somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কান্ডারি অথর্ব
আমি আঁধারে তামাশায় ঘেরা জীবন দেখেছি, আমার বুকের ভেতর শূণ্যতা থেকে শূণ্যরা এসে বাসা বেঁধেছে, আমি খুঁজেছি তোমাকে সেই আঁধারে আমার মনের যত রঙ্গলীলা; আজ সাঙ্গ হতেছে এই ভবের বাজারে।

স্বপ্নের নায়িকা মৌসুমী - তুমি যে কখন এসে মন চুরি করেছ

০৭ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ফিরে এসো এই অন্তরে...তুলনাহীনা বান্ধবী, যেওনাকো তুমি ঐ দূরে; ব্যথা জাগে এই মন জুড়ে, হতে চাই গিয়ে তোমার গীতি কবি। মৌসুমী কারে ভালোবাস তুমি, মৌসুমী বল কারে খোঁজ তুমি, মৌসুমী আছি একা এই আমি, ভূলে অভিমান হও সঙ্গীনি। তুমি আছ প্রান স্পন্দনে, তুমি আছ হাসি ক্রন্দনে, অপরাজিতা নন্দিনী, চেয়ে দেখ তুমি ঐ চোখে; তুমি আছ সুখ আর দুঃখে, এঁকে যাই শুধু তোমার মুখছবি... কাউসার আহমেদ চৌধুরীর লেখা এই গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন মাকসুদ। জানিনা এখানে কোন মৌসুমীকে এত ব্যাকুলতার সাথে স্মরন করা হয়েছিল কিন্তু আমার হৃদয়ে সেই গান আজও হাহাকারের সুরে প্রতিদ্ধনিত হয়। অভিনেত্রী মৌসুমীকে নিয়ে ভক্তদের মধ্যে উৎসাহের শেষ নেই। অনেকে তাঁকে নিয়ে দিবাস্বপ্ন দেখেন। কেউ আবার ভাবেন, ইস! যদি একবার সত্যিই মৌসুমীকে সামনে থেকে দেখা যেত। আরো কত জল্পনা-কল্পনা! তেমনি এক অন্ধ ভক্ত আমি, প্রিয় নায়িকাকে একটু ছুঁয়ে দেখার স্বপ্নে আজও বিভোর ঘোরে আচ্ছন্ন।



বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস ও ঐতিহ্য খুবই সমৃদ্ধ। মাঝে নানা রকম চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে নতুন প্রজন্মের চলচ্চিত্র নির্মাতা, কলাকুশলী অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের দর্শকের মাঝে মৌসুমী অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন অভিনেত্রী। আরিফা পারভিন জামান মৌসুমী যিনি চলচ্চিত্র জগতে মৌসুমী নামেই পরিচিত। খুলনায় ১১ নভেম্বর ১৯৭৩ সালে জন্ম গ্রহন করেন। মৌসুমীর বাবার নাম নাজমুজ্জামান মনি এবং মায়ের নাম শামীমা আখতার জামান। মৌসুমী ১৯৯৬ সালের ২ আগষ্ট তারিখে জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ওমর সানী এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হন। দাম্পত্য জীবনে তাদের দুটি সন্তান ছেলে ফারদিন এহসান স্বাধীন এবং মেয়ে ফাইজা রয়েছে।











