somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেতস্মিনী

১২ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





তোমার কল্পনায় তব হোক আমার আলোকিত ভোর যাপন,
যাপিত জীবনের নেশায় আমি শূন্য হতে শূন্য হতেছি ;
আমাকে তুমি এবার একটু আকাশ পরিমান শান্তি ফিরিয়ে দাও,
ও আমার প্রেতস্মিনী !!!

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। যূথীর অপেক্ষায় বাস স্ট্যান্ডে বসে থেকে একটার পর একটা সিগারেট টেনে যাচ্ছে অভি। বাস চলে আসার কথা আরও ঘণ্টা কয়েক আগেই কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে এলো এখনো বাস আসার কোন চিহ্ন নেই। মোবাইলেও পাওয়া যাচ্ছেনা যূথীকে। সময়টা ভীষণ অস্থির কাটছে অভির। কোন এক অজানা শঙ্কা মনের ভেতর উঁকি দিচ্ছে; পথে আবার এক্সিডেন্ট হলোনাত! এছাড়া এত দেরী হবারতো কথা নয়। সময় যত পেরুচ্ছে দুশ্চিন্তার মাত্রা ততই বেড়ে যাচ্ছে অভির। এই মুহূর্তে সিগারেট নয় আরও ভারী কিছু দরকার তার। একটি কুকুর কোথা হতে যেন পায়ের কাছে এসে ঘোরাঘুরি করছে হঠাত করেই। কালো রঙের কুকুর হলেও এই অন্ধকারে বেশ চকচক করছে কুকুরটির পশমগুলো। যতই কুকুরটিকে এড়িয়ে যেতে চাইছে ততই পায়ের কাছে এসে ঘোরাঘুরি করছে কুকুরটি। অগ্যতা অস্থির হয়ে সামনের দিকে হাটতে শুরু করল অভি।

ভেবেছিল পেছনে পেছনে আসবে কুকুরটি কিন্তু একবার পেছনে ফিরে তাকাতেই কুকুরের আর কোন চিহ্নই সে দেখতে পেলনা। সেখানটিতে একটি মেয়ে দাড়িয়ে আছে দেখতে পেল সে। এই অন্ধকারেও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে মেয়েটি খুব সুন্দর করে সেজেছে তার পরনের গায়ের কালো শাড়িটির সাথে মিল করে। মফস্বলের সন্ধ্যা মানেই যেন অনেক রাত। এখানে রাত হয়না রাত নেমে আসে। সন্ধ্যার কিছু পরেই লোকজন ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পরে। বাজারে দু একটি টং দোকান খোলা থাকে তাও আবার কুপির আলো জ্বালিয়ে রেখে। এমন পরিবেশে অভি নতুন। সপ্তাহ খানেক হল এখানে সে এসেছে। এখানে একটি রাজবাড়ি আছে তার উপর কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা করার জন্য। এই মফস্বলে এই অন্ধকারে এভাবে শহুরে সাঁজে একটি মেয়েকে এভাবে হঠাত পথে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অভি কিছুটা বিস্মিত হল। কিন্তু কাছে যেয়ে মনের কৌতূহল দূর করার সাহস তার হল না।

কেউ কবিতা আবৃত্তি করছে অভির কানে এলো। মেয়েলি কণ্ঠের আবৃত্তি যেন মুহূর্তেই তাকে মোহিত করে তুলল মনে হল যেন হৃদয়ের গহীন হতে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে কবিতার প্রতিটি লাইন থেকে।

