somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুখরোচক সেমাই নামের ক্ষতিকর বিষ

২৪ শে জুলাই, ২০১৪ ভোর ৪:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



+++ঈদ মোবারাক+++

সামহোয়্যার ইন ব্লগ এবং সকল প্রাণপ্রিয় সহ ব্লগারদের জানাই ঈদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। ঈদ হোক সকলের জন্য আনন্দময়।

বিশেষ আকর্ষণঃ দুটি বিকল্প সেমাই সম্পর্কে জানতে পোস্টের শেষ অংশে দেখুন

আপডেটঃ

১। সেমাই তৈরিতে দূষিত পানি ব্যবহার এবং নোংরা পরিবেশের কারণে হাসিম সেমাই ফ্যাক্টরিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

২। নোংড়া পরিবেশে নিম্নমানের ও অস্বাস্থ্যকর সেমাই প্রস্তুত করায় কামরাঙ্গীরচরের হুজুর পাড়ায় আব্দুর রহমানের মালিকানাধীন নাসির ফুড প্রোডাক্টস, কলেজ রোডে অবস্থিত একই মালিকের প্রতিষ্ঠান ফুড প্যাকেট ফ্যাক্টরি, মো. আলীর মালিকানাধীন মিতালী সেমাই ফ্যাক্টরি ও আলী নগরে নাসির হোসেনের হাবিবা ফুড প্রোডাক্টস এর মালামাল জব্দ করে সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। সিলগালা করে দেওয়া এ সব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

৩। নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের খলাপাড়া এলাকায় নেহাজ উদ্দিনের বাড়িতে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে প্রায় ১০ মণ ভেজাল সেমাই, বিপুল পরিমান পাম্প ওয়েল ও সেমাই তৈরীর যন্ত্রাংশ জব্দ করেছে। পরে কারখানাটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও সিলগালা করে ভেজাল সেমাই ধ্বংস করা হয়। তবে কারখানায় মালিককে পাওয়া যায়নি।

৪। দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে পৌর শহরের লাচ্ছা সেমাই প্রস্তুতকারক ফ্যাক্টরিতে অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই প্রস্তুত করার দায়ে ৩ প্রতিষ্ঠানকে ৯ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।

৫। রাজশাহী মহানগরীতে জেলা প্রশাসন ও বিএসটিআই’র যৌথ ভ্রাম্যমাণ আদালত মেসার্স মক্কা সেমাই ফ্যাক্টরিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।

৬। রাজধানীর চম্পাটুলীলেন, সোয়ারিঘাট এবং ছোট কাটারায় র‍্যাব-১০ অভিযান চালায়। চম্পাটুলী লেনে কাজী সুমন চার বছর ধরে নোংরা পরিবেশে কুলসুন, আলাউদ্দিন ইত্যাদি ব্র্যান্ডের নকল সেমাই তৈরি করে বাজারজাত করছিল। খুবই ছোট স্থানে গাদাগাদি করে নোংরা পরিবেশে নকল সেমাই উৎপাদন করার অভিযোগে কারখানার মালিক কাজী সুমনকে এক বছরের কারাদন্ড দেয়া হয় এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। কাজী সুমনকে একই অপরাধে গত বছরও দন্ড দেয়া হয়েছিল। ছোট কাটারার আরেকটি কারখানার ম্যানেজার আ. হাইকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

৭। কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর, বাজিতপুর, অষ্টগ্রাম, মিঠামইন, নিকলীসহ, হবিগঞ্জ, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চ বিশিষ্ট বেশ কিছু উপজেলা, নরসিংদীর রায়পুরা, বেলাবো ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ, নবীনগর উপজেলার কারখানাগুলোতে মজুরি বৈষম্যসহ আইন লঙ্ঘন করে শিশু শ্রমিকদের দিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করানো হচ্ছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে এই পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী

বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণঃ

ব্লগার কথক পলাশ এর সৌজন্যেঃ প্রত্যেক জেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেজ-এ ভেজাল সেমাই তৈরির স্থান ও ঠিকানা লিখে পোস্ট দেয়া যাবে। অথবা প্রত্যেক জেলা প্রশাসনের নিজস্ব ওয়েব পোর্টাল বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট/যে কোন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর ফোন নাম্বার নিয়ে তাকে সরাসরি ফোন করা যাবে। যদি কারও দৃষ্টিতে এমন ভেজাল কারখানার সন্ধান থেকে থাকে তাহলে শীঘ্রই রিপোর্ট করার জন্য অনুরোধ করছি। সংগে সংগে কাজ হবে। এই ওয়েব পোর্টালে গিয়ে; যে কোন বিভাগের, যে কোন জেলার, যে কোন উপজেলার সাইটে ঢোকা যাবে। বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন সব ধরণের ট্যাবই আছে। ড্রপ ডাউন লিস্ট থেকেই সিলেক্ট করা যাবে।প্রত্যেক বিভাগ/জেলা/উপজেলা/ পোর্টালেই সব কর্মকর্তার নাম ও ফোন নাম্বার দেয়া আছে।



মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদ উৎসবের প্রধান খাবার হিসেবে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান সেমাই খেয়ে থাকেন। আর মেহমানদ্বারিত্বেরও প্রধান অনুসঙ্গ হচ্ছে লাচ্ছা সেমাই। প্রত্যেক পরিবারেই সবার আগে চেষ্টা করে পরিবারের সকল সদস্যের মুখে সেমাই তুলে দিতে।



আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী নোংরা পরিবেশে যেনতেনভাবে ভেজাল সেমাই তৈরী করে বাজারজাত করছে। কারখানাগুলোর ব্যবসাও এখন তুঙ্গে। যদি বাহির থেকে দেখা হয়, তাহলে মনে হয় যেন আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ খাবারটাই খাই। কিন্তু লোক চোক্ষুর আড়ালে তৈরি হচ্ছে ক্ষতিকর বিষ। এরমধ্যে রয়েছে খোলা লাচ্ছা ও প্যাকেটজাত লাচ্ছা সেমাই।



দুই ধরনের সেমাই উৎপাদিত হয়ে থাকে। একটি লাচ্ছা সেমাই আর অন্যটি সাদা সেমাই। লাচ্ছা সেমাই যেকোনো আবহাওয়াতে শুকানো সম্ভব। অন্যদিকে, সাদা সেমাই তৈরির পর তা রোদে শুকাতে হয়। এর মধ্যে লাচ্ছা সেমাই তৈরির পরিবেশ দেখে বিএসটিআই। অন্যদিকে, সাদা সেমাই তৈরির প্রক্রিয়া দেখে পৌরসভা কিংবা সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।



স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সেমাই তৈরির নির্দেশনা থাকলেও অনেকেই তা মান্য করে চলেনা।

কিভাবে এবং কি পরিবেশে সেমাই তৈরি করা হচ্ছে তা দেখার যেন কোন সুযোগ নেই।



এসব সেমাই তৈরির কারখানায় নেই কোনো সাইনবোর্ড। কারখানার বাইরে থেকে প্রবেশ নিষেধ সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে অথবা গেটে তালা ঝুলিয়ে বা গেট বন্ধ করে চলে লাচ্ছা সেমাই তৈরির কাজ। এসব সেমাই তৈরীর কারখানা একস্থানে বেশিদিন থাকে না। সচেতন মহলের চোখ পড়ার আগেই স্থান পরিবর্তন করা হয়। এসব সেমাইতে নামিদামি কোম্পানীর লেবেল ও ষ্টিকার লাগিয়ে পাইকারীভাবে বিক্রি করা হয়। দেখে বোঝার কোন উপায় থাকে না আসল না নকল। চোরাইভাবে গোপন স্থানে এ সেমাই কারখানা থাকায় প্রশাসনেরও নজরদারীতে আাসে না। ফলে নির্বিঘ্নে এ অপব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। রমজান মাসের আগেই এসব কারখানায় লাচ্ছা তৈরি শুরু হয়, চলে ঈদের পূর্ব পর্যন্ত।