মৌসুমী ছোটবেলা থেকেই একজন অভিনেত্রী এবং গায়িকা হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর তিনি আনন্দ বিচিত্রা ফটো বিউটি কনটেস্ট প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন, যার উপর ভিত্তি করে তিনি ১৯৯০ সালে টেলিভিশনের বাণিজ্যিকধারার বিভিন্ন অনুষ্ঠান নিয়ে হাজির হন। ১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহানের কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবি দিয়ে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করেন মৌসুমী। প্রথম ছবি দিয়েই দর্শকের নজর কাড়েন তিনি। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রায় দুই শতাধিক ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত বেশিরভাগ ছবিই ব্যবসা সফল হয়। ২০০৩ সালে কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি এবং ২০০৬ সালে মেহের নিগার চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন মৌসুমী। এছাড়াও মৌসুমী একজন ফ্যাশান ডিজাইনার। বসুন্ধরা সিটিতে লিভাইস নামে তার একটি পোশাকের দোকান আছে। তিনি একটি অডিও এ্যালবামও প্রকাশ করেন। তিনি কপোতাক্ষ চলচ্চিত্র নামে একটি প্রোডাকশন হাউস পরিচালনা করছেন। মৌসুমী নিজের সেবামূলক প্রতিষ্ঠান মৌসুমী ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন দেখাশুনা করে থাকেন। বাংলাদেশের শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জনমত ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সম্প্রতি তিনি ও বাংলাদেশের প্রথিতযশা জাদুকর জুয়েল আইচ ইউনিসেফ অ্যাডভোকেটের দায়িত্ব পান।



দেশের বৃহত্তম প্লাস্টিক হাউজহোল্ড, কাস্ট আয়রন, পিভিসি, ইলেকট্রনিক্স ও ফার্নিচার সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান আরএফএল এর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়েছেন ঢালিউডের এই অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী। মৌসুমী জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন মেখলা আকাশ (২০০২) চলচ্চিত্রের জন্য।



চলচ্চিত্রের তালিকা

১৯৯৩ কেয়ামত থেকে কেয়ামত সোহানুর রহমান সোহান সালমান শাহ
২০০৯ সাহেব নামের গোলাম রাজু চৌধুরী শাকিব খান
২০১১ কুসুম কুসুম প্রেম মুশফিকুর রহমান গুলজার রিয়াজ, ফেরদৌস
২০১১ দেবদাস চাষী নজরুল ইসলাম শাকিব খান



এছাড়াও তার অভিনীত আরও কিছু চলচ্চিত্র হল

মৌসুমী (১৯৯৩), দোলা (১৯৯৪), আত্মঅহংকার (১৯৯৪), স্নেহ (১৯৯৪), প্রথম প্রেম (১৯৯৪), দেন মহর (১৯৯৪), অন্তরে অন্তরে (১৯৯৪), বিদ্রোহী বধু (১৯৯৫), মুক্তির সংগ্রাম (১৯৯৫), হারান প্রেম (১৯৯৫), ভাংচুর (১৯৯৫), সজন (১৯৯৫), শেষ খেলা (১৯৯৫), আত্মত্যাগ (১৯৯৫), বিশ্ব প্রেমিক (১৯৯৫), গরীবের রানী (১৯৯৬), প্রিয় তুমি (১৯৯৬), রাক্ষস (১৯৯৬), সুখের স্বর্গ (১৯৯৬), আদরের সন্তান (১৯৯৬), সুখের ঘরে দুখের আগুন ( ১৯৯৬), লুট তরাজ (১৯৯৬), আম্মাজান (১৯৯৬), শান্তি চাই (১৯৯৭), অন্ধ ভালবাসা (১৯৯৭), মিথ্যা অহংকার (১৯৯৭), ঘাত প্রতিঘাত (১৯৯৭), সংসারের সুখ দুঃখ (১৯৯৭), প্রিয় শত্রু (১৯৯৭), লাট সাহেবের মেয়ে (১৯৯৭), লজ্জা (১৯৯৭), তুমি সুন্দর (১৯৯৭), বাঘের বাচ্চা (১৯৯৭), রূপসী রাজকন্যা (১৯৯৮), কথা দাও (১৯৯৮), ভণ্ড বাবা (১৯৯৮), বিপদজনক (২০০১), কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি (২০০৩), মোল্লা বাড়ির বউ (২০০৫), গোলাপী এখন বিলাতে (২০০৬), একজন সঙ্গে ছিল (২০০৭), তুই যদি আমার হইতি রে (২০০৮)



সেন্টমার্টিন দ্বীপের ছেঁড়া দ্বীপে একটি পাথর আছে যার নাম নাকি মৌসুমী পাথর। পাথরটির বিশেষত্ব হলো এই যে, মৌসুমী এতে বসে অন্তরে অন্তরে ছবির এখানে দুজনে নিরুজনে গানটির শ্যুটিং করেছিলেন। সেই থেকে পাথরটির নামই হয়ে গেছে মৌসুমী পাথর।



বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালজয়ী গল্প মাল্যদান অবলম্বনে নির্মিত একটি টেলিফিল্মে অভিনয় করছেন মৌসুমী। ছোট পর্দার জন্য নির্মিত মাল্যদানের চিত্রনাট্য, সংলাপ ও পরিচালনা করেছেন ঢালিউডের খ্যাতিমান পরিচালক কাজী হায়াত। এখানে মৌসুমীকে কুড়ানি চরিত্রে দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে মৌসুমী বলেন, "অভিনয় করছি অনেক বছর, রবীন্দ্র নায়িকা হয়ে অভিনয় করার ইচ্ছাটা দীর্ঘদিন পর পূরণ হয়েছে। মাল্যদান গল্পটি আমার পড়া আছে। গল্পের প্রধান চরিত্রই কুড়ানি।"



ভুল খ্যাত পরিচালক রাজু আহমেদের পরিচালনায় উপমা চলচ্চিত্র দিয়ে প্রথমবারের মতো টালিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা জিৎ গাঙ্গুলী জুটিবদ্ধ হয়েছেন চিত্রনায়িকা মৌসুমীর বিপরীতে। এতে আরেক নায়ক ওমর সানি। মৌসুমী অভিনয় করেছেন উপমার নাম ভূমিকায়। প্রিয়দর্শিনী চিত্রনায়িকা মৌসুমী এর আগে মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে কাজ করেছেন আমজাদ হোসেন পরিচালিত গোলাপী এখন বিলাতে চলচ্চিত্রে। তার আগে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত যৌথ প্রযোজনার স্বামী ছিনতাই এ কাজ করেছেন মুম্বাইয়ের শরদ কাপুরের সঙ্গে।



সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে নাটক টেলিছবিতেও অভিনয় করেছেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী। মৌসুমী অভিনীত কিছু কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে, ইশতিয়াক আহমেদ রুমেলের রচনা ও পরিচালনায় আমি কিছু বলতে চাই, পার্থ সরকারের আইসক্রিম ও অনুভূতির গল্প, আশুতোষ সুজনের আমি নায়কের বন্ধু, মোস্তফা কামাল রাজের অর্ডার, এসএ হক অলিকের রোদেলার গল্প, মুন্নার কলকাঠি, জুয়েল রানার ওপারে অসীম আকাশ, ফারিয়া হোসেনের হয়তোবা আছে... তবু নেই, আবদুল রহমানের শূন্য হৃদয়, ইশতিয়াক আহমেদ রুমেলের আমি কিছু বলতে চাই ইত্যাদি।







চলচ্চিত্র নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত কেয়ামত থেকে কেয়ামত চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিষেক ঘটে বাংলা চলচ্চিত্রের দুই সুপারস্টার। সালমান শাহ এবং মৌসুমীর। এবং একই চলচ্চিত্রেই প্লেব্যাকের মাধ্যমে অভিষেক ঘটেছিল আরেক তরুণ শিল্পী আগুনের। এর মধ্যে সালমান শাহ মারা গেলেও মৌসুমী এবং আগুন তাদের যার যার অবস্থানে উজ্জ্বল। এর মধ্যে আগুন গান ছাড়াও অভিনয়েও দেখা যায় মাঝে মধ্যে। মৌসুমী এবং আগুন এতদিন ছোট পর্দায় বিভিন্ন টিভি নাটক এবং টেলিফিল্মে অভিনয় করলেও এই প্রথম তারা একসাথে কাজ করেছেন হলুদ বাতির গল্প নামের একটি একক নাটকে। এই নাটকে কাজ করতে গিয়ে সালমানকে খুব মিস করছিলেন মৌসুমী। এক সময় মৌসুমী এবং আগুন অতীত স্মৃতিচারণায় কাতর হয়ে পড়েন। সালমানের প্রতি তাঁদের এই ভালোবাসা দেখে নাটকটির পরিচালক সুমন ধর শেষ পর্যন্ত নাটকটিকে সালমান শাহর নামে উৎসর্গ করেছেন।