আমার আঙিনায় তোমার পায়ের আওয়াজ শুনি
তোমার অবাধ্য পুরুষালী সুগন্ধ ফিসফিস করে ওঠে
জোনাকিরা ঠিক তখনি চমকে তাকায়
চাঁদ লুকোয় লজ্জায়
আমি কান পাতি সেই জোছনায়
তুমি আসবে আমি জানি তাই তোমার
নিঃশ্বাসের শব্দটা খুব চেনা মনে হয়
ঠিক যেন আমার শ্বাস
যে শ্বাস তুমি নিয়েছিলে।
কতো কাল পরে এলে জানো তুমি ?
লক্ষ্য কোটি বছর আমি শ্বাস নেই না
কি করে যে বেঁচে আছি !
আমি খুব একটা ভাবতে পারি না
সুগন্ধের পথ ধরে একবার যদি ফিরে আসো
আমি শ্বাস নেবো তোমার সেই সুগন্ধে
আমি স্বপ্ন দেখবো ওই চোখে
আমি হেঁটে যাবো ওই পায়ের ছাপে
এসো । ভালোবাসায় এসো , মায়ায় এসো
এসো সব ভুলে , এসো সব সুধ্রে
তুমি এলেই পৃথিবী হাসবে
জলচোখে হেসে উঠবো আমিও ।
আমাকে মুক্তি দাও এবার তবে প্রিয়
এসো তুমি আমার মনের আঙিনায়
ক্লান্ত শয্যায় । এসো ! এসো !! এসো !!


অভিও সেই আহবানে মেয়েটিকে অনুসরন করে পথ চলতে লাগল। বারবার তার কানে ধ্বনিত হতে লাগল কবিতাটি। পথ চলতে গিয়ে কয়েকদিনের চেনা পথও এই মুহূর্তে অচেনা লাগছে তার কাছে। রাজবাড়ির প্রধান গেটে দুজন দারোয়ান দাড়িয়ে ছিল বর্শা হাতে মেয়েটিকে দেখেই মাথা নত করে গেট খুলে দেয়া হল। অভিও পেছন পেছন হেটে চলছে। একটি জলসা ঘরের ভেতর প্রবেশ করে মেয়েটি ঘুরে দাঁড়াল। আমি তোমার সেই ভালোবাসার আফ্রিন আমাকে চিনতে পেরেছ রাজকুমার হিরণ ? অভি নিজেকে কিছুটা অপ্রস্তুত ভঙ্গতেই সামলে নিল। ঘরটির দেয়ালে কিছু পর পর মেঝে হতে ছাদ পর্যন্ত আয়না লাগান রয়েছে তার পাশেই ছোট ছোট টেবিলে সাজান রয়েছে মোমবাতি। কয়েকটি ঝার বাতি ঝুলছে যেন আর একটু হলেই মাথায় এসে স্পর্শ করবে সেগুলো। নীরবতা ভেঙ্গে দিয়ে মেয়েটি অশ্রু ভেজা চোখে অভির দিকে তাকিয়ে জানতে চাইল এতটা দূরত্ব কেন আজ তবে দুজনার মাঝে এত কাল পরে প্রিয়? কাছে এসো আমাকে তোমার বাহুর বন্ধনে আবদ্ধ করে নাও। আমাকে জড়িয়ে ধরে কথা দাও আর হারিয়ে যাবেনা কখনো। না হারাবনা কখনো আর কথা দিলাম। অভি মেয়েটির হাতে হাত রেখে মেঝেতে পাতা একটি মখমলে ঢাকা বিছানায় বসল। পিতলের একটি গ্লাস তুলে দিল মেয়েটি তার হাতে। মদ জাতীয় কিছু হবে তবে চুমুক দিয়েই ভুল ভাঙল তার। মদ নয় আঙ্গুরের জুস জাতীয় কিছু কিন্তু অমৃত স্বাদ সেই পানীয়র। মেয়েটি উঠে দাঁড়াল। কোমরে শাড়ির আঁচল গুঁজে নিয়ে শুরু হল তার নাচ। তবলা আর সেতার বাজছে সেই সাথে বাজছে বাঁশি আর হারমোনিয়াম। নুপুরের ছন্দে পুরো জলসা ঘর মেতে উঠেছে।

তুমি বীণা নাহি লাগে মোর জিয়া
ও মোর প্রিয় মধুবীনা নাহি লাগে মোর হিয়া
কি যতনের এই দেহ মোর
তোমারই প্রেমের কারনে
আজ নাচছে দেখ তোমার প্রিয়া
তোমাকে দেখাব বোলে আমি
সেজেছি আজ এই ফাগুনের আগুনে
ও মোর প্রিয় মধুবীনা নাহি লাগে মোর হিয়া
তুমি বীণা নাহি লাগে মোর জিয়া
আজ নাচছে দেখ তোমারই কারনে তোমার প্রিয়া


