somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রিচার্ড ডকিন্সের গড ডিলিউসান বইয়ের সমালোচনা পর্ব ১

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডকিন্স তার উপরিউক্ত বইতে ঈশ্বরের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে বহু প্রমান হাজির করেছেন | ওই প্রমাণগুলো পরীক্ষা করে দেখা দরকার | এই লেখায় আমি সেই চেষ্টাই করব |

ঈশ্বরের পক্ষে যে প্রমানগুলি ডকিন্স দিয়েছেন সেগুলি হলো :
১] সন্ত আন্সেলম-এর অন্টলজিকাল যুক্তি
২] সন্ত টমাস একুইনাস-এর যুক্তি
৩] সৌন্দর্যের যুক্তি
৪] ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার যুক্তি
৫] শাস্ত্রের যুক্তি
৬] ধার্মিক বিজ্ঞানীদের যুক্তি
৭] পাস্কালের ওয়াজের
৮] বেইসের যুক্তি

আসুন দেখা যাক যুক্তিগুলিকে ডকিন্স কিভাবে খন্ডন করেছেন | প্রথমে ঈশ্বরের স্বপক্ষের যুক্তি:

১] সন্ত আন্সেলম-এর অন্টলজিকাল যুক্তি

যুক্তিটি হলো যে একজন এমন সত্তার কথা কল্পনা করা যেতে পারে যে হলো শ্রেষ্ঠতম সেই হলো ঈশ্বর | কিন্তু এই ধরনের কোনো কিছুর অস্তিত্ব শুধু মনে আছে বাস্তবে নেই | বাস্তবে যার অস্তিত্ব নাই সে শ্রেষ্ঠতম হতে পারে না | সুতরাং আমাদের অবশ্যই ঈশ্বরের চেয়ে কাউকে শ্রেষ্ঠতম বলে মনে করতে হবে |কিন্তু আমরা ঈশ্বরের চেয়ে শ্রেষ্ঠতম কাউকে ভাবতে পারি না | সুতরাং ঈশ্বর অবশ্যই বাস্তবে আছে |
এই যুক্তিটি খন্ডন করতে গেলে আমাদের দেখাতে হবে যে ঈশ্বরের চাইতেও শ্রেষ্ঠবস্তু আছে এবং সেটা বাস্তব | কিন্তু সেই বস্তুটি কি? ডকিন্স এর কোনো উত্তর দেন নি | তিনি নানা হিজিবিজি কথা বলেছেন কিন্তু সরাসরি কোনো উত্তর দেননি |

২] সন্ত টমাস একুইনাস-এর যুক্তি

এনার পাচটি যুক্তি আছে | প্রথম তিনটির সার কথা হলো : ঈশ্বর হলো সেই সত্তা যা সমগ্র সৃষ্টির প্রথম কারণ | এবং সেই ঈশ্বরের কোনো কারণ নেই এবং সেই ঈশ্বর অদৃশ্য |

এই যুক্তিটি সরাসরি খন্ডন করতে গেলে দেখাতে হবে যে, সৃষ্টিতে প্রথম কারণ বলে কিছু হয় না | সব কারণেরই পূর্ববর্তী কারণ থাকে | কিন্তু তা দেখানো যাবে কিভাবে? ডকিন্স এমন কিছু দেখাননি | তিনি পরমানুর কথা বলেছেন এবং দেখাতে চেয়েছেন যে পরমাণুকে ভাঙ্গলে আর কিছু থাকে না সুতরাং পরমানুই আদি কারণ |অতীতে এক শ্রেনীর বৈশেষিক এই তত্ব প্রমান করতে চেয়েছিল | কিন্তু যে বস্তুর কারণ থাকে না তার উত্পত্তি ও বিনাশও থাকে না এবং পরিবর্তনও থাকে না | ( যেমন ঘটের কারণ মাটি এবং ঘটের র উত্পত্তি ও বিনাশ আছে | সুতরাং যার কারণ আছে তার উত্পত্তি ও বিনাশ অবশ্যই থাকবে | ) কিন্তু পরমানুর উত্পত্তি, বিনাশ এবং পরিবর্তন থাকে | সুতরাং পরমানু কিভাবে আদি কারণ হবে ? এছাড়া পরমাণুকে আদি কারণ হিসেবে দেখিয়ে ডকিন্স কি এটাই মেনে নিলেন না যে সৃষ্টিতে আদি কারণ থাকে?

সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমানের ধাধা

ডকিন্স আবার বলেছেন যে ঈশ্বর আদি কারণ হলে তিনি সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান ইত্যাদি হতে পারেন না | কেন ? কারণ সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান নাকি একসাথে হওয়া যায় না | অন্যভাবে বলতে গেলে ঈশ্বর জানেন যে তিনি ভবিষ্যতে কি করতে চলেছেন কিন্তু তিনি নিজের ভবিষ্যত কার্যকে পরিবর্তন করতে পারেন না | অর্থাত আমি আমার ফিউচার প্ল্যান জানি কিন্তু তাকে পরিবর্তন করতে পারব না | কিন্তু কেন? এটা কি বাস্তবে সম্ভব? আমরা আমাদের ভবিষ্যতের কার্য যা করতে চলেছি বলে জানি তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না? তাহলে বড় বড় কোম্পানির বা সরকার নিজের ফিউচার প্ল্যান কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ?
সুতরাং এই যুক্তিগুলির খন্ডন করতে গিয়ে ডকিন্স ব্যর্থ |

একুইনাস-এর চতুর্থ যুক্তিটি হলো : এই জগতে সমস্ত বস্তুর মধ্যে ভালো আছে বিভিন্ন মাত্রায় | কেউ এখানে সবচেয়ে ভালো নয় | আমরা এই ভালোর মাত্রার পরিমাপ করি একটা সর্বোচ্চ ভালোর সাথে তুলনা করে | এই সর্বোচ্চ ভালোকেই আমি ঈশ্বর বলি |

এই যুক্তি খন্ডন করতে গেলে দেখানো উচিত যে এই জগতে কোনো বস্তু বিভিন্ন মাত্রায় ভালো নেই বরং সবকিছুই সবচেয়ে ভালো | ডকিন্স অবশ্য তা দেখাননি | তিনি যা তা এলেবেলে যুক্তি দিয়ে পাতা ভরিয়েছেন | তিনি বলেছেন যে, এই জগতে সব বস্তুই বিভিন্ন মাত্রায় দুর্গন্ধযুক্ত | সেইসব দুর্গন্ধের তুলনা আমরা করতে পারি একটা সর্বোচ্চ দুর্গন্ধযুক্ত বস্তুর সাথে | যার নাম ঈশ্বর | এইসব আজে বাজে কথায় ভর্তি |

একুইনাসের পঞ্চম যুক্তিটি হলো : এই জগতে সবকিছুই একটা নিখুত পরিকল্পনা করে বানানো | সুতরাং নিশ্চই একজন পরিকল্পনাকার আছেন | একে ডিজাইনের যুক্তিও বলা যায় |

এই যুক্তি খন্ডন করতে গেলে দেখানো উচিত যে ডিজাইনার ছাড়াই ডিজাইন সম্ভব | একটা উদাহরণ দেয়া উচিত | কিন্তু ডকিন্স এসব কিছু দেখাননি | তিনি বললেন ডারউইন এটাকে খন্ডন করেছিলেন প্রাকৃতিক নির্বাচন দিয়ে | প্রাকৃতিক নির্বাচন নাকি ডিজাইনের মতই কাজ করে | আমি কিন্তু এর অর্থ বুঝলাম না | প্রাকৃতিক নির্বাচন ডিজাইনের মত হতে পারে কিন্তু প্রকৃতি কি সেখানে ডিজাইনার-এর ভুমিকা পালন করে ? ঈশ্বর না করুক কেউ তো একজন ডিজাইনার আছেন | তাহলে ডিজাইনের যুক্তি খন্ডিত হলো কিভাবে ? বাস্তবে একটা ক্রিকেট ব্যাটও বিনা ডিজাইনার বানানো যায় না, জগতের ডিজাইনের কথা ছেড়েই দিন |

