সমুদ্রের অতল গভীরে আমি যেন ঠিক নিমজ্জিত লোনা জল হয়ে মিশে আছি। মহাকাল ধরে তৃষ্ণার্ত কোন পর্ণমোচী উদ্ভিদের মত, যার শেকড়ে মিশে আছো তুমি নীল বিষ হয়ে। আমার দেহের গোপনে লুকিয়ে আছে চিরহরিৎ সবুজের আর্তনাদ। আমার পক্ষে অবগাহনের লোভ এড়ানো কিছুতেই সম্ভব নয়। আমি বেঁচে থাকতে চাই। আমারও যে বেঁচে থাকার অধিকার আছে অন্য সবারই মতো করে। আমার এই দেহে যত মেঘ আছে; তার সমস্তটার ভাঁজ খুলে মেলে ধরতে চাই নিজেকে। তুমি সেখানে উষ্ণতা খুঁজে পাবে। তোমার শিকারি চোখে দেখবো বুনো লালসা। আমি নির্ঘুম কাটিয়ে দেবো সারাটি রাত তোমার ভালোবাসায় সিক্ত শ্যাওলা বনে। অথচ, তোমার দৃষ্টিতে আমার জন্য শুধুই অমানিশার দহন জ্বালা। কিন্তু আমি যে রোদ হয়ে; আমার দেহের উত্তাপ ছড়াতে ব্যাকুল হয়ে আছি তোমার মনের ক্লান্ত দুপুরে।
আজ ডলির জন্মদিন। সন্ধ্যার পর থেকেই ডলি সেই বিয়ের দিনের মতো করে বউ সেজে অপেক্ষা করছে রাতুলের জন্য। স্বামীর কাছ থেকে একটু আদর পাওয়ার জন্য, নিজের সবটুকু উজাড় করে দেয়ার তীব্র ব্যাকুলতায় মোহাচ্ছন্ন হয়ে আছে সে। কিন্তু রাতুল আজও প্রতিদিনের মতো অনেক রাত করে অফিস থেকে বাড়ি ফিরেছে। ফিরেই নেটে বসে গেছে তার ল্যাপটপ খুলে। একবারের জন্যও তার স্ত্রীর দিকে মুখ তুলে তাকালোনা সে। ডলি ল্যাপটপের উপর চোখ বুলাতেই, তার জোড়া ভ্রু ঈষৎ কুঁচকিয়ে বিস্ময়ে অবাক হয়ে গেলো। রাতুল ফেসবুকে একটা মেয়ের সাথে চ্যাট করছে। অথচ, এতদিন ধরে সে ভেবে এসেছে অফিস থেকে ফিরে এসে; সে নেটে কোন জরুরী কাজ নিয়ে ব্যাস্ত থাকে। এই নিয়ে বলতে গেলেই তার উপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। একবার চটে গেলে রাতুল যেন আর স্বাভাবিক কোন মানুষ থাকেনা। পিশাচের মতো মারধর শুরু করে দেয়।
হঠাৎ একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে ডলি রাতুলের সামনে এসে দাঁড়াল। রাতুল আমি কাল সকালে আমাদের বাড়িতে যাবো। কয়েকটা দিনের জন্য বাবা-মার কাছ থেকে বেড়িয়ে আসব। মুহূর্তের জন্য রাতুল তার ল্যাপটপ থেকে মুখ তুলে ডলির দিকে তাকাল। মনে হলো যেন সে কিছু বলবে। কিন্তু কিছুই না বলে, নীরবে মুখ নত করে আবারও ফেসবুকে চ্যাট করতে শুরু করল। ডলি আবারও বলল, কি শুনতে পেয়েছো ? আমি কাল আমাদের বাড়িতে যাব।
এবার, রাতুল কিছুটা চটে গিয়ে জবাব দিলো, না! এ জন্মে তোমার আর তোমার বাবার বাড়িতে যাওয়া হবে না। যদি যেতেই চাও, তাহলে চিরদিনের জন্য চলে যাবে। তোমাকে আমি চিরদিনের জন্য ত্যাগ করব।
ডলি ক্রোধে বিস্ময়ে অবাক হয়ে বলল, তুমি আমাকে ত্যাগ করবে! কোন আইনে? কোন অধিকারে শুনি?
রাতুল নিতান্তই সহজভাবে জবাব দিলো, বাঁধা কি বউ! আমি প্রভু, আর তুমি আমার দাসী ছাড়া আর কিছুই নও। আমাকে কে ঠেকাবে বল?
