somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কান্ডারি অথর্ব
আমি আঁধারে তামাশায় ঘেরা জীবন দেখেছি, আমার বুকের ভেতর শূণ্যতা থেকে শূণ্যরা এসে বাসা বেঁধেছে, আমি খুঁজেছি তোমাকে সেই আঁধারে আমার মনের যত রঙ্গলীলা; আজ সাঙ্গ হতেছে এই ভবের বাজারে।

রক্তানুভূতি

০১ লা মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





বাঁশের মাচাটায় পা রাখতেই মচ মচ করে উঠল। অনেক দিনের পুরান জীর্ণ এই মাচাটিই গুহার ভেতরে প্রবেশ করার একমাত্র সিড়ি। শায়লাকে নিয়ে উঠার পরই মাচাটা কড়াত করে ভেঙে পরল। মাচাটা ভেঙে যাওয়াতে পলাশের মনে খুব আনন্দ হলো। হাসতে হাসতে সে ঘুটঘুটে অন্ধকার গুহার ভেতর সিগারেট ধরাল।

কি আশ্চর্য মানুষ তুমি বলত? মাচাটা ভেঙে গেল আর তুমি দিব্যি হাসছ! তুমি না হয় ছেলে মানুষ, লাফ দিয়ে নেমে যেতে পারবে কিন্তু আমি কিভাবে নামব একবার ভেবেছ? তার উপর শাড়ি পরে রয়েছি। শাড়ি পরে এভাবে উঁচু থেকে লাফ দিয়ে নিচে নামা আমার পক্ষে অসম্ভব!

শায়লার এমন উদ্বিগ্নতা দেখে পলাশের হাসি আরও বেড়ে যায়। অন্ধকারে জলন্ত সিগারেটের ক্ষীণ আগুন আর ধোঁয়ায় পলাশকে দেখে মনে হলো যেন গুহার ভেতর কোন অশুর হাসছে। এই হাসির সাথে শায়লা পরিচিত নয়। যে মানুষটিকে এতদিন ধরে সে চেনে, ভালোবেসে আসছে; আজ এই অন্ধকার গুহায় সম্পূর্ণ অচেনা কোন অশরীরী মনে হলো পলাশকে তার কাছে।

টর্চের আলো পরতেই গুহার দেয়ালে খোঁদাই করে আঁকা চিত্রকর্মগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠল। আদিম যুগের মানুষের এমন শৈল্পিক নৈপুণ্যতা দেখে বেশ অবাক হতে হলো। চিত্রকর্মগুলো দেখতে দেখতে হঠাৎ দেয়ালে আঁকা একটি নারী মূর্তি দিকে চোখ পরল। একটি গোলাকার বেদীর উপর সেই নারী মূর্তিটি শুয়ে আছে আর তাকে গলায় ছুরি চালিয়ে জবাই করছে একটি পুরুষ মূর্তি। হঠাৎ কিছু বুঝে উঠার আগেই পেছন থেকে শায়লার ঘাড়ে ছুরি দিয়ে আঘাত করল পলাশ। শায়লা চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পরল। মুহূর্তের মধ্যে রক্তে ভেসে গেল পুরো গুহার মেঝে।

গল্পের এই পর্যন্ত লেখার পর প্যাকেটের শেষ সিগারেটটা ধরালাম। এই মুহূর্তে পুরো গল্পটা লেখা শেষ করা সম্ভব নয়। কিছুক্ষণ বাইরে থেকে হাটাহাটি করে আসা যাক। তাছাড়া রাতের জন্য সিগারেট নেই। মনার দোকান থেকে সিগারেট কিনে, সাথে এক কাপ চা পান করে এসে বাকি গল্পটা লেখা শেষ করা যাবে।

রাত এগারোটার পরে মনার ছোট এই টং দোকানটিতে সাধারনত আমি ছাড়া আর কাউকে তেমন চা পান করতে দেখা যায় না। দোকানে কোন কাস্টমার না থাকলেও গভীর রাত পর্যন্ত দোকান খোলা রাখে মনা। হয়ত আমার মত নিশাচর এই মানুষটির প্রতি অত্যাধিক পরিমান ভালোবাসা আছে বলেই তার এই নিরন্তর চা পরিবেশনা মূলক সেবা প্রদানের ব্যবস্থা। কিন্তু আজ এখন রাত প্রায় বারোটা বেজে গেছে কিন্তু এখনও দোকানে এত লোক বসে থাকতে দেখে বেশ কৌতূহল হলো। কিন্তু লোকগুলোকে দেখে সাধারন কোন মানুষ বলে মনে হচ্ছেনা। প্রত্যেকের মুখের আকৃতি শিয়ালের মত কিন্তু শরীরের বাকি অংশ মানুষের। দোকানে ঝুলানো ব্যানার দেখে সেই কৌতূহল ভয়ে পরিনত হতে বেশি সময় নিলনা যখন ব্যানারের লেখা পড়লাম। লেখা রয়েছে এখানে সুলভ মূল্যে রক্ত পাওয়া যায়। আমি মনাকে কিছু বলার আগেই সে আমাকে এক কাপ রক্ত এগিয়ে দিল।