একুইনাসের কোনো যুক্তিই ডকিন্স খন্ডন করতে পারেননি |

৩] সৌন্দর্যের যুক্তি

এই যুক্তিটি হলো যদি ঈশ্বর না থাকে তাহলে সেক্সপীয়র ও বেটোফেন- এর অস্তিত্ব কিভাবে সম্ভব হলো ? এই যুক্তিটি আমিও বুঝলাম না ডকিন্স ও বোঝেননি |

৪] ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার যুক্তি

সোজা বাংলায় এটা হলো ঈশ্বরকে দেখেছি বা শুনেছি এবং এটা হলো পাগলের প্রলাপ | ডকিন্স এই কথাই বলেছেন | পাগলে অনেক অদ্ভুত জিনিস দেখে বা শোনে কিন্তু পাগলামো আর অতিন্দ্রীয় দর্শনের মধ্যে কিছু পার্থক্য বিদ্যমান | মানুষ যখন পাগল হয় তখন সে কোনো বড় রকমের মানসিক আঘাত পেয়ে পাগল হয় | কিন্তু যাদের অতিন্দ্রীয় দর্শন হয় তারা কোনো মানসিক আঘাত পায় না | তারা ঈশ্বরের ধ্যান করতে করতে অতিন্দ্রীয় অনুভুতি পায় | সুতরাং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সবসময় পাগলামি নয় |

এছাড়া পাগলামির পরিনাম হয় পাগলাগারদ | কেউ পাগলের সান্নিধ্যে থেকে সুখশান্তি পায় না |সবারই বুঝতে অসুবিধে হয় না যে পাগলের সাথে থাকা মূল্যহীন | কিন্তু অতিন্দ্রীয় অনুভবকারীদের পরিনাম ঐরূপ হয় না | যুগে যুগে বহু মানুষ অতিন্দ্রীয় অনুভবকারী , যারা ঈশ্বরকে অনুভব করেছেন, তাদের সান্নিধ্যে এসে সুখী হয়েছেন | যিশুর বাণী যদি কাউকে শান্তি না দিত তাহলে খ্রিষ্টান সাম্রাজ্য জগত বিস্তৃত হত না এবং খ্রিষ্টানদের সংখ্যাও অতি কম হত | কিন্তু এই লেখকও যিশু এবং অন্যান্য অতিন্দ্রিযবাদিদের অনুভব থেকে শান্তি পেয়েছে | তাহলে অতিন্দ্রিযবাদিরা পাগল কিভাবে হলো? এটাও ডকিন্স ঠিকঠাক খন্ডন করতে পারেননি | আপাত মধুর যুক্তি দিয়ে দায়িত্ব সেরেছেন |পূর্বাপর বিচার করেননি |

৫] শাস্ত্রের যুক্তি

এখানে ডকিন্স দেখিয়েছেন যে শাস্ত্রে তথা বাইবেলে কি রকম অসঙ্গতি আছে | তিনি দুটো যুক্তি দেখিয়েছেন: শাস্ত্রকর্তার নিজস্ব ধার্মিক স্বার্থ ছিল এবং সুসমাচারগুলিতে অসঙ্গতি | ধার্মিক স্বার্থের কথা বলতে গিয়ে তিনি শুধু যিশুর জন্মস্থান নিয়ে বিবাদের কথাটাই বলেছেন | এছাড়াও বাইবেলের অনুবাদের ভুলের কথাটাও তিনি তুলেছেন |

এখন কথা হলো এই যে, শাস্ত্র বলতে কি শুধু বাইবেলকে বোঝায়? বেদ , কোরান, ধম্মপদ, ইত্যাদি কি শাস্ত্র নয় যেখানে ঈশ্বরের কথা বলা আছে? আর যদি বাইবেলের কথাই ধরা যায় তাহলে অসঙ্গতির পাশাপাশি যে সঙ্গতিগুলি আছে সেগুলিকেও কেন দেখব না? বাইবেলের টেন কম্যান্ডমেন্টস-এ কোনো অসঙ্গতি নেই | যিশুর সিনাই পর্বতের বাণীর মধ্যে কোনো অসঙ্গতি নেই | যিশুর ক্ষমা আর দয়ার বাণীর মধ্যে কোনো অসঙ্গতি নেই | যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় অসঙ্গতি নেই | তাহলে এগুলোকে কেন মেনে নেয়া হবে না ? শুধু অসঙ্গতির ওপর ভিত্তি করে পুরো শাস্ত্রটাকে কেন ত্যাগ করা হবে? তার চেয়ে অসঙ্গতি আর সংগতিকে আলাদা করা হোক | অসঙ্গতিকে বর্জন করে সংগতিকে গ্রহণ করলে ভালো হয় না?