প্রেমের নেশায় অভির চোখে ফুটে উঠল যূথীর মুখশ্রী যেন আফ্রিন নয় এখানে নাচছে তার ভালোবাসার একমাত্র অহংকার যূথী। স্বর্গের সকল সুখ যেন আজ এই জলসা ঘরে এসে তার জীবনকে করে তুলেছে প্রাণময়। যৌবনের সকল পাওয়া আজ রাতেই এখানেই পেতে চাইল তার তৃষ্ণার্ত মন। তারপর কি হল সেটা আর তার মনে নেই। সকাল বেলা অভি নিজেকে একটি মন্দিরে দেবীর পায়ের কাছে শোয়া অবস্থায় ফিরে পেল। দেবীর চোখের দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট অশ্রু দেখতে পেল সে। যেখানে অবাক হওয়াটাই ছিল তার পক্ষে স্বাভাবিক বরং বুকের ভেতর চাপা কষ্ট অনুভূত হল তার যেন রক্ত ক্ষরণ চলছে যা সে ও কেবল দেবীই টের পাবে এছাড়া পৃথিবীর আর কোন মানুষ এমনকি প্রকৃতিও সেই যন্ত্রণা অনুভব করতে পারবেনা।

রাতের বেলা খুব সম্ভবত বৃষ্টি হয়েছিল। রাস্তাগুলো কাঁদায় পিচ্ছিল হয়ে রয়েছে। অভি অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে সেই পথেই পায়ে হেটে তার বাংলোতে ফিরে এলো। যূথীর কথা সে বেমালুম ভুলেই গিয়েছিল কিন্তু টেবিলে রাখা পত্রিকার পাতায় চোখ পরতেই চমকে উঠল শিরোনাম পড়ে। যে বাসটিতে করে যূথী আসছিল সেই বাসটিই গতকাল নিয়ন্ত্রন হারিয়ে খাঁদে পরে যাত্রীদের প্রানহানী ঘটিয়েছে। পত্রিকায় যে ছবি ছাপা হয়েছে সেখানে যূথীকে চিনতে পেরে চিৎকার করে কেঁদে উঠল অভি।

ঢাকায় ফেরার কিছুদিন পর অভিকে একটি মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি করান হল। চিকিৎসা চলল প্রায় একবছর। এরই মাঝে অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠল সে। তার এক প্রফেসরের কাছে সেই রাতের বিস্তারিত ঘটনা সে বর্ণনা করল। প্রফেসর জহরলাল বিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ব গবেষণা বীদ। সেই সাথে আধ্মাতিক বিষয়ে রয়েছে তার অগাধ জ্ঞান। অভির কাছে সব শুনে আর এক মুহূর্ত দেরী করতে চাইলেন না তিনি। একটি কালো রঙের জীপ গাড়িতে করে তারা রওনা হলেন সেই রাজবাড়ির পথে।

অভি যখন মেন্টাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিল তখন তার সেবায় যে নার্সটি নিবেদিত ছিলেন তার চেহারা কেবলই মনে পরছে তার। যেন অবিকল সেই রাতের মেয়েটি আফ্রিন। গাড়িতে বসে থেকে হঠাত কেন এমনটা মনে হল তার সেই হিসেব কিছুতেই মেলাতে পারছেনা সে। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় সুস্থ হয়ে ওঠার কিছু দিন আগেও তার এমন কিছুই মনে হয়নি। অথচ তখন সে প্রায় সব স্মৃতি ফিরে পেয়েছে। সবকিছু আবার স্বাভাবিক ভাবেই অনুভব করতে পারছিল। কিন্তু কখনো একবার তার মনে হয়নি যে নার্সটির সাথে আফ্রিনের মিল রয়েছে। তাহলে এখন কেন এসব হঠাৎ করেই মনে আসছে তার ? প্রফেসর জহরলাল এর সাথে এ ব্যাপারে আলাপ করবে কিনা ভাবল কিছুক্ষন কিন্তু আবার কি মনে করে যেন চুপ করে বসে রইল গাড়িতে। গাড়ির সিডি প্লেয়ারে একটি গান বাজছে।