অন্তরে অন্তরে ছবির পর যখন সালমান শাহ-মৌসুমী ঘোষণা দিলেন, যে তাঁরা আর একে অপরের সাথে জুটি বেঁধে কোন ছবি করবেন না ঠিক তখনই অভিজ্ঞ পরিচালক দিলিপ সোম ১৯৯৪ সালে দোলা ছবির মাধ্যমে মৌসুমীর সাথে জুটি তৈরি করেন আরেক সুপারহিট নায়ক ওমর সানীকে। যেখানে মৌসুমীর চরিত্রের নামটিই ছিল দোলা। ছবির মুক্তির আগেই প্রতিভাবান আজাদ মিন্টুর সুরের ও সালমা জাহান এর কণ্ঠের গানগুলি রেডিওতে প্রচারের মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। দোলা ছবির ব্যবসায়িক ফলাফল একটি সুপারহিট ছবি। দোলার মতো সুপারহিট একটি নিখাদ রোমান্টিক ছবি উপহার দিতে না দিতেই আবারো ওমর সানী-মৌসুমীকে পর্দায় হাজির করান রায়হান মুজিব আত্ম অহংকার নামক রোমান্টিক ও পারিবারিক অ্যাকশন নির্ভর ছবির মাধ্যমে। গানগুলো ছিল সেই সময়ের সুপারহিট। আত্ম অহংকার ছবিটি হলো এই জুটির জোর স্বীকৃতি আদায়ের সফল পদক্ষেপ যা ওমর সানী-মৌসুমীকে এনে দেয় পরিচালকদের কাছে নির্ভরযোগ্য জুটি হিসেবে স্বীকৃতি। পর্দায় এই জুটির ক্যামিস্ট্রিও ছিল দর্শক প্রিয়তার তুঙ্গে। আর সেই থেকে দুজনার মাঝে প্রণয়ের সূচনা। তারপর প্রেমের সফল পরিনতি ঘটে দুজনার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে।



মৌসুমী-ওমর সানীর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান স্বাধীন প্রোডাকশন থেকে শিরোনামহীন একটি ছবি নির্মিত হয়। মৌসুমী নিজেই ছবিটি নির্মাণ করেন। এ প্রসঙ্গে মৌসুমী বলেন, "অনেক ঝড়-ঝাপটা পেরিয়ে দেশীয় চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরেছে। তাই এর ভিতকে মজবুত করতে পুনরায় এগিয়ে আসার বিকল্প নেই বলে আমি মনে করি।" ছোটপর্দার সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা সজলের প্রথম চলচ্চিত্র রানআউট। এই চলচ্চিত্রে সজলের বিপরীতে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী। শুধু তাই নয়, মৌসুমী ছবিটির পরিচালনাও করেছেন। চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছে ইমপ্রেস টেলিফিল্মস। এই ছবির মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটেছে মৌসুমী পুত্র ফারদীন এশান স্বাধীনেরও। তিনি এই চলচ্চিত্রের মূল সহকারী পরিচালকের পাশাপাশি এডিটিং ও গ্রাফিক্সের কাজ করেছেন। বেশ কয়েক বছর আগে প্রথমবার মৌসুমী কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি শিরোনামের ছবিটি নির্মাণ করেন। এরপর যুগ্মভাবে তিনি মেহেরনিগার ছবিটি পরিচালনা করেন। তিনি একটি টেলিফিল্ম পরিচালনা করছেন। টেলিফিল্মটির নাম চলো বহুদূর। চলো বহুদূরের মূল গল্প রচনা করেছেন আবদুর রহমান। আগামীতে তার নিয়মিত পরিচালনা করার ইচ্ছে রয়েছে।