৬] ধার্মিক বিজ্ঞানীদের যুক্তি

গোটা যুক্তিটা হলো : বিজ্ঞানীরা ধার্মিক ছিলেন না , কিন্তু তারা ধার্মিক হওয়ার ভান করছিলেন কারণ সামাজিক চাপ ছিল | উনবিংশ শতকে এই রকম চাপ ছিল | বড় বড় বিজ্ঞানীরাই যেখানে ঈশ্বরভক্ত সেখানে তুমি কে হে যে নাস্তিকতা প্রচার করছ? এই সামাজিক চাপের ফলেই বিজ্ঞানীরা আস্তিক হবার ভান করতেন | আসলে তারা নাস্তিক ছিলেন | বিংশ শতাব্দিতে সেই চাপ সরে গেলে বেশিরভাগ বিজ্ঞানীই নাস্তিক হয়ে যান | কিন্তু এটা কি একটা যুক্তি হলো ? বিজ্ঞানীরা দুকলম প্রকৃতি চর্চা করে কি এমন জ্ঞান পেল যে তারা ঈশ্বরের অস্তিত্বের বিরোধিতা করলো ? তারা ঈশ্বরের বানানো বজ্রবিদ্যুত নিয়ন্ত্রণ করতে শিখে ঈশ্বরকেই আউট করে দিল | তারা এই সৃষ্টির কি জানে আর কতটুকু জানে ? ঈশ্বরের কাছে অতীত বর্তমান আর ভবিষ্যতের জ্ঞান আছে , বিজ্ঞানীদের কাছে কি তাই আছে? আর যদি তারা বলে যে ভবিষ্যতে হবে তো আগে হোক তার পর তারা ঈশ্বরকে নাকচ করুক | আগে বিজ্ঞানীরা ঈশ্বরের মত এক বিচিত্র দুনিয়া বানাক তারপরে বলুক যে ঈশ্বর নয় মানুষেই দুনিয়া বানাতে পারে | তার আগে এত বড় বড় কথা বলাটা কি বিজ্ঞানীদের উচিত?

৭] পাস্কালের বাজি

পাস্কালের যুক্তিটি হলো: যদি তুমি ঈশ্বরে বিশ্বাস কর আর সেই বিশ্বাসটা সত্যি হয় তাহলে তুমি অনন্ত সুখ পাবে আর যদি তা মিথ্যে হয় তাহলে কিছুই পাবে না | কিন্তু যদি তুমি ঈশ্বরে বিশ্বাস না কর আর যদি বিশ্বাসটা সত্যি হয় তাহলে কিছুই পাবে না আর যদি মিথ্যা হয় তাহলে অনন্ত নরকবাস হবে | ডকিন্স এটার মানে করেছেন : ঈশ্বরে বিশ্বাস কর | এবং এটাকে কোনো যুক্তিই বলেননি | আসলে ব্যাপারটা কিন্তু তা নয় |

এখানে দুটো বিশ্বাসের পরিনাম বিচার হচ্ছে | আস্তিক যদি সত্যি হয় তাহলে অনন্ত সুখ পাবে | মিথ্যে হলে কোনো লাভ বা ক্ষতি কিছুই হবে না | নাস্তিক যদি সত্যি হয় তাহলে কোনো লাভ বা ক্ষতি কিছুই হবে না | কিন্তু যদি মিথ্যে হয় তাহলে অনন্ত নরক বাস হবে | তাহলে দেখা যাচ্ছে যে আস্তিক হয় সুখ পাবে নয়তো কিছুই পাবে না | নাস্তিক হয় দুঃখ পাবে নয়তো কিছুই পাবে না | “কিছুই পাবে না” টা এখানে ধর্তব্যের মধ্যে না পড়লে দেখা যায় আস্তিকের সুখ আছে আর নাস্তিকের দুঃখ আছে | আর বর্তমানে যা হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে পরকালে নয় ইহকালেই এই পরিনাম হয় | আর যেহেতু পরকালের ব্যাপার ইহকালে বোঝা সম্ভব নয় সেহেতু আস্তিক থাকাটাই সুবিধাজনক |