এই মুখে আমাকে তোমার দাসী বলতে কি একটু লজ্জা হলো না? স্বামী হয়েছো বলেই কি তোমার সব কিছু আমাকে মেনে নিতে হবে নাকি? আর তোমার স্ত্রী হয়েছি বলেই কি আমি তোমার ক্রীতদাসী, যে আমাকে তুমি এমন হীন, এমন তুচ্ছ বোধ করবে?
এবার, রাতুল ক্রোধে ফেটে পড়ল। হাতের কাছে টেবিলের উপর রাখা ফুলদানীটা তুলে নিয়েই ডলির কপালে জোড়ে একটা বারী দিলো। মুহূর্তের মধ্যে কপাল ফেটে রক্ত বের হতে লাগল। মাথা ঘুরিয়ে মেঝেতে বসে পড়ল ডলি।
*******
কিরে সেলিম এইটা কি চা বানায়ছিস?
কেন মামা কি হইছে?
চায়ে কি দুধ দেস নাই! তুই জানস না চায়ের মধ্যে বেশি কইরা দুধ না দিলে; সেই চা খাইয়া আমি কোন মজা পাইনা।
মামা চায়ের মজা দিয়া কি করবেন? আমাগর জনি মিয়াঁ যে ইদানীং চা না; কফি খাওন শুরু করছে হেই খবর কি রাহেন?
মানে?
মানে কিছুনা! তয় জনি ভাইয়ের লগে ডলি আপার মেলামেশাটা খুব বেশি ভাল ঠেকতাছেনা।
চিন্তা করিসনা। জনিরে হালকা একটা ডলা দিয়া দিলেই সব ঠিক হইয়া যাইব।
না মামা, মনে হয়না। পানি অনেক দূর গড়াইছে। এইতো একটু আগেও জনি মিয়াঁরে দেখলাম ডলি আপার বাসার দিকে যাইতে। হাতে আবার একটা ফুলের তোরাও আছিল।
কি কস!
হ মামা। মামা কি একটা সিগারেট দিমু আপনারে?
হুম!
মামা মনে লয় চিন্তার মইধ্যে পইরা গেলেন?
হুম! জনিরেতো খুব ভাল করেই চিনি। হালায় একটা লুইচ্চা। ভাবতেছি দুইটারে একলগে কেমনে সাইজ দেওন যায়?
ডলি আপারে সাইজ দিবেন কেন মামা?
আরে ধুর ডলিকে নারে গাধা। জনির সাথে ঐ রাতুলরেও একটা সাইজ দেওন লাগব। নাইলে হালায় ঠিক হইব না। ডলির মতো একটা মেয়ে চোখের সামনে এমন হইয়া যাইব সেইটা মানা যায়না। ডলি সুখে থাকলেই আমার সুখ।
মামা আপনে ডলি আপারে কেন বিয়া করলেন না?
ধুর হালায়। ডলিরে আমি ভালোবাসি ঠিকই। কিন্তু সেইটা প্রেম নারে। অরে আসলে আমি খুব শ্রদ্ধা করি। অনেকটা ধর দেবীর আরাধনা করার মতো। দেবী সেই, যারে মনে খুব ইচ্ছা করে সামনে বসাইয়া পূজা-অর্চনা করতে।
হঠাৎ! পেছন থেকে পিঠে হাত রেখে শিহাব জানতে চাইল কিরে কার
পূজা-অর্চনা করবি? তুই কি হিন্দু ধর্ম গ্রহন করলি নাকিরে?
ডলির কথা কইতাছিলাম। বুঝলি শিহাব, ডলির হাসবেন্ডটা একটা পিশাচ। হালার ভিতরে কোন ইমোশন নাই। এমন সুন্দরী একটা বউরে কেউ এমনে মাইর ধর করে নাকি? আমি হইলেত হালায় এমন পরীর মতন বউরে শোকেসে সাঁজায় রাখতাম! হালারে একটা সাইজ দেওন লাগব! আর হালায়! তুই সারাটা দিন ধইরা কই আছিলি?
