কুম্ভকর্ণের সঙ্গে পরিচিত নন এমন পাঠক দুর্লভ। আমরা তার নামের সঙ্গে মোটামুটি ভাবে পরিচিত ,তার কারণ হয়তবা তার বিকট দোহারা চেহারা বা তার নিদ্রালু স্বভাব এর জন্যই তিনি আমাদের মধ্যে এখনও বেশ জনপ্রিয় তা বলাই যেতে পারে। রাম রাবনের যুদ্ধের সময়ে তার নিদ্রা ভঙ্গ করার জন্য অসুরদের যে কি বেগ পেতে হয়েছিল সে সম্পর্কে আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন ।
তাই আজকের প্রবাদ বাক্যটির মাধ্যমে কুম্ভকর্ণের নিদ্রা এবং তার এই রুপ দীর্ঘ নিদ্রার কারণটি সম্পর্কে আমরা জানতে পারব ।
প্রথমেই জানা যাক কে এই কুম্ভকর্ণ ? পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে কুম্ভকর্ণের পিতা ছিলেন বিশ্রবা মুনি মাতা রাজা মাল্যবানের কন্যা নিকষা । বিশ্রবা মুনি এবং নিকষার ছিল তিন পুত্র সন্তান ও এক কন্যা সন্তান ।তাঁদের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তানটি হলেন এই কুম্ভকর্ণ । অপর সন্তানরা হলেন জ্যেষ্ঠ রাবণ , কনিষ্ঠ বিভীষণ এবং তাঁদের একমাত্র ভগিনী শূর্পণখা । এবার চলে যাই কুম্ভকর্ণের নিদ্রার প্রসঙ্গে ।
বিশ্রবা মুনির অপর এক ছেলে কুবের হাজার বছর কঠোর তপস্যা করে ব্রহ্মার বরে প্রচুর ধনরত্নের অধিপতি হয়েছিলেন।যার থেকে কুবেরের ধন প্রবাদটির উৎপত্তি হয়েছে ।এই কুবের ধনরত্ন লাভের পর তা কোথায় রাখবেন এই ভেবে তো খুবই অস্থির ! এমন সময়ে তার সেই সুযোগ এসেই গেল , লঙ্কাপুরীর অসুরেরা যখন বিষ্ণুর ভয়ে পাতালে পালিয়ে গেলেন তখন কুবের সেই সুযোগে লঙ্কাপুরী দখল করে নিলেন এবং সেখানেই তার অতুল ঐশ্বর্য রাখলেন । কিন্তু অসুরদেরও ছলের অভাব নেই তার মনে মনে একটা ফন্দি ঠিকই বের করে ফেলল , তারা কুবেরের পিতা অর্থাৎ বিশ্রবা মুনির সঙ্গে কৌশলে নিকষার বিয়ে দিয়ে দিল । তারা জানত এর ফলে নিকষার ছেলে মেয়ে হলে তারাও লঙ্কাপুরীর অর্ধেক ভাগ পাবে ।
এই প্রকার বেশ কিছু কাল পরে একবার কুবের তার পিতার সঙ্গে দেখা করতে গেলে রাক্ষস কন্যা নিকষা তার পুত্রদের বললেন , তোমাদের এই বৈমাত্রেয় ভাই কুবের এখনও একা লঙ্কারাজ্য ভোগ করে যাচ্ছে তোমাদেরকে বঞ্চিত করে এ আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারব না ! এর হাত থেকে লঙ্কা তোমাদের উদ্ধার করতেই হবে । রাবণ বললেন আমরা তিন ভাই কঠোর তপস্যা করে লঙ্কাপুরি জয় করে নেবই। সেই মত তারা ব্রহ্মাকে খুশী করে গোকর্ণ বনে তপস্যা করতে লাগলেন । এর মধ্যে তো আবার কুম্ভকের্ণর প্রবল তপস্যা দেখে দেবতাকুলও শঙ্কিত হয়ে উঠল । তারা জানত একবার কুম্ভকর্ণ ব্রহ্মার বর লাভ করলে তাঁদের রাজপাঠ তো গেল !
এই ভেবে তারা অনেক পরামর্শ করে এমন এক কূটনীতির আশ্রয় নিলেন যাতে সাপও মরবে আবার লাঠিও ভাঙবে না ! এই ভাবনা থেকে তারা বাগ দেবী সরস্বতীর কাছে অনুরোধ করলেন যে তাঁদের কে সাহায্য করতে হবে ।দেবী জানতে চাইলে, তার বললেন যে যখন কুম্ভকর্ণ তপস্যা সিদ্ধ হয়ে বর চাইবেন তখন তার কণ্ঠে অধিষ্ঠিত হয়ে যেন বাগদেবী বলেন ‘আমি ঘুমিয়ে থাকতে চাই’। এই প্রকার যখন ব্রহ্মা কুম্ভকর্ণের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে বর চাইতে বললেন তখন কুম্ভকর্ণের কণ্ঠে অধিষ্ঠিত দেবী বর চাইলেন ঘুমিয়ে থাকার । এই ভাবে কুম্ভকর্ণ ঘুমের ফাঁদে পরে গেলেন ।
এই আদি ঘটনাটি থেকে ক্রমশ বিবর্তিত হয়ে বাংলা শব্দভাণ্ডারে
“কুম্ভকর্ণের নিদ্রা” এই প্রবাদটির সংযুক্তি ঘটেছে ।কিন্তু প্রবাদবাক্যটির সঙ্গে যে মূল চরিত্রটির চরিত্রের অনেক অমিল তা আপনারা হয়ত কিছুটা অনুভব করতে পেরেছেন ।
তবে একটু বলে রাখি । কুম্ভকর্ণের এই রুপ বর লাভের পর তার অগ্রজ রাবণ নিজেও ব্রহ্মার বর লাভ করেন এবং লঙ্কার অধিপতি হন । তিনি বিনিত ভাবে ব্রহ্মার নিকট কুম্ভকর্ণের অসহায়তার কথা বললে তিনি কুম্ভকর্ণকে প্রতি ৬ মাস পর একদিনের জন্য জাগ্রত হবার বর প্রদান করেন । ।
আজ এই পর্যন্তই । আবার সময় পেলে ফিরে আসব নতুন প্রবাদ এর রূপকথার গল্প নিয়ে। ধন্যবাদ ।।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:২৯