কারখানার প্রধান ফটকে মাছির ভোঁ ভোঁ শব্দে উড়ে চলা, ড্রেনের দুর্গন্ধযুক্ত পানি। ভেতরে স্যাঁতসেঁতে নোংরা পরিবেশ। তার মধ্যে মেঝেতে তৈরিকৃত সেমাই রাখা হয়। সেই সেমাইয়ের উপর পড়ে থাকে ঝাঁটা। কোন কোন কারখানার এক পাশে কবুতরের খোপ, অন্য পাশে শুকাতে দেয়া হয় সেমাই। আবার কোন কোন কারখানার পাশে রয়েছে পোলট্রি খামার। এসব কারখানার সেমাই শুকাতে দেয়া হয় খোলা ছাদে। ফলে পাখি, কবুতর ও মুরগির বিষ্ঠার সঙ্গে সেমাই মিশে হচ্ছে একাকার। খোলা আকাশের নিচে হওয়ায় সেখানে কাকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি মলত্যাগ করে। এমন পরিবেশে সেমাই উৎপাদন করে বাজারে ছাড়ছে কারখানার মালিকরা।



প্রচন্ড গরমে কারখানায় পর্যাপ্ত আলো-বাতাস না ঢোকায় ঘর্মাক্ত শরীর ও হাতে ময়দা তেল পানি মেশাচ্ছে কারিগররা। লাচ্ছা তৈরির গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে ময়দা খামির দেয়া। কিন্তু এসব কারখানায় ময়দা ছানার কোন মেশিন না থাকায় শ্রমিকরা পা দিয়ে ময়দা ছেনে লাচ্ছার জন্য ময়দা খামির দিচ্ছে। ফলে শরীরের ময়লাবাহিত ঘাম মিশছে সেমাইয়ের মধ্যে। শ্রমিকদের কোন পোশাক বা পরিচ্ছন্ন থাকার কোন ব্যবস্থা নেই। মানা হচ্ছে না কোন কারখানা আইন। মান নির্ধারণের কোন বালাই নেই। কারখানাগুলোর বেশিরভাগ শ্রমিকই কৃষিজীবী ও ইটভাঁটি শ্রমিক। ঈদ উপলক্ষে বাড়তি আয়ের জন্য তাঁরা কারখানায় কাজ করছে।




প্রতি বছরই এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার লোভে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে সেমাই তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে আসছে মারাত্মক রাসায়নিক উপাদান, নষ্ট হয়ে যাওয়া ময়দা, অ্যানিমেল ফ্যাট, পাম অয়েল, অ্যারারোট, সাবান তৈরির রাসায়নিক উপাদান তাল্লু, একপ্রকার রাসায়নিক পাউডার, খিরের কৃত্রিম সুগন্ধি, ক্ষতিকর রঙ, ভেজাল সোডা, ডালডা।







স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সাথে আতাঁত করে শুধু দুই ঈদে সেমাই তৈরী করা হয় কোন রকম মেশিন ব্যবহার ছাড়াই।

মালয়েশিয়া থেকে আনা অপরিশোধিত পাম তেলে ভাজা এসব সেমাই উজ্জ্বল করতে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিক। এ সেমাই উৎপাদনকারীরা নামিদামি ব্র্যান্ডের সেমাইয়ের মোড়ক নকল করে তা বাজারজাত করে। পাশাপাশি অন্য অনেক নামিদামি কোম্পানি এদের সেমাই কিনে নিজেদের পণ্য হিসেবে বিক্রি করছে। কোম্পানির লোকজন এসব কারখানায় গিয়ে দরদাম ঠিক করে তাদের চাহিদা অনুযায়ী মোড়ক ও কোম্পানির লেবেল সরবরাহ করে। কারখানাগুলোতে বিষুদ্ধ পানির পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে ময়লা আর্বজনায় ভরা ডোবা ও পুকুরের পানি। উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে মেয়াদ উত্তীর্ণ পঁচা আটা ও টিসিবির মেয়াদ উত্তীর্ন নষ্ট চিনি। তৈরি কৃত কাঁচা সেমাই রাখা হচ্ছে মেঝেতে। আর এই মেঝেতে উৎপাদন শ্রমিকরা বাইরের নানা ময়লা আর্বজনা বহন করে খালি পায়ে চলা চল করে। এরপর এসকল কাঁচা সেমাই বাইরের খোলা আকাশের নিচে অপিরিচ্ছন্ন্ নোংরা পরিবেশে শুকাতে দেয়া হয়। আর আকাশের নিচে থাকে বলে পাখির মলমূত্র বাইরের ধুলাবালি পরে। আর এভাবেই তৈরি হয় ভাজা সেমাই। অসাধু এসকল সেমাই মালিকেরা একই উপায়ে তৈরি করে লাচ্ছা সেমাই। দিনের পর দিন পোড়া তেলে এসকল সেমাই ভাজা হয়।