দোস্ত তোর ভাবীর কয়েকদিন ধইরা খুব জ্বর। একটু পর পরই অর মাথায় পানি ঢালন লাগে। তাই সারাদিন বউটার পাশেই ছিলাম।
আরে বেকুব; কি আশ্চর্য! যা বাসায় যা। চল আমিও বাসায় যাইগা। সন্ধ্যায় আয়া পরিস। রাতুল রাতে যখন অফিস থিকা ফিরব; তখন কেমনে কি করুম; প্ল্যান করুমনে দুইজনে মিলা। সেলিম দে, আরেকটা সিগারেট দে; টানতে টানতে বাসায় যাই।
*******
ছোট বেলায় খুব শখ করে নাচ শিখেছিলো ডলি। ভেবেছিলো একসময় নৃত্য শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। মধ্যবিত্তদের আর কিছু হোক না হোক; রক্ষণশীলতা প্রচন্ড রকম ভাবে কাজ করে। পরিবারের বাঁধা আপত্তি অগ্রাহ্য করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তারপরতো হুট করে একদিন বিয়েই হয়ে গেলো। রাতুল যখন অফিসে থাকে, তখন ভীষণ নিঃসঙ্গতায় পেয়ে বসে ডলিকে। নিঃসঙ্গতা কাটাতে ঘরের ভেতর নেচে নেচে মনের সেই অধরা সাধ পূর্ণ করে সে। প্রতিদিনের মতো আজকের দুপুরটাও তার মাতাল নাচে মত্য হয়ে উঠেছে। নাচতে নাচতে শাড়ির আঁচল মেলে ধরে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায় সে। নিজের শরীরের প্রতি অহংকার বোধ হয়। রূপ-লাবণ্য, শারীরিক গঠনগত সৌন্দর্য কোন কিছুরই কমতি নেই। অথচ বিয়ের পর থেকে একদিনের জন্যেও রাতুলের মনে তার কোন প্রভাবই সে বিস্তার করতে পারেনি। কপালের ক্ষতটা থেকে রক্ত ঝরছে। ভেবেছিলো কখনই আর কাঁদবে না কিন্তু চোখের বাঁধ ভেঙে অশ্রু নেমে আসে।
হঠাৎ! কলিং বেলের শব্দ। এই সময় কে হতে পারে? রাতুলের অফিস থেকে ফিরতে অনেক রাত হয়। এই সময় তাই রাতুলের ফেরার কোন কারণই নেই। তাহলে জনিও হতে পারে। জনি তাদের পাশের বাড়িতেই থাকে। বিকেল বেলায় মাঝে মাঝে ছাঁদে উঠলে জনির সাথে কথা হয় ডলির। এভাবেই ছাঁদের আলাপচারিতায় অল্প কদিনের মধ্যেই দুজনের মধ্যে বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছে। দরজা খুলতেই হাসি মুখে জনি ফুলের তোরাটা এগিয়ে দেয়।
হ্যাপি বার্থ ডে!
থ্যাংক্স! এসো ভেতরে এসো।
কপাল কাটলে কেমন করে?
বাথরুমে পড়ে গিয়েছিলাম।
মিথ্যে কথা বলনা। পিশাচটা মেরেছে?
জনি প্লীজ! বাদ দাও। কফি খাবে?
এই দুপুর বেলা কফি খাবো!
ভাত খাবে?
না, এখন ভাত খাব না।
তাহলে কি খাবে বল?
কিছুই খাব না। তোমার সাথে শুধু গল্প করতে এসেছি। তুমি বসতো। ডলি তোমার মতো গুণের বউ খুব কম ছেলে মানুষের ভাগ্যেই জোটে।
জনি, আমি সব সময় নিজের সম্মান ষোল আনা বজায় রাখতে চেষ্টা করি। আমি রাতুলের সঙ্গিনী, সহধর্মিণী কিন্তু তাই বলে তার ক্রীতদাসী নই। জানো জনি, আমার মতো এমনি করেই আমাদের দেশের সমস্ত মেয়েমানুষ পুরুষেরর পায়ে মাথা মুড়িয়ে এত তুচ্ছ হয়ে যায়, এমন খেলার পুতুল হয়ে দাঁড়ায়। নিজের সম্ভ্রম নিজে না রাখলে, কেউ কি এসে দিয়ে যাবে; তুমিই বল? কেউ না। তবুও আমিতো আমার স্বামীকে কখনও এ কথা ভাববার অবকাশ দিইনি যে সেই আমার প্রভু, আর আমি স্ত্রী বলেই তার দাসী। আমার এই নারীদেহেও ঈশ্বর বাস করেন, এ কথা আমি নিজেও ভুলিনি, তাকেও ভুলতে দেইনি কখনও। শুধু এতটুকুই কি আমার অপরাধ?