তুমি বীণা নাহি লাগে মোর জিয়া
ও মোর প্রিয় মধুবীনা নাহি লাগে মোর হিয়া
কি যতনের এই দেহ মোর
তোমারই প্রেমের কারনে
আজ নাচছে দেখ তোমার প্রিয়া
তোমাকে দেখাব বোলে আমি
সেজেছি আজ এই ফাগুনের আগুনে
ও মোর প্রিয় মধুবীনা নাহি লাগে মোর হিয়া
তুমি বীণা নাহি লাগে মোর জিয়া
আজ নাচছে দেখ তোমারই কারনে তোমার প্রিয়া

অভি চিৎকার করে বোলে উঠল স্যার এই গান আপনি কোথায় পেলেন ? প্রফেসর হাসছেন অভির এমন ছেলে মানুষী দেখে। তিনি তার দিকে একটি সিগারেট এগিয়ে দিয়ে বললেন নাও সিগারেট ধরাও আর শান্ত হয়ে বস। এভাবে ছটফট করার কিছু নেই। তুমি ঘামছ। জানালার গ্লাস উঠিয়ে দাও আমি ড্রাইভারকে বলছি এসি ছেরে দেয়ার জন্য। পকেট থেকে রুমাল বের করে তার দিকে এগিয়ে দিয়ে তিনি বললেন নাও ঘাম মুছে নাও। তুমি ভীষণ ঘেমে গেছো।

তাদের পৌছাতে অনেক রাত হয়ে গেলো। তাই পরদিন সকালে রাজবাড়ি যাবে বোলে সিধ্যান্ত নিয়ে সেই বাংলোতে উঠল তারা। প্রফেসর জানালেন যে রহস্যের বিস্তারিত যতদিন উদ্ধার না করবেন ততদিন এখানেই থাকবেন তারা।

বাবুর্চি টেবিলে খাবার পরিবেষণ করছে আর কাঁদছে। প্রফেসর জিজ্ঞাস করলেন কি ব্যাপার তুমি কাঁদছ কেন ?
কি আর কমু স্যার আমার একমাত্র মাইয়াটা আইজ দুইদিন হইল মইরা গেছে। কিন্তু এলাকায় কারু কুন হেই বিষয়ে মাথা ব্যথা নাইকা।
কেন কিভাবে মারা গেল তোমার মেয়ে ?
স্যার আমার মাইয়াটা আছিল ভীষণ ধার্মিক গোছের মাইয়া। রোজ পূজা দিত সকালে দেবী মায়ের চরণে। হেই দিন সকালেও গেছিল পূজা দিতে। কিন্তু আর ফেরে নাই। হেসে তারে পাওয়া গেল রাজবাড়ির জলসা ঘরে মরা অবস্থায়। মুখ দিয়া ফেনা বাইর হইতাছিল। এলাকার সবাই কইল মাইয়া নাকি পূজা দিয়া রাজবাড়িতে ঢুকছিল ঘুইরা দেখতে। অপয়া জায়গা কারু যাওয়া আসা নাই ওইখানে। সাপ থাকতে পারে সাপে বিষ দিছে হের কারনে মাইয়ার মরার পর মুখে ফেনা ছিল। কিন্তু স্যার আমি জানি আমার মাইয়া সাপের বিষে মরে নাই। ওরে মাতবরের পোলায় মারছে। গত কয়েক মাস ধইরাই আমার মাইয়ার পিছনে লাগছিল মাতবরের পোলায়। কিন্তু আমার মাইয়া রাজী হয়নাই উল্টা একদিন গালে চর দিছিল ওই পোলার গালে।
তুমি এলাকায় সবাইকে বলনাই এ ঘটনা ?
হুম কইছিলাম কিন্তু হগলতে আমারে মাইয়ার মরার শোকে পাগল কইয়া সান্তনা দিল।
কিন্তু তুমি কি করে নিশ্চিত করে বলছ যে ওই ছেলেই তোমার মেয়েকে মেরেছে ? তুমি কি তোমার মেয়ের শরীরের কোথাও আঘাতের চিহ্ন পেয়েছিলে?
যে না স্যার।
তাহলে কিভাবে বলছ ? কোথাও সাপের কামড় দেয়ার চিহ্ন খুঁজে পেয়েছিলে ?
যে না স্যার ?
অদ্ভুত ব্যাপার শরীরে কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওনি, সাপের কামরের চিহ্ন পাওনি । তাহলে তোমার মেয়ে মারা গেল কিভাবে ? নিশ্চয় তাহলে অন্য কোন ব্যাপার কিছু একটা ঘটেছিল !
স্যার আমি নিশ্চিত আমার মাইয়ারে সাপ না হইলেও বিষ খাওয়াইয়া মারা হইছে নাইলে মরার সময় ওর মুখে ফেনা ছিল কেন আপনেরাই কন স্যার ?
হুম সেটাও একটা ব্যাপার !