ডকিন্স এর বিরুদ্ধে কিছু যুক্তি দেখিয়েছেন| সোজা বাংলায় প্রথম যুক্তিটি হলো চক চক করলেই সোনা হয় না | অর্থাত আমি বাইবেল পড়ছি , চার্চে গিয়ে প্রার্থনা করছি মানেই আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করছি তা নয় | অর্থাত আমাকে বাইরে কেন ঈশ্বর বিশ্বাস দেখাতে হবে ? আর যদি তাই দেখাতে হয় তাহলে ঈশ্বর নিশ্চই সর্বজ্ঞ নয় , নাহলে তিনি ধোঁকাবাজিটা ধরতে পারতেন | এই হলো প্রথম যুক্তি | কিন্তু ঈশ্বর যে ধোঁকাবাজি ধরতে পারেননি এটা ডকিন্স জানলেন কি করে ? তিনি কি ঈশ্বরের মন পড়তে পারেন ? তবে ডকিন্সের একটা কথার সাথে আমি একমত , সেটা হলো ঈশ্বর ভক্তির এত প্রদর্শনীর কোনো দরকার নেই | এই আড়ম্বর গুলি অতিশয় কৃত্তিম |

দ্বিতীয়ত এখানে ডকিন্স বড় আজব যুক্তি দিয়েছেন | তিনি বলেছেন যে নাস্তিকেরা নাকি খুব দয়ালু, মহৎ এবং উদার , সত্য সন্ধানী | আস্তিকেরা যথারীতি বিপরীত অর্থাত নিষ্ঠুর, সংকীর্ণমনা ইত্যাদি | এবং তিনি বলতে চেয়েছেন যে ঈশ্বর নাস্তিকদের এইসব গুনাবলিকে অনেক বেশি সমাদর করেন | কিন্তু ডকিন্স উদাহরণ দিতে ভুলে গেছেন | নাস্তিকদের ঔদার্য, মহত্ব এবং দয়ার উদাহরণ দিতে পারেননি | আমরা যে কজন নাস্তিককে দেখেছি তারা সব সময় আস্তিকদের মানসিক আঘাত করতেই ব্যস্ত | ডকিন্স, স্যাম হ্যারিস, ক্রিস্টোফার হিচেনস , ড্যানিয়েল ডেনেট, কে দয়া উদারতা আর মহত্বের পরিচয় দিয়েছে ? কে মানবজাতির জন্য কিছু করেছে এদের মধ্যে ? কেউ কি কিছু জানে ? অন্যদিকে আমরা মাদার টেরেসা, ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল-এর মত আস্তিকদের পাই যারা মানবজাতির জন্য অনেক করুনা , দয়া ইত্যাদি দেখিয়েছে |পোপ ফ্রান্সিসকেই দেখুন: তিনি মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার হামলা এবং আইসিসের খুনখারাপির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন | লক্ষ লক্ষ মানুষ তা শুনেছে |নাস্তিকরা কি করেছে ? শুধু আস্তিকদের গালি দিয়েছে | নাস্তিকদের কি উচিত নয় মানবজাতির দুঃখ দূর করে কিছু দয়া বা করুনা দেখানো ?