জনি চুপ করে শুনে একটু নিঃশ্বাস ফেলল; কিন্তু তাতে করে কোন অনুশোচনার কিছুই প্রকাশ পেলনা।
জনি, পায়ে লুটিয়ে পড়া ভালোবাসা আমার নেই। আর ঈশ্বর করুন আমার নারী মর্যাদাকে ডিঙিয়ে যেন কোনদিন আমার ভালোবাসা মাথা তুলে উঠতে না পারে। যে ভালোবাসা আমার স্বাধীন স্বত্বাকে লঙ্ঘন করে যায়, সে ভালোবাসাকে আমি আন্তরিকভাবে ঘৃণা করি। যদিও জানি মেয়েমানুষের স্বামীর ভালোবাসার চেয়ে পৃথিবীতে আর বড় কিছু নেই, তবু আমার নারীমর্যাদা, আমার স্বাধীন স্বত্বা, আমার সমস্তটাই শেষবারের মতো রাতুলের কাছেই বিসর্জন দিতে চেয়েছি। সত্যি বলছি জনি; বিশ্বাস কর, আমারতো এমনি দশা হয়েছে, যে নিজের ইচ্ছে বলেও যেন এখন আর কিছু বাকি নেই। রাতুলের ইচ্ছেতেই সবকিছু মেনে নেই নীরবে।
জনি এবার তার নীরবতা ভেঙে বলল, ডলি শোন; আমাদের দেশের মেয়েরা হলো মাটির পুতুল। প্রাণ নেই, আত্মা নেই। তুমিই বল ডলি, আমার চেয়ে বেশি ভালোবাসা কি তুমি কখনও তোমার স্বামীর কাছ থেকে আদায় করতে পেরেছো? ভালোবাসা মাপবার যে যন্ত্র নেই, নাহলে মেপে দেখাতে পারতাম।
একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে ডলি। কিন্তু কি জান জনি? নিজেকে কখনও নিচু করিনি বলে; কাঙাল প্রবৃত্তি এখনও মাথায় তুলে নেইনি। আমাকে যে গ্রাহ্য করে না, আমিও সেই নারী; যে তাকে অগ্রাহ্য করতে জানি। আমিও আত্মমর্যাদা হারিয়ে ভালোবাসা চাই না।
জনি, তুমি কি আমার নাচ দেখবে? আমার খুব শখ, আমি খুব করে নাচব। সবাই আমার নাচ দেখে মুগ্ধ হবে। অজস্র করতালিতে ভরে উঠবে চারিদিক। কিন্তু জান আমার সেই শখ কোন দিন পূরণ হবে না। আজ তুমি আমার সেই শখ পূর্ণ করে দাও। আমি তোমার সামনে নাচব। তুমি আমার নাচ দেখে মুগ্ধ হবে। দেখবে জনি আমার নাচ?
জনিকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে শাড়ি খুলে ফেলে পাগলের মতো নাচতে শুরু করে দেয় ডলি।
*******
সেলিমের চায়ের দোকানে বসে আমি আর শিহাব রাতুলের বাড়ি ফেরার জন্য অপেক্ষা করছি। তার ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে গেলো। তারপরেও ডলির সুখের জন্য বসে আছি। রাতুল এলে আজকে একটা রফা দফা করতেই হবে।
শিহাব ঐযে হালায় আইতাছে।
সিগারেট ধরিয়ে আমি আর শিহাব রাতুলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
কি অবস্থা ভাইজানের?
ভালো। কোন দরকার?
শোন রাতুল, বেশি কিছু কইতে চাইনা। তুই কি হালায় মানুষ নাকি পিশাচ? কত দেহি!
এইসব কি ধরনের কথা?
দেখ রাতুল, তোরে এলাকার খুব ভাল পোলা বইলাই জানি। তোর মতন এমন নিরীহ ভাল একটা পোলা এই এলাকায় আর নাই। কিন্তু তোর কাছ থিকাত এইসব আশা করন যায়নারে?
কেন কি হয়েছে?
শোন রাতুল, ডলি খুব ভাল একটা মেয়ে। এমন একটা বউ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। অথচ তুই এমন একটা বউরে এইভাবে মারধর করছ? কাজটা কিন্তু তুই ভাল করস না।
আশ্চর্য! আমি আমার ঘরে বউয়ের সাথে কি করি, না করি সেই কৈফিয়ত কি তোকে দিতে হবে নাকি? আর তোর এত ডলির প্রতি মায়া কেন? কি পুরান প্রেম জেগে উঠছে নাকি ? তা এতই যখন ভালোবাসা তুই কেন ডলিকে বিয়ে করলি না?