এবার অভি বাবুর্চিকে চলে যেতে বোলে প্রফেসরের দিকে তাকাল। টেবিল থেকে উঠে হাত ধুয়ে একটি সিগারেট ধরাল। খুব গম্ভীর মুখে সে বলল স্যার খুব অবাক হলাম আমি যখন মন্দিরে নিজেকে দেবীর পায়ের কাছে পরে থাকতে পেলাম সকালে তখন ঠিক দেবীর মুখ থেকে আমি এমন ফেনা বের হতে দেখেছিলাম আর চোখ হতে পানি বের হতে দেখেছিলাম। মনে হয়েছিল দেবী যেন কাঁদছিল। এবার প্রফেসর থালাতেই হাত ধুয়ে উঠে একটি সিগারেট ধরালেন। তাকে মোটেও চিন্তিত মনে হলনা। তিনি শুধু বললেন চল শুয়ে পরা যাক। সকালে উঠে ওই মন্দির আর রাজবাড়িতে যেতে হবে।

বিছানায় ঘুমিয়ে আছে দুজন। নুপুরের শব্দে অভির ঘুম ভেঙ্গে গেল। তার কানে এলো সেই কবিতাটি। ঠিক যেন সেভাবেই তাকে আফ্রিন ডাকছে এসো ! এসো !! এসো !!! সেই মায়াকান্না জড়ানো সেই সে আহবান। অভি বিছানা ছেরে ঘর হতে বাইরে বেরিয়ে এলো। দূরে মেয়েটিকে হেটে যেতে দেখল সে। আজো তার পরনে রয়েছে কালো শাড়ি ঠিক সেই রাতের মতই সেজেছে সে। তবে সেই রাতের মত আজ আর জলসা ঘর নয় দেবীর মন্দিরের সিঁড়ি দিয়ে উঠে গিয়ে দেবীর সামনে দাড়িয়ে থেমে গেল মেয়েটি। পেছন ফিরে অভিকে উঠে আসার আহবান জানাল হাত বারিয়ে। অভিও মন্ত্র মুগ্ধের মত এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল আফ্রিনের পাশে।

রাজকুমার তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে যে আজকের রাতের মত এমনই কোন এক ভরা পূর্ণিমার রাতে এই মন্দিরে আমাকে নিয়ে এসে দেবী মাকে সাক্ষী রেখে আগুনের চারদিকে সাতপাক দিয়ে আমার কপালে সিঁদুর পরিয়ে দিবে। এই দেখ আমি তোমার জন্য আজ আগুনের আয়োজন করেছি। তবে আমাকে আজ রাতে তোমার চরণে স্থান করে দাও। আমি এই একটি রাতের জন্য তোমারই প্রতীক্ষায় কাটিয়ে দিয়েছি অনন্ত কাল। দোহাই তোমার আজ আর আমাকে ফেলে সেদিনের মত তুমি চলে যেও না। জানো যেদিন তুমি তোমার বাবার কথা মতন আমাকে ছেরে চলে গিয়েছিলে সেই রাতে আমি এখানে এই দেবীর চরণে বসে থেকে সারারাত ধরে শুধু কেঁদেছিলাম। আজ তবে প্রিয় আমাকে তুমি মুক্তি দাও। আমি মুক্তি পেতে চাই তোমার চরণে মাথা রেখে।