মৌসুমীর লেখা একটি গান; গানটির প্রথম দুটি লাইন হলো; তোমার চোখের ভাষা আমি পড়তে পারি না, তোমাকে তাই আমি কিছু বলতে পারি না। গানটির সুর করেছেন আলাউদ্দীন আলী। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন কোনাল। মৌসুমী বলেন, "লেখালেখির অভ্যাস আমার সেই ছোটবেলা থেকেই। লেখালেখি করি মনের তাগিদে। তবে গান লেখার সিদ্ধান্তটা হুট করে।" মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত ছবি তারকাটায় অভিনয় এর পাশাপাশি গান গেয়েছেন মৌসুমী। কি যে শুন্য শুন্য লাগে তুমিহীনা শিরোনামের গানটির কথা লিখেছেন জাহিদ আকবর আর সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন আরফিন রুমি। এই বিষয়ে মৌসুমী বলেন, "আমি শখের বসে গান করি। এর আগেও আমি চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেছি। এবার রাজের অনুরোধে প্লেব্যাক করলাম। আরফিন রুমিও অনেক সাহায্য করেছে।" এর আগে রাজের ছায়া ছবি সিনেমার মন যা বলে বলুক গানটি লিখেছিলেন মৌসুমী।



মৌসুমী একটি কবিতাও লিখেছেন। কবিতার শিরোনাম শুধুই তুমি। দর্শক আর ভক্তদের জন্য কবিতাটি ছিল ভালোবাসা দিবসে মৌসুমীর শুভেচ্ছা।

শুধুই তুমি

বিনিদ্র রজনী আমার কাটে তোমার অপেক্ষায়
এক প্রহর, দুই প্রহর, তিন প্রহর, শত প্রহর
শুধুই ভেবেছি, কেমন করে তুমি
পালাতে চেয়েছ সুখের সাগরে ডুব দেবার জন্যে
পেরেছ কি?
আমার সবটুকু যন্ত্রণার কিছুটা তুমিও নিয়ে গেছ
যখন দেখি আমার জন্মদিনে
কেউ বেনামে ফুল পাঠায়, তখন বুঝি সে তুমি
যখন দেখি মুঠোফোনে
কেউ আমার কণ্ঠ শোনে, ও প্রান্তে থাকে নিস্তব্ধ
তখন বুঝি সে তুমি
যখন গভীর গভীর রাতে,
আমার বুকের ভেতর কেউ কাঁদে
তখন বুঝি সে আর কেউ নয়
তুমি, শুধু তুমি।




বাংলা সিনেমায় বর্তমানে নানামুখী সংকট চলছে। এর মধ্যে নায়ক ও নায়িকা সংকট প্রধান। আর ছোট পর্দা থেকে যারা আসছেন কোন মতেই তারাও দর্শক ধরে রাখতে পারছেন না। এ প্রেক্ষিতে চলচ্চিত্র ভয়াবহ শিল্পী সংকটের মুখে পড়ছে। তাছাড়া সিনিয়র শিল্পীদের জন্যও রয়েছে নায়ক সংকটের অভিযোগ। সবকিছুর পরও এখনও বাংলা চলচ্চিত্রে নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন নায়িকা মৌসুমী। কিন্তু ধীরে ধীরে তার অভিনীত ছবির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এর কারণ আর কিছু নয়, জুটি সঙ্কট। মৌসুমীর বিপরীতে অভিনয়ের জন্য মানানসই নায়ক ঢালিউডে নেই।




বর্তমান সময়ের শীর্ষ নায়ক হলেন শাকিব খান। তার বিপরীতে মৌসুমীকে কোনভাবেই মানায় না। এটি মৌসুমী আর শাকিব খান দু’জনই জানেন বলেই একসঙ্গে তারা অভিনয় করতেও আগ্রহী নন। অন্যদিকে মৌসুমীকে বেশি মানাত নায়ক রিয়াজের সঙ্গে। তবে রিয়াজ চলচ্চিত্র থেকে স্বেচ্ছানির্বাসনে চলে গেছেন। মৌসুমী অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিতে নায়ক ফেরদৌসের বিপরীতে তাকে দেখা গেছে। অন্যদিকে ফেরদৌসও এদেশের চলচ্চিত্রে কাজ করা কমিয়ে দিয়েছেন। তাই এ অবস্থায় মৌসুমী পড়ে অস্তিত্ব সংকটে। নিজের অবস্থান ধরে রাখার জন্য তাকে এখন ডিপজলের মতো নায়কের বিপরীতে অভিনয় করতে হচ্ছে।




