মার্কস সাহেব প্রলেতারিয়েতের মুক্তির উপায় কি বলেছিলেন ?
তিনি বলেছিলেন ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিলোপ সাধনই প্রলেতারিয়েতদের মুক্তি দিতে পারে | কিভাবে ? ব্যক্তিগত সম্পত্তি সমাজের শ্রেণীবিভাগের কারণ | শ্রেণীবিভাগ প্রলেতারিয়েতদের অস্তিত্বের কারণ | অতএব মূল উপ্রে ফেল | অর্থাৎ ব্যক্তিগত সম্পত্তি না থাকলে শ্রেনীও থাকবে না | শ্রেণী না থাকলে প্রলেতারিয়াত থাকবে না | সোজা হিসেব |
এই হিসেবে চলে লেনিন রাশিয়ায় অজস্র অভিজাতদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে পথে বসিয়েছিলেন , মাও সে তুং চীনেও একই কাজ করেছিলেন | কিন্তু প্রলেতারিয়াতদের মুক্তি কি এসেছিল ?
এই অধমের মতে আসেনি | কেন ? বুঝতে গেলে সমাজের শ্রেণী ব্যবস্থাটাকে ভালো করে বুঝতে হবে | মার্কস যে শ্রেণীদের কথা বলেছিলেন তারা হলো :
১] শাসক (রাজা, অভিজাত শ্রেণী, চার্চ ইত্যাদি )
২] হস্ত শিল্পী (কুটির শিল্পী )
৩] নির্মান শিল্পী ( তাঁতি, কামার কুমোর ইত্যাদি )
৪] চাষী
৫] দাস
৬] প্রলেতারিয়াত ( ভাগ চাষী, দিনমজুর ইত্যাদি )
১ থেকে ৫ নম্বর শ্রেণীরা ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিক | কিন্তু ষষ্ঠ শ্রেণী অর্থাৎ প্রলেতারিয়াত হলো সম্পত্তিহীন | এইবার এদের মুক্ত করতে গেলে মার্ক্সের কথা হলো ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিলোপ করতে হবে | কিন্তু তাতে কি হবে ? তাতে ১ থেকে ৫ নম্বর শ্রেণীর সবাই প্রলেতারিয়াত হবে | কারণ প্রলেতারিয়াতের সংজ্ঞাই হলো : ব্যক্তিগত সম্পত্তিহীনতা | এতে প্রলেতারিয়াতের সংখ্যা বাড়বে বই কমবে না | কিন্তু প্রলেতারিয়াতের মুক্তি মানে হলো এই শ্রেনীর অস্তিত্ব না থাকা | সেটা এইভাবে কিকরে সম্ভব ? আগে যেখানে ৬ টা শ্রেণী ছিল , এখন সেখানে একটা বৃহত শ্রেণী আছে যার নাম প্রলেতারিয়াত |
মার্কস বলেন যে সমস্ত সম্পত্তি হবে সমাজের বা কমিউনের | সবাই হবে সব সম্পত্তির মালিক | অর্থাৎ সবই পাবলিক প্রপার্টি | কিন্তু এইরকম একটা সমাজে মার্ক্সের সংজ্ঞা অনুযায়ী সবাইই প্রলেতারিয়াত | আগে যারা ছিল সংখ্যালঘু , এখন তারা সংখ্যাগুরু | এতে প্রলেতারিয়াতদের মুক্তি তথা বিলোপ কিভাবে হলো ?
নতুন ব্যবস্থায় প্রলেতারিয়াতরা কি আগের চেয়ে ভালো থাকবে ? সামান্য ভালো থাকবে | আগে তাদের সম্পত্তি ছিল না, এখন কিছুটা আছে | তবে এখন যা আছে তাতে একজন মানুষের ভাগ খুবই কম | ফলে অবধারিতভাবে আসবে মারামারি কামড়াকামড়ি সম্পত্তি ভোগের জন্য | আগে যেটা হত অতি ক্ষুদ্র একটা শ্রেনীর মধ্যে , ফলে দেশে শান্তি বজায় থাকত , এখন সেটা হবে বৃহত একটা শ্রেনীর মধ্যে, ফলে কোনো শান্তি থাকবে না | এছাড়া শাসকশ্রেণী তো থাকবেই , কারণ শাসন ছাড়া মানুষ থাকতে পারে না | এখন গণতন্ত্রে মুষ্টিমেয় কয়েকজন হবে শাসক আর স্বৈরতন্ত্রে একজন শাসক | যেই আসুক , সে এই পাবলিক প্রপার্টির সিংহভাগ পাবে | বাকি ক্ষুদ্র সম্পত্তির জন্য বৃহত মানুষের সংগ্রাম : এই হবে কমিউনের পরিনাম |
এই অধমের একটা পরামর্শ আছে | ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিলোপের বদলে যদি প্রলেতারিয়াতদের রাজা বা শাসক শ্রেণী কিছু কিছু সম্পত্তি দান করেন , তাহলে প্রলেতারিয়াতদের বিলোপও সাধন হলো আবার সমাজের শ্রেনিও বজায় রইলো | এতে করে প্রলেতারিয়াতরা যেটুকু সম্পত্তি পেল তাতে তাদের পূর্ণ অধিকার জন্মালো | তাতে তাদের ১০০% ভাগ থাকলো | মার্ক্সের চেয়ে এটা অনেক ভালো সলিউসন | অর্থাৎ ওয়েলফেয়ার স্টেট সিস্টেম |
মার্কস এটা কেন বোঝেননি ? তাঁর সময়ে ওয়েলফেয়ার স্টেটের কোনো কনসেপ্টই ছিল না | তাই তিনি ঐরকম একটা সমাধান (?) দিয়েছেন | কিন্তু জিনিষটা একেবারে ছিল না তাও কিন্তু নয় | চার্চ অনেককে কিছু কিছু সম্পত্তি দান করত | সেটা মার্ক্সের চোখ এড়িয়ে গেছিল | আসলে তিনি বস্তুবাদী হয়ে গেছিলেন |
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৩১