তুই আসলেই হালায় একটা হারামজাদা! এই তোরে শেষবারের মতন বুঝাইতেছি। নাইলে কিন্তু তুই বুঝসই আমি কি করতে পারি। তোর জীবনটা পুরা তেজপাতা কইরা ফালামু।
তুই আমাকে ধমক দিচ্ছিস? তোরে আমি পরকীয়া কেসে যদি পুলিশের ভাত না খাওয়াইছি তাইলে আমিও রাতুল না।
হা, হা, হা, হা ঐ শিহাব, ঐ সেলিম, আমারে তোরা মাইরালা! শোন শোন হালায় কি কয়। আমি বলে পরকীয়া করি ডলির লগে। রাতুল যা বাসায় যা। তুই আমার নামে যা কেস দিবার পারস দিস। কিন্তু কাল থিকা ডলির চোখে একটু পানি ঝরব মনে রাখিস তোর জীবনে শনির টাইম শুরু হইব। আরে হালায় তগর সুখের জন্য এতকিছু কইলাম। নাইলে বাল আমার কি ঠেকা পড়ছে তগর সংসার লইয়া মাথা ঘামাইতে। তোরা যা খুশি কর গিয়া আমার কি ? কিন্তু এলাকার মানুষ খারাপ কয় এইগুলা। তোরা স্বামী স্ত্রী মিলা ঝিলা সুখে শান্তিতে থাকলে আমাগর কিছু যাইব আইব না। উল্টা লাভ হইব তগরই। একসময় পোলা মাইয়া হইব। দেখবি কত সুখে থাকবি। ডলি খুব ভাল একটা মেয়ে। এমন একটা মেয়ের লগে তুই এমন করিস না। শোন বউরে ভালোবাসা দে। দেখবি পৃথিবীতে তুইই হবি সবচেয়ে সুখী মানুষের একজন।
আর কোন কথা না বলে রাতুল সোজা বাড়ির দিকে হেটে চলে গেলো। আমিও শিহাবকে বিদায় দিয়ে সেলিমের দোকানে কিছুক্ষণের জন্য বসলাম। আজ আর বাড়িতে ফিরতে ইচ্ছে করছেনা। সারা রাত রাস্তায় হেটে কাটিয়ে দিলে মন্দ হবে না। রাতের নিঃসঙ্গ রাস্তায় হেটে হেটে একাকীত্ব অনুভব করার মাঝে সুখ আছে। তারপর যখন ভোরের প্রথম সূর্যের আলোর দেখা পাওয়া যায় মনে হয় যেন স্বর্গে পৌঁছে গেছি।
*******
দরজাটা খোলাই ছিলো। রাতুল ঘরের ভেতর ঢুকতেই শাওয়ারের শব্দ শুনে টের পেলো ডলি বাথরুমে গোসল করছে। কেন যেন আজ হঠাত করেই রাতুলের মধ্যে মুহূর্তেই শিহরন বয়ে গেলো। আস্তে আস্তে করে যেন পায়ের শব্দ না হয়; বাথরুমের দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াল সে। যেতেই দেখে কাপড় কাঁচার শব্দ। বাথরুমের দরজাটা হালকা ভাবে ফাঁক করা ছিলো। বাথরুমের বাইরের দিকে অন্ধকার কিন্তু ভেতরে লাইট জ্বলছে। দুরু দুরু বুকে সে দরজার ফাঁক দিয়ে তাকালো। বিয়ের এত বছর পর আজ জীবনে প্রথম তার নিজের বউকে সে এভাবে দেখছে। তাও সেটা লুকিয়ে লুকিয়ে; ভাবতেই কেমন যেন মনের ভেতর শিহরণ বোধ হলো তার। ডলি একটা ছোট টুলের উপর বসে অর্ধ নগ্ন হয়ে ঈষৎ ঝুকে কাপড় ধুচ্ছে। কাপড়গুলো ধুয়ে একটা বালতির মধ্যে রাখছে। ডলিকে দেখে তার কাছে মনে হলো, যেন পুকুরে ভেসে থাকা গোলাপী পদ্মফুলের উপর বিন্দু বিন্দু শিশির জমেছে। ডলি কাপড় ধোঁয়া শেষ করে উঠে দাঁড়াতেই তার সুগভীর নাভিটা একদম স্পস্ট হয়ে উঠল। হাস্নাহেনা ফুলের গন্ধে যেমন মাদকতা কাজ করে, তেমনই মাদকতায় ছেয়ে গেলো রাতুলের মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা সুদীর্ঘ কালের পুঞ্জীভূত কামনা। বাথরুম থেকে বের হয়ে রাতুলকে দেখেও, কিছুই না বলে এক হাতে ধোঁয়া কাপড়ের বালতিটা আর আর এক হাতে শাড়ি নিয়ে তার পাশ কাটিয়ে ডলি চলে গেলো।