পুরো দেশের ঈদের বাজার ছেয়ে গেছে মুসলমানদের জন্য শতভাগ হারাম দ্রব্য শুকরের চর্বি দিয়ে তৈরী ভেজাল লাচ্ছা সেমাইতে।

যাতে মেশানো হচ্ছে স্বস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পঁচা ঘি, তেল এবং শুকরের চর্বি। বেশি মুনাফার লোভে শুকরের চর্বি দিয়ে তৈরী লাচ্ছা সেমাই প্যাকেটজাত করে বাজারজাত করা হচ্ছে। শুকরের চর্বি দিয়ে তৈরীর কারনে এ সেমাই ঘি‘র তৈরী সেমাইয়ের চেয়ে স্বাদে ও গন্ধে ভাল। অথচ মুসলমানদের জন্য শুকরের চর্বি, রক্ত ও মাংস সম্পুর্ণ হারাম। শুকরের চর্বি, পঁচা ঘি দিয়ে অত্যন্ত নোংরা পরিবেশে সেমাই তৈরী করে বাজারজাত করা হলেও মালিকপক্ষ সেমাইয়ের প্যাকেটে বা বিজ্ঞাপণ দিয়ে প্রচার করছে তাদের সেমাই উন্নত মানের এবং হালাল। সেই সাথে বাজারজাতকরণে পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীদের মোটা অংকের মুনাফার সুযোগ দিয়ে তাদের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পুরো দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে এ সেমাই। আর এই সেমাইয়ের পেকেটে বিএসটিআইয়ের সিল মারা থাকায় ধর্মপ্রাণ মুসলমান বাজার থেকে তা কিনে খাবে। আর এ বিষয়টি বিএসটিআই কর্তৃপক্ষের তদারকির দায়িত্ব থাকলেও তা তারা করছে না। এ সুবাধে হারাম লাচ্ছা সেমাই বাজারজাত করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে এইসব কারখানার কর্তৃপক্ষ।




বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠা এসব ভেজাল সেমাইয়ের বাণিজ্য করছে অসাধু ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট।

স্থানীয় থানা পুলিশ ও প্রভাবশালী মহলের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ভেজাল নিম্নমানের সেমাই তৈরি এবং বাজারজাতকরণের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার টার্গেট তাদের। অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট সদস্যরা প্রতি রমজান-ঈদ মৌসুমে অবৈধ বাণিজ্যকে জায়েজ করার জন্য স্থানীয় থানা পুলিশকে মোটা অংকের মাসোয়ারা প্রদান করে। জেলা প্রশাসন ভেজালবিরোধী অভিযান চালালেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে এসব বাণিজ্যের হোতারা। ভেজালবিরোধী অভিযানে সাধারণ ও খুচরা ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হলেও ভেজাল সেমাই উৎপাদনের কারখানা বন্ধে বড় ধরনের কোনো অভিযান হয় না। স্থানীয় প্রভাবশালী ও কথিত সন্ত্রাসীদের দাপটে স্থানীয়রা বিষয়টি জেনেও না জানার ভান করে। এ ব্যবসায়ীদের রয়েছে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। উৎপাদন চলে রাতে দিনে সমানে। এক মাসে একেকজন ব্যবসায়ী এ ব্যবসায় কয়েক লাখ টাকা উপার্জনের টার্গেট নিয়ে নেমেছে। বিভিন্ন নামি দামি প্রতিষ্ঠানের নামে লেবেল বসিয়ে বাজারে সরবরাহ করা হয় এসব ভেজাল সেমাই। কোনো কোনো লেবেলে ইচ্ছামাফিক বসিয়ে দেয়া হয় বিএসটিআই’র অনুমোদনের নম্বর।



সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে তৈরি করা হচ্ছে খাবার অনুপযোগী ভেজাল সেমাই।

ঈদকে সামনে রেখে কিছু সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে সেমাই কারখানা তৈরি করে দেশের প্রখ্যাত ব্র্যান্ডের সেমাই মোড়ক সংগ্রহ করে তাদের উৎপাদিত সেমাই ভরে বিএসটিআই-এর সীলযুক্ত মোড়কে বাজারজাত করছে। পাড়ায় কারখানা স্থাপন করে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে এসব লাচ্ছা সেমাই তৈরি করে; খাদ্য দ্রব্যের গুনগত মান নির্ধারনকারি প্রতিষ্ঠান বিএসটিআইয়ের সেমাই তৈরির অনুমতিকে পুঁজি করে দিনের পর দিন এসকল প্রতিষ্টান তৈরি করছে ভেজাল সেমাই। অভিযোগ রয়েছে বিএসটিআইয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের ইন্ধনে সেমাই কারখানার মালিকেরা ভেজাল সেমাই তৈরি করছে। বিনিময়ে মোটা অঙ্কের মাসওয়ারা পাচ্ছে বিএসটিআইয়ের এসকল অসাধু কর্মকর্তারা। তাই অসাধু সেমাই মালিকেরা নির্ভয়ে চালাচ্ছে তাদের অবৈধ কার্যকলাপ। প্রকৃতপক্ষে ক্রেতারা এই মুখরোচক খাবারটির নামে কিনছে শরীরের জন্য ক্ষতিকর বিষ।




প্রতি কেজি সেমাই পাইকাররা কিনছে মাত্র ৬২ টাকায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। কেউবা ঝকঝকে প্যাকেটে আরও বেশি দামে তা বিক্রি করছে।



নিম্নমানের ও ভেজাল উপাদান দিয়ে তৈরীকৃত সেমাই জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরী সেমাই খেয়ে অনেক রোজাদার সহ সাধারন মানুষ পেটের পীড়া সহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। রং ও অন্যান্য কেমিক্যাল মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। খাদ্য দ্রব্যে মেশানো রং মানুষের পেটে গেলে তা গ্যাষ্ট্রিক, আলসার থেকে ক্যান্সারের কারন হতে পারে। এছাড়াও যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তাদের হার্টের সমস্যা আরো বাড়তে পারে । যাদের কিডনীর সমস্যা রয়েছে তাদের কিডনী ডেমেজ হতে পারে এবং ব্রেনেরও ক্ষতির পাশাপাশি অকাল মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।

এসব ভেজাল সেমাই বাজার থেকে বেশি দামে কিনে একদিকে যেমন প্রতারণার শিকার হচ্ছে তেমনি সেমাই খেয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে অনেকেই।

আর এসব ভেজাল সেমাই খাওয়ার ফলে পেটের পীড়া, ডায়রিয়া, জন্ডিস ও টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা। এসব খাবার খেলে মানবদেহ কঠিন রোগে আক্রান্ত করতে পারে। এসব খাবার থেকে সকলের বিরত থাকা উচিত।




সেমাই তৈরীর কারখানায় আলো বাতাস প্রবেশসহ কারিগরদের অ্যাপ্রণ ও বিশেষ ধরনের হাত মোজা পরিধানের বিধান রয়েছে। উন্নত মানের ময়দা, ভেজিটেবল, ফ্যাটঅয়েল, খাঁটি ঘি ও ডালডা দিয়ে লাচ্ছা সেমাই তৈরীর করার নিয়ম। ২০০৯ এর ৩৭ ধারা অনুযায়ী রয়েছে দশ হাজার টাকা জরিমানা করার আইন। সেমাই বাজারজাত করার আগে উৎপাদনের তারিখ, কোম্পানীর নাম, মেয়াদ, উপকরণের নাম উল্ল্যেখ করে প্যাকেট বাজারজাত করার নিয়ম রয়েছে।