ডকিন্স অবশ্য একটি এনজিও চালায় যার নাম রিচার্ড ডকিন্স ফাউন্ডেশন ফর সাইন্স এন্ড রিসন | এর কাজ হলো দুনিয়ায় যুক্তিবাদের প্রসার ঘটানো | কিন্তু যেখানে মানুষের পেটে ভাত নেই , মাথায় ছাদ নেই আর নিরাপত্তা নেই , সেখানে যুক্তিবাদ কি মানুষ খাবে না মাথায় মাখবে ? ডকিন্স সাহেবের সেটা বোঝা উচিত |

তৃতীয়ত ডকিন্স বলেছেন যে আমরা যদি ভুল ঈশ্বরের দেখা পাই তাহলে কি হবে ? অর্থাত কেউ ইহুদিদের ঈশ্বর জাহভের উপাসনা করছে কিন্তু মরার পরে গিয়ে দেখল যে ঈশ্বর জাহভে নয় বরং তার প্রতিদ্বন্দী বাল | তাহলে কি হবে ? এই রকম বালসুলভ বাকচাতুরিতে ভরা ডকিন্সের গড ডিলিউশন | কি আর হবে ? জাহভের বিশ্বাসী বালের হাতে ঠ্যাঙানি খাবে আর বালের বিশ্বাসী জাহভের হাতে | তা দিয়ে কিন্তু পাস্কাল সাহেবের যুক্তির খন্ডন হলো না |

সত্যি কথা বলতে কি পাস্কাল সাহেবের যুক্তি কি খন্ডন করা যায় ? এটা কি একটা যুক্তি ? না , এটা একটা পরিনাম বিশ্লেষণ | অনেকটা গেম থীয়রির মত | পরকালে কি হবে কেউই সঠিক করে বলতে পারে না | সুতরাং পাস্কাল দেখাচ্ছেন যে আস্তিক্য আর নাস্তিক্যের সত্যি ও মিথ্যে হবার পরিনাম কি | তিনি কোনো সিদ্ধান্তে আসেননি যে তা আমরা খন্ডন করব | তিনি সিদ্ধান্তের ভারটা আমাদের ঘাড়েই ফেলেছেন | যখন এটা কোনো যুক্তিই নয় , তখন খন্ডন করার প্রশ্নই ওঠে না | ডকিন্স সেটা না বুঝে বালসুলভ বাকচাতুরিতে পাতা ভরিয়েছেন | বরং পাস্কালের এই প্রদর্শন থেকে আমার তো মনে হয় আস্তিক্য বেশি ভালো কারণ পরকালে তা সত্যি হলে আমি সুখ পাব , মিথ্যে হলে কিছুই পাব না | এবং ইহকালেও আস্তিক্য থেকে আমি সুখিই হব কারণ তা আমার মানসিক দুশ্চিন্তা দূর করবে এবং নিরাপত্তা, মনের জোর ইত্যাদি দেবে |

৮] বেইসের যুক্তি

বেইসের যুক্তিটি কি ? এটা একটা সম্ভাবনার খেলা | এটা আমরা যা জানি আর যা জানি না তার মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয়ের চেষ্টা করে সম্ভাবনার মধ্যে দিয়ে | এটাকে ঈশ্বর খোঁজার কাজে কিভাবে লাগানো যায় ? আমরা জানি ঈশ্বরের সৃষ্টি কি | জানি না ঈশ্বর আছে কি না | তাহলে ঈশ্বরের সৃষ্টি থেকে ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা নির্ণয় করা হলো বেইসের যুক্তি |

ডকিন্সের মতে এই সম্ভাবনাগুলি ব্যক্তিগত বিচারের ফলে দেয়া হয় | কোন বস্তুর সম্ভাবনা কেমন তা ব্যক্তিগত বিচার দ্বারা নির্ণয় করা হয় | ঈশ্বরের কোনো সৃষ্টিকে দেয়া হলো ৪০% সম্ভাবনা তো কাউকে দেয়া হলো ১০%| এগুলির কোনো নৈর্ব্যক্তিক ভিত্তি নেই | যেমন ঈশ্বরে বিশ্বাসকে ৯০% সম্ভাবনা দেয়া হয়েছে |

এই যুক্তিটি বাস্তবিক পক্ষে ঈশ্বরের সপক্ষে একটি বাজে যুক্তি |

তাহলে ডকিন্স শুধু দুটি যুক্তিকে “খন্ডন” করেছেন : সৌন্দর্যের যুক্তি আর বেইসের যুক্তি | আর কোনো যুক্তিকে তিনি খন্ডন করতে পারেননি |

সুতরাং ঈশ্বর আছেন |
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০৪
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×