সকাল বেলা অভিকে বিছানায় না দেখে প্রফেসর বিচলিত হয়ে উঠলেন। তিনি ছুটে চললেন মন্দিরের দিকে। দেবীর পায়ের কাছে পরে থাকতে দেখলেন অভিকে। মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে অভির। হাতের শিরা পরীক্ষা করলেন তিনি। না অভি আর বেঁচে নেই। পৃথিবীর সব প্রেমের মায়াজাল ছিন্ন করে দিয়ে অভি চলে গেছে চিরতরে তার অসীম প্রেমের পৃথিবীতে যেখানে প্রেমের মায়াজালে জড়িয়ে কেউ আর ফিরতে পারেনা। অভিও ফিরবেনা আর কখনো কোন দিন সেই প্রেমের বন্ধন হতে ছুটি নিয়ে। দেবীর চোখে আজ অশ্রু নেই, মুখেও যেন তৃপ্তির হাসি দেখতে পেলেন প্রফেসর জহরলাল। অভিকে সেখানেরই এক শ্মশানে পড়ানো হল। ফেরার পথে বাবুর্চির কাছে তার মেয়ের একটি ছবি চাইলেন। ছবিটি দেখে মনে হল রাজবাড়ির অন্দর মহলের দেয়ালে জীর্ণশীর্ণ হয়ে ঝুলে থাকা একটি ছবির সাথে মেয়েটির মিল রয়েছে। যতটুকু ইতিহাস আবিষ্কার করতে পেরেছেন তিনি যে এই রাজবাড়ির পুত্রবধূর ছবি ঝুলে রয়েছে দেয়ালটিতে। আর আফ্রিন ছিল সেই সময়ের একজন বিখ্যাত নর্তকী। প্রফেসর তার কালো জীপ গাড়িতে করে ফিরছেন। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট পুরো অর্ধেক পরিমান ছাই এসে রয়েছে কিন্তু তিনি টানছেন না। ধোঁয়ায় আচ্ছাদিত হয়ে তিনি চোখ বন্ধ করে খুব মন দিয়ে সিডি প্লেয়ারে বাজা একটি কবিতা শুনছেন। যদিও এসি ছারাই রয়েছে তবুও তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম এসে জমা হচ্ছে।

আমার আঙিনায় তোমার পায়ের আওয়াজ শুনি
তোমার অবাধ্য পুরুষালী সুগন্ধ ফিসফিস করে ওঠে
জোনাকিরা ঠিক তখনি চমকে তাকায়
চাঁদ লুকোয় লজ্জায়
আমি কান পাতি সেই জোছনায়
তুমি আসবে আমি জানি তাই তোমার
নিঃশ্বাসের শব্দটা খুব চেনা মনে হয়
ঠিক যেন আমার শ্বাস
যে শ্বাস তুমি নিয়েছিলে।
কতো কাল পরে এলে জানো তুমি ?
লক্ষ্য কোটি বছর আমি শ্বাস নেই না
কি করে যে বেঁচে আছি !
আমি খুব একটা ভাবতে পারি না
সুগন্ধের পথ ধরে একবার যদি ফিরে আসো
আমি শ্বাস নেবো তোমার সেই সুগন্ধে
আমি স্বপ্ন দেখবো ওই চোখে
আমি হেঁটে যাবো ওই পায়ের ছাপে
এসো । ভালোবাসায় এসো , মায়ায় এসো
এসো সব ভুলে , এসো সব সুধ্রে
তুমি এলেই পৃথিবী হাসবে
জলচোখে হেসে উঠবো আমিও ।
আমাকে মুক্তি দাও এবার তবে প্রিয়
এসো তুমি আমার মনের আঙিনায়
ক্লান্ত শয্যায় । এসো ! এসো !! এসো !!




গল্পে ব্যবহৃত কবিতাটি এখান হতে নেয়া হয়েছে আংশিক পরিবর্তন করে

উৎসর্গঃ হ্যাঁ প্রেতস্মিনী তোমাকেই !!!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:৫৮
৪৫টি মন্তব্য ৪৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×