বস্তুত ভেজাল প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগের মতো ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। ভেজাল হয়ে উঠেছে প্রকাশ্য ঘাতক।



আমরা বাঁচতে চাই।
চাই বিষ মুক্ত খাবার।

এ জন্য আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে। প্রতিরোধ গড়তে হবে বিষ যুক্ত খাবারের বিরুদ্ধে। আমরা জনস্বার্থে ভেজালের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান চাই। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের পাশাপাশি ভেজাল পণ্য বর্জনে ব্যক্তি ও সামাজিক পর্যায়ে সচেতনতাও গড়ে তুলতে হবে। ভেজালের বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্ন অভিযান চালিয়ে যেতে হবে। শুধু লোক দেখানো ভেজালবিরোধী অভিযান নয়, স্বাস্থ্যসম্মত লাচ্ছা সেমাই তৈরী ও বাজারজাত করণে প্রশাসন কঠোর হস্তক্ষেপ নিবেন, এমনটাই প্রত্যাশা।



আমার এই পোস্ট দেখে হয়ত অনেকেই ইতিমধ্যে এবারের ঈদে সেমাই না খাওয়ার জন্য সিদ্ধ্যান্ত নিয়েছেন। অনেকে আবার সেমাইয়ের বিকল্প কিছু খাওয়া নিয়ে ভাবছেন। কারন খুশির দিনটাতে একেবারেই একটু মিষ্টিমুখ না করলেই নয়। তাই আপনাদের জন্য দুটি বিকল্প সেমাইয়ের ব্যাপারে উল্ল্যেখ করছি। আমার কাছে খুব সহজ বলেই মনে হয়েছে। আপনাদের কাছেও হয়ত বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠবে এই দুই বিকল্প সেমাই।

+[সংগৃহীত রেসিপি]+

১। চালের সেমাইঃ

উপকরনঃ

চালের গুঁড়া ২ কাপ, খেজুরের গুড় ১ কাপ, চিনি ১ কাপ, দুধ ১ কেজি, নারকেল কুরানো ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, পানি ১ কাপ।

প্রস্তুত প্রণালীঃ

চালের গুঁড়া লবণ ও পানি দিয়ে সিদ্ধ করে দলা বানাতে হবে। সরু লম্বা করে ধরে দুই হাতের আঙুলে তালু দিয়ে ছোট ছোট সেমাই পিঠা বানাতে হবে। তারপর দুধ জ্বাল দিয়ে অর্ধেক করে চিনি ও নারকেল মেশাতে হবে। ফুটে উঠলে কেটে রাখা সেমাই জ্বাল দিয়ে সেমাই সিদ্ধ হয়ে এলে খেজুরের গুড় প্রয়োজনমতো মেশাতে হবে। গুড় আগে জ্বাল দেয়া থাকলে ভালো। গুড় জ্বাল দেয়া থাকলে দুধ ফাটবে না।

২। কচি লাউয়ের সেমাইঃ

উপকরনঃ

কচি ছোট লাউ ১ টি বিচি হয়নি এমন, দুধ ১ কেজি, চিনি পরিমান মত, দারচিনি, লবঙ্গ ও সয়াবিনের তেল।

প্রস্তুত প্রনালীঃ

প্রথমে কচি লাউ কুচি কুচি করে কেটে লবণ দিয়ে মাখিয়ে রাখতে হবে ২০ মিনিট। এবার একটি পাত্রে দুধ গরম করে গাঢ় করে নিয়ে লবণে মাখানো লাউ ভাল করে ধুয়ে হাত দিয়ে চিপে পানি ঝড়িয়ে নিতে হবে যেন একদম পানি না থাকে সে জন্য রোদে প্রায় ৫ মিনিট রাখতে হবে। তারপর হাঁড়িতে পরিমান মত তেল দিয়ে লাউ কুচি হালকা বাদামী করে ভাজতে হবে। ভাজা হয়ে গেলে তার মধ্যে দুধ, চিনি, দারচিনি ও লবঙ্গ দিয়ে একটু নেড়ে ঢেকে রাখতে হবে। লাউ মাখা মাখা হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে নিলেই হবে।














সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:৩৫
১১৭টি মন্তব্য ১১৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×