সবচেয়ে সুন্দর ও ক্ষমতাবান বলে আমি দলের নেতৃত্ব নিয়ে নিতাম। আমি হতাম জামাই বা বাবা। দলের যে সুন্দরী মেয়েটিকে আমার ভাল লাগত সে হত আমার বউ বা এ পরিবারের মা। বাকিরা সবাই ছেলে মেয়ে। আমরা ছোট বাচ্চাদের ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করতাম। তারা আবার বড্ড জ্বালা করত। ছোট বাচ্চারা ঘুমুতে চাইতো না আমাদের বড় জ্বালা হত। আমি বাজার করতাম ওদের মা রান্না করত। সেহরির ময়য় ওদের ডেকে দিতাম। মালা-ঠুলিতে যা রান্না হত তাই ওরা খেত। সারাদিন রোজা রেখে ইফতারিও করত। তবে আমরা কিন্তু পুরো দিন রোজা রাখলেও ওদের জন্য দিনে দুটো রোজা রাখার ব্যবস্থা করতাম। ওরা শুনতে চাইতো না। আর আমরা বুঝাতাম ছোটদের রোজা দুপুর পর্যন্ত একটা তারপর সন্ধ্যা পর্যন্ত আরেকটা। আমাদের খেলা শেষ হয়ে গেলে আমাদের ডাক পড়ত। আমরা রোজা না রাখলেও ইফতারি করতাম নিয়মমতো। প্রথম রসূলের সুন্নত পালনের জন্য ইফতারি শুরু হত গাঁয়ের বাজার থেকে কেনা সৌদি আরবের দান করা নিম্ন মানের খেজুর দিয়ে। এভাবেই চলত। কোন একদিন খবর পেতাম কাল ঈদের দিন। সেদিনগুলো বড় আনন্দের ছিল। বিকেল বেলা নরম রোদ পড়ত। সূর্য অনেক নিচে। সূর্য তার লাল আলো ছড়িয়ে দিত। সে আলোর বিকেলগুলোতে সারা উঠান ঘুরে বেড়াতাম। আর মনে আনন্দে ছড়া কাটতাম। ‘আজকে তবে খুশির দিন, কালকে তবে ঈদের দিন হুড়রে...’। সেদিনগুলো ফিরে ফিরে আসতো। এখন আর আসে না। চাঁন রাতের সন্ধ্যায় মায়ের সঙ্গে চাঁদ দেখতে বের হতাম। বাড়ির উঠোন পেরুলেই চাঁদ দেখা যেত। সেই সন্ধ্যাগুলোতে গ্রামে খুশির বান ডেকে যেত। চাঁদ দেখে ছেলেরা খুশির মিছিল বের করত। একটু রাত হলেই সেই অপূর্ণ চাঁদের জোছনায় পুরো গ্রাম ভেসে যেত। গভীর রাতে জোছনার নরম আদরে ঢাকা গ্রামবাসী ঘুমুতো সুন্দর একটি সকালের অপেক্ষায়। সেই সকালগুলোতে কখনো নামতো ঝুম বৃষ্টি। চারিদিক থেকে ভেসে ভেসে আসতো পায়েস আর সেমাইয়ের মিষ্টি গন্ধ। বৃষ্টি থামলেই লোকজন ছুটত ঈদগাহে। কেউ কেউ হয়তো পেয়েছে একটি নতুন জামা। কেউ হয়তো পেয়েছে একটি নতুন লুঙ্গি। কেউ হয়তো তাঁর ভাল জামাগুলো ধুয়ে গাঁয়ের বাজার থেকে ধুয়ে এনেছে কেউবা ধবধবে সাদা জামা ধোপার দোকান থেকে ধুয়ে এনেছে। কেউ কিছুই পায়নি। কিন্তু সেদিনগুলোতে আনন্দের অভাব ছিল না। সবার মুখেই ছিল খুশি। সকলের গা থেকে আতরের কড়া গন্ধ আসতো। পায়ে কারো জুতা ছিল না কিন্তু মাথায় টুপি সবারই ছিল। মা আর বুবু সালামী দিত দশ টাকা বা বিশ টাকা করে। সেই সালামী রাখার জন্য আমি পাঞ্জাবীর পকেট খুঁজতাম। ঈদগাহের দিকে বসে যেত নানান ধরণের দোকান। সেখানে পাওয়া যেত এক রকেট। আমি সেই রকেট কিনতাম। কাঁচের লম্বা এক টিউবের ভেতর থাকত জরি মেশানো রঙ্গিন পানি। বছরের পর বছর আমি সেই রঙ্গিন রকেট কিনেছি। সেদিন গুলো বর রঙ্গিন ছিল।

ঈদগাহ থেকে ফিরেই খাওয়া দাওয়া। অনেক ভাল ভাল খাবার থাকত। কিন্তু খাবারের ইচ্ছে থাকত না। কিছুক্ষণ পর বন্ধুদের সাথে এক হতাম। সবাই মিলিয়ে দেখত কার পোশাক সবচেয়ে সুন্দর। সবারই একটু মন খারাপ হত। তারপর ঘুরাঘুরি। কখনো হেটেই চলে যেতাম বিষ্ণুপুর। তা না হলে নজরুল-নার্গিসের দৌলতপুরে। কখনো বাংগরা জমিদার বাড়ি। ওহ! একটা আসল কথাই বলা হয়নি। সামনে রোজার ঈদ। হয়তো স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের গাঁয়ের বাজারে পাওয়া যেত নানান রকমের ঈদ কার্ড। দু টাকা থেকে শুরু করে বিশ টাকা পর্যন্ত নানান রকমের রঙ্গিন ঈদ কার্ড। আমরা সেগুলো ঈদের আগেই বন্ধুদের বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দিতাম। ভেতরে লিখে দিতাম নানান রকমের শুভেচ্ছা বাণী। সেসব কথা এখন আর মনে নেই। সারাদিন চলতো এ বন্ধুর বাড়ি থেকে ও বন্ধুর বাড়ি যাওয়া। সবাই ধরত এটা খেতে হবে ওটা খেতে হবে। আমরা সেমাই খেয়েই ডোল হয়ে যেতাম। অন্যসব খাব কখন।

আরিফ হোসেন সাঈদ, ১৯শে আগস্ট, ২০১২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×