হঠাৎ! বাসার নীচে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনাটির কথা মনে হতেই; সব কামনা বাসনা মুহূর্তেই মন থেকে উড়ে গেলো। আজ আর ল্যাপটপ নিয়ে বসা হলোনা তার। একটা সিগারেট খেয়ে বিছানায় চুপ চাপ একপাশ ফিরে শুয়ে রইল। ডলিও এসে অন্য পাশে ফিরে শুয়ে পড়ল। কিন্তু সারারাত ধরে রাতুলের মনের ভেতর খচ খচ করতে লাগলো। সত্যি ডলির প্রতি তার ভীষণ অন্যায় করা হয়ে গেছে। তারতো কোন দোষ নেই। তবু কেন সে ডলিকে মন থেকে মেনে নিতে পারছেনা? অথচ সে নিজ থেকে একটু ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে গেলেইতো সুখের স্বর্গ হয়ে উঠবে তার সংসার। বাইরের পৃথিবীটাকে মিছেই স্বর্গ ভেবে নিজের ঘরকে নরকে পরিণত করার কোন অধিকার তার নেই। কালকেই অফিসে যেয়ে কিছুদিনের জন ছুটি নিয়ে ডলিকে নিয়ে দূরে কোথাও থেকে বেড়িয়ে আসবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো। অনেক অনেক আদর করবে সে তার বউকে। দামী একটা গিফট কিনে দিয়ে ক্ষমাও চেয়ে নিবে বলে ভাবল রাতুল। মনের ভেতর প্রচণ্ড রকম আনন্দ অনুভূত হলো তার। এখন আর ডলিকে কিছুই না বলে বরং আগামীকাল সারপ্রাইজ দেয়ার কথা মনে মনে ভাবতে লাগলো সে।
*******
ডলি একটা সোফায় বসে উল্টো দিকে ঘুরে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। ডলির রেশমি ঢেউ খেলানো চুলগুলো সোফার পায়া ছুই ছুই করছে। সকাল বেলা রাতুল অফিসে যাওয়ার পর ঘরের দরজাটা আর ভুল করে লাগান হয়নি। দরজা খোলা পেয়ে জনি পা টিপে টিপে তার পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। আস্তে করে ডলির কাঁধের উপর দিয়ে হাত রাখলো। ডলি যেন একটু কেঁপে উঠল। ঘুরে তাকাল সে। ডলি জনির হাত ধরে তার পাশে বসালো। জনির হাতে তার হাত রেখে আনমনে খেলতে লাগল।
কি ব্যাপার ডলি, তুমি কিছু বলছো না যে?
জনি, আমি মা হতে চাই?
মানে?
জনি, আমিতো একজন নারী। আর একজন নারী তখনই পূর্ণতা পায়, যখন সে কারও সন্তানের মা হতে পারে। পুরো ঘর জুড়ে আমারই নাড়ির অংশ খেলবে, দোউড়াবে, পড়ে গিয়ে আঘাত পেলে মা, মা বলে চিৎকার করে, কান্না করে আমার বুকের ভেতর এসে মাথা গুঁজে দিয়ে কাঁদবে। আমি আমার শাড়ির আঁচল দিয়ে ওর চোখের পানি মুছে দিবো। আমার সারাটা দিন, সারাটা রাত, সারাটা প্রহর জুড়ে থাকবে আমার নিজের স্বত্বা। আমি পৃথিবীতে আর কিছুই চাইবো না। আমার সবটুকু সুখ জুড়ে থাকবে আমার সন্তান। আমি পূর্ণতা চাই। আমাকে পূর্ণ করে দাও জনি। জনি, তুমি কি আমার সন্তানের জন্মদাতা হবে?
জনি তার দুই হাত দিয়ে ডলিকে শক্ত করে তার বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো। আজ সমুদ্র জলোচ্ছ্বাসের রুপে আবির্ভূত হয়েছে। উপকূল ভাসিয়ে সব কিছু লন্ড ভন্ড করে দিয়ে; মাতাল নর্তকীর তান্ডবলীলায় মেতে উঠেছে। তারপর দুইজন দুইজনার দিকে এমন ভাবে তাকাল, যেন শুকনো মরুভূমিতে বৃষ্টির অঝর ধারা বইতে শুরু করেছে। ডলি বলল, চল আজকে রাতে দুইজনে মিলে দূরে কোথাও পালিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে আমরা বিয়ে করবো। নতুন করে আমাদের সংসার শুরু করবো। সেই ঘর আলো করে আমাদের ফুটফুটে একটা সন্তান জন্ম নিবে।
আচ্ছা বলে, জনি খুশি মনে যেতে উদ্যত হলো।
ডলি বলল, কি ব্যাপার এভাবে চলে যাচ্ছো যে?