মৌসুমী জুটি সঙ্কটে পড়েন নায়ক মান্নার মৃত্যুর পর থেকেই। মৌসুমী-মান্না জুটি ছিল দর্শকপ্রিয়তার শীর্ষে। লুটতরাজ ছবির মাধ্যমেই নায়ক মান্নার সঙ্গে প্রথম অভিনয় করেন মৌসুমী। এটি মান্নার প্রথম প্রযোজিত ছবি। মান্নার আগ্রহেই ছবিটিতে কাজ করেন মৌসুমী। চলচ্চিত্রের অনেকেই তখন বলেছিলেন তার সঙ্গে মৌসুমীকে মানাবে না। তিনি এ্যাকশন হিরো। আর মৌসুমী রোমান্টিক ছবি বেশি করেন। অথচ দর্শক এই জুটিকে দারুণভাবে পছন্দ করেন। তারপর কত ছবিতে তারা একসঙ্গে কাজ করেছেন তার ইয়ত্তা নেই।




মান্নার মৃত্যুর কয়েকদিন আগে চলচ্চিত্র থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মৌসুমী। অনেকটা একঘেয়েমি থেকেই সিদ্ধান্তটা নিতে বাধ্য হন বলে জানা যায়। এসময় পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম তার দুই পুরুষ ছবির প্রস্তাব নিয়ে গেলে তাকে সবিনয়ে ফিরিয়ে দেন তিনি। মান্না জানতে পারেন ঘটনাটা। ফ্যামিলি নিয়ে চলে যান তার বাসায়। মান্না বাসায় গিয়ে মৌসুমীকে বোঝাতে শুরু করেন। তার জোড়াজুড়িতে দুই পুরুষ ছবিতে কাজ করতে রাজি হন তিনি। মৌসুমী বলেন, "অভিনয়টা এখনও করছি, ছাড়িনি। যার জন্য থেকে যাওয়া, তিনিই চলে গেলেন। আমি যে দু’জন নায়কের সঙ্গে অভিনয় করে সবচেয়ে সাফল্য পেয়েছি, তারা হলেন সালমান শাহ ও মান্না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা দু’জনই অকালে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন।"




তাই বলে মৌসুমীর কাছে চলচ্চিত্রের প্রস্তাব যে আসছে না, তা নয়। যেসব প্রস্তাব আসছে তাতে সাড়া দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। কারণ অধিকাংশ নির্মাতাই মৌসুমীকে নবাগতদের মায়ের চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসছেন। তার ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে তাকে নায়িকা করে নির্মাণ হয়েছে অসংখ্য চলচ্চিত্র। কিন্তু ২০০৫ সালের পর থেকে নায়িকা হিসাবে তার গ্রহণযোগ্যতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। দর্শক তাকে নায়িকার পরিবর্তে অভিনেত্রী হিসেবেই দেখতে আগ্রহী হয়ে উঠেন। একদিকে তার সাথে মানানসই নায়কের অভাব অন্যদিকে তার বয়সী চরিত্রকে মুখ্য করে লেখা ভালো স্ক্রিপ্টের অভাব। তাই নির্মাতারা অনেকটাই তার প্রতি দিনে দিনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।




এদিকে মা, ভাবীর চরিত্রে অভিনয় করতে নারাজ মৌসুমী। এরই মধ্যে এ ধরনের চরিত্রে বেশ কয়েকটি অভিনয়ের প্রস্তাব এলেও তিনি তা ফিরিয়ে দেন। তার কথায়; নায়িকা চরিত্রে কাজের সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি তার। এখনও তিনি এতটা বুড়িয়ে যাননি যে, মায়ের চরিত্রে তাকে অভিনয় করতে হবে। খুব বেশি হলে নায়কের ভাইয়ের স্ত্রী, অর্থাৎ ভাবী চরিত্রে অভিনয় করা যেতে পারে। মৌসুমীর কাছে অভিনেত্রীর সংজ্ঞা হচ্ছে মুখ্য চরিত্র, অর্থাৎ নায়িকা। তিনি বলেন, "মা-ভাবীর চরিত্রে অভিনয় করার চেয়ে নায়িকা হিসেবে কাজ করে দর্শকের মনে আজীবন নায়িকা হয়েই বেঁচে থাকা যাবে।"