লন মামা রক্ত পান করেন। টাকা দেওন লাগবনা। আপনার লইগ্যা একদম ফ্রি। দারুণ মজা পাইবেন; একদম মানুষের খাঁটি রক্ত। কোন ভেজাল নাই। আপনেত জানেনই মামা এই মনা কখনও ভেজালের কারবার করেনা।

সবাইকে দেখছি বেশ তৃপ্তি নিয়েই রক্ত পান করছে। আমিও আর কোন রকম কথা না বাড়িয়ে এক নিঃশ্বাসে এক কাপ রক্ত পান করে একটা সিগারেট ধরালাম। গল্পটি ফিরে গিয়ে লেখা শেষ করার কোন ইচ্ছেই এখন আর করছেনা। সিগারেট ধরিয়ে প্রতিদিনের মত হাটতে শুরু করলাম। রাস্তায় ডাস্টবিনের পাশে কালো রঙের তিনটি কুকুর বসে ছিল। কিন্তু অন্যান্য রাতের মত কাছে এসে চিৎকার চ্যাঁচামেচি না করে বরং হঠাৎ আমাকে দেখা মাত্রই আজ কুকুর তিনটির যেন কি হলো! সবগুলো ভয়ে দৌড়ে পালাল। আমি ফিরে এলাম মনার দোকানে।

আশ্চর্য এখনও ভিড় লেগেই আছে ! রক্তের যে এত চাহিদা থাকতে পারে এতদিন বুঝিনাই। আগে জানলে চাকরী ছেড়ে দিয়ে রক্তের ব্যবসা করলেই পারতাম। বেশ লাভজনক ব্যবসা বলেই মনে হচ্ছে। আমি নিজেও আরও এক কাপ রক্ত পান করে আর একটা সিগারেট ধরালাম। নাহ! সত্যি অমৃত এক সুধা এই রক্ত। যতই সময় যাচ্ছে মানুষের ভিড় ততই বেড়ে চলেছে। বসে বসে বেশ কয়েক কাপ রক্ত পান করে ফেললাম এরই মাঝে। মনার উচ্ছ্বাস দেখার মত। সারাজীবন চা বেঁচে যত না রোজগার করেছে আজ এই এক রাতেই রক্ত বেঁচে ব্যবসার রমরমা অবস্থা তার। ভাবছি আজ থেকে আর চাকরীই করব না। মনার সাথে বসে রক্ত বিক্রি করব। চাকরী না করে বরং অল্প কিছু পূঁজি খাটালে মাস দুইয়েকের মধ্যেই আমি বড় লোক হয়ে যেতে পারব। তাতে ক্ষতিত নেই।

যেমন ভাবনা তেমন কর্ম। অবশেষে চাকরীর কপালে লাথি দিয়ে মনার দোকানের পার্টনার হয়ে গেলাম। মনাও বেজায় খুশি হলো আমাকে পার্টনার হিসেবে পেয়ে। তার একার পক্ষে আসলে দোকান চালানো সম্ভব হয়ে উঠছিলনা, সাথে নগদ কিছু টাকা পেয়ে দোকানটাও বড় করে দেয়া হয়ে গেল। আমার কাজ হলো প্রতিদিন মানুষের খাঁটি রক্ত জোগাড় করা আর মনার কাজ হলো বসে বসে কাপে করে রক্ত পরিবেশন করান। দিন দিন মানুষের রক্তের চাহিদা বেড়েই চলেছে। চাহিদা অনুযায়ী পার্সেল সিস্টেম চালু করলাম। আরও একটি ব্যানার ঝুলিয়ে দিলাম। তাতে লিখে দিলাম এখন হতে সুলভ মূল্যে রক্ত লিটার বোতলেও পাওয়া যাবে।