জনি বোকার মতো মুখ করে ফিরে তাকালো।
ডলি বলল, এভাবে কখনও চলে যেতে হয় না।
*******
কাল সারারাত ধরে রাস্তায় হাটাহাটি করলাম। তাই সকাল বেলায় বাসায় ফিরে বিছানায় একটু হেলান দিতেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম টের পাইনি। ঘুম ভাঙল দুপুর বেলা। সেলিমের দোকানে যেয়ে এক চা খেয়ে আসার দরকার। শিহাবকে আজ আর আসতে বলবো না। বেচারার বউয়ের জ্বর এখনও ভাল হয়নি। থাকুক ঘরে। বউয়ের সেবা যত্ন করুক। ওদের মধ্যে ভালোবাসা দেখলে আমার মাঝে মাঝে খুব হিংসা হয়। হয়ত ডলিকে জীবনে পেলে আমিও শিহাবের মতোই সুখী হোতাম। পৃথিবীর সব সুখ ডলির পায়ের নীচে এনে হাজির করতাম। কিন্তু ঈশ্বর সবাইকে সব কিছু দেয় না। পৃথিবীর সব অংক সহজ ভাবে মিলে যায়না বলেই আমরা ঈশ্বরকে স্মরণ করি। ফলাফল পাওয়ার প্রত্যাশায় নতুন ভোর হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে রাতের নিঃসঙ্গতাকে আপন করে নেই। চাঁদের আলোতে অন্ধকারে পথ খুঁজে ফিরি। নতুবা জীবনটা হয়ে যেতো কোন কমার্শিয়াল সিনেমার মতো। সব শেষে হ্যাপি এন্ডিং। কিন্তু জীবনের দ্যা এন্ড হয়ে গেলেও মানুষের জীবনকে ঘীরে যাদের জীবন জড়িয়ে থাকে তাদের সাথে অংকের হিসাব দেয়ার জন্য, আর কিছুই তাহলে অবশিষ্ট থাকতো না। কিন্তু ঈশ্বরের জ্যামিতি তেমন নয়। সিনেমার ব্যাগ্রাউন্ড মিউজিকের জন্য ঈশ্বর আছে।
এক সময়ে ডলি আর রাতুলদের উভয় পরিবার একই বাড়িতে বাস করতো। রাতুলের বাবা তার ছেলেকে উচ্চ শিক্ষার জন্য লন্ডন পাঠিয়ে দেয়। এরই মাঝে ডলির সাথে আমার বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। কিন্তু সেই বন্ধুত্বের মাঝে কোন প্রেম ছিলো না। শুধুই ছিলো নির্ভেজাল বন্ধুত্ব। কিন্তু ডলির বাবা আমাদের সেই বন্ধুত্ব কিছুতেই মেনে নিতে পারে নাই। যখন বুঝলাম, তখন আমি নিজ থেকেই ডলির কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলাম। আমি জানি, ডলি তারপর থেকে আমাকে শুধুই ঘৃণা করে এসেছে। কিন্তু আমি সব সময়েই তার সুখ চেয়েছি। নাহয়, হয়েই থাকলাম তার ঘৃণার পাত্র হয়ে চিরটাকাল। তবু আমার মনের ভেতর তৃপ্তি থাকবে যে ডলি সুখেই আছে সব কিছুর পরেও। এরই মাঝে রাতুল পড়াশোনা শেষ করে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে আসে। কিন্তু এরই মধ্যে ডলির বাবা চাকরী হারিয়ে প্রায় পথে বসার উপক্রম হয়। তাই মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে রাতুলের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়।
চা খেতে খেতে পুরানো সেই সব দিনের স্মৃতি ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখের কোনে অশ্রু নেমে এলো টের পাইনি। সেলিম মামা একটা সিগারেট দে।
মামা, জনি কিন্তু আজকেও সকাল বেলাই ডলি আপার বাসায় গেছে। আমি দেখলাম রাতুল ভাই অফিসের লাইগা বাইর হওয়ার কিছুক্ষণের মইধ্যেই জনি গিয়া হাজির হইছে।
সেলিম, জনিরে এহন কই গেলে পাওয়া যাইব কইতে পারস?
মামা, জনি এই সময় চৌদ্দ নাম্বার গলীতে যেই আইস্ক্রিমের ফ্যাক্টরীটা আছে ওইখানে আড্ডা দেয়।
তুই শিওর?
মোটামুটি মামা শিওর। কারণ অরে আমি প্রায়ই দেখি কাশেমের লগে ওইখানে গিয়া আড্ডা দেয়।
কোন কাশেম?
মামা, হিরুইঞ্চচি কাশেম।
হুম! আচ্ছা দে আরেকটা সিগারেট দে। দেখি গিয়া হালারপুতরে পাওয়া যায় কিনা?