চিত্রনায়িকা মৌসুমী অভিনীত বেশ কিছু পণ্যের বিজ্ঞাপন



-> লাক্স বিউটি সোপ
-> তিব্বত ডিটারজেন্ট পাউডার
-> লিজিয়ন হেয়ার লস অফ
-> লিজিয়ন এক্টিভ গোল্ড মেহেদী
-> রেমী স্পট ক্রীম
-> রসনা মিনি - ১
-> রসনা মিনি - ২
-> গোয়ালিনী মিল্ক পাউডার
-> আর এফ এল

স্টেজ পারফর্মেন্স


মাতৃত্ব চলচ্চিত্রে স্তনদানের মতো একটি দুঃসাহসিক দৃশ্যে অভিনয় করে হয়েছেন ব্যাপক আলোচিত ও সমালোচিত।

মৌসুমী অভিনীত কিছু জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের গানের ভিডিও



* ও আমার বন্ধুগো – কেয়ামত থেকে কেয়ামত
* এখনতো সময় কাছে আসার – কেয়ামত থেকে কেয়ামত
* দেখেছি প্রথম বার দুচোখে প্রেমের জোয়ার - স্বজন
* তুমি কবি আমি তোমার কবিতা – স্বজন
* অনেক ভালোবেসে – স্বজন
* কালতো ছিলাম ভাল – অন্তরে অন্তরে
* এখানে দুজনে নিরুজনে – অন্তরে অন্তরে
* ভালোবাসিয়া গেলাম ফাঁসিয়া – অন্তরে অন্তরে
* চিঠি লিখলাম – দেনমোহর
* আমি তোমার প্রেমের পাগল - দেনমোহর
* তুমি সুন্দর – দোলা
* ভালোবাসা হৃদয়ে বাঁধে বাসা – দোলা
* আমার একদিকে পৃথিবী একদিকে ভালোবাসা – আত্ম অহংকার
* জাগো জাগো প্রিয়তমা – আত্ম অহংকার
* সময় হয়েছে ফিরে যাবার – আদরের সন্তান
* হারানো প্রেমের স্মৃতি – হারানো প্রেম
* প্রেম নগরের জংশনে – প্রথম প্রেম
* তুমি যে কখন এসে মন চুরি করেছ – লজ্জা
*সবার জীবনে প্রেম আসে - ভাংচুর
*এই জীবন তোমাকে দিলাম - ভাংচুর
* আমার নয়ন যেন অন্ধ না হয় – বাবা আমার বাবা
* খাইরুন লো – খাইরুন সুন্দরী
* ওরে সাম্পান ওয়ালা – সাম্পানওয়ালা
* তোমার আলতা রাঙা পায়ে – কুসুম কুসুম প্রেম



মৌসুমী অভিনীত আরও কিছু চলচ্চিত্রের গানের ভিডিও

# তুমি আমার প্রথম ভালোবাসা
# ও চাঁদ তুমি
# মনে মনে যারে আমি খুঁজি
# মনে প্রেমের বাতি জ্বলে
# মনের মাঝে তুমি
# তুমি একটা চমৎকার
# তোমার প্রেমের জন্য হয়েছে মন
# সাথী তুমি সাথী
# তোমার আমার একই প্রাণ
# তুমি শুধু তুমি
# আমি প্রেম্রের আদালতে
# তুমি আমার
# তুমি যে আমারি
# একটা গল্প
# কিছু আশা কিছু ভালোবাসা

(তথ্য ও ছবি সংগ্রহে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা এবং সিনে ম্যাগাজিন)



সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:৪০
৪৩টি মন্তব্য ৪৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×