রক্তের চাহিদা যতই বাড়ছে সেই সাথে বাড়ছে রক্ত জোগাড় করতে যেয়ে মৃত মানুষের পরিমান। শহর থেকে কয়েক কিলো দূরে একটা আদি গুহা আছে। এতলাশ গুম করার জন্য খুবই ভাল একটা জায়গা পাওয়া গেল বটে কিন্তু ঝামেলা হলো পুলিশ নিয়ে। অবশ্য টাকার কাছে পুলিশ যে কোন ঝামেলা নয়, তার ব্যবস্থা খুব ভাল ভাবেই করা গেল।

ক্রমেই টাকার নেশায় পেয়ে বসল আমাকে। যে টাকা আমি একাই এখন রোজগার করতে পারি সেখানে মনার মত পার্টনার রাখার কি দরকার ? তাই পথের কাঁটাটা সরিয়ে দিলাম। একদিন পার্সেল করে দিলাম মনারই রক্ত। এবার পুরো ব্যবসার একচ্ছত্র আধিপত্য শুধু আমার !

মামা! ও মামা ! কি ভাবতাছেন ? লন চা লন। চাত ঠাণ্ডা হইয়া যাইতাছে। মনার ডাকে চৈতন্য ফিরে পেলাম। চায়ের কাপের ভেতর পিঁপড়া ভাসছে। মনা পিঁপড়া সহই চা বানিয়ে ফেলেছে। যে ডিব্বায় সে চিনি রেখেছে সেখানে অসংখ্য পিঁপড়া ঘোরাঘুরি করছে।

মনা চিনি কি ঢেকে রাখা যায় না ? তাহলেত এভাবে চিনিতে আর পিঁপড়া ধরেনা, তাইনা !

মামা কোন কিছুই ঢাইকা রাখনের লইগ্যা দুনিয়াতে পয়দা হয়নাই। সবাইরি সবকিছুর অধিকার আছে। চিনির অধিকার আছে যেমন, ঠিক তেমন অধিকার আছে পিঁপড়ারও। এখন পিঁপড়ায় যদি চিনি খাইতে পছন্দ করে তাইলে এগুলারে বাঁধা দেওয়া ঠিক না। যার যার কর্মের ফল সে সে ভোগ করবই। এইখানে বাঁধা দেওয়নের কিছু নাই। পিঁপড়ায় চিনি খাইব আবার চিনির লোভে যেইসব পিঁপড়া ঘোরাঘুরি করতাছে ওইগুলা মরব গরম চায়ের কাপে এইটাই জগতের নিয়ম। অহন মরা পিঁপড়া ওয়ালা চা আপনে খাইবেন, নাকি খাইবেন না সেইটা আপনের ব্যাপার। মামা, মামীর কি আর কোন খোঁজ খবর পাইছেন? কত দিন হইয়া গেল অহনও পুলিশ কিছুই করতে পারলনা, কি আশ্চর্য!

না, জানিনা ! মনার প্রশ্নের উত্তরটা ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গেলাম। এক প্যাকেট সিগারেট দে।

মামা আর এক কাপ চা দিমু ?

না।

মনার দোকান থেকে সিগারেট ধরিয়ে চলে এলাম। সিগারেট টানছি আর হাটছি। এতক্ষন রাস্তায় ডাস্টবিনের পাশে কালো রঙের তিনটি কুকুর বসে ছিল। কিন্তু আমাকে দেখা মাত্রই কুকুর তিনটির যেন কি হলো! সবগুলো লেজ নাড়িয়ে দৌড়ে পালাল। আজকে মিথিলার সাথে একবার দেখা করতে যেতে হবে। অমন সুন্দরী একটি মেয়েকে বিয়ে না করলে আর কিছুতেই মন ভরছেনা।

তোমাতে, এখন আমার ভীষণ অরুচি;
নাভিতে ফোটেনা তোমার পদ্মরাগ বেগুনী,
নিভু নিভু নিয়নে শ্যাওলা জাগা জল নূপুর,
শিশুদের মত করে কাঁদে;
শব্দহীন চোখের হায়ারোগ্লিফিকে।
সহস্রাব্দের প্রিয়তমারা বড্ড বেশি আধুনিক,
এক মুঠো ভাতের জন্য নয়; পাথরে খোচিত
প্যাগান মূর্তিদের মত নগ্ন শারীরিক,
ওরা পবিত্রতা খোঁজে শরীরের অব্যয়ে;
অন্তিম ক্রুসেডের অতিপ্রাকৃত সাধকে।


উৎসর্গঃ সুপ্রিয় ব্লগার এহসান সাবির



সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:৪২
৩৯টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×