মামা, আমিও লগে আহি?
না, তুই থাক। অর লগে বোঝাপড়াটা আমি একলাই করুম আইজকা।
*******
রাতুলের হাতে একটা ফুলের তোরা। আজ সে অফিস থেকে তেরো দিনের জন্য ছুটি নিয়েছে। এই তেরো দিনের জন্য ডলিকে নিয়ে দূরে কোথাও থেকে ঘুরে আসবে। ডলিকে এই ফুলের তোরাটা দিয়ে কি কি বলবে; তাও সে মনে মনে ঠিক করে ফেলেছে।
কথা শোনো বউ, তোমার হাতে হাত রেখে ক্ষমা চাইছি। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। বউ, তোমাকে আমি ভীষণ ভাবে ভালোবেসে ফেলেছি। আমার এই প্রাণটা আজ তোমার জন্যই কাঁদছে। চিরদিন শুধু তোমাকে ভালোবেসেই এই আমি কাঁদবো। তুমি দেখে নিও, তোমাকে আমি কত ভালোবাসব। তোমাকে অবহেলায় ফেলে রেখে এতদিন আমি যে দোষ করেছি, আমি জানি; তবুও কোনোদিন এতটুকু নিন্দা তুমি করোনি আমাকে নিয়ে। হাসিমুখে আমার সমস্ত দোষ তুমি ঢেকে রেখেছিলে। আমি শিখেছি বউকে শ্রদ্ধা করা ছাড়া আসলে ভালোবাসা থাকে না।
কিন্তু রাতুলের জন্য ততক্ষণে অপেক্ষা করছিলো জীবনের এক কঠিন নিদারুণ বাস্তবতা। ডলি, জনির সাথে পালিয়ে যাওয়ার জন্য রাতুলের সংসার ছেড়ে দিয়ে স্টেশনে চলে এসেছে। অনেকবার মোবাইলে ট্রাই করেও জনিকে পাওয়া গেলো না। জনির মোবাইল বন্ধ। ডলি বার বার স্টেশনের গেটের দিকে তাকাচ্ছে। এই বুঝি জনি চলে এলো। এদিকে ট্রেনও প্রায় ছাড়ার সময় হয়ে গেছে। ভীষণ অস্থিরতা কাজ করছে। কিন্তু পুরো স্টেশনে জনির আসার কোন চিহ্নই নেই। জীবনের এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়ে পেছনে ফিরে যাওয়া আর সম্ভব নয়। রাতুলের প্রতি কোনরূপ ভালোবাসা না থাকলেও, মানুষটাকে এখন আর ঠকানো যাবেনা। ঝরে যাওয়া শিউলি ফুল আজ মানুষের হাতের স্পর্শ লেগে ময়লা হয়ে গেছে। রাতুলের প্রতি কেন যেন হঠাৎ! ডলির খুব মায়া হতে লাগলো। রাতুলের জন্য বুকের ভেতরে একটা চাঁপা কান্না অনুভূত হলো তার। তারপর সে নিঃশব্দে ট্রেনে উঠে গেলো। এমন অনেক দিন গিয়েছে; কিন্তু আজ অকস্মাৎ ট্রেনে উঠেই রাতুলের কথা ভেবে, তার বুকের ভেতর হাহাকার জন্ম নিলো। গভীর একটা নিঃশ্বাস ফেলে নির্জীবের মতো বসে ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো ডলি। সহসা আজ প্রথম তার মনে জন্ম নিলো, সমস্তটাই মিথ্যা, সব ফাঁকি। এই সংসার, স্বামী, স্নেহ, প্রেম, ভালোবাসা, সব কিছুই আজ তার কাছে মরুভূমির মরীচিকার মতো উবে গেলো।
ট্রেনের গতি ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। প্রকৃতিও আজ বড় বেশি বেরসিক খেলা খেলছে। যখন নাচের সব মুদ্রা বিসর্জন দিতে হচ্ছে, তখন তার চুলগুলো বাইরের মৃদু বাতাসের অবাধ্যতায় নাচছে। জানালার গ্লাসটা বন্ধ করে দিয়ে আকাশের দিকে তাকায় ডলি। রাতের অন্ধকার আকাশটাকে আজ তার খুব আপন বলে মনে হচ্ছে। এমন ঘুটঘুটে অন্ধকার আকাশে ঝিলমিল তারাদের কোলাহলে চাঁদের আলো শোভা পায়না। বড় বেশি বেমানান!
[বুদ্ধদেব গুহর লেখা 'পর্ণমোচী' এর শিরোনাম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই গল্পের নামকরণ করেছি তৃষ্ণার্ত পর্ণমোচী]